পরিবেশের সংজ্ঞা এবং পরিবেশের গঠন ও উপাদান সমূহ
প্রিয় পাঠক, পরিবেশের সংজ্ঞা এবং পরিবেশের গঠন ও উপাদান সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাচ্ছেন, এ বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের বই-পুস্তক ঘাঁটাঘাটি করছেন কিংবা বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন, তাহলে এবার সঠিক জায়গায় এসেছেন, আপনার জন্য এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত প্রয়োজন।
আমার আজকের এই আর্টিকেলে পরিবেশের সংজ্ঞা পরিবেশের গঠন যেমন জৈব পরিবেশ ও অজৈব পরিবেশ পরিবেশের মূল উপাদান সহ আরো বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। চলুন এগুলো এবার দেখে নিই।
ভূমিকা
ইংরেজি Environment শব্দের আভিধানিক অর্থ পরিবেশ বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা। জন্মের উষালগ্ন থেকে মানুষ তথা গোটা প্রাণিজগতের সাথে পরিবেশের সম্বন্ধ অতি নিবিড়, চিরন্তন ও অবিচ্ছেদ্য। পরিবেশ হচ্ছে মানুষ ও প্রাণী জগৎকে কেন্দ্র করে সমগ্র পারিপার্শ্বিক অবস্থা যা সামগ্রিকভাবে প্রাকৃতিক বিবর্তন প্রক্রিয়া ও জীবনচক্রকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ লিথোস্ফিয়ার (Lithesphere), হাইড্রোস্ফিয়ার (Hydrosphere) এটমোস্ফিয়ার (Atmosphere) এবং বায়োস্ফিয়ার (Biosphere) এর চারটি মন্ডল মিলিত হয়ে যে অবস্থা সৃষ্টি করে তাকেই পরিবেশ বলা হয়। ইহা সর্বদাই পরিবর্তনশীল।
পরিবেশের সংজ্ঞা
প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক চেতনার মিশ্রণে গঠিত এমন একটি এলাকা হলো পরিবেশ। পরিবেশের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিভিন্ন পরিবেশবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশের সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমন-
প্রফেসর চেম্বার্স এর মতে, "কোন কিছুর উন্নতি বা সমৃদ্ধির ওপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান সমূহের সমষ্টি হল পরিবেশ।"
Jose de Costro এর মতে, "পরিবেশ শুধুমাত্র জীবজগতের পারস্পরিক সম্পর্কই নির্ণয় করে না বরং ইহা প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে।"
জীব বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিকোণ থেকে-"জীবের বেঁচে থাকা ও বংশবৃদ্ধির সহায়ক পরিস্থিতিকে পরিবেশ বলে।"
ভূগোলের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে-" প্রকৃতির সাথে জীবজগতের সম্পর্ক ও এদের সহাবস্থানকে পরিবেশ বলে।"
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে," পৃথিবীর সব কিছু অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ থেকে ওজোন স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত পরিমণ্ডলে বিদ্যমান আলো, বাতাস, পানি, শব্দ, মাটি, বন, পাহাড়, নদ-নদী, মানুষ নির্মিত অবকাঠামো এবং গোটা উদ্ভিদ জীবজগতের সমন্বয়ে যা সৃষ্ট তাকে পরিবেশ বলে। এই পরিবেশের উপাদান গুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক আছে এবং ভারসাম্য রক্ষা করে।"
মোটকথা পরিবেশ হচ্ছে এক ধরনের শক্তি যাতে বিভিন্ন উপাদান গুলি একত্রিত হয়ে থাকে এবং উপাদান গুলির পারস্পরিক সম্পর্ককে আমরা পরিবেশ বলে থাকি যা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ পরিবেশ= প্রকৃতি + সম্পদ + জীবজগত।
পরিবেশের গঠন
পিটারহেগেট (Petter Haggett) পরিবেশ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেছেন যে, পরিবেশ একটি সামগ্রিক অবস্থা যা ভূপৃষ্ঠের কোন একটি স্থানে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। পরিবেশ বর্তমানে মানুষের ক্রিয়া কর্মের দ্বারা অনেকাংশে প্রভাবিত। সুতরাং এই পরিবেশকে গাঠনিক দিক থেকে বিবেচনা করলে পরিবেশের উপাদান দেখা যায়। যথা-
(ক) অজৈব পরিবেশ,
(খ) জৈব পরিবেশ।
(ক) অজৈব পরিবেশ
অজৈব পরিবেশের গঠন কাঠামো দিক দিয়ে উহাকে আবার তিনটি উপাদানে ভাগ করা যায়। যথা-
১। অশ্ব মন্ডল (Lithosphere)
২। জল মন্ডল (Hydrosphere) এবং
৩। বায়ুমণ্ডল (Atmosphere)।
১। অশ্ব মন্ডল (Lithosphere)
Lithosphere এই শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক শব্দ থেকে। ইহার অর্থ শিলা। ভূপৃষ্ঠের ১৪ মাইল গভীরতা নিয়ে ইয়া গঠিত। পৃথিবীর গ্যাসীয় অবস্থা থেকে ক্রমশঃ বর্তমান কঠিন অবস্থা ধারণ করে। পৃথিবীর কতাংশ অপেক্ষাকৃত শীতল হয়ে ঘনীভূত হয় এবং ভারী উপাদান গুলো ক্রমশঃ পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে যেতে থাকে। এভাবে পৃথিবীর অশ্বমন্ডল স্তরটি বিভিন্ন উপাদানগুলি তারতম্য অনুসারে স্তরে স্তরে সঞ্চিত আছে।
২। জল মন্ডল (Hydrosphere)
মহাসাগর, সাগর, উপসাগর, হ্রদ সমন্বয়ে বারিমন্ডল গঠিত। ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের শতকরা ৭১ শতাংশ জুড়ে আছে পানির রাশি। ভূত্বকের অবনত অংশে অবস্থিত এ বিশাল পানি রাশি কে বারিমণ্ডল বলে। বারিমন্ডল জীবজগতের আরেকটি প্রয়োজনীয় অংশ। পানির বিভিন্ন অবস্থা যেমন- কঠিন, তরল ও বায়বীয় নিয়েই জল মন্ডল।
৩। বায়ুমণ্ডল (Atmosphere)
হাজার হাজার কিলোমিটার পুরু যে বায়ুর সমূদ্র পৃথিবীর চারপাশে বেষ্টন করে আছে তাকে বায়ুমণ্ডল বলে। এ মন্ডলের সাথে জীবের অস্তিত্ব সম্পর্ক, তাই একে জীবস্তর নামে ও অভিহিত করা হয়। এ গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে এবং জীবজগতের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান-কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ুর জন্য বায়ুমণ্ডল দায়ী।
এভাবে বিভিন্ন অজৈব পদার্থের সমন্বয়ে এক ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে পৃথিবীর জল, স্থল, পাহাড়, পর্বত, মৃত্তিকা, জলবায়ু, গ্রহ, নক্ষত্র, আলো, বাতাস ইত্যাদি নিয়ে পৃথিবীতে অজৈব পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এক কথায় বলতে পারি জীবন হীন বিভিন্ন বস্তু সমূহের সংঘটিত অবস্থাকে অজৈব পরিবেশ বলে। এভাবে আমরা কোন নদীর পরিবেশ, সমতল ভূমির পরিবেশ, পর্বত অঞ্চলের পরিবেশ বুঝতে পারি।
(খ) জৈব পরিবেশ
জীবনের সমন্বয়ে গঠিত যে পরিবেশ তাকেই আমরা জৈব পরিবেশ বলে থাকি। যেমন- মানুষ, প্রাণী, জীবাণু ইত্যাদি নিয়ে যে পরিবেশ গঠন কাঠামো সৃষ্টি হয় তাকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। যেমন-
১। মানুষ
২। প্রাণী এবং
৩। জীবাণু।
১। মানুষ
মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব। এ বিশাল পৃথিবীর যা কিছু আছে তা মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। অগ্রগতির ফলে পরিবেশে মানুষের ভূমিকা ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রস্তর যুগের পরিবেশে মানুষের যে ভূমিকা ছিল বর্তমানে আণবিক যুগের সে ভূমিকা ক্রমশঃ পরিবর্তন হচ্ছে। দেখা যায় প্রায় ১৫ হাজার বছর পূর্বে মানুষ কৃষিকার্য করতে শিখল, তারপর হতেই পরিবেশের সাথে মানুষের সম্পর্কের দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। ক্রমশঃ মানুষ ধাতব পদার্থের ব্যবহার শিখলো এবং বুদ্ধি বলে বিভিন্ন আবিষ্কার করতে লাগল। মানুষের জাতিগত বৈশিষ্ট্য, ঐতিহ্য, বুদ্ধি ও উন্নতর প্রয়োজন মিটানোর জন্য সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করল, এভাবে মানুষ প্রযুক্তি বিদ্যার উন্নতির ফলে ভৌত ও যৌগ পরিবেশের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানুষ বনভূমি বিনষ্ট করে গ্রাম, শহর, নগর, বান্দর গড়ে তুলে পরিবেশের পরিবর্তন করছে। কাজেই আমরা দেখতে পারি, পরিবেশ গঠনের প্রধান উপাদান হলো 'মানুষ', যাদের হস্তক্ষেপে প্রতিনিয়ত সাংস্কৃতিক, প্রাকৃতিক প্রভৃতি পরিবেশকে পরিচালিত করেছে এবং নিজ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী তৈরি করেছে।
২। প্রাণী
পরিবেশগত কাঠামোর আরো একটি প্রধান জৈব উপাদান হলো প্রাণী। বিভিন্ন ধরনের প্রাণী বিভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করে। জীব বহুরাংশে পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। পরিবেশই প্রাণীগণকে আশ্রয় দেয়। এবং তাদের ভার বহন করে। পরিবেশই জীবের বৃদ্ধি ও জীবন ধারণের জন্য খাদ্য সরবরাহ করে এবং বংশবিস্তারে ও সাহায্য করে। বিভিন্ন পরিবেশ বিভিন্ন গোত্র ও জীবের প্রয়োজন মিঠাই, কিন্তু স্থলচর প্রাণীর প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয় না। পরিবেশের কোন পরিবর্তন কোন সজীব বস্তুর উপর প্রভাব বিস্তার করে, যেমন জল হতে মাছকে উপরে তুললে অল্প সময়ের মধ্যে মাছের মৃত্যু হয়। তেমনি একটি বিড়ালকে পানিতে ডুবিয়ে রাখলে উহা অল্প সময় পরে মারা যায়। এইভাবে বিভিন্ন প্রাণীর জন্য বিভিন্ন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং দেখা যায় পরিবেশের গঠন কাঠামোতে প্রাণীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৩। জীবাণু
জীবাণু সাধারণত পরজীবী উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহকে আশ্রয় করে বসবাস করে। যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি। পরজীবী সমূহ উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহে বসবাস করে। বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে থাকে এবং পরজীবীরা উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ হতে খাদ্য গ্রহণ করে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, এভাবে তারা তাদের মধ্যে এক ধরনের পরিবেশের সৃষ্টি করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন উপাদান গুলোর আশ্রয়স্থল হচ্ছে পরিবেশ।
উপরোক্ত আলোচনায় পরিবেশের গঠন কাঠামো অর্থাৎ পরিবেশ যে সকল উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত তাহা জানতে পারি।
পরিবেশের মূল উপাদান
পরিবেশের শ্রেণীবিভাগ করতে গিয়ে অনেক সময় প্রাকৃতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশের কথা বলা হয়। কিন্তু সাংস্কৃতিক বা সামাজিক পরিবেশ মানুষের সৃষ্টি এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যে মানুষ ছাড়াও জৈব এবং অজৈব উপাদানের উপস্থিতি চিহ্নিত হয়। অতএব প্রাকৃতিক পরিবেশের মূল উপাদান গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
১। ভৌগোলিক অবস্থান
ঘূর্ণায়মান পৃথিবীতে কোন স্থানের অবস্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কোন স্থানের অবস্থান অক্ষরেখা, মধ্যরেখা বা দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে নির্ণয় করা হয়। কোন স্থানের অবস্থান বিশেষত অক্ষাংশের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অক্ষাংশের তারতম্যের উষ্ণতা ও জলবায়ুর তারতম্য ঘটে। অর্থাৎ ভৌগোলিক অবস্থানের উপর তথাকার উষ্ণতা, শীতলতা ও জলবায়ুর পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত হয়।
২। ভূমিরূপ
পৃথিবীর ভূমিরূপ কে প্রধানত কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। যেমন-
- বিভিন্ন আকৃতি ও আয়তনের মহাদেশ ও সমুদ্র অববাহিকা,
- মহাদেশগুলির প্রধান বা মুখ্য ভূমিরূপ, যথা-পার্বত্য মালভূমি ও সমভূমি, এবং
- মহাদেশ গুলির গৌণ ভূমিরূপ, যেগুলি এই তিনটি ভূমিরূপের পরিবর্তনে গঠিত হয়।
এই বিভিন্ন ভূমিরূপ মানস্য জীবনের ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে যেমন-পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসী গন খাদ্য উৎপাদনে যে পদ্ধতি অবলম্বন করে, সমভূমিতে বসবাসকারী কৃষিজীবী নিশ্চয়ই ভিন্ন পদ্ধতিতে তাহা উৎপাদন করে। নিম্ন জলাভূমিতে যাতায়াত ব্যবস্থা যেরূপ ব্যয় সাপেক্ষ, তরঙ্গায়িত ভূভাগে সেখানে, সুন্দর জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে তথায় নিশ্চয় কম ব্যয় সাপেক্ষ হবে।
আবার কোন বৃহৎ মহাদেশের প্রান্ত ভাগের দেশগুলো সহিত অভ্যন্তর ভাগের দেশগুলোর জলবায়ু মৃত্তিকা ও উদ্ভিদের যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং বিভিন্ন ভূমিরূপ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব বিস্তার করে তথায় সুষ্ঠু পরিবেশ গঠনে সহায়ক কর.
৩। ভূ-তাত্বিক গঠন
শিলার প্রকৃতিক মানুষের বসতি স্থাপনের সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির অবস্থান কিংবা ভূমির অভ্যন্তরীণ গঠনের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি জলাধার গঠন কিংবা শিলার কারণে কোথাও পানি অত্যান্ত উন্নত মানের বা কোথাও ব্যবহারের অযোগ্য বলে বিবেচিত হয় যার উপর কৃষি বা শিল্প নির্ভর করে।
৪। মৃত্তিকা
মৃত্তিকা ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে অবস্থান করে, কৃষি কাজের সাফল্য মৃত্তিকার উর্বরা শক্তির ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে। যে সকল অঞ্চলের মৃত্তিকা সূক্ষ্ম এবং গাছের খাদ্যতে পরিপূর্ণ সেই সকল অঞ্চলের জলবায়ুর কৃষির উপযুক্ত হয়। আবার অনুর্বর মৃত্তিকা যুক্ত অঞ্চলের অধিবাসীরা ততটা সমৃদ্ধশালী নয়।
৫। জলবায়ু
পরিবেশের সকল উপাদানের ওপরই জলবায়ুর প্রভাব বিস্তার করে। কোন অঞ্চলের জলবায়ু সেই অঞ্চলের অবস্থান, ভূমিরূপ, মৃত্তিকা প্রভৃতির ওপর যেরূপ নির্ভর করে জলবায়ু ও অনুরূপভাবে উহাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের চিরহরিৎ বৃষ্টি অরণ্য মরু অঞ্চলের ঝোপ এবং শীতল নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের সরল বর্গের বৃক্ষের বনভূমি জলবায়ুর পার্থক্যের জন্য সৃষ্টি হয়েছে।
৬। উদ্ভিদ
অনেক সময় বলা হয় উদ্ভিজ্জ ভূপৃষ্ঠের জলবায়ু এবং মৃত্তিকা গঠনে প্রভাব বিস্তার করে। মানুষ বনভূমি হতে খাদ্য শিল্পের কাঁচামাল ঔষধ এবং গৃহ নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়াও বনভূমি মানুষের বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা এনে দেয়। বনভূমি পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে বলে বিজ্ঞানীগণ মনে করেন। বায়ুমন্ডলে CO2 ও O2 এবং বৃষ্টিপাত বনভূমি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
৭। প্রাণী জগত
প্রাণী জগতের সাথে উদ্ভিদ জগতের একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। বেশিরভাগ প্রাণীই তৃণভোজী এবং এই তৃণভোজী প্রাণীর ওপরই নির্ভর করে মাংসভোজী প্রাণী। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রাণীজগতের একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়।
উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিশেষ করে জৈব ও অজৈব পরিবেশ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা লাভ করা যায়। কিন্তু এছাড়াও মানুষ পরিবেশের উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে অথবা পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। এগুলোকে সাধারণভাবে সামাজিক পরিবেশ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, এর উপাদান হিসেবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবন যাত্রার মান, সাংস্কৃতিক পর্যায় এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এগুলো সামাজিক উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাংস্কৃতিক পর্যায় অনেকের মতে অর্থনৈতিক উপাদানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এতে মুক্ত অর্থনীতি, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি, মিশ্র অর্থনীতির কারণে বিভিন্ন দেশে উন্নতির পর্যায় বিভিন্ন রকম হয়েছে, যার প্রভাব অবশ্যই পরিবেশের ওপর পড়ে।
লেখকের মন্তব্য,
আজকের এই আর্টিকেলে পরিবেশের সংজ্ঞা এবং পরিবেশের গঠন ও উপাদান সমূহ আলোচনা করা হয়েছে, আশা করছি এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। এই আর্টিকেলটি তথ্যবহুল করার জন্য বিভিন্ন লেখকের বই অনুসরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে যদি কোন পরামর্শ থাকে তবে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখবেন। এই ওয়েবসাইটের এডমিন প্রতিটা কমেন্টসের জবাব প্রদান করেন। ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url