পৃথিবীর কাঠ চেরাই অঞ্চলের বর্ণনা দাও (Lumbering)
প্রিয় পাঠক, অর্থনৈতিক ভূগোল বিষয়ের 'পৃথিবীর কাঠ চেরাই অঞ্চলের বর্ণনা দাও (Lumbering)' শীর্ষক শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য তথ্য জানার জন্য খুব আগ্রহী, বিভিন্ন লেখকের বই পুস্তক এবং ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করছেন? তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজন।
আমি আজকের এই প্রতিবেদনে কাঠ চেরাই, কাঠ চেরাই শিল্পের বৈশিষ্ট্য, ক্রান্তীয় কাঠ চেরাই শিল্প, নাতিশীতোষ্ণ কাঠ চেরাই শিল্প,সরলবর্গীয় অঞ্চলের কাঠ শিল্প,পর্ণমোচী অরণ্যের কাঠ শিল্প,চিরহরিৎ অঞ্চলের কাঠ শিল্প সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত দেখতে থাকুন-
ভূমিকা
বৃক্ষজাত কাঠ হচ্ছে বনভূমির অন্যতম প্রধান সম্পদ। বনভূমি হতে বিভিন্ন প্রকার কাঠ সংগ্রহ করা হয়। এসব কাঠের সাহায্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাঠ শিল্প গড়ে উঠেছে। শক্ত ও নরম উভয় প্রকার বৃক্ষ বনভূমিতে পাওয়া যায়। শক্ত ও নরম উভয় প্রকার বৃক্ষের মোটা ও দীর্ঘ গুড়ির টুকরাগুলো কে Timber এবং কাঠ চেরাই করে বানানো তত্ত্বাকে Lumber বলা হয়। গভীর বনভূমি হতে গাছ কেটে এগুলোকে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে বা নৌকা, লঞ্চ, ট্রাকের সাহায্য করাত কল বা চেরাই কলে নেওয়া হয় তক্তা তৈরি করার জন্য। এই কাঠ এবং তক্তাগুলো গৃহ নির্মাণ, আসবাবপত্র, রেলগাড়ির স্লিপার, জাহাজের মাস্তুল, পাটাতন প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হয। এছাড়া কোন কোন কাঠ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন-কাগজ শিল্প নির্মাণ।
কাঠ চেরাই (Lumbering)
প্রাথমিক পর্যায়ের কর্মকান্ডের মধ্যে কাঠ চেরাই অন্যতম। আদিম সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ বনভূমি হতে বিভিন্ন প্রকারের বনজ সম্পদ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকতো। বনভূমি হতে বিভিন্ন প্রকার কাঠ সংগ্রহ করে চেরাইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন আকৃতি বিশিষ্ট করার প্রক্রিয়াকে কাঠ চেরাই বা কাঠ শিল্প বলা হয়।
চেরাই কাঠ শিল্পের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Lumbering)
বনভূমির প্রকৃতি একেক জলবায়ু মন্ডল অঞ্চলে একেক রকম। নিম্নে বিভিন্ন অঞ্চলের চেরায় কাঠ শিল্পের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো। যেমন-(ক) ক্রান্তীয় চেরাই কাঠ শিল্প (Tropical Lumbering) এবং (খ) নাতিশীতোষ্ণ চেরাই কাঠ শিল্প (Temperate Lumbering) ।
(ক) ক্রান্তীয় চেরাই কাঠ শিল্প (Tropical Lumbering)
নিম্নে নিয়ে এখনো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ (Numerous species) ঃ
ছোট একটি এলাকার বিভিন্ন ধরনের প্রজাতির উপস্থিত, গুণগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কোন প্রজাতি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, মূল্যের দিক থেকে একটি অপেক্ষা অন্যটি বেশি মূল্যবান। অনেক গাছ সোজা হয়ে থাকে না। একটি বড় গাছের নিচে অগণিত ছোট গাছ দ্রুত বেড়ে উঠেছে, ফলে পছন্দমত গাছগুলোর গাছে পৌঁছানো কষ্টকর। বড় গাছগুলোর দৈর্ঘ্য ও আকারে বিশাল। যা যন্ত্রের সাহায্যেও নড়াচড়া করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
ঐতিহ্যবাহী সংগ্রহ পদ্ধতি (Traditional methods of extraction) :
আমেরিকা ও আফ্রিকায় গৃহকাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য সংগৃহীত কাঠ প্রধানত ছোট ছোট গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং এক্ষেত্রে যান্ত্রিকতা অপ্রয়োজনীয়। অধিক মূল্যবান গাছগুলো বিক্ষিপ্ত প্রকৃতি ও যন্ত্র ব্যবহারের পক্ষে অনুপযোগী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মত পার্বত্য এলাকাগুলোতে অনেক পাহাড়ের খাড়াই ঢাল অতিরিক্ত সমস্যার সৃষ্টি করে। ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড বহু বছর আগে থেকেই সেগুন কাঠের গুড়ি আহরণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ, এ কাজে হাতির ব্যবহার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
জংলি পরিবেশ (Jungle Environment) ঃ
অনুপ্রবেশের অসুবিধা ছাড়াও বিভিন্ন উদ্ভিদ দ্রুত বেড়ে ওঠায় একবার তৈরি করা রাস্তাগুলো অতি অল্প সময়ে আগাছা ও ঝোপঝাড়ে ভরে যায়। আর্দ্র, উষ্ণ বায়ুমণ্ডল, বিষাক্ত পোকামাকড়ের উপস্থিতি, বাঘ, হাতি, সাপ প্রভৃতির আক্রমণের ভয়, বিভিন্ন ক্রান্তীয় রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা সবকিছু মিলে ক্রান্তীয় বনভূমি থেকে গাছের গুড়ি আহরণ কাজ নিরুৎসাহিত করে।
শক্ত কাঠের নমনীয় চাহিদা (Less elastic demand) ঃ
ক্রান্তীয় শক্ত কাঠের প্রজাতিগুলো মূল্যবান হওয়ায় অফিস ও গৃহস্থালির আসবাবপত্র তৈরির জন্য এগুলোর চাহিদা থাকলেও মণ্ড বা কাগজ তৈরির কাজে এগুলোর কোন চাহিদা নেই। শক্ত কাঠ দিয়ে মন্ড তৈরি সম্ভব হলে কাজটি খুবই কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। এ কারণে অতীতে ক্রান্তীয় বনভূমি থেকে গুড়ি কাঠ আহরণ কম ছিল। বর্তমানে গুড়ি কাঠের সামগ্রিক চাহিদা খুবই বৃদ্ধি পেয়েছে।
পুনঃস্থাপনহীনতা (Non replacement) ঃ
ক্রান্তীয় শক্ত কাঠের গাছগুলোর দৈর্ঘ্য অনেক বেশি এবং পরিণত হতে অনেক সময় লাগে। অধিকিন্তু নরম কাঠের জন্য যথেষ্ট চাপ রয়েছে, কারণ এরূপ কাঠ সহজে মন্ড ও কাগজে পরিণত করা যায়। এজন্য অনেক এলাকায় মূল প্রজাতিগুলো নির্মূল হলে সেখানে পাইন ও অন্যান্য দ্রুত বৃদ্ধিশীল নরম কাঠের প্রজাতি চারা রোপন করা হচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘদিন পরে বনভূমি গুলো কম মূল্যবান হয়ে পড়বে, কারণ উচ্চমূল্যের শক্ত কাঠের গাছ সেখানে তখন থাকবে না।
ক্ষয়ীভবন (Erosion) ঃ
ক্রান্তীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব বেশি। যখনই শক্ত কাঠের গাছগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে মাটি দ্রুত ক্ষয়ীভূত হতে শুরু করবে, মাটির উর্বরতা শক্তি হাস পাবে এবং মূল প্রজাতিগুলো সেখানে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না এবং সেই স্থান দখল করবে নিকৃষ্ট প্রজাতির দ্বিতীয় প্রজাতির উদ্ভিদ। মাটি সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে ফেললে বা ভূমিধসের সৃষ্টি হলে পুনঃ উদ্ভিদ বৃদ্ধি বন্ধ হতে পারে।
স্থানান্তরিত কৃষি (Shifting cultivation) ঃ
স্থানান্তরিত কৃষি ব্যবস্থা অব্যাহত থাকার ফলে ক্রান্তীয় অঞ্চলের অনেক বনভূমি এলাকা গুড়ি কাঠ আহরণের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে পুড়িয়ে ফেলার ফলে বা তৃণভূমি সেই স্থানে বেড়ে উঠলে বা অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় উদ্ভিদ বেড়ে উঠলে গাছের প্রজাতির বৃদ্ধির বিবেচনায় বনভূমি পুনরায় সৃষ্টি নাও হতে পারে বা দীর্ঘসময়ের প্রয়োজন হতে পারে।
পরিবহন (Transportation) ঃ
একদিকে কাঠের গুড়ি অনেক ভারসম্পন্ন এবং বনভূমি গুলোর অপ্রবেশ্যতা এবং অন্যদিকে এলাকাগুলোর উন্নয়নের অভাব, এই দুই কারণে পতিত গুড়িগুলো স্থানান্তর করা খুবই অসুবিধাজনক। স্থলপথ অপেক্ষা নদীপথে দীর্ঘ গুড়িগুলোর স্রোতের অনুকূলে ভাসিয়ে উপকূলে বন্দরে বা শিল্প কেন্দ্রগুলোতে নেওয়া হয়। ক্রান্তীয় অঞ্চলের কোন কোন দেশে এই পদ্ধতি সাধারণত গুড়ি কাঠ পরিবাহিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মায়ানমারের সেগুন গুড়িগুলো ইরাবতী নদীতে ভাসিয়ে ইয়াঙ্গুনে এনে রপ্তানি করা হয়।
বাজারে প্রবেশ (Access to market) ঃ
অধিকাংশ ক্রান্তীয় বনভূমি গুলো বিভিন্ন দেশের বিক্ষিপ্ত বসবাস এলাকায় অবস্থিত। এ দেশগুলোতে এখনো শিল্প বিকাশ আপেক্ষিক ভাবে খুবই কম। ক্রান্তীয় গুড়ি কাঠ সম্পদ গুলো আহরণে উৎসাহিত করার মত কোন স্থানীয় বাজার নেই। ক্রান্তীয় এলাকাগুলো কাঠ ভোগকারী দেশগুলো অনেক দূরে।
(খ) নাতিশীতোষ্ণ চেরাই কাঠ শিল্প (Temperate Lumbering)
এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
যান্ত্রিক সংগ্রহ (Mechanical extraction) ঃ
বর্তমানে চোরাই কাঠের প্রচুর চাহিদা থাকায় বনভূমি আধুনিকীকরণ এবং ব্যাপকভাবে যন্ত্র ব্যবহারের উৎসাহ লাভ করেছে। শক্তি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।
বসবাসের অবস্থা (Living condition) ঃ
বনভূমিতে কাজের চাহিদার ফলে ঋতু বিশেষে শ্রমিক নিয়োগের পরিবর্তে সারা বছর বনে কাজ করা হয়। পুনঃপরিকল্পনা এবং বন এলাকা পুনঃ ব্যবহার এবং কেবলমাত্র গুড়ি সংগ্রহের পরিবর্তে গুড়ি সংগ্রহ ও বনায়নের জন্য চারা রোপন একই সময়ে সংঘটিত হওয়ায় বনকর্মীদের স্থায়ী সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে। আগের মত বন কর্মীদের কঠোর কষ্ট করতে হয় না এবং তাদের জীবনধারণ পন্থা আকর্ষণ হীন নয়।
কাঠের গুড়ির নিয়মিত চাহিদা (Steady demand for timber) ঃ
নরম কাঠের চাহিদা অবিরত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাগজ শিল্প গুলোর জন্য সেলুলোজের প্রধান উৎস সরলবর্গীয় কাঠ। কাগজ শিল্পে ব্যবহার করা যায় না বলে নিম্নমানের গাছের কাঠ থেকে ফাইবার বোর্ড বা পার্টিকেল বোর্ড তৈরি করা হয়।
পরিবহন (Transportation) ঃ
বড় গাছগুলোর নিচে ছোট গাছের অভাব, অপেক্ষাকৃত ছোট আকার গুড়িগুলোর আপেক্ষিক লঘুভার এবং একেবারে কোন গৃহৎ এলাকা সুন্দরভাবে পরিষ্কার করার ক্ষমতা সরলবর্গীয় বনে কাঠের গুড়ি সংগ্রহ সহজতর করেছে। অধিকিন্তু ঋতু বিশেষে বরফ আবৃত ভূমির উপর দিয়ে গুড়ি সংগ্রহ টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। প্রবাহিত নদীপথে স্রোতের অনুকূলে গুড়িগুলো বৃহৎ আয়তনের জন্য মন্ড ও কাগজ কলগুলো সাধারণত কাঁচামাল উৎসের কাজে গড়ে উঠেছে। কাঠভিত্তিক শিল্পের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হওয়ায় এগুলোর নদীর কাছে গড়ে ওঠে। ফলে পরিবহন খরচ কম হয়।
পৃথিবীর কাঠ চোরাই অঞ্চল (Lumbering Region of the World)
অবস্থানগত কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বনভূমি হতে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কাঠ পাওয়া যায়, যার অর্থনৈতিক মূল্য এবং বাজার ব্যবস্থা ভিন্ন। নিম্নে এই অঞ্চলগুলোর বর্ণনা করা হলো-
সরলবর্গীয় অঞ্চলের কাঠ শিল্প (Cottage industries in the plain region)
শিল্পগত ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এইসব কাঠ শিল্প শীতপ্রধান দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশেষভাবে বিকাশ লাভ করেছে। এ সকল বনভূমির বৃক্ষ হতে সাধারণত নরম কাঠ পাওয়া যায়। আলাস্কার দক্ষিণ হতে কানাডার উত্তর অঞ্চল এবং ইউরোপের উত্তরাঞ্চল থেকে সাইবেরিয়া পর্যন্ত এলাকায় সরলবর্গীয় বনভূমির বৃক্ষ হতে সাধারণত নরম কাঠ পাওয়া যায়।
এসব অঞ্চলের শীতকালে ভূমি বরফে ঢেকে থাকে এবং নদীর পানি বরফ হয়ে জমাট বেঁধে যায়। যার ফলে বরফের উপর দিয়ে শরৎকালে কেটে রাখা গাছের গুড়িগুলো টেনে নদীর বাঁকে আনা সহজ হয়। বসন্তকালের নদীর বরফ গলতে শুরু করলে গুড়িগুলো ভাসিয়ে নদীর তীরে অবস্থিত করাতকলে নেওয়া সহজ হয়। এই অঞ্চলের কাঠ শিল্পের প্রসারতার কারণ গুলো নিম্নরূপ-
- বিস্তীর্ণ অঞ্চলে একই প্রজাতির বৃক্ষ একই জায়গায় বিপুল পরিমাণে পাওয়া যায়।
- প্রয়োজনীয় গাছ সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।
- ব্যাপক হারে কাঠ সংগ্রহ সুবিধা জনক।
- গাছগুলোর কাঠ নরম প্রকৃতির হওয়ায় সহজে ও সস্তায় গাছ কাটা যায়।
- বনভূমি ঘন না হওয়ায় গাছ কেটে বের করে আনার সহজ।
- গাছের গুড়ি নদীর পানিতে ভাসিয়ে আনা যায় বলে পরিবহন ব্যয় কম।
- পানি বিদ্যুৎ সুলভ হওয়ায় কাঠ চেরাই, মন্ড তৈরি, কাগজ শিল্পের বিকাশ সহজ হয়েছে।
- শ্রমিকের অভাব হয় না, কারণ শীতকালে কৃষিক্ষেত্রে বরফে আচ্ছাদিত থাকায় কৃষকেরা গ্রীষ্মকালে কৃষি কাজ করে এবং শীতকালে গাছ কাটার কাজ করে।
- পার্শ্ববর্তী দেশগুলো সমৃদ্ধশালী হওয়ায় এই অঞ্চলের কাঠের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পর্ণমোচী অরণ্যের কাঠ শিল্প (Woodworks of pornography forests)
ভারত, চীন, জাপান, ব্রাজিল, মধ্য রাশিয়ার পার্বত্য অঞ্চল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এপালেসিয়াম পর্বত, দক্ষিণ চিলি প্রভৃতি অঞ্চলে পর্ণমোচী বৃক্ষ দেখা যায়। এই বনভূমির কাঠ শক্ত ও স্থুলকায়। পর্বতগাত্রে অবস্থান করায় এবং যান বহনের সুবিধা না থাকায় এই বনভূমির এলাকার কাঠ শিল্প বিশেষভাবে প্রসার লাভ করেনি। এই বনভূমের কাঠ সাধারণত গৃহ নির্মাণ, আসবাবপত্র, যানবাহন ও খেলাধুলার সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
চিরহরিৎ অঞ্চলের কাঠ শিল্প (Evergreen wood industry)
মূল্যবান কাঠ সম্পদে সমৃদ্ধশালী হলেও এই অঞ্চলের কাঠশিল্প বিশেষভাবে প্রসার লাভ করেনি। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ব্রাজিল, ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, মধ্য আমেরিকা প্রভৃতি অঞ্চলে এসব অরণ্য দেখা যায়। এসব বনভূমির কাঠ শক্ত এবং দ্রুত বর্ধনশীল। এসব বনভূমির প্রধান বৃক্ষ মেহগনি। এছাড়া সেগুন, আবলুশ, এবনি প্রভৃতি বৃক্ষ পাওয়া যায়। এসব বৃক্ষের কাঠ আসবাবপত্র ও জাহাজ নির্মাণের বেশি ব্যবহৃত হয়। নিম্নে এই অঞ্চলের কাঠ শিল্পে অনগ্রসরতার কারণ গুলো দেওয়া হল-
- গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলো সমৃদ্ধশালী না হওয়ায় কাঠের চাহিদা কম।
- বনভূমি ঘন হওয়ায় কাঠ সংগ্রহ করার সহজসাধ্য নয়।
- যানবাহনের উন্নতি না হয় কাঠ সংগ্রহ করার সহজসাধ্য নয়।
- কাঠ ভারী হওয়ায় পানিতে ভাসিয়ে আনা সহজ হয় না।
- কাঠ কাটার জন্য শ্রমিকের অভাব।
- বনভূমির অভ্যন্তরের আবহাওয়া মানুষের বসবাসের অনুপযোগী এবং অস্বাস্থ্যকর।
- বনভূমির অভ্যান্তর ভাগে বিষাক্ত কীটপতঙ্গ ও সরীসৃপের প্রদুর্ভাব থাকায় তা কারো জন্য নিরাপদ নয়।
বর্তমানে এ অঞ্চলের কোন কোন দেশে কাঠ শিল্পে উন্নতি লাভ করেছে। যেমন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, রাবার ও চেরাই কাঠ রপ্তানি করছে। মায়ানমার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সেগুন ও আবলুস অল্প পরিমাণে রপ্তানি করে থাকে।
উপসংহার
আমরা এতক্ষণ ধরে প্রথম পর্যায়ে কর্মকান্ডের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাঠ চেরাই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি এ বিষয় সম্পর্কিত পরিপূর্ণ তথ্য বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। এ বিষয় সংক্রান্ত যদি কোন আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনার কাছে থাকে অথবা কোন পরামর্শ দিতে আগ্রহী হন তবে কমান্ড বক্সে জানিয়ে রাখবেন। এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনটি মনোযোগের সহিত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url