বাংলাদেশের চর ও হাওড় অঞ্চলের পরিবেশ বর্ণনা কর

প্রিয় পাঠক,বাংলাদেশের চর ও হাওড় অঞ্চলের পরিবেশ বর্ণনা সম্পর্কিত তথ্য জানার জন্য খুব আগ্রহী, এ বিষয়ে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন বই-পুস্তক এবং ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করছেন? তাহলে আপনার জন্য আজকের এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আজকের এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের চর ও হাওড় অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ, বাংলাদেশের চরাঞ্চলের চাষাবাদ ও বসতি, হাওড় অঞ্চল, হাওড় অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, হাওড় অঞ্চলের পরিবেশ, হাওড় অঞ্চলের উদ্ভিদসমূহ, হাওড় অঞ্চলের পাখিসমূহ, হাওড় অঞ্চলের বসতি, হাওড় অঞ্চলের চাষাবাদ সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করা হয়েছে, চলুন বিস্তারিত দেখে নিই।

চর অঞ্চল (Char Area)

চর হল এমন একটি স্থলভাগ যা চারপাশে পানি দ্বারা আবদ্ধ। সেটা কোন সমুদ্র, সাগর, হ্রদ, নদী মোহনা বা নদীতে হতে পারে। তবে সাধারণত নদী বা নদীর মোহনায় চরের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের সাধারণত নদী ক্ষয় ও পরিবহনের মাধ্যমে নদীতে বা নদীর সাথে সংযুক্ত জলাভূমিতে চরের সৃষ্টি হয়। এ চরে বসতি স্থাপন ও কৃষিকাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। চরের আশেপাশে সারা বছর পানি থাকে এবং মূল ভূখণ্ডের সাথে সরুস্থলভাগ দ্বারা সংযুক্ত থাকে ফলে কৃষিকাজ এবং বসতি স্থাপনের সুযোগ থাকে।

বাংলাদেশের চর

চর এলাকায় সারা বছরই নদীর পানি ও ভূগর্ভস্থ পানি পাওয়া যায়, তবে এখানকার মৃত্তিকার সব ধরনের ফসল ফলানোর জন্য উপযোগী নয়। সাধারণত চরের মৃত্তিকা বেলে দোআঁশ প্রকৃতির। প্রায় সারা বছর চরের আশেপাশে পানি থাকায় এখানকার অধিবাসীরা মৎস্য স্বীকার করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। অনেক চরে প্রচুর পরিমাণে ঘাস জন্মায়, যা গবাদি পশুপালনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশের চর অঞ্চল

১৯৯৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রায় ১৭২২ বর্গ কিলোমিটার চর ছিল। বাংলাদেশের চর অঞ্চলকে পাঁচটি উপ-বিভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১। যমুনা নদীর চরাঞ্চল (Chars of the Jamuna River)
২। গঙ্গা নদীর চরাঞ্চল (Chars of the Ganges)
৩। পদ্মা নদীর চরাঞ্চল (Chars of the Padma)
৪। আপার মেঘনা নদীর চরাঞ্চল (Chars of the Upper Megna) এবং
৫। লেয়ার মেঘনা নদীর চরাঞ্চল ((Chars of the Lower Megna)।

১। যমুনা নদীর চরাঞ্চল (Chars of the Jamuna River)

যমুনা নদী বিনুনি সাদৃশ্য হাওয়াই এর চরের আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। ১৯৯২ সালে ল্যান্ডস্যাট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যমুনা নদীতে প্রচুর চরের সৃষ্টি হয়েছে। এ নদীতে প্রায় ৫৬ টি বড় ধরনের চর রয়েছে যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার। আর প্রায় ২২৬ টি ছোট আকৃতির চর রয়েছে যার দৈর্ঘ্য প্রায় ০.৩৫ হতে ৩.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।

২। গঙ্গা নদীর চরাঞ্চল (Chars of the Ganges)

যমুনা নদী থেকে গঙ্গা নদীর চর সৃষ্টির ধরন ভিন্ন। এই নদী দুইটি জল নিষ্কাশনগত বৈশিষ্ট্য ও ভিন্নতর। যমুনা হলো বিনুনি সাদৃশ্য এবং গঙ্গা আঁকাবাঁকা নদী। প্রতিনিয়ত চরের সৃষ্টি নদী ২ টিতে জল নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করেছে। যমুনা ও গঙ্গা নদীর সংযুক্ত চর ও দ্বীপচর ভিন্ন ধরনের। যমুনা নদী থেকে গঙ্গা নদীতে সংযুক্ত চরের সংখ্যা বেশি।

৩। পদ্মা নদীর চরাঞ্চল (Chars of the Padma)

১৯৯৩ সালের দিকে পদ্মা নদীতে শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ১৩ টি বড় দ্বীপচর পরিলক্ষিত হয়, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার এবং ১৮ টি ছোট দ্বীপচর দেখা যায় যা দৈর্ঘ্য ০.৩৫ থেকে ৩.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়। এই চরগুলো বাগান আবৃত ও বালুকাময়। মাওয়ার কাছে পদ্মা এক স্রোত বিশিষ্ট এবং এখানে কোন চর নেই। নদী যেখানে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত সেখানে লম্বা ও প্রশস্ত দীপচর পরিলক্ষিত হয়।

৪। আপার মেঘনা নদীর চরাঞ্চল (Chars of the Upper Megna)

আপার মেঘনা নদীর চর এলাকা সম্পূর্ণ স্থায়ী। এখানে নদী বহু ধারা বিশিষ্ট। ধারাগুলো সমান্তরাল প্রবাহিত হয় বিধায় এক একটি ধারা পৃথক নদী মনে হয়। এখানকার চর গুলো দ্বীপচর, যার বয়স প্রায় ৭০ বছর। মোট তীরভাগের ৮৩% চর এলাকা।

৫। লেয়ার মেঘনা নদীর চরাঞ্চল ((Chars of the Lower Megna)

লেয়ার মেঘনা নদীর মোহনার বৈশিষ্ট্য পদ্মা ও আপার মেঘনার বৈশিষ্ট্য যথেষ্ট ভিন্নতর। লেয়ার মেঘনা নদীর মোহনা যথেষ্ট প্রশস্ত হয়েছে যে কারণে এখানে চরের আয়তন বেশি। তবে চাঁদপুরের নিকট মেঘনার অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্নতর।

বাংলাদেশের চরাঞ্চলের চাষাবাদ ও বসতি (Cultivation and Settlement)

যমুনা নদীতে সবচেয়ে চরের সংখ্যা বেশি। এখানে ১৯৯২ সালে মোট চর এর আয়তন ছিল প্রায় ১ লক্ষ হেক্টর। যেখানে অন্যান্য নদীতে মোট চরের পরিমাণ ৭৫ হাজার হেক্টর। বর্তমান সময়েও যমুনাতে চরের পরিমাণ বেশি। এ চরের পরিমাণ যমুনায় ৪৫%, গঙ্গায় ৩০%, পদ্মায় ২০%, আপার মেঘনায় ৪০% ও লেয়ার মেঘনায় ২০% পরিলক্ষিত হয়। অন্যান্য সব নদীর চর থেকে উত্তর যমুনার চর এলাকার মৃত্তিকা ও পানি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের, যা বসতি ও চাষাবাদ করার জন্য মানুষকে আকৃষ্ট করে। লেয়ার মেঘনায় শুধু শুষ্ক মৌসুমে চর এলাকায় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে যা চর এলাকার পরিবেশের উপর খুব সামান্য প্রভাব ফেলে, বিধায় এখানে বেশ জনবসতি গড়ে উঠেছে। সব নদীর চেয়ে আপার মেঘনায় চরের স্থায়িত্ব সবচেয়ে বেশি বিধায় এখানে চর বসতির পরিমাণও বেশি।

১৯৯৩ সালের হিসাবে বাংলাদেশের চর এলাকায় জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৬ লাখ ৩১ হাজার। তার মধ্যে ৬৫% জনসংখ্যা যমুনা নদীর চর এলাকায় বসবাস করত। ১৯৮৪ সালের তুলনায় ১৯৯৩ সালের চর এলাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় ৪৭%। চর বাসীর জীবনযাত্রা বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙ্গন প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।

হাওড় (Haor)

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাংশের জেলাগুলোতে হাওড় দেখা যায়। হাওড়ের আকৃতি সাধারণত থালার মত এবং অগভীর প্রকৃতির হয়। আমাদের দেশের সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জ জেলায় হাওড় রয়েছে। এই অঞ্চলে প্রায় ৪০০ টির মতো হাওড় ও বিল রয়েছে। এগুলো নদী, বিল, খাল দ্বারা সংযুক্ত। প্রাকৃতিকভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে পরিত্যাক্ত নদী খাত এবং ভূ-আন্দোলনের সময় ভূমি অবনমনের ফলে এই হাওড়ের সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন হাওড়ে ঋতুভিত্তিক বন্যা দেখা যায়। এতে ওই হাওড়ের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এখানকার হাওড় গুলোর আয়তন কয়েক হেক্টর থেকে কয়েক হাজার হেক্টর পর্যন্ত হতে পারে।

বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চল

বাংলা ভাষায় জলাভূমির আকার, আকৃতি, আয়তন ও সৃষ্টির ইতিহাসের ভিত্তিতে বিভিন্ন নামকরণ করা হয়, যেমন- হ্রদ, হাওড়, বাওড়, ঝিল ও বিল। মূলত এই ৫ প্রকার জলাভূমি সাধু পানির জলাভূমি। হাওড়, বাওর ও বিলের মধ্যে পার্থক্য খুব সামান্য। একটি বিল যা বিশেষ ভৌগোলিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়, যার গভীরতা খুবই কম ও অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির এবং প্রায় সারা বাংলাদেশে দেখা যায়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কর্দমাক্ত।

কোন কোন বিলের মধ্যে দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়েছে। অনেক বিল আছে যেগুলো শীতকালে শুকিয়ে যায় এবং বর্ষাকালে পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে সাধু পানির লেগুনে পরিণত হয়। সাধারণত বিল হাওড়ের থেকে ছোট কিন্তু কিছু কিছু বিল আছে যেগুলো হাওড় অপেক্ষা বড়। যেমন রাজশাহী বিভাগের চলনবিল। হাওড়ে সাধারণত সারা বছর পানি থাকে তবে এর অপেক্ষাকৃত উঁচু অংশের পানি শীতকালে শুকিয়ে যায়। হাওড়ের এই অংশকে বিল বলা হয়। একটি হাওড়ে অনেকগুলো বিল থাকতে পারে। অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদকে বাওড় বলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেট অঞ্চলের হাওড়ের আয়তন প্রায় ৪৪৫০ থেকে ২৫০০০ বর্গ কিলোমিটার, আর সারা বাংলাদেশে মোট হাওড় ধরনের জলাভূমির পরিমাণ ৮০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। সিলেট এলাকার হাওড় অঞ্চল এর উত্তরে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকা, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পূর্বে আসাম ও মনিপুর রাজ্যে অবস্থিত। এখানকার হাওড়ের মধ্যে উঁচু ও নিচু ভূমি রয়েছে। এখানে প্রায় ৪৭ টি প্রধান হাওড় রয়েছে। হাওড় এলাকার ভূমির নিম্নগমন হচ্ছে যার হার প্রতি বছরের ২০ মিলি মিটার। কোন কোন জায়গায় কয়েক শত বছর আগে এর হার ছিল প্রায় ১০ মিটার। অঞ্চলটির ভূপ্রকৃতি ও জল নিষ্কাশন ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে কিছু ভূগোলবিদ এলাকাটিকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা-

১। পাহাড়ের পাদদেশীয় অঞ্চল (Piedmont area)

পাহাড়ের পাদদেশে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা, যে স্থানটি সাধারণত বন্যা মুক্ত সেটি এই অঞ্চলের অন্তর্গত। পাহাড় থেকে নেমে আসা অমসৃণ ও মোটা কাপড় দ্বারা এলাকাটির ভূমির সৃষ্টি হয়।

২। প্লাবন সমভূমি (Floodplain Area)

এই এলাকাটি মৃদু ঢালযুক্ত। বেসিন এর মধ্যভাগে ইহা অবস্থিত। পাহাড় থেকে বাহিত অপেক্ষাকৃত মসৃণ ও ছোট আকৃতির কাকর এই এলাকায় সঞ্চিত হয়। বর্ষা মৌসুমী এলাকাটি মাঝে মাঝে প্লাবিত হয়।

৩। প্লাবিত অঞ্চল (Deeply flooded area)

এ অঞ্চলটি বেসিনের সবচেয়ে গভীরতম অঞ্চল। বর্ষা মৌসুমী এলাকাটি প্লাবিত হয়। এই জলময় অঞ্চলকে বিল বলে।

হাওড় অঞ্চলের পরিবেশ

হাওড় অঞ্চল একটি দুর্গম এলাকা, যেখানে প্রায় প্রতিবছর বন্যা হয়। এই এলাকা উপক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত। এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৪০০০ মিলিমিটার। প্রায় ৮০% বৃষ্টিপাত বর্ষাকালে হয়ে থাকে। প্রাক-মৌসুমে তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি হতে ৩১ ডিগ্রি সেঃ, বর্ষাকালে হতে ২৮ ডিগ্রি হতে ৩১ ডিগ্রি এবং শীতকালে ২৬ ডিগ্রি হতে ২৭ ডিগ্রি পরিলক্ষিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঋতুভিত্তিক বন্যা হয় এই থালা আকৃতির জলাশয় যা হাওড় নামে পরিচিত। 

বাংলাদেশের সবচাইতে বড় হাওড় হল হাকালুকি হাওড়। জুলাই হতে নভেম্বর মাসে যখন এখানে বন্যা হয় তখন হাওড় গুলো দেখতে সাগরের মতো লাগে। ঝড়ো বাতাসে হাওড়ের পানির উচ্চতা কখনো কখনো ১.৫ মিটার পর্যন্ত হয়। হাওড়ের সাধারণত ৭ মাস পানি থাকে এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির হ্রাস পায়, তবে অগভীর হাওড়ের পানি একেবারে শুকিয়ে যায়। হাওড়ের মাটি বেশ উর্বর বিধায় এখানে ধান চাষ ভালো হয়। এখানকার অধিবাসীরা প্রকৃতির সাথে বেশ সংগ্রাম করে জীবিকা নির্বাহ করে।

হাওড় অঞ্চলের উদ্ভিদসমূহ

হাওড় এলাকায় ৯ টি উদ্ভিদ সম্প্রদায়ের চিহ্নিত করা হয়েছে। যথা-

১। ডুবন্ত উদ্ভিদ (Submerged plants),
২। মুক্ত ভাসমান উদ্ভিদ (Free floating plants),
৩। শিকরযুক্ত ভাসমান উদ্ভিদ (Rooted floating plants),
৪। কর্দমাক্ত ও নিচু জায়গার ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ (Sedges and meadows),
৫। প্লাবন সমভূমির ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ (Floodplain grassland),
৬। জলাভূমির নলখাগড়া জাতীয় উদ্ভিদ (Reed swamp),
৭। সাধু পানির জলাভূমির বনভূমি (Fresh water swamp forest),
৮। চাষাবাদ ভূমির উদ্ভিদ (Crop field vegetation),
৯। বসতভিটার উদ্ভিদ (Homestead vegetation)।

হাওড় অঞ্চলের পাখিসমূহ

জলাভূমির পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব উপলব্ধির জন্য বাংলাদেশের তিনটি জলাঞ্চলকে চিহ্নিত করা হয় এবং সেগুলোকে নিরাপদ ব্যবহার ও সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়, এর মধ্যে হাকালুকি হাওড় অঞ্চল একটি অন্যতম।

বাংলাদেশের প্রায় ২০৭ প্রজাতির পাখি বাস করে বা ভ্রমণ করে। এর মধ্যে ৩০% জলজপাখি, ২৬% লম্বা পা যুক্ত কাদা পানিতে হাঁটা পাখি, ২০% ঝোপ ঝাড়ে বসবাসকারী পাখি, অবশিষ্ট অংশ তৃণভূমি বা আকাশ থেকে শিকার করে যা বাজপাখি নামে পরিচিত।

প্রতিবছর শীতকালে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ অতিথি পাখি বা ভ্রমণশীল পাখি এ দেশে আসে। বিশ্বের উচ্চ অক্ষাংশ অবস্থিত দেশসমূহ হতে এই অতিথি পাখি আমাদের দেশে আসে। আবার শীতের শেষে স্বদেশে ফিরে যায়। সাধারণত উত্তর গোলার্ধে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে এই পাখি আমাদের দেশে আগমন করে। অতিথি পাখিরা দেশের হাওড় ও বিল অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি অবস্থান করে।

হাওড় অঞ্চলের বসতি

হাওড় এলাকার বসতি সম্পর্কে ১২ শতকের পূর্বে তেমন কোন তথ্য নেই। ব্রিটিশ আমলের ১৭ শতকের দিকে কিছু জরিপ কার্য হলেও পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এটা বিশ্বাস করা হয় যে, এখানে যারা প্রথমদিকে বসতি স্থাপন করেছিল তারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী এবং উপজাতি। উপজাতিদের মধ্যে গারো, খাসিয়া, হাজং প্রভৃতি। ১৯৫২ সালের ব্যাপক সংখ্যায় আফগান এই এলাকায় অভিগমন করে। ১৬১২ সালের দিকে আফগানরা সিলেট বিজয় করে।

হাওড় অঞ্চলের চাষাবাদ

হাওড় এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে মাছের চাষ করা হয়। আবার ঋতুভিত্তিক বন্যা প্লাবিত হাওড়ে ধান চাষ করা হয়। এখানকার প্রধান ফসল হলো বোরো ধান। তবে প্রাক-মৌসুম বন্যায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি করে। হাওড়ের জলজ উদ্ভিদ জ্বালানি ও জৈব সার তৈরি কাজে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া হাওড়ের ঘাস দ্বারা ব্যাপকহারে গবাদিপশু পালন করা হয়। সাম্প্রতিক কালে হাওড়ে বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন করা হচ্ছে।

উপসংহার

হাওড় একটি চমৎকার জলাভূমি যেখানে ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করে। এখানে ভ্রমণের উৎকৃষ্ট সময় হলো বর্ষা মৌসুমের শেষ অর্থাৎ আগস্ট মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যখন হাওড় পানি দ্বারা পূর্ণ থাকে। শীতকালে হাওড় গুলোতে হাজার হাজার অতিথি পাখি আশ্রয় নেয়। পাখি দর্শনার্থীদের জন্য এটা উপযুক্ত সময়।
বাংলাদেশের চর ও হাওড় অঞ্চলের পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা উপস্থাপন করেছি, আমি আশা করছি এই বিষয় সম্পর্কে আপনাদের পরিপূর্ণ ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি। এই বিষয় সম্পর্কে আপনার যদি কোন ফিডব্যাক থাকে, তবে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখবেন। এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনটি মনোযোগের সহিত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url