সৌরতাপ কি? সৌরতাপের তারতম্যের কারণ বা বিস্তরণ নিয়ন্ত্রণকারী নিয়ামক

প্রিয় পাঠক, আপনি, সৌরতাপ কি? সৌরতাপের তারতম্যের কারণ বা সৌরতাপ বিস্তরণ নিয়ন্ত্রণকারী নিয়ামক সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে আগ্রহী, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘাঁটাঘাঁটি করে ও বিভিন্ন লেখকের বই পুস্তক খোঁজাখুঁজি করে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাচ্ছেন না? তাহলে আপনার জন্য এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত প্রয়োজন।

সৌরতাপ কি সৌরতাপের তারতম্যের কারণ বা সৌরতাপ বিস্তরণ নিয়ন্ত্রণকারী নিয়ামক

আজকের এই প্রতিবেদনে সৌরতাপ কি, সৌর তাপের তারতম্যের কারণ বা সৌরতাপ বিস্তরণ নিয়ন্ত্রণ কারী নিয়ামক সমূহ, সূর্য রশ্মির কোন, দিবাভাগের দৈর্ঘ্য, বায়ুমন্ডলের গভীরতা, জল ও স্থলভাগের প্রভাব, ভূ-পৃষ্ঠের বর্ণ বা প্রকৃতি সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, চলুন এগুলো বিস্তারিত দেখে নিই।

সৌরতাপ কি (Insolation) 

সূর্যই সকল তাপ ও আলোর উৎস, কারণ ইহা এক বিশাল আয়তনের পরমাচুল্লি যা হতে প্রতিনিয়ত আলো ও তাপ নির্গত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫৫% হাইড্রোজেন, ৫৫% হিলিয়াম ও ১% অন্যান্য গ্যাস। আণবিক শক্তি সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় সূর্য হতে অনবরত হাইড্রোজেন হতে হিলিয়াম এবং হিলিয়াম হতে শক্তি তৈরি হচ্ছে। এর কেন্দ্রভাগের উত্তাপ ১৫০,০০০,০০° (এক কোটি ৫০ লক্ষ ডিগ্রি) সেঃ এবং পৃষ্ঠভাগের উত্তাপ ৬০০০° সেঃ। প্রতি মিনিটের সূর্যের উপরিস্থিতি প্রতি বর্গসেন্টিমিটার স্থান হতে ৬.১৫ কিলোওয়াট উত্তাপ নির্গত হয়। তবে সূর্যের মোট উত্তাপের ২০০ কোটি ভাগের মাত্র এক ভাগ পৃথিবীতে এসে পৌঁছে, যা সর্বদা পৃথিবীতে ২৩ বিলিয়ন অশ্বশক্তি সৃষ্টি করছে।


সূর্যের যে আলো ও তাপ এর সামান্য অংশটুকু পৃথিবীতে এসে পৌঁছে সেটাকে আমরা সৌরশক্তি বলে থাকি। মোটকথা সূর্য হতে আগত তাপ ও আলোই সৌরশক্তি। আর পৃথিবী সূর্য হতে যে সৌরশক্তি গ্রহণ করে, তাকে সৌরতাপ বা গৃহীত সৌরশক্তি বলা হয়।

সৌরতাপের তারতম্যের কারণ বা সৌরতাপ বিস্তরণ নিয়ন্ত্রণকারী নিয়ামক সমূহ (Factor's That Govern The distribution of Insolation) 

ভূ-পৃষ্ঠের সর্বত্র সৌর তাপের বিন্যাস একই রকম হয় না। অর্থাৎ ইহা একইভাবে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয় না। যে সমস্ত কারণের ওপর বিশ্বব্যাপী সৌরতাপের বিন্যাস নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করে সে সমস্ত কারণকে সৌরতাপ নিয়ন্ত্রণকারী নিয়ামক বলা হয়। এই সকল নিয়ামকের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে সৌরতাপের তারতম্য হয়ে থাকে। নিম্নে ভূ-পৃষ্ঠের ওপর সৌরতাপ বিন্যাস নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান সময়ের প্রভাব আলোচনা করা হলো-

১। সূর্য রশ্মির কোন (Angle of the sun ray's) 

ভূ-পৃষ্ঠের উপর সূর্যের কিরণ সমানভাবে পড়ে না। কোথাও সূর্যকিরণ লম্বভাবে আবার কোথাও তির্যক ভাবে পতিত হয়। সূর্যের কিরণ লম্বভাবে পড়লে উহা অল্পপরিসর স্থানে পতিত হয় কিন্তু তির্যক ভাবে পড়লে উহা বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়ে। এই কারণে সূর্যের কিরণ লম্বভাবে পতিত হলে ভূ-পৃষ্ঠ অধিক পরিমাণের তাপ গ্রহণ করতে পারে। এবং তির্যকভাবে পতিত হলে ভূ-পৃষ্ঠ এইতাপ খুব কমই পায়।

সূর্য রশ্মির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের তারতম্যের কারণ এর ছবি

এ ছাড়া লম্বা হবে পতিত সূর্যকিরণ তির্যকভাবে পতিত কিরন অপেক্ষা কম বায়ুস্তর ভেদ করে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয় বলে উহার প্রখরতা বেশি। যেমন প্রভাত ও অপরাহ্নে সূর্য আকাশের নিম্নাংশে থাকে, তখন সূর্যকিরণ পৃথিবীর পৃষ্ঠে অতিশয় হেলিয়া পড়ে, সেজন্য প্রভাতে ও অপরাহ্নে সূর্যের তাপ কম হয়। মধ্যাহ্নে সূর্য রশ্মি লম্বভাবে পড়ে বলে উত্তাপ বেশি হয়। এছাড়া নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য প্রায় সারা বছর লম্ব ভাবে কিরণ দেয় বলে এই অঞ্চলের তাপ বারো মাসই বেশি। 


নিরক্ষরেখা হতে উত্তর ও দক্ষিণে সূর্যের কিরণক্রমেই অধিক তির্যকভাবে পতিত হয় বলে তাপ ও অনুরূপভাবে নিরক্ষরেখা হতে উত্তর ও দক্ষিণে ক্রমশ কমতে থাকে। এই কারণে শীতকাল অপেক্ষা গ্রীষ্মকালের সূর্য অধিক লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে সেই সময়ই সৌরতাপ অধিক তীব্র হয়।

২। দিবা ভাগের দৈর্ঘ্য (Length of the day) 

দিন বড় হলে ভূ-পৃষ্ঠ ও অধিক সময় পর্যন্ত সৌরতাপ গ্রহণ করতে পারে, এবং অধিক উত্তপ্ত হয়। কিন্তু দিনের তুলনায় রাত্রি বড় হলে উহার বিপরীত অবস্থা ঘটে। .২১ শে মার্চ হতে ২৩ সেপ্টেম্বর এই ৬ মাস সূর্য উত্তর গোলার্ধে অবস্থান করায় সেখানে গ্রীষ্মকাল এবং দক্ষিণ গোলার্ধের শীতকাল বিরাজ করে। গ্রীষ্মকালে দিন বড় হাওয়াই ওই সময় উত্তর গোলার্ধে অধিক এবং দক্ষিণ গোলার্ধে কম সৌরতাপ পায়।

দিবা ভাগের দৈর্ঘ্য

২১ শে জুন সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার ঠিক উপরে লম্বভাবে এবং দক্ষিনে মকরক্রান্তি রেখার উপর সবচেয়ে হেলে কিরণ দেয়। তাই ২১ শে জুন উত্তর গোলার্ধের দিন সবচেয়ে বড় এবং রাত্রি সবচেয়ে ছোট। ফলে উত্তর গোলার্ধে ঐদিন সর্বাপেক্ষা অধিক এবং দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে কম সৌরতাপ গ্রহণ করে। ২২ শে ডিসেম্বর সূর্যের দক্ষিণায়ন্ত দিনের উহার বিপরীত অবস্থা ঘটে।

৩। বায়ুমণ্ডলের গভীরতা (Thickness of the Atmosphere) 

বায়ুমণ্ডলের গভীরতার উপর ও সূর্যের তাপ বিকিরণ নির্ভরশীল। তির্যক সূর্যরশ্মি উলম্বরশ্মি অপেক্ষা অধিক পরিমাণে বায়ু ভেদ করে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়। এই কারণে এইরূপ সূর্যরশ্মি দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠে অতি অল্প পরিমান তাপ পায়। কিন্তু উলম্ব সূর্যরশ্মি অল্প পরিমাণ বায়ু ভেদ করে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয় বলে উহার দ্বারা অধিক তাপ বিকিরণ হয়ে থাকে।

৪। জল ও স্থলভাগের প্রভাব (Influence of Water and Land) 

দিবাভাগে সূর্যকিরণ সমভাবে জল ও স্থলভাগের উপর পতিত হলেও একই সময়ের মধ্যে জল অপেক্ষা স্থলভাগ অধিক তাপ গ্রহণ করে। সেই কারণে সূর্যের কিরণে, একই সময়ের মধ্যে জল অপেক্ষা স্থলভাগ দ্রুত উত্তাপ হয়। এবং সূর্যকিরণের অভাবে জল অপেক্ষা স্থলভাগ তাড়াতাড়ি শীতল হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, জলভাগ ও স্থলভাগের অবস্থানের উপর সৌরতাপ বিকিরণ নির্ভরশীল।

৫। ভূ-পৃষ্ঠের বর্ণ বা প্রকৃতি (Colour and Nature of Surface) 

গাঢ় বর্ণ বিশিষ্ট শিলা, হালকা বর্ণ বিশিষ্ট শিলা অপেক্ষা অধিক সৌরতাপ আহরণ করতে পারে। আবার আচ্ছাদিত স্থান অপেক্ষা উন্মুক্ত স্থলভাগ অধিক সৌরতাপ গ্রহণ করে। এই কারণে বৃক্ষলতা দ্বারা আবৃত স্থানে সৌরতাপ তুলনামূলক কম শোষিত হয়।

উপসংহার

আমি এতক্ষণ ধরে সৌরতাপ কাকে বলে, সৌরতাপের তারতম্যের কারণ বা এর বিস্তরণ নিয়ন্ত্রণকারী নিয়ামক সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য উপস্থাপন করেছি। আশা করছি, এই বিষয়ে পরিপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন। যদি কোন সংযোজন বা বিয়োজন করার মত নির্বাচিত তথ্য আপনার কাছে থেকে থাকে তবে, কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখবেন। এই আর্টিকেলটি মনোযোগের সহিত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url