ভূগোলের প্রাকৃতিক ও মানবীয় ভিত্তি এবং এর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
প্রিয় বন্ধুগন, ভূগোলের প্রাকৃতিক ও মানবীয় ভিত্তি এবং এর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, এ বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের বই-পুস্তক ঘাটাঘাটি করে নির্ভরযোগ্য বই খুঁজে পাচ্ছেন না, কিংবা বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করে তথ্যবহুল ও সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না? তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজন। মনোযোগের সহিত শেষ পর্যন্ত দেখতে থাকুন।
আজকের এই প্রতিবেদনে ভূগোলের প্রাকৃতিক ভিত্তির ক্রমবিকাশ, ভূগোলে প্রাকৃতিক ভিত্তি সমূহ, ভূগোলের মানবীয় ভিত্তির ক্রমবিকাশ, ভূগোলে মানবীয় ভিত্তি সমূহ সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। চলুন এগুলো বিস্তারিত দেখে নিই।
ভূমিকা
পৃথিবী তার নিজের বৈশিষ্ট্যের কারণে অনন্য। মহাবিশ্বের ব্যাপক বিস্তৃতির মাঝে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর মত অন্যান্য কোন জ্যোতিষ্কের সন্ধান পাওয়া যায়নি। নক্ষত্রমন্ডলীর সদস্যরা আপন জ্যোতি দ্বারা উজ্জ্বল হলেও পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যেখানে জীব সম্প্রদায় বসবাস করে। জন্ম-মৃত্যু-বৃদ্ধি, বংশবৃদ্ধি এবং প্রজনন প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য সংবলিত জীব প্রজাতির বসতি মহাবিশ্বের মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতে বিদ্যমান বলে একে মহাবিশ্বের কেন্দ্রীয় স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। ভূগোল মূলত পৃথিবী, পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মানুষ সম্পর্কে সমীক্ষা করে।
ভূগোল গ্রন্থ দুইটি শ্রেণীতে বিভক্ত। প্রথমটি প্রাকৃতিক ভূগোল এবং দ্বিতীয়টি মানব বা মানবীয় ভূগোল। প্রাচীনকালের ভূগোল তথা ভৌগলিক জ্ঞানের সনাতন ভাবধারা আধুনিক কালের ভূগোলের ভাব ধরার সাথে একেবারেই অমিল। তবে ভূগোলের ভিত্তি হিসেবে এখনো কেন্দ্রবিন্দু রয়েছে পৃথিবীর সৃষ্টির রহস্য, সৌরজগতের সৃষ্টি, প্রকৃতির সৃষ্টি প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ, মানুষ ও তার মানবীয় কর্মকান্ড এবং তার পরিবেশ।
ভূগোলে প্রাকৃতিক ভিত্তির ক্রমবিকাশ
ভূগোলের প্রধান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো প্রাকৃতিক ভূগোল। এজন্য প্রাকৃতিক ভূগোলের ভিত্তিকেই ভূগোলের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। ভূগোল প্রাচীনকালে জিওগ্রাফি (Geography) নামে পাঠ্যপুস্তক ছিল। গ্রীক পন্ডিত ইরাটোসথেনিস সর্বপ্রথম জিওগ্রাফি (Geography) শব্দের উৎপত্তি করেন, তখন থেকে Geography বা ভূগোল শব্দের যাত্রা শুরু হয়। পন্ডিত ইরাটোসথেনিস প্রথমে ভূগোলের উৎপত্তি মানুষের আবাসস্থল এই পৃথিবীর বর্ণনা হিসেবে ভূগোল গ্রন্থে উপস্থাপন করেন এবং তিনি পৃথিবীর আকৃতি গাণিতিক পরিমাপের নির্ধারণ করেন। 'হেকাটিয়াস' পৃথিবীর প্রাচীনতম ভূগোল গ্রন্থ পেরিয়ডোস (Periodos) এর প্রণেতা। তার এই তখনকার জানা পৃথিবীর জলভাগ, স্থলভাগ ও বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে শীর্ষ গবেষণামূলক বিশাল রচনা পুস্তকের জন্য তাকে ভূগোলের জনক বলা হয়।
ভূগোলের প্রাকৃতিক ভিত্তি
সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রকৃতি পুনঃ পুনঃ পরিবর্তিত হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এই পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকবে। প্রথমদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের অবস্থান বর্ণনা ও বিবরণ এবং সমুদ্র পথের নির্দেশনায় ছিল প্রাকৃতিক ভিত্তি হিসেবে ভূগোলের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। কিন্তু পরবর্তীতে ভূগোল শাস্ত্রের এই প্রাকৃতিক শাখা এতই উন্নতি লাভ করে যে, মূল প্রকৃতি নির্ধারণ করা কঠিন হয়েছে। ফলে ভূগোলবিদগণ ভূগোল বিষয়ে প্রাকৃতিক বিষয়গুলোকে এককভাবে প্রকাশ করার জন্য পৃথক শাখা হিসেবে প্রাকৃতিক ভূগোল রূপে আত্মপ্রকাশ ঘটান। ভূগোলবিদের হাত ধরে প্রাকৃতিক ভূগোলের চারটি উপাদান অধিক গুরুত্ব পেতে থাকে। এগুলো হলো-
১। শিলা মন্ডল বা অশ্বমণ্ডল (Lethosphere)
২। বায়ুমণ্ডল (Atmosphere)
৩। বারিমন্ডল (Hydrosphere)
৪। জীব মন্ডল (Biosphere)
১। শিলা মন্ডল বা অশ্বমণ্ডল (Lethosphere)
আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীর উপরিভাগের ভূপৃষ্ঠকে শিলামন্ডল বা অশ্বমন্ডল বলা হয়। ভূগোলবিদগণ পৃথিবীর অশ্বমণ্ডল সুন্দরভাবে অনুশীলন করে অশ্বমন্ডলের উপাদানসমূহ, গঠন প্রকৃতি প্রভৃতি সম্পর্কে পাঠদানের জন্য ভূগোলের ভিত্তি স্বরূপ গড়ে উঠেছে। অশ্বমন্ডলের উপরিভাগে মানুষ সহ জীবমণ্ডলের আবাসভূমি, ভূ-অভ্যন্তরভাগ এবং ভূপৃষ্ঠ ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা সমভূমি, মালভূমি, অশ্বমণ্ডল, পাহাড়-পর্বত প্রভৃতি বৈচিত্র্যময় ভূমিরূপে সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ভূ-আলোড়ন, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি অগ্নুৎপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ভূপৃষ্ঠ সর্বদা পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। উপরোক্ত ভূমিরূপ গুলো এবং প্রাকৃতিক শক্তিগুলো দ্বারা মানুষের কর্মকান্ডের উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে।
২। বায়ুমণ্ডল (Atmosphere)
ভূপৃষ্ঠের চারিদিকে বায়বীয় আবরণ দ্বারা পরিবেষ্টিত। পৃথিবীর পৃষ্ট ও ঊর্ধ্ব দিকে বায়বীয় আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে থাকে। এই বায়বীয় আবরণকে আমরা বায়ুমণ্ডল বলি। এটি পৃথিবীর একটি অভিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীর সঙ্গে বায়ুমন্ডল ও সূর্যের চারিদিকে আবর্তিত হচ্ছে। পৃথিবীর সাথে সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বলে পৃথিবীর আবর্তনের সাথে দিবা ও রাত্রি হচ্ছে, ঋতু পরিবর্তন, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীবজগতের সৃষ্টি ও বিকাশ ঘটছে। ভূগোলবিদগণ উপরোক্ত বিষয় সমূহের অনুশীলন করে ভূগোল গ্রন্থ রচনা ভিত্তি তৈরি করেছেন।
আরো পড়ুন ঃ সমসাময়িক ভূগোলের প্রধান ধারণা সমূহ
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ভূগোলবিদ অধ্যাপক ইমানুয়েল ক্যান্ট জ্যোতিষ্কমন্ডলীর গ্রহ উপগ্রহের উৎপত্তির কথা বলতে গিয়ে নীহারিকা মতবাদ প্রকাশ করেন। তার মতবাদের মূল কথা ছিল প্রকৃতি এবং এর সাথে তিনি পৃথিবীর আবর্তনের ফলে বায়ু প্রবাহের সৃষ্টি এবং দিক পরিবর্তন এর কথা বলেন। এজন্য নিহারিকা মতবাদটি ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিস্বরূপ।
৩। বারিমন্ডল (Hydrosphere)
পৃথিবীর উপরিতল তথা ভূপৃষ্ঠ যেখানে মানুষ বসবাস করে সেই ভূপৃষ্ঠ স্থলভাগ ও পানিভাগ এই দুই ভাগে বিভক্ত। সমগ্র পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের চার ভাগের তিন ভাগ পানিরাশি এবং এক ভাগ স্থল। পৃথিবী পৃষ্ঠের বিস্তৃত অবনত অংশে অবস্থিত এই বিশাল রাশিকে বারিমন্ডল বলে। মূলত বারিমন্ডল বলতে সাগর-মহাসাগর, উপসাগর, হ্রদ, নদ, নদী, খাল, বিল প্রভৃতি পানি রাশি নিয়ে গঠিত। পানিরাশি মানুষের মানবীয় কর্মকাণ্ড। উদ্ভিদ মন্ডলের বিস্তার ও বৃদ্ধি, প্রাণী মন্ডলের জীবনধারণ প্রভৃতির উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে যা ভূগোলের জ্ঞান ভান্ডারের ভিত্তিকে সমৃদ্ধশালী করেছে।
৪। জীব মন্ডল (Biosphere)
উদ্ভিদ ও প্রাণীদের একত্রে জীব বলা হয়। আর এই জীবকুল যখন অশ্বমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও বারিমণ্ডলে অবস্থান করে তখন তাকে জীবমন্ডল বলে। জীবমন্ডল প্রাকৃতিক ভূগোলের একটি নবীনতম শাখা। জীব মন্ডলের মাধ্যমে জানা যায় অশ্বমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল কি প্রক্রিয়ায় জৈব ও অজৈব নানা জাতীয় প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে অবিরাম পদার্থ ও শক্তির দ্বারা চক্রাকারে পর্যায়ক্রমিক হচ্ছে। এর দরুন জীবমন্ডলের বিবর্তন বিকাশ সাধিত হচ্ছে। জীবমন্ডল দুই ভাগে বিভক্ত যথা-প্রাণী মন্ডল ও উদ্ভিদ মন্ডল।
ভূগোলে মানবীয় ভিত্তির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
মানবীয় ভূগোলের জনক বলা হয় ফ্রডরিক র্যাটজেলকে। প্রকৃতির সাথে মানুষের মানবীয় কর্মকাণ্ডের মধ্যে যে নিবিড় আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভূগোলে মানবীয় ভিত্তিক উৎপত্তি হয়। ১৯৫০ সালে ভূগোলবিদ ভেরেনিয়াস এর গ্রন্থ Geographica Generalis বইটি প্রকাশিত করে তিনি ভূগোলের প্রাকৃতিক ভূগোলের মধ্যে মানবীয় ভূগোলের সম্পর্ক তুলে ধরেন। তখন থেকে মূলত মানবীয় ভূগোলের ভিত্তি রচনা হয়।
ভূগোলের মানবীয় ভিত্তি গড়ে ওঠার নিয়ামক
ভূগোল বিষয়ে মানবীয় শাখা গড়ে ওঠার জন্য যেসব ভিত্তিস্বরূপকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেসব ভিত্তিকে ভূগোলের উপাদান বা নিয়ামক বলে। ভূগোলবিদ গণের মতে ভূগোল অনুশীলন ব্যাখ্যা এবং ভৌগোলিক জ্ঞানের পাঠ ও পঠনে স্থানের সাথে মানুষের যে আন্ত প্রভাব রয়েছে তার পর্যালোচনার মধ্যে দিয়ে ভূগোল গ্রন্থে একটি নবীন শাখার বিকাশ ঘটে। এই শাখাটি মানবীয় ভূগোল নামে পরিচিত। মানুষের সৃষ্ট যেসব উপাদান বা নিয়ামকগুলো ভূগোলে মানবীয় ভিত্তিক গড়ে তোলে তা নিম্নরূপঃ
১। মানুষ ও তার পরিবেশ
মানবীয় সমীক্ষায় স্থানের ও অঞ্চলের সাথে মানুষের ও তার পরিবেশের আন্তঃসম্পর্ক মানবীয় ভিত্তি রচনার প্রথম উপাদান। পরিবেশ মানব সম্প্রদায়ের জন্য ভূপৃষ্ঠের ভিত্তি স্বরূপ। পৃথিবীর সকল মানুষের মানবীয় সত্তা একরূপ নয়। পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে মানব গোষ্ঠীর সত্তার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন। তাছাড়া পৃথিবীর মানব গোষ্ঠীর মানবীয় সত্তা বিভিন্ন দেশের মানব গোষ্ঠীর শ্রেণীবিন্যাস, গঠন প্রকৃতি, আকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের ভিন্ন ভিন্ন। ভূপৃষ্ঠের মানবগোষ্ঠীর বন্টন ও মিশ্রণ আচার-আচরণে শরীরবৃত্তীয়, মানব গোষ্ঠীর উৎপত্তি, বিকাশ ইত্যাদি উদঘাটন করতে গিয়ে ভূগোলবিদগণ আরো একটি নবতর ক্ষেত্রে হিসেবে সমাজবিজ্ঞানীয় ভূগোল হিসেবে মানবীয় ভূগোলের স্বতন্ত্র ভিত্তি রচনা করেন।
সে কারণে মানবগোষ্ঠী হচ্ছে মানবীয় ভূগোলের ভিত্তি রচনা প্রধান উপাদান বা মানবীয় ভূগোলের একটি স্বতন্ত্র শাখা সমাজ বিজ্ঞানীয় ভূগোলের সৃষ্টি হয়। এতে নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, মানব গোষ্ঠীর উৎপত্তি বিকাশ, বিস্তরণ, মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ, রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও বিকাশ বসতির উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
২। মানবগোষ্ঠীর সংস্কৃতি
সংস্কৃতি মানুষের জীবনের দর্শন। মানুষ বা মানব গোষ্ঠীর আচার-আচরণ, পোশাক পরিচ্ছেদ, স্থাপত্য, অবয়ব, সংগীত কলা, শিক্ষা, রাজনীতি, মানব বসতির ধরন ও প্রকৃতি এমনকি মানুষের খাদ্যাভ্যাস প্রভৃতি বিষয়গুলো মানব গোষ্ঠীর সাংস্কৃতির পরিমণ্ডল। সুতরাং মানব গোষ্ঠীর সংস্কৃতি হল মানব সৃষ্ট সবকিছু সমষ্টি এবং সমাজের দর্শন স্বরূপ। ভূগোলবিদগণ মানবগোষ্ঠীর সংস্কৃতি পরিমণ্ডলে তাদের জীবনধারা অনুশীলন করার ফলস্বরূপ মানবীয় ভূগোল সংস্কৃতি ভূগোল নামে স্বতন্ত্র শাখার উদ্ভব হয়েছে।
মানুষের ভাষা, মানব ধর্ম, বর্ণ, মানুষের সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক অঞ্চল, মানবীয় কর্মকাণ্ড, মানব পরিবেশ, সাংস্কৃতিক ভূ-দৃশ্য, সাংস্কৃতিক জগৎ ইত্যাদি মানবীয় উপাদান যা ভূগোলের একটি মানবীয় শাখার ভিত্তি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
৩। মানবীয় কর্মকাণ্ড
মানুষের মানবীয় কর্মকান্ড মানবীয় ভিত্তি রচনার ক্ষেত্রে মানবীয় ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও নিয়মক। মানুষ যেসব কাজ পরিবারের, সমাজের এবং সামগ্রিকভাবে দেশের আর্থিক উন্নতির সাথে সম্পর্কযুক্ত সে কাজগুলোকে মানবীয় কর্মকাণ্ড বলে। পৃথিবীর কোন কোন দেশে খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ, আবার কোন কোন দেশ অধিক কৃষিজ সম্পদ উৎপন্ন করে, কোন কোন অঞ্চলের মানুষ কৃষিজীবী বা মৎস্যজীবী বা পশু পালক ইত্যাদি আলোচনা থেকে ভূগোলে অর্থনৈতিক ভূগোলের জন্ম যা মানবীয় ভূগোলের গুরুত্বপূর্ণ শাখা।
ভূগোলের মানবীয় ভিত্তি গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড যেমন-মৎস্য শিকার, কৃষিকাজ, খনিজ উত্তোলন, শিল্প উৎপাদন, যোগাযোগ ও পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি উপাদান বা নিয়ামক।
৪। রাজনৈতিক অঞ্চল
পৃথিবীর রাজনৈতিক অঞ্চল পর্যালোচনা মূলক অনুশীলন, আলোচনা ও ব্যাখ্যা ভূগোলে মানবীয় ভিত্তি বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ভূগোলবিদগণ কোন রাজনৈতিক অঞ্চলের ভৌগোলিক ও সমীক্ষা প্রসাশন ব্যবস্থা প্রভৃতি উপাদানের প্রভাব পর্যালোচনা করার প্রয়াস থেকেই মানবীয় ভূগোলের শাখা হিসেবে রাজনৈতিক ভূগোলের সূত্রপাত হয়। ভূগোলবিদগণ রাষ্ট্রীয় সীমানা, অঞ্চল, কেন্দ্র, ভূমি, রাজধানী, বিশ্ব, রাষ্ট্র, জোট ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা, জাতিসংঘ ইত্যাদি নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে আলোচনা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং পঠন-পাঠন এবং অনুশীলন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট 'রাজনৈতিক ভূগোল' ভূগোলের মানবীয় ভিত্তি হিসেবে একটি স্বতন্ত্র শাখার সৃষ্টি করেন।
৫। স্থান ও অঞ্চল
ভূগোলের মৌলিক ধারণা গুলোর মধ্যে অঞ্চলগুলো সনাক্তকরণ, শ্রেণীবিভাজন ও বিশ্লেষণ বিজড়িত ধারণাগুলো অন্যতম মানবীয় ভূগোলের নিয়ামক। ভূগোলের মানবীয় ভিত্তি স্বরূপ জলবায়ু, মাটি, প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব, স্থানীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্নতার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তখন থেকে ভূগোলবিদগণের নিকট অঞ্চল সমীক্ষাকে পৃথক বিষয় হিসেবে আঞ্চলিক ভূগোল নামে একটি স্বতন্ত্র শাখার সৃষ্টি করে যা মানবিক ভূগোলের অন্যতম প্রসাখারূপে বিকশিত হয়।
৬। মানচিত্রের ভূমিকা
মানচিত্রের ভূমিকা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে ভূগোলের মানবীয় ভিত্তির ইতিহাস। এজন্য ভূগোলবিদগণ ভূগোলে মানবীয় ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য প্রাকৃতিক বিশ্বের মানচিত্রের প্রয়োজনীয়তার উপর বেশি জোর দেন। ভূগোলবিদগণ মনে করেন মানচিত্রের উপলব্ধি ব্যতিরেকে ভূগোল সম্পর্কে অনুশীলন, ব্যাখ্যা ও আলোচনা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রাচীনকাল থেকে ভূপৃষ্ঠের প্রকৃতি বর্ণনা অনুশীলন, পাঠ ও গঠন এবং ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য মানচিত্র ব্যবহার হয়ে আসছে।
ভূগোলের মানবীয় ভিত্তি করে উঠার নিয়ামক হিসেবে মানচিত্র এবং মানচিত্রের সমীক্ষা বা ব্যবহারিক ভূগোল, ভৌগোলিক বিশ্লেষণের প্রারম্ভিক পর্যায়ে মানচিত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
৭। সংস্কৃতি
সংস্কৃতি মানব জাতির জীবন যাপন ব্যবস্থার দর্শন হওয়ায় মানবীয় ভূগোলের একটি প্রধান উপাদান। মানুষের ধর্ম, কর্ম, খাদ্য, পোশাক পরিচ্ছেদ, ভদ্রতা, নৈতিকতা, শিক্ষা প্রভৃতি সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এজন্য মানুষ তার মেধা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে ভূপৃষ্ঠের ওপর যে সকল অবকাঠামো বা স্থাপনা তৈরি করেছে তাকে সাংস্কৃতিক ভূ-দৃশ্য বলে।
৮। অর্থনৈতিক সমীক্ষা
মানবীয় ভূগোলের সর্বশেষ মানবীয় ভিত্তি হল মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড রচনার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমীক্ষা। মানুষ যেসব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করে তা তার নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং দেশ ও জাতির জন্য। এজন্য অর্থনৈতিক সমীক্ষাকে মানবীয় ভূগোলে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৯। পরিবেশ সমীক্ষা
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানব গোষ্ঠীর জীবনযাপনের প্রণালী এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্যে যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যবান তা অনুশীলন ও সমীক্ষা করাকে পরিবেশ সমীক্ষা বলে। এজন্য ভূগোলে মানবীয় ভিত্তি রচনা জন্য পরিবেশ সমীক্ষা প্রয়োজন।
মন্তব্য
আজকের এই আর্টিকেলের মধ্যে ভূগোলের প্রাকৃতিক ও মানবীয় ভিত্তি এবং এর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এই সমস্ত তথ্য, বিশিষ্ট লেখক এর বই থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, বিভিন্ন বই থেকে সংগ্রহের জন্য তথ্য গুলি সঠিক ও নির্ভরযোগ্য। এ বিষয়ে যদি কোন ব্যক্তির মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখবেন। এতক্ষণ এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url