স্বয়ংভোগী কৃষি এবং স্বয়ংভোগী কৃষির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমূহ
প্রিয় পাঠক, স্বয়ংভোগী কৃষি এবং স্বয়ংভোগী কৃষির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমূহ বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন, এ বিষয়ে সঠিক তথ্য কোথায় পাবেন তা নিয়ে চিন্তিত? তাহলে এবার সঠিক জায়গায় এসেছেন। আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজন।
আজকের এই প্রতিবেদনে স্বয়ংভোগী কৃষি এবং স্বয়ংভোগী কৃষির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমূহ সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ অনেক নির্ভরযোগ্য ও সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। চলুন আমরা এবার বিস্তারিত বিষয়গুলো জেনে নিই।
ভূমিকা
কৃষি কাজ হচ্ছে মূলত ভূমি চাষ করে ফসল উৎপাদনের প্রক্রিয়া। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার তারতম্যের কারণে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের কৃষি পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। এসবের মধ্যে স্বপ্রয়োজনীয় বা স্বয়ংভোগী কৃষি অন্যতম। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ নিজস্ব চাহিদা মেটানোর তাগিদে যে কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করেছে তাই স্বয়ংভোগী কৃষি।
স্বয়ংভোগী কৃষি (Subsistence Agriculture)
স্বয়ংভোগী কৃষি বলতে ওই ধরনের কৃষি ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে কৃষকেরা শুধুমাত্র নিজস্ব প্রয়োজনে ফসল উৎপাদন করে থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, যে কৃষি ব্যবস্থা দ্বারা কোন অঞ্চলের অধিবাসীগণ শুধু নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা উপযোগী ফসলাদি উৎপাদনে সচেষ্ট হয়, তাকে স্বয়ংভোগী কৃষি বলে। এক্ষেত্রে উৎপন্ন ফসলের খুব সামান্যই রপ্তানি করার সুযোগ হয়। পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক এরূপ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। ধান এ কৃষির প্রধান ফসল। এছাড়া কালাই,মসুর,মুগ, ছোলা, তেলবীজ, বাজরা প্রভৃতি ও এই কৃষি কাজের আওতায় চাষাবাদ করা হয়।
স্বয়ংভোগী কৃষির সংজ্ঞা (Definition of Subsistence Agriculture)
সাধারণভাবে বলা যায়, যে কৃষি ব্যবস্থায় উৎপাদিত ফসল শুধুমাত্র নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়, তাকে স্বয়ংভোগী বা স্বপ্রয়োজনীয় কৃষি বলা হয়। বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে এই কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কিত সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো-
১। বেলজার (Beljer, 1963) বলেন," স্বয়ংভোগী কৃষি বলতে বোঝায়, এমন একটি বৃহৎ মূলধন বা বহু শ্রমিকের ওপর তার প্রতি ইউনিট জমি নির্দেশ করে।"
২। সিরাজুল ইসলাম (Sirajul Islam, 1996) বলেন," যে কৃষি ব্যবস্থায় কৃষকগণ জীবন ধারণের নিমিত্তে কেবল নিজ পরিবারের প্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করে থাকে, তাকে স্বয়ংভোগী কৃষি বলে।"
৩। ব্রোক ফিল্ড (Brokfield, 1967) বলেন, "কৃষি যেখানে প্রধান উপজীবিকা এবং লাভজনক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় না, তাই স্বয়ংভোগী কৃষি হিসেবে অভিহিত।"
৪। কেপক ও ব্লান্ট (Cappock & Blant, 1967) এর মতে," স্বয়ংভোগী কৃষি হচ্ছে এমন একটি কৃষি যেখানে কৃষক ও তার পরিবার ভোগের পর সামান্য কিছু বিক্রয় করে থাকে।"
৫। মাজিদ হাসান (Majid Hasain, 1998) বলেন," স্বয়ংভোগী কৃষি হচ্ছে সেই প্রকৃতির কৃষি পদ্ধতির যা তার নিজের এবং তার পরিবারের জন্য উৎপন্ন করে থাকে।"
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, স্বয়ংভোগী কৃষি হচ্ছে সেই কৃষি ব্যবস্থা যা সেই স্থানের সেই জনগণের প্রয়োজনে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী।
স্বয়ংভোগী কৃষির প্রকৃতি (Nature of Subsistence Agriculture)
স্বয়ংভোগী কৃষির প্রকৃতি বলতে এর চাষাবাদের প্রাধান্য, প্রক্রিয়া, পশুপাখির ভূমিকা, কৃষি জমির অবস্থা, মৎস্য চাষ ইত্যাদিকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। প্রধানত ৫ টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে স্বয়ংভোগী কৃষিকে অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে আলাদা করা যায়। যথা-
১। শস্য চাষাবাদের প্রাধান্য (Heavy Emphasis on Crops)
২। চাষা বাদের প্রক্রিয়া (Cropping Methods)
৩। কৃষি জমির ভূমিকা (Farm layout)
৪। পশুর ভূমিকা (Role of Animals)
৫। মৎস্য চাষের ভূমিকা (Role of Fishing)
১। শস্য চাষাবাদের প্রাধান্য (Heavy Emphasis on Crops)
স্বয়ংভোগী কৃষির ক্ষেত্রে পশুপালনের চেয়ে শস্য ফলাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। শস্যের মধ্যে দানাদার জাতীয় শস্য যেমন- ধান, গম, জব, শালগম প্রভৃতি অধিক পরিমাণে আবাদ হয়ে থাকে। জাপান, কোরিয়া, দক্ষিণ চীন, ভিয়েতনাম ও মায়ানমার উপকূল বরাবর এবং বাংলাদেশে প্রধানত ধানের চাষ হয়ে থাকে।
২। চাষা বাদের প্রক্রিয়া (Cropping Methods)
বিশ্বের বহু স্থানে স্বয়ংভোগী কৃষির চর্চা হয়ে থাকলেও চাষাবাদের জন্য সাধারণত গৃহপালিত পশু ব্যবহার করা হয়। লাঙ্গল, কোদাল ইত্যাদি দ্বারা সাধারণত জমি চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। স্বয়ংভোগী কৃষিতে দুই ধরনের চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন-
আন্তঃকৃষি
এ পদ্ধতিতে দুই তিন রকমের শস্য উৎপাদন করা হয়। শস্য গুলো পাকার সময়ও বিভিন্ন হয়। এসব ফসল একই জমিতে বিভিন্ন সারিতে পরপর পর্যায়ক্রমে লাগানো হয়। জাপান, চীন প্রভৃতি দেশে এ ধরনের চাষাবাদ পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়।
বহুপর্যায়ী চাষাবাদ
কোন জমিতে বছরে পরপর কমপক্ষে দুইটি বা তিনটি ফসল চাষাবাদ করা হলে তাকে বহু পর্যায়ে চাষাবাদ বলে। প্রথম ফসল কাটার পর দ্বিতীয় ফসলের বীজ বপন করা হয়। শুধুমাত্র পরিবেশ অনুকূলে থাকলেই কখনো কখনো তিনবার ধান বা অন্যান্য ফসলের চাষ করা হয়।
৩। কৃষি জমির ভূমিকা (Farm layout)
পৃথিবীর বেশিরভাগ স্থানেই কৃষি জমির অবস্থা ছোট হয়ে থাকে। সামান্য কয়েকটি স্থানে এর পরিমাণ এক একর হয়ে থাকে। দেখা যায় জাপানের নিম্নভূমিতে বড় জমির আয়তন ৩ একর, চীনের কৃষি জমির আয়তন কিছুটা বৃহৎ এবং ভারতের কিছু স্থানে এর পরিমাণ প্রায় ১০ একরের মতো। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কৃষিজমি দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দেখা যায়।
ব্যক্তিগত কৃষি জমিগুলো যদিও ক্ষুদ্রাকৃতির, তবুও এগুলোর সমষ্টি পৃথিবীর চাষযোগ্য জমির এক অতিশয় বৃহৎ অংশ। কৃষি জমির খন্ডিত করনের পিছনে উত্তরাধিকারের কারণটি প্রধান। কোন জমির স্বত্বাধিকারীর অবর্তমানে তার বংশধরদের মাঝে তা ভাগ বাটোয়ারার ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশেপরিণত হতে দেখা যায়। অতএব কৃষি জমির অবস্থান ভেদে ছোট বড় হয়ে থাকে।
৪। পশুর ভূমিকা (Role of Animals)
এ কৃষি অর্থব্যবস্থায় পশুর একটি সহকারী ভূমিকা রয়েছে। যেসব জমি চারনক্ষেত্র রূপে পরিগণিত হওয়ার কারণে পুরোপুরি অনাবাদি সেগুলোকে পশু দ্বারা আবাদযোগ্য করা হয়। গরু, মহিষ, ভেড়া প্রভৃতি গবাদি পশু বহুল পরিমাণে এ কাজের ব্যবহৃত হয়। উষ্ণ এবং আর্দ্র অঞ্চলে জলজ মহিষ অত্যন্ত কঠোর এবং কষ্টসাধ্য কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। পাহাড়ি এবং শীতল এলাকায় খচ্চর বা গাধার সাহায্যে প্রত্যাহিক কৃষিকাজ করা হয়।
অন্যান্য কয়েকটি জন্তু যেমন- শুকুর, হাঁস, মুরগি এবং ছাগলের বিভিন্ন ভূমিকা রয়েছে। এগুলো সাধারণত ময়লা আবর্জনা অপসারণকারি রূপে ভূমিকা পালন করে। এ পশুগুলো দুই ধরনের ভূমিকা পালন করে। প্রথমত, মৃত্তিকার জন্য সারের যোগান দেওয়া এবং দ্বিতীয়ত, মানুষের জন্য কিছু মাংস ও দুধের যোগান দেওয়া।
৫। মৎস্য চাষের ভূমিকা (Role of Fishing)
সাধারণত যখন জমিতে যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন হয় না, তখন প্রোটিনের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য মৎস্য চাষ করা হয়ে থাকে। এটি দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হল মৎস্য চাষ এবং অপরটি হল মৎস্য আহরণ।
মৎস্য চাষ
স্বয়ংভোগী কৃষির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে মৎস্য চাষ। চীনে ১৯৫০ সালের প্রথম দিকে থাইল্যান্ডের কৃষি মন্ত্রণালয় এর সহযোগিতায় তেলাপিয়া মাছের চাষে পরীক্ষামূলক একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। একজোড়া তেলাপিয়া মাছ থেকে বছরে প্রায় দশ হাজার পর্যন্ত মাছ উৎপন্ন করা হয়ে থাকে। এরপর থেকে মৎস্য চাষ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
মৎস্য আহারণ
নদী এবং সমুদ্র উপকূল থেকে সাধারণত মৎস্য আহরণ করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু লোক সর্বক্ষণিক মৎস্য আহরণে নিয়োজিত থাকে। সাধারণত চীন এবং জাপান উপকূল বরাবর বহু লোক এরূপ মৎস্য আহরণে নিয়োজিত। তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মৎস্য আহরণ করতে দেখা যায়। সুতরাং স্বয়ংভোগী কৃষিতে মৎস্য চাষের ভূমিকা অপরিসীম।
স্বয়ংভোগী কৃষির বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Subsistance Agriculture)
স্বয়ংভোগী কৃষির বৈশিষ্ট্য সমূহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের কৃষি পদ্ধতি দেখা যায়। বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার তারতমের উপর ভিত্তি করে কৃষি ব্যবস্থা তৈরি হয়। এসবের মধ্যে স্বয়ং ভোগী কৃষি অন্যতম। স্বয়ংভোগী কৃষির চার ধরনের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যথা-
১। সাধারন বৈশিষ্ট্য (General Characteristics)
২। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য (Psysical Characteristics)
৩। অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য (Economic Characteristics)
৪। রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য (Political Characteristics)।
১। সাধারন বৈশিষ্ট্য (General Characteristics)
স্বয়ংভোগী কৃষির কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই সাধারণ বৈশিষ্ট্য গুলো এ কৃষি সম্পর্কে সার্বিক ধারণা প্রদান করে থাকে। নিম্নে এগুলো উল্লেখ করা হলো-
- এক কৃষিতে নিয়োজিত কৃষকেরা কেবল নিজেদের প্রয়োজনে চাষাবাদ করে থাকে।
- এটি মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের কৃষি।
- এ কৃষির বেশিরভাগ কৃষকই গরিব বা দরিদ্র, এজন্য তাদের জীবনযাত্রার মান নিম্ন হয়।
- কৃষির আওতায় জমিগুলো অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে বিভক্ত। তাই আধুনিক কৃষি পদ্ধতির ব্যবহার বেশ কঠিন।
- কৃষির বেশিরভাগ জমি পুরনো পদ্ধতিতে অর্থাৎ গবাদিপশু, লাঙ্গল-জোয়াল প্রভৃতির সাহায্যে চাষাবাদ করা হয়।
- এ কৃষিতে উৎপাদিত ফসল শুধুমাত্র পারিবারিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
- এ কৃষিতে জমি তৈরি করা, বীজ বপন বা গাছ রোপণ, ফসল কাটা, মাড়ায় ঘরে তোলা প্রভৃতি কাজগুলো কৃষক নিজেই করে থাকে।
- এ কৃষিতে অল্প মূলধন বিনিয়োগ করতে হয়।
- এ কৃষি অঞ্চলে জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি দেখা যায়।
- এ কৃষির জন্য ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রা এবং ১০০ থেকে ২০৩ সেঃ মিঃ বৃষ্টিপাত প্রয়োজন হয়।
- এ কৃষিতে কোন বহির্বাণিজ্য নাই।
- নিজ সংসারের চাহিদা পূরণের পর যে অল্প পরিমাণ ফসল উদ্বৃত্ত থাকে তা পার্শ্ববর্তী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিক্রি করে দৈনন্দিন অন্যান্য চাহিদা মেটানো হয়ে থাকে।
২। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য (Psysical Characteristics)
স্বয়ংভোগী কৃষির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য গুলোর ওপর মানুষের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এগুলো প্রকৃতি কর্তৃক পরিচালিত হয়। নিম্নে এসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো-
ভূপ্রকৃতি
সাধারণ নিচুভূমি স্বয়ংভোগী কৃষির জন্য অধিক উপযোগী। তবে জীবিকা নির্বাহের নিমিত্তে বর্তমানে সমভূমি, পাহাড়ের পাদদেশ এমনকি ঢালুভূমিতে বা চত্বরেও চাষাবাদ করা হয়ে থাকে।
মৃত্তিকা
প্লাবন সমভূমির মৃত্তিকা স্বয়ং ভোগী কৃষি বিশেষ করে ধান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি পলিযুক্ত উর্বর দোআশ মৃত্তিকা নামে পরিচিত। এ মৃত্তিকায় উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। ফসলের উৎপাদন বেশ ভালো হয়।
তাপমাত্রা
এ অঞ্চলের সাধারণত অধিক তাপমাত্রা বিরাজমান। নিরক্ষীয় অঞ্চলের আশেপাশে প্রায় .৩০ থেকে ৪২ ডিগ্রী সেঃ তাপমাত্রা দেখা যায়। এ অঞ্চলে ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি উভয় অক্ষাংশে গ্রীষ্মকালে প্রায় ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেঃ এবং শীতকালে ৪ থেকে ১২ ডিগ্রী সেঃ পর্যন্ত উত্তাপ অনুভূত হয়। শীতকালে কখনো কখনো এ তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে চলে আসে।
বৃষ্টিপাত
এ কৃষিকাজে ১০০ থেকে ২০৩ সেমি বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। তবে ১০০ সেমি কম বৃষ্টিপাত হলে সেচের প্রয়োজন হয়।
নদনদীর অবস্থান
এ কৃষির অধিকাংশ ফসল নদনদী, খাল বিল প্রভৃতি উপকূলে উৎপাদিত হয়। কারণ এরূপ স্থানে চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি ও উর্বর জমি পাওয়া যায়।
৩। অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য (Economic Characteristics)
স্বয়ংভোগী কৃষির অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য গুলো জীবনযাত্রা মান সম্পর্কে ধারণা দেয়। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
মূলধন
স্বয়ং ভোগী কৃষিতে বিভিন্ন বীজ সার চাষের উপকরণ শ্রমিকের মজুরি পরিবহন খরচ প্রভৃতির জন্য প্রচার মূলধন প্রয়োজন হয়। কিন্তু কৃষকেরা সে অনুপাতে পর্যাপ্ত মূলধন পায় না। ফলে উৎপাদনে এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
শ্রমিক
স্বয়ংভোগী নিবিড় কৃষিগুলো গ্রাম প্রতিষ্ঠার সাথে বিশেষভাবে জড়িত। এখানে লক্ষ লক্ষ লোক তাদের নিজস্ব কৃষি ভূমিতে বসতি স্থাপন করে এক স্থানের দলবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছে। তাই এই কৃষিতে কম মূল্যে শ্রমিক সরবরাহ করা সম্ভবপর হয়।
চাষের যন্ত্রপাতি
এ কৃষির অধিকাংশই উন্নয়নশীল দেশে অবস্থিত। এখানকার জমি গুলোর আকৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিধায় লাঙ্গল, কোদাল প্রভৃতি দ্বারা জমি চাষ করা হয়। উন্নত আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। বর্তমানে স্বয়ংভোগী কৃষিতে উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়েছে।
পশুর ব্যবহার
স্বয়ংভোগী কৃষির কৃষকেরা চাষাবাদের জন্য পশুশক্তির উপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে লাঙ্গল চালানো, গাড়ি বহন, ফসল বহন প্রভৃতি কাজে পশুশক্তি ব্যবহার করা হয়। কোন কোন স্থানে গরু, মহিষ বা ভেড়ার সাহায্যে চাষাবাদ করা হয়। এতে উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
বর্গাচাষ
ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষকেরা অন্যের জমি চুক্তিভিত্তিক বর্গা নিয়ে চাষ করে। অনেক কৃষক নিজের জমি চাষের সাথে সাথে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে থাকে।
বাজার
স্বয়ংভোগী কৃষিতে কোন বহির্বাণিজ্য নেই। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্বগোত্রীয় লোকদের মাঝে সামান্য কিছু পণ্যদ্রব্য লেনদেন হয়ে থাকে। তাই এ কৃষির কয়েকটি প্রধান ফসলের ক্রয় বিক্রয় এবং নানা রকমের সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য উন্নত বাজার ব্যবস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন।
পরিবহন ব্যবস্থা
এ কৃষি কাজে বহু লোক ও পণ্যদ্রব্যের যাতায়াতের জন্য সড়ক ও রেলপথ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই কৃষকের উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে পায়ে হেঁটে কর্দমাক্ত রাস্তা ও নদী পথের মাধ্যমে পরিবহন কাজ সমাধা করতে হয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
স্বয়ংভোগী কৃষির কোন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নেই। কারণ নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
৪। রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য (Political Characteristics)
স্বয়ংভোগী কৃষকদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সরকার চাষাবাদ, ফসল উৎপাদন, বাজার ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। নিম্নে এসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ভূমিস্বত্ত্ব
স্বয়ংভোগী কৃষিকাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অল্প সংখ্যক ধনী কৃষক অধিকাংশ জমির মালিক। ফলে ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকদের অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করতে হয় কিংবা শ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ করতে হয়।
উৎপাদন কৌশল
স্বয়ংভোগী কৃষিতে লাঙ্গল-জোয়াল, গরু, মহিষ, ঘোড়া প্রভৃতি দ্বারা জমি চাষাবাদ, হাত দ্বারা বীজ বপন ও চারা রোপণ এবং কাস্তে, নিড়ানি প্রভৃতি দ্বারা পরিচর্যা ও কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে শস্য উৎপাদন করা হয়।
কৃষিভূমি আকার
স্বয়ংভোগী কৃষিভূমির আকার কোন কোন স্থানে এক একরের চেয়েও সামান্য বেশি। জাপানের উঁচু ভূমিতে দুই একর হলেও নিম্ন ভূমিতে কৃষিক্ষেতের পরিধি প্রায় তিন একর। আবার ভারতের কয়েকটি স্থানে ১০ একর বিশিষ্ট কৃষিভূমি রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৃষিভূমি গুলো অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির।
জনসংখ্যার ঘনত্ব
স্বয়ংভোগী কৃষি অঞ্চলে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক জনসংখ্যার ঘনত্ব পরিলক্ষিত হয়। গঙ্গা নদীর উপত্যকায় পলি গঠিত সমভূমিতে প্রতি বর্গ কিলোমিটার ১০০০ থেকে ২২৫০০ জন লোক বসবাস করে। মাথাপিছু বাংলাদেশের ০.০৮ একর, ভারতে ১.৭ একর এবং জাপানে ০.১ একর ভূমি রয়েছে।
উপসংহার
আজকের এই প্রতিবেদনে স্বয়ংভোগী কৃষি এবং স্বয়ংভোগী কৃষির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য উপস্থাপন করেছি। আমি আশা করছি এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি। এ সংক্রান্ত বিষয়ে যদি কারো পরামর্শ থাকে তবে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখবেন। প্রতিবেদনটি ভাল লাগলে শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিবেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url