সৌরজগতের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন মতবাদ সম্পর্কিত

প্রিয় পাঠক, সৌরজগতের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন মতবাদ সম্পর্কিত তথ্য জানার জন্য খুবই আগ্রহী, এ বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের বই ঘাটাঘাটি, খোঁজাখুঁজি ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করেও সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না? তাহলে এবার সঠিক জায়গায় এসেছেন। আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজন।

সৌরজগতের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন মতবাদ সম্পর্কিত

আমার আজকের এই প্রতিবেদনে সৌরজগতের উৎপত্তি, এবং বিভিন্ন দার্শনিক ও জ্যোতিষবিদ এর মতবাদ যেমন- ইমানুয়েল কান্ট এর বাষ্পীয় তত্ত্ব, লাপ্লাসার এর নিহারিকা মতবাদ, চেম্বারলিন ও মূল্টনের গ্রহকণা মতবাদ ও তাদের সমালোচনার সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা

আমাদের এই পৃথিবীর সৃষ্টি কিভাবে হয়েছিল তা জানার জন্য মানুষের আগ্রহের অন্ত নাই। অতি প্রাচীনকাল থেকে বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিকগণ এই রহস্যের ওপর আলোকপাত করতে চেষ্টা করেছেন। পৃথিবীর সৌরজগতের গ্রহগুলির একটি। সুতরাং এর সৃষ্টি সৌরজগতের সৃষ্টির সাথে জড়িত।

পৃথিবী এবং সৌরজগতের উদ্ভব সম্পর্কে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন জনে নানারূপ মত প্রকাশ করেছেন। সেগুলির কোনটিকেই সম্পূর্ণ সঠিক মতবাদ বলে গণ্য করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে এসব মতবাদ অনুমানের ওপর নির্ভর করে সৃষ্টি হয়েছে। সৌরজগতের সৃষ্টির প্রকৃত অবস্থা ও প্রকৃত সন্ধান বৈজ্ঞানিকগণ এখনো পান নাই। তবে মহাশূন্যে মানুষের বিজয় অভিযান শুরু হয়েছে। এ কথা মনে করা অসঙ্গত হবে না যে, মানুষ অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহে গমন ও অনুসন্ধান করে অদূর ভবিষ্যতে সৃষ্টির রহস্যের ওপর আলোকপাত করতে সক্ষম হবে।

সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কিত মতবাদ (Theories of the Origin of Solar System)

সুপ্রাচীন কাল থেকেই সৌরজগতের উৎপত্তির সম্পর্কে জানার জন্য বৈজ্ঞানিক ও জ্যোতির্বিদগণ ক্রমাগত অনুসন্ধান করে আসছেন। তবে এই সৌরজগৎ কিভাবে উদ্ভব হয়েছিল সে সম্পর্কে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন বিজ্ঞানী তাদের মতামত উপস্থাপন করলেও আজ পর্যন্ত সেগুলোর কোনটিই সঠিক মতবাদ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। কেননা এসব মতবাদের অনেকটাই অনুমানের উপর ভিত্তি করে ঘোষিত হয়েছিল। এ ব্যাপারে এপর্যন্ত যতগুলো মতবাদের উদ্ভব হয়েছে সেগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়-
(ক) প্রাকৃতিক বিবর্তন মতবাদ এবং
(খ) অপ্রাকৃতিক বা অস্বাভাবিক সংঘটন।

সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কিত ইমানুয়েল কান্ট এর মতবাদ (Immanuel Kant's Gaseous Theory)

ইমানুয়েল কান্ট ছিলেন অষ্টাদশ শতকের একজন জার্মান দার্শনিক। সৌরজগতের সৃষ্টির সম্পর্কিত তার মতবাদটিই সর্বপ্রাচীন যুক্তি-গ্রাহ্য মতবাদ। ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে সুইডিস বিজ্ঞানীক সুইডেনবার্গের সহযোগিতায় তিনি এই মতবাদটি উপস্থাপিত করেন। ইহা নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে গঠিত।

কান্টের মতে, বর্তমানের সূর্য এবং এর গ্রহ-উপগ্রহগুলি কোন এক অকল্পনীয় অতীতে একটি ঘূর্ণায়মান প্রসারিত নীহারিকা ছিল। এই নীহারিকার অভ্যন্তরস্থ ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর পৃথক পৃথক আকর্ষণী শক্তির ফলে কঠিন বস্তু কোনাগুলির মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়। এতে মূলতঃ শীতল নীহারিকাটি উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং গতিশূন্য বস্তু-কণাসমূহের মেঘটি কালক্রমে একটি বিশালাকার উত্তপ্ত নীহারিকাই পরিণত হয়।

অভ্যন্তরের বস্তুগুলির ক্রমাগত সংঘাতের ফলে এর ঘূর্ণন বেগও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে এর নিরক্ষীয় এলাকাটি প্রসারিত হতে হতে পরপর কয়েকটি বস্তু-স্তর আংটির আকারে মূল নিহারিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উন্নয়ন ঘূর্ণয়মান বস্তুর কেন্দ্রাতক শক্তির ফলেই এটি সম্ভব হয়। প্রত্যেক আংটির আকৃতির বস্তু ঘনীভূত হয়ে এক একটি গ্রহের সৃষ্টি করে। কতগুলি গ্রহ আবার অনুরূপভাবে এক বা একাধিক উপগ্রহের জন্ম দেয়। কান্টের মতবাদ অনুযায়ী এইভাবেই সৌরজগতের উৎপত্তি।

কান্টের মতবাদটির সমালোচনা

  • কান্টের মতবাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সে সময় পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তের অভাব ছিল।
  • নীহারিকার মধ্যে বস্তুকণাগুলোর সংঘাতের ফলে ঘূর্ণন এর সৃষ্টি হবে এটি সাধারণ যান্ত্রিকবিদ্যার নীতির পরিপন্থী।
  • পদার্থবিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল শনি গ্রহের বলায় পরীক্ষা করে দেখেন যে, বলাইতে বস্তু বা পদার্থ দ্বারা গঠিত। কিন্তু কান্টের মতে, সেগুলো বলাই না হয়ে গ্রহ/নক্ষত্র তৈরি হবার কথা। সুতরাং তত্ত্বটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।

সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কিত লাপ্লাসার নীহারিকা মতবাদ (The Nebular Theory of Laplace)

বিখ্যাত ফরাসি জ্যামিতিজ্ঞ পিয়েরী সাইমন দা-লাপ্লাসার ক্যান্টের মতবাদকে উন্নত, পরিমার্জিত এবং আরো বিজ্ঞানসম্মত রূপ দিয়ে ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে তার নীহারিকা মতবাদ রূপে প্রকাশ করেন।

লাপ্লাসার এর মতে, প্রাথমিক অবস্থায় নীহারিকাটি ঠান্ডা ছিল না বরং প্রথম থেকেই বাষ্পাকার, উত্তপ্ত ও ধীরে ধীরে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় ছিল। তাপ বিকিরণের ফলে নীহারিকাটি ক্রমশ শীতল ও সংকুচিত হয়। নীহারিকাটি যতই শীতল হতে থাকে ততই সংকুচিত ও ঘনত্ব প্রাপ্ত হয়। সে সঙ্গে কৌণিক ভরবেগের সমতা রক্ষার জন্য এর ঘূর্ণনবেগ ও বেড়ে যেতে শুরু করে। ঘূর্ণনবেগ বৃদ্ধি পেতে পেতে এমন একটা সময় উপস্থিত হয় যখন এর নিরক্ষীয় অঞ্চলের কেন্দ্রাতিগ শক্তি মহাকর্ষ শক্তির সমান হয়ে পড়ে। এরপর আরো সংকোচন ঘটলে ঘূর্ণনবেগে নিরক্ষীয় এলাকা থেকে এক বলায়াকার অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং একটি বাষ্পীয় গ্রহে পরিণত হয়। মূল নিহারিকা ক্রমশই সংকুচিত হতে থাকে ও অনুরূপভাবে গ্রহ গুলোর সৃষ্টি হয়। মধ্যকার অবশিষ্ট মূল বস্তুটি সংকুচিত হয়ে বর্তমান সূর্যে পরিণত হয়।

লাপ্লাসার নীহারিকা মতবাদের সমালোচনা

কারেন্টের ত্রুটি পরিহার করে লাপ্লাস তার মতবাদে নতুন ব্যাখ্যা দিলেও অনেকের কাছে এটি গ্রহণযোগ্য মতবাদ হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। কারণ-
  • বস্তুর ভর বেশি হলেই তার কৌণিক ভরবেগ বেশি হবে- লাপ্লাসের এই নীতি বিজ্ঞানসম্মত নয়। কেননা তা নির্ভর করে বস্তুর আকৃতি, ঘূর্ণনের গতিবেগ এবং ভরের ওপর।
  • লাপ্লাস এর মতে প্রথম থেকেই উত্তপ্ত ও ঘূর্ণনায়মান নীহারিকা কথা উল্লেখ করেন কিন্তু নীহারিকার উৎপত্তির উৎস সম্পর্কে তিনি কোন বিবরণ দেননি।
  • নীহারিকা মতবাদে প্রায় সকল উপগ্রহই মূল গ্রহ যেদিকে আবর্তন করে সেদিকে আবর্তিত হয় কিন্তু শনি ও বৃহস্পতির উপগ্রহগুলো তার বিপরীত দিকে আবর্তন করে-এর কোন ব্যাখ্যা এই মতবাদ পাওয়া যায়নি।
  • এই মতবাদ অনুযায়ী যদি ধরে নেওয়া হয় যে কতগুলো বলায়ের সৃষ্টি হয়েছিল, তবুও যে ঘনত্বপ্রাপ্ত হয়ে গোলাকার গ্রহে রূপান্তর লাভ করবে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কিত চেম্বারলিন ও মূলটনের গ্রহকণা মতবাদ (Planetesimal Hypothesis of Chamberlin and Moulton)

১৯০৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী অধ্যাপক চেম্বারলিন ও অধ্যাপক এম আর মূলটন সৌরজগতের সৃষ্টি সংক্রান্ত তাদের মতবাদ তুলে ধরেন। তারা নীহারিকা তত্ত্বটি গাণিতিকভাবে তুলে ধরার পর কান্ট ও লাপ্লাসের নীহারিকা তত্ত্বের অনেক ভুল ধরে দেন। তাদের মতে, সৌরজগৎ সৃষ্টির ব্যাপারে একটি নয়, দুইটি মূল বস্তুর প্রভাব রয়েছে। এই দুইটি মূল বস্তুর একটি হলো সূর্য এবং অপরটি হলো উপযুক্ত আয়তন ও ভরসম্পন্ন আরেকটি নক্ষত্র। এই দুইটি নক্ষত্রের আকর্ষণের মধ্যে দিয়ে গ্রহ এবং উপগ্রহ গুলোর সৃষ্টি হয়েছে।

এই তত্ত্বে বলা হয়েছে যে, সূর্য পূর্বেই অস্তিত্বমান ছিল। অন্য একটি নক্ষত্র সূর্যের পাশ দিয়ে যাবার সময় ওই নক্ষত্রের মহাকর্ষ জনিত কারণে সূর্যের শরীর হতে কিছু পদার্থ খসিয়ে দেয়। খসে যাওয়া পদার্থ সমূহ সূর্য যেদিকে ঘুরছে সেদিকে ঘুরতে শুরু করে এবং পরবর্তীতে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম এবং ১% ভারী পদার্থ বস্তুকণা বা ধূলিকণার আকারে মিশ্রিত গ্যাসের সাথে ভাসছিল। নীহারিকার ঘুর্নয়নের কারণে উক্ত বস্তু কণাগুলোর মধ্যে থেকে অপেক্ষাকৃত বৃহৎ বস্তু কণাগুলো কাছের ক্ষুদ্র কণাগুলোকে আকর্ষণের মধ্যে দিয়ে একত্রিত হয়ে জমাট বেঁধে পিণ্ড তৈরি হয়। এক সময় এই পিণ্ডগুলো থেকেই গ্রহের সৃষ্টি হয়। এই জন্যই এই মতবাদকে গ্রহকণা মতবাদ ও বলা হয়।

মতবাদের সমালোচনা

  • সূর্য হতে বিচ্ছিন্ন গ্রহকণাগুলো এতই উত্তপ্ত ছিল যে, সেগুলোর জমাট বেঁধে গ্রহে পরিণত হওয়ার সঠিক ব্যাখ্যা এই মতবাদে পাওয়া যায়নি।
  • এই মতবাদের নয়টি গ্রহের সংগঠনের কথা বলা হলেও কেন একটি কম বা বেশি সংঘটিত হয়নি তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।
  • আলোচ্য মতবাদে গ্রহ গুলো কেন একই দিকে আবর্তিত হচ্ছে তারও কোন সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।

সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কিত জোয়ার মতবাদ (Tidal Hypothesis)

প্রখ্যাত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার জেমস জিন্স ১৯১৯ সালে সৌরজগৎ উৎপত্তি সম্পর্কিত তার মতবাদ প্রকাশ করেন। তার মতে, সূর্যপৃষ্ঠে জোয়ারের কারণে সৌরজগতের উৎপত্তি হয়, আর এজন্য এই মতবাদকে জোয়ারবাদ বলা হয়।

জেমস জিন্স সূর্যের উপর জোয়ারের প্রভাবকে গ্রহ সৃষ্টির অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করেন। তার মতে, সূর্যের চেয়ে বহুগুনে বড় ও শক্তিশালী অন্য একটি নক্ষত্র সম্ভবত তার নিজস্ব গতিপথে বিচরণ করতে করতে ক্রমশ সূর্যের নিকটবর্তী হয়। উভয়ের মধ্যকার দূরত্ব কমতে কমতে একটা সময় উপস্থিত হয় যখন এর প্রচন্ড আকর্ষণে সূর্য পৃষ্ঠে জোয়ারের সৃষ্টি হয় এবং গ্যাসীয় পদার্থ গঠিত ফিলামেন্ট সাদৃশ্য কিছু অংশ সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নিকটবর্তী হওয়ার প্রথম অবস্থায় সূর্য ও নক্ষত্রটির গতিবেগ আনুপাতিক হারে কম ছিল।

নক্ষত্রটি যতই নিকটবর্তী হতে থাকে বিচ্ছিন্ন অংশটির গতিবেগ ততই বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না নক্ষত্রটি নিকটতম স্থানে উপস্থিত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত এর গতিবেগ বৃদ্ধি পায়। এভাবে নক্ষত্রটি যতই সূর্যের নিকটবর্তী হচ্ছিল সূর্যের উপরিভাগে জোয়ারের তীব্রতা তত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। প্রথম পর্যায়ে যেহেতু উভয়ের অনুপাতিক গতিবেগ কম ছিল এবং পরবর্তীতে তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, সেহেতু সূর্যের বিচ্ছিন্ন অংশের মধ্যভাগ ধীরে ধীরে ফুলে মোটা হয় এবং উভয় দিক সরু হয়ে মধ্যভাগ ফুলে পটলাকৃতি ধারণ করে। কিন্তু এর নিকটবর্তী হওয়ার অনেক আগেই নক্ষত্রটি আপন গতিপথে অগ্রসর হচ্ছিল। বিচ্ছিন্ন অংশটি নক্ষত্রটির আকর্ষণে তার গতিপথ অনুসরণ করে চলতে শুরু করল। বাষ্পীয় অবস্থা হতে পটলাকৃতির এই বস্তুটি ধীরে ধীরে তরল অবস্থা পেতে থাকে। উভয় প্রান্ত হতে এক একটি অংশ তরল হয়ে মধ্যকার মোটা অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে তাপ বিকিরণ করে এগুলো সংকুচিত ও কঠিন অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এভাবে সমগ্র বস্তুটি বিচ্ছিন্ন হয়ে এক একটি পৃথক গ্রহের সৃষ্টি হয়। অনুরূপভাবে সূর্যের আকর্ষণের ফলে গ্রহগুলোর ওপর জোয়ারের সৃষ্টি হয় এবং অনেকগুলো উপগ্রহের সৃষ্টি হয়।

সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কিত সংঘর্ষ বাদ (The Collision Theory)

প্রখ্যাত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হ্যারল্ড জেফরীজ জেমস জীনসের জোয়ারের মতবাদের আধুনিকায়ন করে ১৯২৯ সালের তার সংঘর্ষ মতবাদ উপস্থাপন করেন। তার মতে, নক্ষত্রটি তার নিজস্ব গতিপথে চলতে চলতে এক সময় সূর্যের নিকটবর্তী হয়। ক্রমে নক্ষত্রটি যতই সূর্যের নিকটবর্তী হতে থাকে মহাকর্ষ বলের আকর্ষণে উভয়ের গতিবেগ ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। যে ফ্রিজের মতে, শেষ পর্যায়ে উভয়ই এত নিকটবর্তী হয়েছিল যে, তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। যদিও এই সংঘর্ষ মুখোমুখি হয়নি, হয়েছিল অনেকটা স্পর্শকের আকারে এবং সাংঘর্ষিক মুহূর্তে উভয়ের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে কয়েক শত কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। সংঘর্ষের পর সহযোগী নক্ষত্রটির মূল অংশ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে নিজস্ব পথে মহাশূন্যে অদৃশ্য হয়ে যায়।

নক্ষত্র ও সূর্যের মধ্যে সংঘর্ষের পূর্বেই উভয় বস্তু থেকে বেশ কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে। যখন সংঘর্ষের সৃষ্টি হয় তখন প্রচন্ড চাপের প্রভাবে উভয়ের বাইরের স্তর পরস্পরের সাথে মিশে যায়। আবর্তনের একপর্যায়ে নক্ষত্রটি যখন দূরে সরে যেতে থাকে তখন দ্রুত আবর্তন মিশ্রিত স্তরটি সূর্য থেকে নক্ষত্রের দিকে ফিতার আকারে প্রসারিত হয়ে পড়ে। উভয়দিকে আকর্ষণের ফলে উক্ত ফিতা সাদৃশ্য বস্তুটি মাঝের অংশ স্ফিত এবং উভয় প্রান্ত শুরু হয়ে যায়। ফলে গ্রহ গুলোর মধ্যে উভয় প্রান্ত গুলো ছোট এবং মাঝেরগুলো বড়গ্রহের রূপান্তরিত হয়। সৌরজগতের গ্রহ সৃষ্টিতে বিশেষ কর্মটি জেফরীজ মতে, আমাদের সময়ের মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে সম্পন্ন হয়। এই মতবাদের সূর্য ও গ্রহ গুলোর আবর্তনের গতি এবং সবগুলো গ্রহের মোট ভর সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান সক্ষম হয়েছে।

সমালোচনা

প্রতিটি মতবাদের সমালোচনা রয়েছে, এই মতবাদটিরও কিছু সমালোচনা পাওয়া যায় এগুলোর নিচে উল্লেখ করা হলো-
  • বি.লিভিন মনে করেন, মহাবিশ্ব অসীম পরিসর ও সময় অবস্থিত সেখানে নক্ষত্রগুলো ও একে অপর থেকে অধিক দূরত্বে অবস্থিত। সে ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।
  • সূর্য ও নক্ষত্রটির মধ্যে নিকটবর্তী অবস্থানের সময় বা সংঘর্ষের সময় সূর্য বর্তমান অপেক্ষা বহু গুণ বেশি স্থান জুড়ে প্রসারিত ছিল তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।
  • গ্রহ গুলোর বিপুল কৌণিক ভরবেগের উদ্ভব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

মন্তব্য,

সৌরজগতের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন মতবাদ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে আমরা কয়েকটি বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের বা ভূগোলবিদদের মতবাদ আলোচনা করেছি। এর মতবাদ আলোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন লেখকের বই অনুসরণ করতে হয়েছে, এর উল্লেখযোগ্য কারণ হলো তথ্যগুলো নির্ভরযোগ্য করে গড়ে তোলে উপস্থাপন করা। আমি আশা করছি, সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য আপনি বুঝতে পেরেছেন। এর সম্পর্কিত কোনো মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখবেন। আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url