শিলা কাকে বলে, কতিপয় আগ্নেয় শিলার বর্ণনা

শিলা কাকে বলে (Rock)

ভূদৃশ্যে যা আমরা দেখি তার সাধারন নাম শিলা। ইংরেজি 'Rock' বা বাংলা 'শিলা'-উভয় শব্দ দ্বারা সাধারণত আমরা কঠিন পদার্থকে বুঝে থাকি। প্রকৃতপক্ষে শিলা কঠিন হতে পারে, আবার কাঁদার মত নরমও হতে পারে। পাথর নূড়ি, কাকর, বালি, মাটি, কাঁদা সবই শিলা। বিভিন্ন মৌলিক উপাদান দ্বারা খনিজ সৃষ্টি, আর বিভিন্ন খনিজদের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় শিলা। তাই বলা যায়, এক বা একাধিক খনিজ উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে মিলিত হয়ে যে পদার্থ গঠন করে, তাকে শিলা বলে। একমাত্র মৌলিক উপাদান দ্বারা যেমন, খনিজ সৃষ্টি হয়, তেমনি একমাত্র খনিজ দ্বারা শিলা ও সৃষ্টি হতে পারে। তবে ভূপৃষ্ঠের অধিকাংশ শিলাই একাধিক খনিজ পদার্থ দ্বারা সৃষ্ট। বিভিন্ন প্রকার খনিজ পদার্থ দ্বারা সৃষ্ট হয় বলে শিলার মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে। এমনকি জৈব পদার্থ (উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহবাশেষ) দ্বারাও শিলা সৃষ্টি হয়।

কতিপয় আগ্নেয় শিলার বর্ণনা (Some Familiar Igneous Rock)


শিলা কাকে বলে, কতিপয় আগ্নেয় শিলার বর্ণনা

ব্যাসল্ট (Basalt)

যে উদগারী আগ্নেয় শিলা কৃষ্ণ বর্ণের এবং মিহি দানার, তাতে যদি অর্ধেকের বেশি ফেল্ডস্পার এবং বাকিটা লৌহ ও ম্যাগনেসিয়াম- এর সিলিকেট খনিজ পাইরক্সিন হয়, তবে সে শিলাকে ব্যাসল্ট বলে। ব্যাসল্ট লাভার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ম্যাগমা থেকে উৎপন্ন। ব্যাসল্ট লাভা যথেষ্ট তরল বলে সহজেই প্রভাবিত হয় এবং জমে গেলে ষষ্ঠকোণী স্তম্বাকৃতি শিলাদেহ উৎপন্ন হয়। ফিসার অগ্নুৎপাতের উদ্গারী লাভা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাসল্ট। বিভিন্ন ভূ গাঠনিক বৈচিত্র্যে অনুরূপ খনিজ সংযুক্তির পরিকাঠামোতে ব্যাসাল্টের বিভিন্ন রূপভেদ দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে দুইটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, প্লাবন ব্যাসল্টে থলিআইট ও মধ্যমহাসাগরীয় ফাটল ও অনুরূপ প্লেট প্রান্তে স্পিলাইট।

ব্যাসল্ট (Basalt)

গ্রানাইট (Granite)

কোয়ার্টজ ( ২০% থেকে ৪০% ) এবং ক্ষারকীয় ফেল্ডস্পার ও স্বল্প অভ্র ও হর্নব্লেন্ড বা অন্য গৌন খনিজে তৈরি মোটা দানার পাতালিক শীলাকে গ্রানাইট বলে। ভূত্বকের প্রচণ্ড চাপের প্রভাবে শীতল হয়ে জমাট বাঁধতে এর প্রচুর সময় লাগে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাথলিথ রূপে পাওয়া যায়। অবশ্য গ্রানাইট ব্যাথলিথ ছাড়াও ডাইক, সিল, আগ্নেয়রোধক শিলা ইত্যাদি রুপে ও বর্তমান। গ্রানাইট মাগমা ভূপৃষ্ঠে উৎখিপ্ত হয়ে আম্লিক লাভার জন্ম দেয়। আম্লিক লাভা জমে সুক্ষ দানার রায়োলাইট, অফসিডিয়ান, পিসস্টোন ইত্যাদি শিলা উৎপন্ন হয়।
গ্রানাইট (Granite)

গ্রানোডায়রাইট (Granodiorite)

একটি দৃশ্য কেলাসি ভূগর্ভস্থ শিলা। ছেলেটি মূলত সঠিক শিলাটি মূলত সডিক প্ল্যাজিওক্ল্যাজ, ক্ষার ফেল্ডস্পার,কোয়ার্টজ এবং স্বল্পমাত্রার গাঢ় বর্ণের খনিজ দিয়ে গঠিত। গ্রানোডায়রাইট গ্রানাইট ও কোয়ার্টজ ডাইরাইট এর মাঝামাঝি অবস্থানে আছে। সুবিধার জন্য গ্রানাইট এবং গ্রানোডায়রাইট কে সাধারণত গ্রুপ করা হয় এবং গ্রানাইট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
গ্রানোডায়রাইট (Granodiorite)

ডায়োরাইট (Diorite)

পাতালিক আগ্নেয় শিলা। এটি স্টক, সিল ও ডাইক রূপে অবস্থান গ্রহণ করে। এর প্রধান উপাদান প্লেজিওক্লেজ ফেলসপার। ডায়োরাইট গাঢ় সাই অথবা কৃষ্ণ বর্ণের হয়। এর দানাগুলো মাঝারি আকৃতির। তবে ডায়োরাইট গ্রানাইট ও সায়েনাইটের তুলনায় বিরল শিলা।
ডায়োরাইট (Diorite)

সায়েনাইট (Syenite)

প্রধানত অ্যালকালি ফেল্ডস্পার অথবা সিলিকা অসম্পৃক্ত নেফলিন জাতীয় খনিজে তৈরি মোটা দানার সমক্ষারাম্ল পাতালিক আগ্নেয় শিলার নাম সায়োনাইট। এছাড়া গৌণ খনিজ রুপে থাকে বায়োটাইট, হর্নব্লেন্ড, অগাইট, জারকন, স্ফিন এবংএপেটাইট। সায়েনাইট লঘু বর্ণের হতে পারে। আবার গৌণ লৌহম্যাগনেসিও খনিজের প্রাচুর্য থাকলে ঘেরবর্ণের ও হতে পারে। সাধারণত সায়েনাইট অবকৃষ্ণাভ শিলা।
সায়েনাইট (Syenite)

গ্রাব্রো (Gabbro)

গাঢ় ধূসর বা কৃষ্ণ বর্ণের পাতালিক শিলাই যদি সিলিকা কম থাকে এবং প্রধান উপাদানস্বরূপ ক্যালসিয় প্ল্যাজিওক্ল্যাজ, পাইরক্সিন ও অনেক সময় অলিভিন বর্তমান থাকে, তবে সে শীলাকে গ্রাব্রো বলে। এ ছাড়া হর্নব্লেন্ড, অলভিন ও অন্যান্য খনিজ এর সাথে সামান্য পরিমাণে থাকতে পারে। এর দানা গুলো মাঝারি ধরনের। এটি ভূগর্ভে ল্যাকোলিথ, স্টক, ডাইক, ও সিলরূপে অবস্থান গ্রহণ করে।
গ্রাব্রো (Gabbro)

অ্যান্ডেসাইট (Andesite)

অ্যান্ডেসাইট ডায়োরাইট জাতীয় শিলার অন্তর্ভুক্ত। আন্দিজ পার্বত্য এলাকায় এ শিলার প্রাচুর্য বলে একে অ্যান্ডেসাইট বলে। প্ল্যাজিওক্ল্যাজ, ফেল্ডস্পার এর প্রধান উপাদান। তাছাড়া এর সাথে পাইরক্সিন, বায়োটাইট, হর্নব্লেন্ড প্রভৃতি অল্প পরিমাণে বিদ্যামান। এর দানা সূক্ষ্ম, খালি চোখে দেখা যায় না। সূক্ষ্ম দানা ও উজ্জ্বল বলে এটি দেখতে কাঁচের মতো। এটি গাঢ় ছাই ও হালকা সবুজ বর্ণের হয়।

অ্যান্ডেসাইট (Andesite)

রায়োলাইট (Rhyolite)

সূক্ষ্ম দানাদার আগ্নেয় শিলার একটি সাধারন নাম রায়োলাইট। এটি সিলিকা সমৃদ্ধ আগ্নেয় শিলা যার রাসায়নিক গঠন মোটামুটিভাবে গ্রানাইট তুল্য। ভূ-ভাগীয় আগ্নেয়গিরি থেকে রায়োলাইট উদগীরণ হয়, দ্রুত শীতলায়নের কারণে এটি সূক্ষ্ম দানাদার বা কাচ সাদৃশ্য হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায়।

রায়োলাইট (Rhyolite)

পেরিডোটাইট (Peridotite)

অন্তঃজ আগ্নেয় শিলায় পাওয়া যায়। এর প্রধান উপাদান পাইরেক্সিন ও অলিভিন। এর মধ্যে কোন প্রকার ফেলসপার জাতীয় উপাদান থাকে না। এর রং সাধারণত কালো বা গাঢ় ছাই। উপাদানের ভিত্তিতে পেরিডোটাইট দুই ধরনের; ডুনাইট ও পাইরক্সিনাইট।

পেরিডোটাইট (Peridotite)

ফেলসাইট (Felsite)

এটি একটি আম্লিক শিলা। কোয়ার্টজ ও ফেল্ডস্পারের মতো হালকা বর্ণের খনিজ পদার্থ দ্বারা গঠিত বিশেষ ধরনের আগ্নেয় শিলাকে ফেলসাইট বলে। এর কেলাস আকৃতির গঠন এত সুক্ষ যে তা চোখে দেখা যায় না। বাষ্পযুক্ত হওয়ায় এ শিলায় অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র দেখা যায় যা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ শিলা সাধারণত হালকা বাদামী, হালকা সবুজ, ধূসর ও সাদা রঙের হয়ে থাকে।

ফেলসাইট (Felsite)

অবসিডিয়ান (Obsidian)

গ্রানাইটের সংযুক্তির কাচ সাদৃশ্য শিলা কে অবসিডিয়ান বলে। এটি ঘোর কৃষ্ণবর্ণ।

অবসিডিয়ান (Obsidian)

রকেলাইট (Rockalite)

উত্তর আটলান্টিকের রকওয়াল নামক দ্বীপে গাঢ় বর্ণের যে সোডা গ্রানাইট পাওয়া যায়, তাকে রকেলাইট বলে।

রকেলাইট (Rockalite)

রায়োডেসাইট (Rhyodacite)

এডাম্যালাইটের বহিঃস্থ সমতুল্য শিলা, রায়োডেসাইট নামে পরিচিত। এটি এক প্রকারের অর্ধ কেলাসিত বহিঃস্থ আগ্নেয় শিলা। এতে রায়োলাইটের মত স্রোত গঠন ও ডোরা দেখা যায়। এর খনিজের সমন্বয় রায়োলাইট ও ডেসাইটের মাঝামাঝি, তাই একেরায়োডেসাইট বলা হয়।

রায়োডেসাইট (Rhyodacite)

উপসংহার

আমরা আজকে শিলা কাকে বলে এবং বিভিন্ন প্রকারের আগ্নেয় শিলার বিস্তারিত বর্ণনা সম্পর্কে উপস্থাপন করেছে করেছি। আশা করছি এ সম্পর্কে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যগুলো বুঝতে পেরেছেন। এ বিষয়ে যদি আপনার কোন পরামর্শ থাকে তবে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখবেন। এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনটি মনোযোগের সহিত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url