গরমের দিনে তেতো খাওয়ার উপকারিতা
গরমের দিনে তেতো খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কিত তথ্য জানার জন্য খুবই আগ্রহী বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং পেপার পত্রিকা খুঁজে নির্বাচিত তথ্য পাচ্ছেন না? তাহলে এবার আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজন।
এই প্রতিবেদনে গরমের দিনে তেতো খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে এ বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা পেতে হলে এই প্রতিবেদনটি মনোযোগের সহিত পড়তে থাকুন।
ভূমিকা
বাংলাদেশের মতো আবহাওয়ার উষ্ণতম দেশগুলোতে গ্রীষ্মকাল মানেই এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ। প্রচন্ড গরম, রোদের তাপ, উত্তপ্ত বাতাস, ঘাম, দুর্বলতা ও পানি শূন্যতা- সব মিলিয়ে শরীর যেন ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এই সময় শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সময় একমাত্র খাদ্য অভ্যাসই প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরকে সুস্থ, রোগমুক্ত এবং ফ্রেশ রাখতে সাহায্য করে।
গ্রীষ্মকালে অন্যান্য খাবারের মধ্যে প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরকে রোগমুক্ত, ফ্রেশ এবং ঝরঝরে রাখতে তেতো জাতীয় খাদ্য একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এছাড়াও রক্ত বিশুদ্ধ করতে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে, শরীরের ক্লান্তি দূর করতে এবং ইমিউনিটি সিস্টেম মজবুত করতে সহায়তা করে থাকে।
গরমে তেতো খাওয়ার উপকারিতা
গরমের সময় অথবা গ্রীষ্মকালে শরীরের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং সময়। এই সময়ে হিটস্ট্রোক, পানি শূন্যতা, হজমের সমস্যা, ত্বকের র্যাশ সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য অনেকেই ওষুধের ওপর নির্ভর করে থাকে, কিন্তু এর প্রাকৃতিক সমাধান পাওয়া যায় তেতো জাতীয় খাদ্যে।
আদিকাল থেকেই দাদির নানিরা রান্নাঘরে তেতো জাতীয় উপাদান রাখতেন দৈনন্দিন খাবারের অংশ হিসেবে। তেতো জাতীয় খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-করলা, চিরতা, নিমপাতা ইত্যাদি। তেতো জাতীয় খাদ্যে অনেকের অনীহা থাকলেও এই খাবারগুলোতে রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্যগুণ। চলুন আমরা এবার দেখে নিই গরমের তেতো জাতীয় খাবার খাওয়ার উপকারিতা গুলো-
গরমের তেতো খাওয়ার বিজ্ঞানসম্মত উপকারিতা
গরমের শরীর সুস্থ রাখতে তেতো জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে যে সমস্ত উপকারগুলো পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপকারগুলি তুলে ধরা হলো-
১। শরীর ঠান্ডা রাখে
গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত ক্লান্তিরোধ, ঘাম এবং হিটস্ট্রোক এদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকারী হল তেতো জাতীয় খাবার যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করে থাকে।
২। রক্ত শোধন করে
তেতো জাতীয় খাবার রক্ত শোধন করে থাকে, রক্তের বিভিন্ন টক্সিন দূর করে। যার ফলে এলার্জি জাতীয় চর্মরোগ, ফুসকুড়ি এবং মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে ব্রণ জাতীয় রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
৩। হাজমশক্তি বৃদ্ধি করে
তেতো জাতীয় খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলে গ্যাস, বদহজম এগুলো দূর করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, কারণ এতে প্রকৃতিগতভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে এনজাইম রয়েছে।
৪। লিভার ও কিডনি ভালো রাখে
করলা, চিরতা ও নিম পাতার রস কিডনির কার্যকরিতা উন্নত করে এবং লিভার পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে এই তেতো জাতীয় খাবার।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
করলা ও উচ্ছে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। করলায় থাকা চ্যারেন্টিন ইনসুলিনের মতো কাজ করে।
৬. ত্বক উজ্জ্বল রাখে
রক্ত বিশুদ্ধ হলে ত্বক স্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল হয়। তেতো খাবারে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের কোষগুলো রক্ষা করে।
৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
কম ক্যালোরি ও উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ করলা ও উচ্ছে ওজন কমাতে সহায়ক।
৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
তেতো খাবার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৯. কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে
ফাইবারে ভরপুর হওয়ায় তেতো খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
১০. মানসিক প্রশান্তি দেয়
আয়ুর্বেদ মতে, তেতো খাবার “পিত্ত” কমায় এবং মানসিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে রাখে।গ্রীষ্মকালে যেসব তেতো খাওয়া উচিত
যে সমস্ত খাবারে তেতো জাতীয় উপাদান পরিমাণ মতো রয়েছে এবং উপকারী সে সমস্ত খাবারগুলি নিচে উল্লেখ করা হলো-তেতো খাবার--------উপকারিতা
করলা----------------------ডায়াবেটিস, হজম
উচ্ছে ----------------------গ্যাস্ট্রিক, ক্ষুধা বৃদ্ধি
নিমপাতা -----------------রক্ত পরিষ্কার, অ্যালার্জি প্রতিরোধ
চিরতা ---------------------ডিটক্স, চর্মরোগ প্রতিরোধ
সরষে শাক ---------------লিভার পরিষ্কার, পিত্ত নিয়ন্ত্রণ
গিমা শাক ----------------লিভার পরিষ্কার, পিত্ত নিয়ন্ত্রণ
নিমপাতা -----------------রক্ত পরিষ্কার, অ্যালার্জি প্রতিরোধ
চিরতা ---------------------ডিটক্স, চর্মরোগ প্রতিরোধ
সরষে শাক ---------------লিভার পরিষ্কার, পিত্ত নিয়ন্ত্রণ
গিমা শাক ----------------লিভার পরিষ্কার, পিত্ত নিয়ন্ত্রণ
তেতো খাবার খাওয়ার সঠিক উপায়
তেতো জাতীয় খাবার গুলির মধ্যে কোন ধরনের খাবার কিভাবে খেতে হবে তার একটি নমুনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-১। করলা রান্না
- পাতলা করে কেটে লবণ দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন।
- পানি ঝরিয়ে দিয়ে ভাজি করুন পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে।
- চাইলে সরিষার তেলে ঝোল করেও খাওয়া যায়।
২। নিমপাতার রস
৭-১০টি নিমপাতা বেটে হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খালি পেটে খান।
৩। চিরতার পানি
- ১ চা চামচ চিরতা রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালে সেই পানি ছেঁকে খালি পেটে পান করুন।
৪। উচ্ছে দিয়ে ডাল
উচ্ছে ভাজা করে ডালে দিলে সুস্বাদু হয় এবং এটি সহজে হজম হয়।
৫। সরষে এবং গিমা শাক
সরষে এবং গিমা শাকও কিছুটা তেতো স্বাদের। এটি শরীরের পিত্তজনিত সমস্যা দূর করে, এবং হজম ও লিভার কার্যক্রমে সাহায্য করে।
সতর্কতা
তেতো খাবার উপকারী হলেও অতিরিক্ত খেলে হজমের গোলমাল হতে পারে। কোন খাবারে কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন তা নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি:
- অতিরিক্ত তেতো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন: বিশেষ করে যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন।
- গর্ভবতী নারী, যাদের লো প্রেসার রয়েছে—তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করলা বা চিরতা খাবেন না।
- রোজ খালি পেটে খেলে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন, বিশেষ করে নিমপাতা বা চিরতার রস।
উপসংহার
প্রকৃতির দেওয়া উপহারগুলো আমাদের সুস্থতার সবচেয়ে বড় সহায়ক। করলা, উচ্ছে, চিরতা, নিমপাতা সরিষা এবং গিমা শাক—সবই আমাদের দেহকে করে তোলে রোগমুক্ত, ফিট ও সতেজ।
এই গরমে তাপমাত্রা যতই বাড়ুক, একবেলা তেতো খেয়ে নিজেকে রাখুন ঠান্ডা ও সুস্থ। কারণ শরীর যদি ভালো থাকে, জীবনও সুন্দর হবে।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url