বায়ুমণ্ডল কিভাবে উত্তপ্ত হয় বায়ুমন্ডলে বা ভূ-পৃষ্ঠের উপর তাপের তারতম্যের কারণ

প্রিয় পাঠক, আপনি কি বায়ুমণ্ডল কিভাবে উত্তপ্ত হয় বায়ুমন্ডলে বা ভূ-পৃষ্ঠের উপর তাপের তারতম্যের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য খুঁজছেন, এই বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাচ্ছেন না, বিভিন্ন লেখকের বই পুস্তক অনুসন্ধান এবং ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন? তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বায়ুমণ্ডল কিভাবে উত্তপ্ত হয় বায়ুমন্ডলে বা ভূ-পৃষ্ঠের উপর তাপের তারতম্যের কারণ

আজকের এ প্রতিবেদনে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সমূহ ভূপৃষ্ঠের উপর বায়ুর তাপের তারতম্যের কারণ সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। চলুন বিস্তারিত দেখে নিই।

ভূমিকা

সূর্য হতে আগত সৌরতাপ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে থাকে।
সূর্য হতে এই তাপ আলোক তরঙ্গ রূপে মহাশূন্যে প্রবেশ করে, তবে সূর্য হতে যে পরিমাণ তাপ বিকিরণ হয় উহার অতি সামান্য অংশই পৃথিবীতে এসে পৌঁছে। এই সামান্য সৌরতাপের এক বিরাট অংশ পৃথিবীকে উত্তপ্ত করতে সাহায্য না করে মহাশূন্যে ফিরে যায়। বিজ্ঞানীগণ উহার একটি সম্ভাব্য হিসাব নিরূপণ করেছেন। তাদের মতে, সূর্য হতে ২০০ কোটি ভাগের এক ভাগ তাপ আমরা পাই। 


আবার এই তাপেরই ৩৪% বায়ুমণ্ডল ও ভূপৃষ্ঠ দ্বারা বিচ্ছরিত ও প্রতিফলিত হয়ে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় মহাশূন্যে ফিরে যায়। এই নিষ্ক্রিয় সৌরতাপকে পৃথিবীর অ্যালবেডো বলা হয়। আর এর ১৯% বায়ুমণ্ডল গ্রহণ করে এবং বাকি ৪৭ % ভূপৃষ্ঠে গিয়ে পতিত হয়। তাই দেখা যায়, সূর্য হতে আগত সৌরতাপের ৬৬ ভাগ (১৯ যোগ ৪৭) বায়ুমণ্ডল ও পৃথিবীকে উত্তপ্ত করতে ব্যয় হয়। এই ৬৬ % সৌরতাপ কে কার্যকারী সৌরতাপ (Effective Solar Insolation) বলা হয়।

বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সমূহ

নিম্নের ছয়টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুর তাপ সঞ্চারিত হয়ে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত করে থাকে। যেমন-

১। বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পরিবহন প্রক্রিয়া (Conduction Process)

দিনের বেলায় ভূপৃষ্ঠ সৌরতাপ গ্রহণ করে উত্তপ্ত হবার পর, ভূপৃষ্ঠের নিকটবর্তী বায়ু সংস্পর্শে উত্তপ্ত হয়, তারপর প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে উষ্ণ বায়ু হতে অপেক্ষাকৃত শীতল বায়ুতে সঞ্চারিত হয়। যতক্ষণ না উভয় বায়ুর উষ্ণতা সমান হয়,ততক্ষণ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়াকে পরিবহন প্রক্রিয়া বলে। বায়ু তাপের উত্তম পরিবাহী নয় বলে এই প্রক্রিয়ার দ্বারা নিম্নস্তর হতে উর্ধ্বস্তরে উষ্ণতার পরিবহন খুব কম হয়ে থাকে।

১। বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পরিবহন প্রক্রিয়া (Conduction Process)

২। বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার বিকিরণ প্রক্রিয়া (Radiation Process)

সূর্য হতে আগত তাপের ৪৭% ভাগ ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হলে, ভূ-পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়। পরে ঐ উত্তপ্ত ভূ-পৃষ্ঠ হতে তাপ বিকিরণ করে বায়ুমণ্ডল কে উত্তপ্ত করে তোলে। এই প্রক্রিয়াকে বিকিরণ প্রক্রিয়া বলা হয়। বায়ুমণ্ডল নানাবিধ গ্যাস, ধূলিকণা, জলীয়বাষ্প ও মেঘ প্রভৃতির অস্তিত্বের জন্য এই বিকিরণ দীর্ঘ তরঙ্গ আকারে চলতে থাকে। ভূ-পৃষ্ঠ হতে নিঃসৃত এই দীর্ঘ তরঙ্গের তাপ বায়ুমণ্ডল অতি সহজেই গ্রহণ করতে পারে। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে জলীয়বাষ্পই তাপের উত্তম বাহক। 

২। বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার বিকিরণ প্রক্রিয়া (Radiation Process)

ফলে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ যত বেশি হবে বায়ুমণ্ডল ততো অধিক পরিমাণে ভূপৃষ্ঠের নিঃসৃত তাপ গ্রহণ করবে। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদান তাপ গ্রহণ করে পুনরায় কিছু কিছু তাপ বিকিরণ করে। ফলে উত্তপ্ত বায়ুর সংস্পর্শে উহার নিকটবর্তী বায়ু ও উত্তপ্ত হয়ে থাকে। এই কারণে বায়ুমণ্ডল সূর্য কিরণের তুলনায় ভূপৃষ্ঠ হতে বিকিরিত তার দ্বারাই বেশি উত্তপ্ত হয়ে থাকে।

৩। বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পরিচলন প্রক্রিয়া (Convection Process) 

পরিবহন ও বিকিরণ প্রক্রিয়ায় ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু উত্তপ্ত হলে প্রসারিত হয়ে হালকা হয়। হালকা বায়ু উপরে উঠে যায় এবং চতুর্দিক হতে শীতল ও ভারী বায়ু সেই স্থানে এসে উপস্থিত হয়। ইহা ও ক্রমান্বয়ে উষ্ণ হয়ে ওপরে উঠে যায়। এই উর্ধগামী বায়ু ও ক্রমশ তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়ে অপর পাশ দিয়ে নিচের দিকে নেমে আসে। 

৩। বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পরিচলন প্রক্রিয়া (Convection Process)

এরূপে বায়ু চক্রাকারে সঞ্চালিত হয়ে ভূ-পৃষ্ঠ হতে বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্ব দিকে তাপ বিস্তার করে। ইহাই বায়ুর পরিচলন প্রক্রিয়া। এখানে যা উল্লেখযোগ্য তা হল, পরিবহন ও বিকিরণ প্রক্রিয়ায় বায়ুমন্ডলের নিম্নস্তর উত্তপ্ত হয় কিন্তু পরিচলন প্রক্রিয়ায় উচ্চস্তর ও উত্তপ্ত হয়।

৪। ঘনীভবনের সুপ্ত তাপ সংযোজন (Addition of Latentheat of Condensation) 

সূর্যের তাপে পানি যখন বাষ্পে রূপান্তরিত হয়, তখন সৌরতাপের কিছুটা তাপ জলীয়বাষ্পে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। জলীয় বাষ্প যখন ঘনীভূত হয়ে জলকণা বা বরফে পরিণত হয় তখন এই সুপ্ততাপ জলীয় বাষ্প হতে বাইর হয়ে বায়ুর তাপে সংযোজিত হয়। এর ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপ সামান্য বৃদ্ধি পায়।
তাই দেখা যায় যে, বাষ্পীভবনের মাধ্যমে সৌরতাপের কিছুটা ভূ-পৃষ্ঠ হতে বায়ুমন্ডলে সঞ্চারিত হয় এবং ইহা বায়ুর উত্তাপের একটি উপায়, ৩০ ডিগ্রি উত্তর হতে ৩০ ডিগ্রী দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত সমুদ্রগুলির উপরিভাগের বায়ুর প্রধানত এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তপ্ত হয়ে থাকে।

৫। অনুভূমিক বায়ু সঞ্চালন (Advection) 

অনুভূমিক সঞ্চালনের ফলেও বায়ু এক স্থান হতে অন্য স্থানে উত্তাপ সঞ্চারিত করতে পারে। বায়ু যদি উষ্ণ স্থান হতে শীতল অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় তাহলে, পরবর্তী স্থানের বায়ুর তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এই কারণে গ্রীষ্মকালের প্রথম দিকে বিহার হতে আগত উষ্ণ বায়ুর প্রভাবে রাজশাহী ও উহার নিকটবর্তী অঞ্চলে বায়ু দিনের বেলায় খুব উত্তপ্ত হয়ে থাকে।

৬। বায়ুর সংকোচন ও সম্প্রসারণ (Compression and Expansion of air) 

বায়ুর সংকোচন ও সম্প্রসারণের দ্বারা ও বায়ুমণ্ডলের তাপ এক স্থান হতে অন্য স্থানের সঞ্চালিত হয়। যদি কোন স্থানের বায়ুকে ধীরে ধীরে চাপ দেওয়া হয় তখন উহার তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। আবার যদি বায়ুর চাপ হ্রাস পায়, তখন বায়ুর উষ্ণতা কমতে থাকে। এই কারণে একটি বায়ুপুঞ্জ যখন ওপর হতে নিচের দিকে নামতে থাকে তখন উহা ক্রমশ বেশি চাপের মধ্যে অগ্রসর হয় এবং সংকুচিত হয়ে উত্তপ্ত হতে থাকে। উল্টো ভাবে ঊর্ধ্বগামী বায়ু প্রসারিত হয়ে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা হতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের নিচের বায়ু উষ্ণ এবং ওপরের বায়ু অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা হতে থাকে।

ভূ-পৃষ্ঠের উপর বায়ুর তাপের তারতম্যের কারণ (Causes of the Variation of Temperature on the earth Surface) 

ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র বায়ুর তাপ সমান নয়। বায়ুর তাপের তারতম্যের জন্য নিম্নের কারণ গুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

১। সূর্য রশ্মির তির্যক পতন (Diagonal ray of the Sun) 

ভূপৃষ্ঠের ওপর সূর্যের কিরণ সমানভাবে পড়ে না। কোথাও সূর্যের কিরণ লম্বভাবে আবার কোথাও তির্যকভাবে পড়ে। সূর্যের কিরন লম্বভাবে পড়লে ইহা অল্প পরিসর স্থানে পতিত হয় কিন্তু তির্যকভাবে পড়লে তা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়ে। এই কারণে সূর্যের কিরণ লম্বভাবে পতিত হলে ভূপৃষ্ঠ অধিক পরিমাণে তাপ গ্রহণ করতে পারে। এবং তির্যকভাবে পতিত হলে ভূপৃষ্ঠ এরূপ তাপ খুব কম পায়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য প্রায় সারা বছর লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে এ অঞ্চলের তাপ ১২ মাসই বেশি।


নিরক্ষরেখা থেকে উত্তরে ও দক্ষিণে সূর্যের কিরণ ক্রমেই অধিক তির্যকভাবে পতিত হয় বলে তাপ ও অনুরূপভাবে নিরক্ষরেখা হতে উত্তর ও দক্ষিণে কমতে থাকে। এছাড়া লম্বভাবে পতিত সূর্য কিরণ তির্যকভাবে পতিত সূর্যকিরণ অপেক্ষা কম বায়ুস্তর ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় বলে উহার প্রখরতা বেশি। এই কারণে নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণে ক্রমশ সূর্যের তাপ কমতে থাকে।

২। উচ্চতার হ্রাস বৃদ্ধি

একই অক্ষাংশে অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের মধ্যে উচ্চতার হ্রাস বৃদ্ধি অনুসারে বায়ুর তাপের তারতম্য হয়ে থাকে। যে স্থান যত উচ্চে সেই স্থান তত বেশি শীতল হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় ১০০০ মিটার উচ্চতায় ৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ কমে যায়। ফলে একই অক্ষাংশে অবস্থিত স্থানগুলির মধ্যে উচ্চতা অনুসারে তাপের তারতম্য হয়। এজন্য কলকাতা অপেক্ষার শিলিগুড়ি এবং শিলিগুড়ি অপেক্ষার দার্জিলিং শীতলতর।

৩। জলীয় বাষ্প

জলীয় বাষ্পের তাপ শোষণ ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বেশি। তাই একই অক্ষাংশে অবস্থিত স্থান সমূহের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পার্থক্য হেতু তাপমাত্রার ও পার্থক্য হয়। কোন স্থানের বায়ুতে অধিক জলীয় বাষ্প থাকলে সেই স্থানের বায়ুর তাপ বেশি প্রখর হতে পারে না এবং বেশি কমও হতে পারে না। কারণ জলীয় বাষ্প সূর্যের তাপ অনেকটা শোষণ করে নেয়। জলীয় বাষ্প সূর্যের খানিকটা তাপ শোষণ করে উষ্ণ হয় বলে রাত্রিতে শীতল বেশি হতে পারে না। সমুদ্রের নিকটবর্তী স্থানের বায়ুতে বেশি জলীয় বাষ্প থাকে বলে সেখানে দিবারাত্রীর তাপের পার্থক্য খুব কম হয়।

৪। বায়ুমন্ডলের গভীরতা (Depth of Atmosphere) 

বায়ুমণ্ডলের গভীরতা বেশি হলে উহাতে ধূলিকণা ও জলীয় বাষ্প অধিক থাকে। ধূলিকণা ও জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু অধিক ঘন এবং অধিক তাপ গ্রহণ ও সংরক্ষণ করতে পারে। সর্বত্র বায়ুমন্ডলের গভীরতা সমান নয় বলে তাপের তারতম্য হয়।

৫। দিবা ভাগের দৈর্ঘ্য (Lenght of the Day) 

দিন বড় হলে ভূ-পৃষ্ঠ ও অধিক সময় পর্যন্ত তাপ গ্রহণ করতে পারে এবং অধিক উত্তপ্ত হয়। কিন্তু দিনের তুলনায় রাত্রি বড় হলে উহার বিপরীত অবস্থা ঘটে। এই কারণে আমাদের দেশের শীতকাল অপেক্ষা গ্রীষ্মকাল অধিক উত্তপ্ত হয়। পৃথিবীর দিবারাত্রি সর্বত্র সমান নয় বলে ভূ-পৃষ্ঠের বায়ু তাপের তারতম্য হয়ে থাকে।

৬। অরণ্যভূমি

বৃক্ষলতা বায়ুর কিছুটা উত্তাপ শোষণ করে এবং প্রসেদনের দ্বারা অতিরিক্ত জল বাষ্প আকারে বায়ুতে ছেড়ে দেয় বলে অরণ্যময় অঞ্চলে অধিক উত্তপ্ত হতে পারে না। তাছাড়া বনভূমি অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাত হলে তাপ কমে যায়। এই কারণে অরণ্যভূমির প্রভাবে ও ভূপৃষ্ঠের উপর তাপের তারতম্য ঘটে থাকে।

৭। বায়ুপ্রবাহ (Movement of Wind) 

কোন অঞ্চল দিয়ে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হলে বায়ুর তাপ বৃদ্ধি পায়, আবার শীতল বায়ু প্রবাহিত হলে তাপ কমে যায়, তাই কোন অঞ্চলের ওপর দিয়ে মেরুদেশীয় শীতল বায়ু প্রবাহিত হলে সেই স্থানের তাপ দ্রুত কমে যায়। তাই দেখা যায় যে বায়ুপ্রবাহের দরুন ও ভূ-পৃষ্ঠের উপর তাপের তারতম্য হয়।

৮। সমুদ্রস্রোত (Ocean Current) 

কোন কোন অঞ্চলে বায়ুর তাপ আবার সমুদ্রস্রোতের ওপর নির্ভরশীল, সামুদ্রস্রোত নিকটস্থ দেশ গুলোতে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্য ঘটায়। যে সকল দেশের ওপর দিয়ে উষ্ণস্রোত প্রবাহিত হয় সেই সকল দেশের উত্তাপ বৃদ্ধি পায়। আবার শীতল সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হলে জলবায়ু অপেক্ষাকৃত শীতল হয়।

৯। পর্বতের অবস্থান

পার্বত্য ভূমির উপর ও ভূ-পৃষ্ঠের উষ্ণতার পার্থক্য অনেক সময় নির্ভর করে। পার্বত্য ভূমি অনেক সময় কোন কোন অঞ্চলকে শীতল বাতাস হতে রক্ষা করে, আবার উষ্ণ ও করে। হিমালয় পর্বত বিশাল পর্বত প্রাচীর সৃষ্টি করাই ভারত ও বাংলাদেশ শীত ঋতুতে মধ্য এশিয়ার অত্যন্ত শীতল বায়ুর প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়। আবার গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলের আর্দ্র বায়ু মধ্যে এশিয়ার দিকে যেতে পারে না বলে হিমালয়ের উত্তরের তিব্বত বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

১০। ভূমির ঢাল (Slope of Land) 

ভূমির ঢালের উপর ও ভূ-পৃষ্ঠের উষ্ণতার পার্থক্য হয়, উত্তর গোলার্ধে উত্তর দিকে ঢালু অপেক্ষা দক্ষিণ দিকে ঢালু ভূ-পৃষ্ঠ অধিক সৌরতাপ পায়। কারণ দক্ষিনে ঢালু ভূমি সর্বদা সূর্যের দিকে থাকে। আবার দক্ষিণ গোলার্ধে উহার বিপরীত অবস্থা হয়।

১১। মেঘাচ্ছন্নতা (Cloudiness) 

উত্তাপ নিয়ন্ত্রণে মেঘাচ্ছন্নতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সূর্য থেকে আগত তাপ মেঘে বাধা পায়, ফলে মেঘাচ্ছন্নতা আবহাওয়ার নিচে ভূমি বেশি উত্তপ্ত হয় না, আবার রাত্রিকালে তাপ বিকিরণের সময় মেঘের আবরণের ফলে ভূ-পৃষ্ঠের তাপ বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে ফিরে যেতে পারে না। এজন্য শীতের রাত্রিতে কোন স্থানে আকাশের মেঘ দেখা দিলে সেই স্থানে উষ্ণ থাকে। ফলে মেঘাচ্ছন্ন রাত মেঘমুক্ত রাত অপেক্ষায় উষ্ণ থাকে।

উপসংহার

বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত করার ক্ষেত্রে সৌরতাপ শোষণ এবং পৃথিবীর বিকিরিত তাপ গ্রহণ প্রধান ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য নিয়ামক অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ হলেও উষ্ণ ভূমির ও উলম্ব স্থানান্তরের ক্ষেত্রে উল্লেখিত প্রক্রিয়াগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

বায়ুমণ্ডলের তাপ সর্বত্র সমান থাকে না। পৃথিবীর পৃষ্ঠ বৈচিত্রতার উপর নির্ভর করে বায়ুমণ্ডলের তাপের তারতম্য বৈচিত্র। উল্লেখিত কারণেই প্রধানত বায়ুর তাপে তারতম ঘটে থাকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url