সমসাময়িক ভূগোলের প্রধান ধারণা সমূহ
প্রিয় পাঠক, আপনি কি ভূগোল বিষয়ের সমসাময়িক ভূগোলের প্রধান ধারণা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য জানার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং লেখকের বই পুস্তক ঘাটাঘাটি করছেন, এই বিষয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না? তাহলে এবার সঠিক জায়গায় এসেছেন, আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমি আজকের এই প্রতিবেদনে সমসাময়িক ভূগোলের প্রধান ধারণা সমূহগুলো যেমন- আঞ্চলিক ধারণা, বাস্তুসংস্থানের ধারণা, পারিসিক ধারণা, ভূ-বিজ্ঞান ধারণা, আচরণবাদী ধারণা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে হলে মনোযোগের সহিত শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
ভূমিকা
ভূগোলের ধারণা ও ভৌগোলিক জ্ঞান বিজ্ঞান বিকাশের আধুনিক যুগে এসে ভূগোলের বিভিন্ন শাখা গুলোর ব্যাপক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। বিশেষভাবে এই সময় প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানবিক ভূগোলের জ্ঞান আরো সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। ফলের সমসাময়িক ভূগোলের বিভিন্ন ধারণার উৎপত্তি ঘটে।
সমসাময়িক ভূগোলের প্রধান ধারণা সমূহ
ভূগোল আঞ্চলিক বিভাজনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলোর বৈশিষ্ট্য সূচক আঞ্চলিক কাঠামো তুলে ধরা এবং উক্ত অঞ্চলের ভূগোলবিদ ভূগোল আঞ্চলিক সমীক্ষা বাদ দিয়ে পরিসর ও পারিসরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার পক্ষপাতী। এমতাবস্থায় সমসাময়িক ভূগোলের কতিপয় ধারণা বিকশিত হয়েছে। এই ধারণাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
১। আঞ্চলিক ধারণা (Regional View)
২। বাস্তুসংস্থানিক ধারণা (Ecological View)
৩। পারিসরিক ধারণা (Spatial Organigation View)
৪। ভূবিজ্ঞান ধারণা (Earth Science View)
৫। আচরণবাদী ধারণা (Behaviuoral View)
১। আঞ্চলিক ধারণা (Regional View)
ভূগোলের আঞ্চলিক ধারণা প্রাচীনকালের ভূপৃষ্ঠের বিশেষ বিশেষ প্রাকৃতিক অবয়বাগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ও গুনবলী সম্পন্ন অঞ্চলগুলো সম্পর্কে জ্ঞানী ও পন্ডিত মানুষের চিন্তা ও চেতনা থেকে এসেছে। ভৌগোলিক চিন্তা ধারায় ভূপৃষ্ঠের প্রাকৃতিক ও মানবিক বিষয়গুলো নিয়ে অঞ্চল ভিত্তিক যে সমীক্ষা বা গবেষণা, দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণার জন্ম নেই তাকেই আঞ্চলিক ধারণা বলে।
অঞ্চল হল একটি গুণবলী সম্পন্ন বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ছোট অথবা বৃহৎ আয়তনের একটি ভৌগোলিক এলাকা যেখান থেকে মানুষের মানবীয় জীবনের বিশেষ বিশেষ কোন উদ্দেশ্য সাধন করা সম্ভব। যেমন মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেল বলায়। এজন্য ভূগোলবিদদের কাছে অঞ্চল শব্দটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ফলে ভূগোলবিদগণের কাছে অঞ্চল সম্পর্কে সংজ্ঞা হলো- এক বা একাধিক সহধর্মী গুণ বিশিষ্ট একটি একক।
আঞ্চলিক ধারণার সূত্রপাত
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে কয়েকজন ভূগোলবিদ ভূগোলের পুঁথিগতভাবে অঞ্চল বা আঞ্চলিক ধারণার পুঁথিগতভাবে সূত্রপাত ঘটান। ১৭৫০ সালের শুরু থেকে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের আঞ্চলিক ধারণার কথা প্রসার লাভ করে। ১৯০৭ সালে আমেরিকান জিওগ্রাফিকাল অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনের সময় ভূগোলবিদ বোম্যান আঞ্চলিক ধারনার আলোচনার গুরুত্ব দেন।
১৯০৫ সালে ভূগোলবিদ আলফ্রেড হেটনার এবং ১৯২৭ সালে জার্মান ভূগোলবিদগণ আঞ্চলিক ধারণার গুরুত্ব দেন এবং ভূগোল গ্রন্থে অন্তর্ভুক্তিতে মত প্রকাশ করেন। অতঃপর বৃটেনের ভূগোলবিদ হারবার্টসন ১৯১৫ সালে যুক্তরাজ্যে আঞ্চলিক ধারণাকে ভূগোল গ্রন্থে অন্তর্ভুক্তির জন্য মত প্রকাশ করেন।
২। বাস্তুসংস্থানিক ধারণা (Ecological View)
উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং এদের জৈব ও অজৈব পরিবেশের সাথে যে আন্তঃ সম্পর্ক রয়েছে তাকে বাস্তুসংস্থান বলে। বাস্তুসংস্থানের বিষয়বস্তু হলো মানুষ ও জীব মণ্ডল নিয়ে। মানুষের সাথে জীব মন্ডলের যে আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে তা নিয়েই গড়ে উঠেছে বাস্তুসংস্থান। জীবভূগোলে বাস্তুসংস্থানের কথাটি এসেছে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। জীব ভূগোলবিদদের মতে প্রাণীপরিবেশ ও উদ্ভিদপরিবেশ সম্পর্কে. জীব ও ভূগোলের যে শাখায় আলোচনা করে তাকে বাস্তুসংস্থান বলে। এজন্য জীববিজ্ঞানের একটি নবীনতম ও পূর্ণাঙ্গ শাখা বাস্তুসংস্থান বিজ্ঞান এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
বাস্তুসংস্থানের ধারণার সূত্রপাত
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে জীববিজ্ঞানীরা প্রথম ইকোলজি বা বাস্তুসংস্থান শব্দটি দিয়ে পাঠ ও পঠন শুরু করেন। এ জি ট্যান্সেল নামক একজন ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী ১৯৩৫ সালে সর্বপ্রথম জীববিজ্ঞান গ্রন্থে ইকোসিস্টেম শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৯০০ সালের প্রথম দিক থেকেই বাস্তব সংস্থান বিজ্ঞান বিজ্ঞানের পৃথক শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৬৯ সালে জার্মান জীববিজ্ঞানী আরনেস্ট হেকেল বাস্তুসংস্থান শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।
১৯৫৯ সালে প্রখ্যাত প্রকৃতি বিজ্ঞানী ডারউইনের বিবর্তনবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হলে জীবমন্ডল বাস্তুসংস্থান তথা বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্ব বেড়ে যায়, তিনি তার গ্রন্থে প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজাতির উৎপত্তির ধারণার সৃষ্টি হয়। ১৯৬৬ সালে ভূগোলবিদ আয়ার ও জোনস যৌথভাবে লিখিত Geography as human ecology প্রকাশিত হয়। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক পরিবেশে মানবীয় বাস্তুসংস্থানের উপর জোর দেন।
৩। পারিসরিক ধারণা (Spatial Organigation View)
১৯৪০ সালের শেষ দিকে ভূগোল ও ভৌগোলিক জ্ঞানকে সমৃদ্ধ ও বিকশিত করার জন্য ভূগোলবিদগণ পারিসরিক ধারণা অন্তর্ভুক্ত করেন। যেসব ভূগোলবিদগণ ভূগোল গ্রন্থে পারসিক ধারণার বিকাশে অবদান রাখেন তাদের মধ্যে রিচার্ড হাটসন, ভেরেনিয়াস ও ইসকিফারের নাম ও দ্বিতীয়।
ভূপৃষ্ঠের কোন একটি স্থানের অবস্থান দূরত্ব আয়তন ঘনত্ব ব্যাপ্তি বা প্রসার প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ চলক গুলো নিয়ে যে পদ্ধতিতে আলোচনা করা হয় তাকে পারিসরিক ধারণা বলে। বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দুইটি গুণ গুলোর কারণে ভূগোলবিদগণের কাছে স্থান বা পরিসর গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এগুলো-
(ক) পরম পরিসর ধারণা (Absolute space view)
(খ) আপেক্ষিক পরিসর ধারণা (Relative space view)
(ক) পরম পরিসর ধারণা (Absolute space view)
প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশের নদ-নদী, বনাঞ্চল, শহর, গ্রাম, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি প্রকৃতি উপাদান সমূহের পরিসর সমন্বয়ে গঠিত তাকে পরম পরিসর ধারণা বলে। এজন্য পরম পরিসরের ধারণার উপাদানকে এক একটি বস্তু বলা হয়। সুনির্দিষ্ট ভাবে এবং সমরূপতা ও সমবৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে যখন ভূপৃষ্ঠের এলাকাকে ভাগ করা হয় তখন এই পরম পরিসর ধারণার বস্তুগুলোকে একত্রে অঞ্চল বলা হয়।
(খ) আপেক্ষিক পরিসর ধারণা (Relative space view)
আপেক্ষিক পরিসর ধারণা হলো পরম পরিসর ধারণার সময় ও প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত কর্মকান্ড দ্বারা পরিসর সৃষ্টি করা হয়েছে বলে একে আপেক্ষিক পরিসর ধারণা বলে। অর্থাৎ আপেক্ষিক পরিসর ধারণা পরম পরিসর ধারণার বস্তুর আধার নয় বরং ওই বস্তুর আরোপিত গুণ। মূলত মানুষই তার বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জীবিকা অর্জন ও জীবনযাপন পদ্ধতি প্রভৃতি কর্মকাণ্ড দ্বারা পরিসর সৃষ্টি করে নেয়। এজন্য আপেক্ষিক পরিসরের ধারণার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা নির্ধারিত হয় মানুষ তা কিভাবে গ্রহণ করে এবং তা কিভাবে ব্যবহার করে তার ওপর।
৪। ভূ-বিজ্ঞান ধারণা (Earth Science View)
সমসাময়িক ভূগোলের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ভূ-বিজ্ঞান ধারণাটি অন্যতম। ভৌগোলিক জ্ঞান বিকাশের ক্ষেত্রে ভূ-বিজ্ঞান ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গের গুরুত্ব ব্যাপক। ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশবাদী ভূগোলবিদ ইলেন চার্চিল স্যাম্পেল তার রচিত আমেরিকা ইতিহাস এবং তার ভৌগোলিক অবস্থা নামক গ্রন্থের হাত ধরে সর্বপ্রথম ভূ-বিজ্ঞান ধারণাটি ভূগোলে জায়গা করে নেয়। এরপর ১৯৬৪ সালে ভূ-বিজ্ঞানী গ্যাটসনের হাত ধরে ভূ-বিজ্ঞান ভূগোলে স্থান পায়।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে ওয়েবসাইট ভিজিট করুন ঃ হাসি অনলাইন আইটি
অতঃপর ইংল্যান্ডের ভূগোলবিদ অধ্যাপক ডেডলি স্ট্যাম্প ভূগোলের সঙ্গে থেকে বলেন, ভূগোল হল ভূ-পৃষ্ঠের বর্ণনা এবং অঞ্চল সমূহের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে প্রাকৃতিক ও ভূগোল অন্যতম। তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনই হলো ভূ-বিজ্ঞান । বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণী বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদি বহু বিজ্ঞানের উপাদান। তাছাড়া ভূগোল শাস্ত্রকে আধুনিকায়ন ও বাস্তবধর্মী করে তোলার ক্ষেত্রে ভূ-বিজ্ঞান এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
৫। আচরণবাদী ধারণা (Behaviuoral View)
মূলত আচরণবাদ বা আচরণবাদী ধারণা মানুষের একটি দর্শন। ভূগোল কেটোম ছিলেন আচরণগত ভূগোলের প্রবক্তা। আচরণবাদী ধারণা উদ্ভবের মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষের আচরণগত ধারণাগুলো ভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিনা তার ব্যাখ্যা অনুসন্ধান করা। ১৯৬০ সালে প্রথম থেকে ভূগোলে আচরণগত ধারণার সূচনা হয়।
নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের পরিবর্তে নতুনভাবে একটি পদ্ধতি ও ধারণার বর্ণনা দিয়ে মানুষ যেভাবে বিষয়টিতে সাড়া প্রদান করে তাকে আচরণবাদী ধারণা বলে। অর্থাৎ পরিবেশ বা সমাজ সম্পর্কে তার মনোজগতে যে প্রতিচ্ছবি থাকে তার বহিঃপ্রকাশ করাকে মানুষের আচরণবাদী ধারণা বলে।
ভূগোলবিদ কেটস এর সমসাময়িক ভূগোলবিদ জালিয়ান ও লাপাট ১৯৬৪ সালে তার অভিগমন প্রতিবেদনের মাধ্যমে আচরণগত ভূগোল কে জনপ্রিয় করে তোলেন। তার মতে আচরণগত ধারণার মাধ্যমে মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url