শিলা কাকে বলে,শিলার শ্রেণীবিভাগ সমূহ বিস্তারিত আলোচনা
প্রিয় পাঠক, আপনি কি শিলা কাকে বলে,শিলার শ্রেণীবিভাগ সমূহ বিস্তারিত আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন, এ বিষয়ে অনেক লেখকের বই পুস্তক অনুসন্ধান করে এবং ইন্টারনেটে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য খোঁজাখুঁজি করছেন? তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমার আজকের এই প্রতিবেদনে শিলা বলতে কি বুঝায়, শিলার শ্রেণীবিভাগ, আগ্নেয় শিলার শ্রেণীবিভাগ, পাললিক শিলার শ্রেণীবিভাগ সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। চলুন এগুলো বিস্তারিত দেখে নিন।
ভূমিকা
ভূ-পৃষ্ঠ নানা জাতীয় পদার্থ দ্বারা গঠিত। উহার কোথাও রয়েছে শক্ত পাথর,কোথাও নরম কর্দমযুক্ত, আবার কোন কোন অঞ্চল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকাময় মরুভূমি, তাছাড়া নুড়ি, কাঁকর প্রভৃতি ও অনেক জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন স্থানের এসব পদার্থের সাথে আবার জীবন্ত গাছপালার মৃতদেহ মিশে রয়েছে। এইসব পদার্থ গুলি যা ভূপৃষ্ঠ গঠন করেছে তাদের সাধারণ নাম শিলা।
শিলা কাকে বলে
বিভিন্ন প্রকার খনিজ প্রাকৃতিক উপায়ে সংমিশ্রিত হয়ে যে পদার্থের সৃষ্টি করে তার নাম শিলা। সুতরাং দেখা যায় যে, শিলা বলতে কেবলমাত্র কঠিন পদার্থকেই বোঝাই-না, ব্যাপক অর্থে সূক্ষ্ম বালিকণা হতে শুরু করে নরম তুলতুলে কাদা, কঠিন পাথর প্রভৃতিশিলার অন্তর্গত।
শিলার শ্রেণীবিভাগ
ভূ-পৃষ্ঠে শিলাগুলির পরস্পরের মধ্যে গঠন কাঠামো, গঠনকারী, খনিজদের আকৃতি, আয়তন, কাঠিন্য ও ভাঙ্গন পদ্ধতি ইত্যাদির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বর্তমান। ফলে সেগুলি সহজে শনাক্ত করা যায়। উৎপত্তির বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে ভূ-ত্বকের শিলা সমূহকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১। আগ্নেয় শিলা (Igneous Rock) ।
২। পাললিক শিলা (Sedimentary Rock) এবং
৩। রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock) ।
নিম্নে এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো-
১। আগ্নেয় শিলা (Igneous Rock)
সৃষ্টির প্রথম অবস্থায় পৃথিবী উত্তপ্ত গ্যাসীয় অবস্থায় ছিল। ওই অবস্থা থেকে তা বিকিরণের মাধ্যমে প্রথমে তরল ও শীতল হবার সময় গলিত সিলিকা সমৃদ্ধ ম্যাগমা ঠান্ডা হয়ে প্রথম অবস্থায় যে শিলার সৃষ্টি করে তাকে প্রাথমিক শিলা (Primary Rock) বলে। উত্তপ্ত গলিত অবস্থা থেকে শীতল ঘনীভূত ও কঠিন হয় বলে একে আগ্নেয় শিলা (Igneous Rock) বলে। এই শিলার মধ্যে কোন স্তর নেই বলে একে অস্তরিতভুত শিলা (Unstratified) বলে।
আগ্নেয় শিলার শ্রেণীবিভাগ
নিম্নে উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে আগ্নেয় শিলার শ্রেণীবিভাগ উপস্থাপন করা হলো-
(ক) বহিঃজ বা নিঃসারী আগ্নেয় শিলা (Extrusive Igneous Rocks)
পৃথিবীর অভ্যন্তরের উত্তপ্ত গলিত পদার্থ ম্যাগমা অগ্নুৎপাতের সময় আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে বা ভূ-পৃষ্ঠের কোন ফাটল দিয়ে পৃথিবীর উপরিভাগে এসে তাপ বিকিরণ করে ক্রমশঃ শীতল ও কঠিন হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে তাকে বহিঃজ বা নিঃসারী আগ্নেয় শিলা (Extrusive Igneous Rock) বলে। সাল্ট, পিউমিক, আগ্নেয় ছাই প্রভৃতি বহিঃজ বা নিঃসারী আগ্নেয় শিলার উদাহরণ। ভূ-পৃষ্ঠে আগত গলিত ম্যাগমাকে লাভা (Lava) বলে।
ভূপৃষ্ঠে গলিত পদার্থ গুলি নির্গমনের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে বহিঃজ বা নিঃসারী আগ্নেয় শিলাকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়. যথা-
(I) বিস্ফোরক প্রকৃতির আগ্নেয় শিলা (Explosive Typeof Igneous Rocks) ঃ
আগ্নেয়গিরি উদগীরনের ফলে ভূ অভ্যন্তর হইতে যে সকল গলিত পদার্থ প্রচন্ড বেগে আকাশে উৎক্ষিপ্ত হওয়ার পরে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় এবং দ্রুত শীতল হয়ে জমাট বাঁধে তাকে বিস্ফোরক প্রকৃতির আগ্নেয় শিলা (Explosive Type) বলে। এইরূপে উৎক্ষিপ্ত পদার্থ গুলির মধ্যে কঠিন ও বায়বীয় পদার্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আকার ও আয়তনের ওপর ভিত্তি করে উৎখিপ্ত কঠিন পদার্থ গুলির বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে। উৎক্ষিপ্ত বিশাল আকারের শিলা খণ্ড গুলিকে আগ্নেয় গোলক বলে। অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের জমাটবদ্ধ পাথর খন্ডগুলোকে ল্যাপিল বলে। জমাটবদ্ধ খুব ছোট আকারের শিলা কোনা বা গুড়ি আকারের পদার্থ গুলিকে আগ্নেয়গুড়া বলে।
(11) শান্ত প্রকৃতির আগ্নেয় শিলা (Quiet Type of Igneous Rocks) ঃ
বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে ভূ- অভ্যন্তর থেকে আগত গলিত উত্তপ্ত পদার্থ গুলি জ্বালামুখ দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বেরিয়ে এসে দ্রুত শীতল ও কঠিন হলে তাকে শান্ত প্রকৃতির (Quiet Type) আগ্নেয়শিলা বলে। ভূ-পৃষ্ঠে এ প্রকৃতির বহিঃজ আগ্নেয় শিলার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। পৃথিবীর উপরিভাগে বাতাসের সংস্পর্শে লাভা দ্রুত শীতল হয় বলে এরূপ শিলার দানাগুলি খুব ছোট হয়। অনেক সময় লাভা এত দ্রুত শীতল হয় যে এর কিছু অংশ কাচে পরিণত হয়।
(খ) অন্তঃজ বা উদবেধী আগ্নেয় শিলা (Intrusive Igneous Rocks)
কোন কোন সময় ভূ-গর্ভস্থ তরল ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে পৌঁছেতে না পেরে পৃথিবীর অভ্যন্তরেই থেকে যায়। এরপর কয়েক শতবছর পর্যন্ত তাপ বিতরণ করে এই মাগমা কঠিন শিলায় পরিণত হয়।পৃথিবীর অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয় বলিয়া এ জাতীয় শিলাকে অন্তঃজ বা উদবেধী আগ্নেয় শিলা বলে। এ জাতীয় শীলাকে আবার নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন-
(I) পাতালিক শিলা (Intrvsive plutonic Rocks) ঃ
ভূ-পৃষ্ঠ থেকে অনেক নিচে উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা বহু বছর যাবত ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে শীতল ও কঠিন হয়ে যে শিলায় পরিণত হয় তাকে পাতালিক (Plutonic) আগ্নেয় শিলা বলে। অভ্যন্তরীণ চাপ ও তাপের মধ্যে অতি ধীরে শীতল হয় বলে এরূপ শিলার কণা গুলি খুব বড় ও সম্পূর্ণরূপে কেলাসিত হয়। ভূ আলোড়নের ফলে এরূপ শিলা উঠে আসে। গ্রানাইট, grabo এ জাতীয় শিলা।
(II) উপ-পাতালিক শিলা (Hypabyssal Rocks) ঃ
ভূ-পৃষ্ঠে অল্প নিচে ভূত্বকের দুর্বল অংশে বা ফাটলের মধ্যে উত্তপ্ত গলিত পদার্থ সমূহ মধ্যম গতিতে (পাতালিক শিলা অপেক্ষা দ্রুত কিন্তু বহিঃজ আগ্নেয় শিলা অপেক্ষা ধীরে) শীতল হয়ে যে শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে উপ-পাতালিক শিলা বলে। অপেক্ষাকৃত কম চাপ ও তাপের মধ্যে ধীরে শীতল হয় বলে এরূপ শিলার কোণাগুলি মাঝারি ধরনের। ভু-আলোড়নের ফলে এ শিলা ভূপৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। পরফাইরি এ জাতীয় শিলা।
রাসায়নিক গঠন অনুসারে আগ্নেয় শিলার শ্রেণীবিভাগ
নানা প্রকার রাসায়নিক উপাদানে আগ্নেয় শিলা গঠিত, তবে উহার মধ্যে সবচেয়ে ৮ টি উপাদান ই বেশি। এগুলো হলো-অক্সিজেন, সিলিকা বা বালুকা, অ্যালুমিনিয়াম, লৌহ,ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। এদের মধ্যে সিলিকার পরিমাণ ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ। আগ্নেয় শিলা গঠনকারী বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে এই শিলাকে ৪ টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(I) আম্লিক শিলা (Acidic) ঃ
যেসকল আগ্নেয় শিলায় বালুকার পরিমান ৬৫% ভাগ বা উহার বেশি তাকে আম্লিক শিলা বলে। গ্রানাইট, অফসিডিয়ান প্রভৃতি এর উদাহরণ।
(II) ক্ষারকীয় শিলা (Basic) ঃ
যে সকল আগ্নেয় শিলায় বালুর পরিমাণ ৪৫% ভাগ হতে ৫৫% ভাগ এবং অ্যালুমিনিয়াম লোহ লৌহ সোডিয়াম ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি ক্ষারকীয় অক্সাইড ৪৫% ভাগের বেশি থাকে তাকে ক্ষারকীয় শিলা বলে। ব্যাসল্ট, grabo, ডিলোমাইট প্রভৃতি এর উদাহরণ।
(III) মধ্যবর্তী শিলা (Intermediate) ঃ
যেসব আগ্নেয়শিলায় সিলিকা বা বালুর পরিমাণ ৬৫% থেকে ৫০% এবং ৩৫ % হইতে ৪৫ % ভাগ ক্ষারকীয় অক্সাইড থাকে তাকে মধ্যবর্তী শিলা বলে। ডাইওরাইট, এন্ডডিসাইড প্রভৃতি এর উদাহরণ।
(IV) অতি ক্ষারকীয় শিলা (Ultra Basic) ঃ
যেসব আগ্নেয়শিলায় সিলিকার ভাগ ৪৫% এবং ক্ষারকীয় অক্সাইডের ভাগ ৫৫% এর বেশি সেগুলিকে অতি ক্ষারকীয় আগ্নেয়শিলা বলে। পেরিডোটাইট এর উদাহরণ।
২। পাললিক শিলা (Sedimentary Rock)
ভূপৃষ্ঠের প্রাথমিক শিলা সমূহ যুগ যুগ ধরে রোদ্র, বৃষ্টি, বায়ুপ্রবাহ, সাগর তরঙ্গ প্রভৃতির নানা-ঘাত প্রতিঘাত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং খন্ড-বিখন্ড হয়ে কাঁকর, বালি, কাদা প্রভৃতিতে পরিণত হয়। ক্ষয়িত এই অংশগুলি নদী প্রবাহ, বৃষ্টির পানি দ্বারা, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা বাহিত হয়ে বিভিন্ন সমুদ্র, হ্রদ বা অন্য কোন নিম্ন ভুমিতে পলি রূপের সঞ্চিত হতে থাকে।
এইরূপে বহু বছর ধরে পলি জমা হয়ে স্তরের সৃষ্টি করে। কালক্রমে উপরিভাগে বিশাল পানি রাশি ও পলি স্তরের ভয়ানক চাপে ভূগর্ভের তাপে ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নিম্নস্থ স্তরগুলি ক্রমশ জমাট বেঁধে শিলায় পরিণত হয়। পলি দ্বারা গঠিত হয় বলে এ জাতীয় শিলাকে পাললিক শিলা বলে। আবার এ জাতীয় শিলা স্তরে স্তরে গঠিত বলে এদেরকে স্তরিভূত শিলা ও বলে।
পাললিক শিলাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। গঠন অনুসারে এবং
২। উৎপত্তি অনুসারে।
১। গঠন অনুসারে পাললিক শিলার শ্রেণীবিভাগ
গঠন প্রণালী অনুসারে পাললিক শিলা গুলিকে তিনটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয় যথা- (ক) যান্ত্রিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলা (খ) রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় গঠিত এবং (গ) জৈবিক প্রক্রিয়ায় গঠিত পাললিক শিলা। এগুলোর নিচে বর্ণনা করা হলো-
(ক) যান্ত্রিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলা (Mechanically for med Sidimentary Rocks)
পাললিক শিলা গঠনকারী বিভিন্ন যান্ত্রিক শক্তির মধ্যে সূর্যতাপ, মধ্যাকর্ষণ শক্তি, বায়ুপ্রবাহ, নদী প্রবাহ, হিমবাহ এবং সাগর ও হ্রদের তরঙ্গ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই শক্তিগুলি শিলারাশি ক্ষয়, ক্ষয়ীভূত পদার্থ গুলি বহন এবং বাহিত পদার্থ গুলি সঞ্চয়ের সাহায্য করে। সিলিকা, লৌহ ও চুন জাতীয় পদার্থ পাললিক শিলার উপাদান গুলিকে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করতে সাহায্য করে। পদার্থের আকৃতি বিবেচনায় যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠিত পাললিক শিলাগুলিকে পুনরায় তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা-
(I) নুড়িময় শিলা (Rudaceous Rocks) ঃ
যেসব পাললিক শিলায় নুড়িপাথরের ভাগ বেশি থাকে তাকে নুড়িময় পাললিক শিলা বলে। কনপ্লোমারেট, ব্রেকশিয়া, গ্রিট প্রভৃতি এ জাতীয় শিলার উদাহরণ।
(II) বালুকাময় শিলা (Arenaceous Rocks) ঃ
যে সকল পাললিক শিলার ভিতরে বালু কণার পরিমাণ বেশি থাকে তাকে বালুকাময় শিলা বলে। কাঁকর ও বালুকণা জমাটবদ্ধ হয়ে এই শিলার সৃষ্টি করে। যেমন- আরকোজ, বেলেপাথর ইত্যাদি এজাতীয় শিলার অন্তর্গত।
(III) কর্দমময় শিলা (Argillaceous Rocks) ঃ
খুব সূক্ষ্ম শীলাচূর্ণ পলি আকারের সঞ্চিত হয়ে যে শিলা গঠন করে তাকে কর্দমময় পাললিক শিলা বলে। এরূপ শিলায় কর্দমের ভাগ বেশি থাকে। যথেষ্ট সূক্ষ্ম হওয়ায় এরূপ পলি নদীর স্রোতের সাথে বহুদূর পথ অতিক্রম করে হ্রদ অথবা সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত হয়ে জমাটবদ্ধ পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়। সূক্ষ্ম ধূলিকণা সঞ্চিত হয়ে স্থলভাগে কর্দমময় শিলা গঠিত হয়। কাদা, কাদামাটি, শেল,কাদাপাথর ইত্যাদি এ জাতীয় শিলার অন্তর্গত।
(খ) জৈবিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলা (Organically Formed Sedimentary Rocks)
উদ্ভিজ্জ বা প্রাণীর দেহবাশেষ জমাট বেঁধে যে শিলায় সৃষ্টি হয় তাকে জৈবিক পাললিক শিলা বলে। এজাতীয় শিলার মধ্যে সিলিকা, চুন, লৌহ ও অঙ্গারীয় পদার্থ পাওয়া যায়। গঠনকারী উপাদান হিসেবে এই শীলাকে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
(I) অঙ্গারীয় শিলা (Carbonaceous Rocks) ঃ
উদ্ভিদ দেহ ভূ-ত্বকে চাপা পড়লে অভ্যন্তরীণ চাপ ও তাপের প্রভাবে বহু বছর পর যে শিলাই পরিণত হয় তাকে অঙ্গারীয় শিলা বলে। ভূমিকম্প বা অন্য কোন নৈসর্গিক কারণে অনেক সময় অরণ্যের বৃক্ষলতাদি মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়, ভু-অভ্যন্তরীণ তাপ ও চাপে কয়লায় পরিণত হয়। কয়লা অঙ্গার দ্বারা গঠিত বলে উহাকে অঙ্গারময় শিলা বলে। এন্থ্রাসাইট, বিটুমিনাস,লিগনাইট, বিট জাতীয় শিলা।
(II) চুনাময় শিলা (Calcareous Rocks) ঃ
প্রাণীদেহের হাড়, কাঁটা প্রকৃতির চুন জাতীয় পদার্থ দ্বারা গঠিত। সমুদ্রের কড়ি, শামুক, ঝিনুক প্রভৃতি প্রাণীদেহ সম্পন্নরূপে চুন জাতীয় পদার্থ দ্বারা গঠিত। এরূপ প্রাণীর দেহাবাশেষ স্তূপীকৃত ও জমাটবদ্ধ হয়ে চুনাময় শিলার সৃষ্টি করে। চুনাপাথর, শেল, প্রবাল, উত্তলিট, প্রভৃতি এ জাতীয় শিলা।
(III) সিলিকাময় শিলা (Silicaous Rocks) ঃ
সিলিকা দ্বারা গঠিত শিলাকে সিলিকাময় শিলা বলে। গভীর সমুদ্রের স্পঞ্জ ও র্যাডিওলারিয়া নামক অতিক্ষুদ্র প্রাণী এবং ডায়াটম অতিক্ষুদ্র উদ্ভিজ্জের দেহে প্রচুর সিলিকা থাকে। উহাদের দেহবাশেষ হতে নির্গত সিলিকা সমুদ্রের তলদেশে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় এবং জমাট বেঁধে এই জাতীয় শিলার সৃষ্টি করে।
(গ) রাসায়নিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলা (Chemically Formed Sedimentary Rocks)
পানির সহিত নানা প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। রাসায়নিক দ্রব্য ও মিশ্রিত এই পানি কোন কারণে আবদ্ধ হয়ে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে শুকাইয়া গেলে রাসায়নিক উপাদানগুলি স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। এইরূপে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন উপাদান সঞ্চিত হতে হতে কালক্রমে যে শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে রাসায়নিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলা বলে। বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের উপর ভিত্তি করে উহাদিগকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
(I) কার্বনেট (Carbonate) ঃ
রাসায়নিক চুন জাতীয় পদার্থ সঞ্চিত হয়ে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে কার্বনেট বলে। যেমন- ডালোমাইট, ইহাতে ক্যালসিয়াম কার্বনেট ছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট অধিক পরিমাণে বর্তমান।
(II) সালফেট (Sulphate) ঃ
ক্যালসিয়াম সালফেট মিশ্রিত পানি হতে রাসায়নিক উপায়ে গঠিত শিলাকে সালফেট বলে। জিপসাম এ জাতীয় শিলা। ক্যালসিয়াম সালফেট মিশ্রিত পানি বাষ্প করে চলে গেলে জিপসাম সৃষ্টি হয়।
(III) ক্লোরাইড (Chloride) ঃ
লবণ জাতীয় শিলাকে ক্লোরাইড বলে। লবণাক্ত হ্রদ বাষ্পীভবনের মাধ্যমে শুকাইয়া গেলে খনিজ লবণ সঞ্চিত হয়। পাকিস্তানের খেওড়ালবণ পর্বতের লবণ গুলি এইরূপে সৃষ্টি হয়েছে।
(IV) সিলিকেট (Silicate) ঃ
সিলিকা মিশ্রিত পানি বাষ্পীভবনের মাধ্যমে শুকাইয়া গিয়ে, সঞ্চিত হয়ে সিলিকেট গঠিত হয়।সিন্টার এজাতীয় শিলা। উষ্ণপ্রস্রবণ বা ঝরনার মুখে ও হ্রদে সিলিকা মিশ্রিত পানি বাষ্পভূত হয়ে চলে গেলে সিলিকা সঞ্চিত হয়ে সিন্টার গঠন করে।
২। উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলার শ্রেণীবিভাগ
উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলাকে নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হল-
(ক) সংঘাত শিলা (Clastic Rock) ঃ
আঘাতের ফলে আদি শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হলে সেই পদার্থগুলি পলি আকারে সজ্জিত হয়ে যে শিলা গঠন করে তাকে সংঘাত ছিল বলে। এ জাতীয় শিলা আবার দুই প্রকার। যথা- (I) কঙ্করীয় পলল এবং (II) আগ্নেয় ভগ্ন পলল।
(I) কঙ্করীয় পলল (Detrital Sediments) ঃ
বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে বিচূর্ণীভবনের মাধ্যমে আদি শিলা ক্ষয়ভুত হয়ে যে শিলা গঠন করে তাকে কঙ্করীয় পলল বলে। কংগ্লোমারেট, বেলেপাথর, কাদাপাথর প্রভৃতি এই শ্রেণীর অন্তর্গত।
(II) আগ্নেয় ভগ্ন পালল (Pyroclastic Sediments) ঃ
আগ্নেয়গিরি অগ্নুৎপাত যখন স্তমিত হয়ে আসে তখন এর ছিদ্রপথের গায়ে জমাটবদ্ধ লাভা, সিন্দার ছাই, ব্রেকশিয়া প্রভৃতি লেগে থাকে এগুলো আগ্নেয় ভগ্ন নামে পরিচিত। পরবর্তীতে অগ্নুৎপাতের সময় এগুলি বেরিয়ে আসে। পরস্পরের আঘাতে ও প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে আগ্নেয় ভাগ্ন থেকে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে আগ্নেয় ভাগ্ন পালল বলে।
(খ) অসংঘাত শিলা (Non Clastic Rocks) ঃ
সংঘাত ব্যতীত জৈব পদার্থ দ্বারা এবং রাসায়নিক উপায়ে যে শিলা গঠিত হয় তাকে অসংঘাত শিলা বলে। জৈব ও রাসায়নিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলা এ জাতীয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, আমি বিভিন্ন লেখকের বই পুস্তক ঘাটাঘাটি এবং ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করে নির্ভরযোগ্য এবং বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি উপরোক্ত বিষয়ে আপনি পুরোপুরি বুঝতে পেরেছেন। এ বিষয়ে যদি কোন সংযোজন বা বিয়োজন প্রয়োজন বোধ করেন বা নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য থাকে, তবে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখবেন। এই প্রতিবেদনটি মনোযোগের সহিত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url