পশু শিকার (Hunting) এবং পৃথিবীর প্রধান প্রধান পশু শিকার অঞ্চল
প্রিয় পাঠক,পশু শিকার (Hunting) এবং পৃথিবীর প্রধান প্রধান পশু শিকার অঞ্চল সমূহ সম্পর্কিত তথ্য জানার জন্য বিভিন্ন লেখকের বই-পুস্তক এবং ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘাটাঘাঁটি করছেন? তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রতিবেদনে পশু শিকার, পৃথিবীর প্রধান প্রধান পশু শিকার অঞ্চল, পশু শিকারের বিভিন্ন উপকরণাদি, তুন্দ্রা অঞ্চল,তৈগা অঞ্চল, সাভানা অঞ্চল, ক্রান্তীয় বনভূমি অঞ্চল সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য মনোযোগের সহিত পড়তে থাকুন।
ভূমিকা
মানব সভ্যতার পূর্ব থেকে মানুষ বন জঙ্গলে প্রবেশ করে পশু পাখি শিকার করত। আজও বনাঞ্চলের অধিবাসীগণ এরূপ পশু স্বীকার করে থাকে। বস্তুত পশুশিকার প্রাচীনতম পেশাগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম পেশা। পশু শিকার বলতে পশু এবং পাখি উভয়কেই ফাঁদ বা ধারালো অস্ত্রের দ্বারা আঘাত করে স্বীকার করা বোঝায়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ড, কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তন্দ্রা অঞ্চলে হরিণ, শেয়াল, কুকুর, শ্বেতভাল্লুক, সাপ ও বিভিন্ন ধরনের পাখি আদিম অধিবাসীরা তীর, ধনুক প্রভৃতির সাহায্যের স্বীকার করত এবং এদের মাংস ভক্ষণ করত। বর্তমানে ইউরোপের তুন্দ্রা অঞ্চলে ল্যাম্প ও ফিন এবং এশিয়ার স্যামোয়েদ ও ইয়াকুট প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ পশু শিকারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
পশু শিকার (Hunting)
কোন পশু বা পাখিকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরে ফেলা বা নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসার জন্য যে কলা কৌশল অবলম্বন করা হয় তা-ই হলো শিকার। মানুষ তার নিজের ও পরিবারের জন্য খাদ্য সংগ্রহ আত্মরক্ষা বিনোদন কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য করার লক্ষ্যই সাধারণত বন্যপ্রাণীর স্বীকার করতে শুরু করে।
এছাড়া পশুপাখি ও নিজের জীবনধারণের জন্য তাদের আহার উপযোগী অন্যান্য প্রাণী শিকার করে থাকে। শিকারের জন্য নির্দিষ্ট অস্ত্রশস্ত্র কিংবা সহায়ক উপকরণের প্রয়োজন পড়ে। যিনি বন্য পশুপাখি স্বীকার করেন তিনি শিকারি নামে পরিচিত হয়ে থাকেন।
পশু শিকারির ব্যবহৃত উপকরণাদি
প্রথম পর্যায়ে যখন মানুষ পাথর এবং কাঠের যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে শিখে তখনই তারা শিকার কাজের সাথে পরিচিত হয়। প্রথম পর্যায়ে দলবদ্ধভাবে বর্ষা, বল্লম, সড়কি, ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিকার করতে যেত। শিকারকৃত প্রাণী গুলো জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরে তাদের নিজের গুহায় নিয়ে আসতো।
ক্রান্তীয় অঞ্চলে কঙ্গো অববাহিকার পিগোমী, মালোশিয়ার সাকাই, বর্ণিওর পুনাম, আফ্রিকার বুশম্যান এবং অস্ট্রেলিয়ার অরুন্তা উপজাতির একমাত্র পেশা পাখি শিকার। তীর, ধনুক, বর্ষা, বল্লম তাদের প্রধান হাতিয়ার। অধুনা কিছু আগনেয়াস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছে। জাল ও ফাঁদ পেতে বড় বড় পশু শিকার করা হয়। প্রয়োজনের তীর ও বর্ষার মাথায় বিষ মাখিয়ে দেওয়া হয়।
পৃথিবীর প্রধান প্রধান পশু শিকার ক্ষেত্র/অঞ্চল সমূহ (The worid's major animal hunting areas/regions)
খাদ্য সংগ্রহকারী ও পশু শিকারী হিসেবে আদিম মানুষ অস্তিত্ব রক্ষা করত বা জীবিকা নির্বাহ করত। প্রাচীন প্রস্তর যুগের সাংস্কৃতির এই স্তরে খাদ্য সংগ্রহকারী ও পশু শিকারি মানুষ ব্যাপক এলাকা জুড়ে বিচরণ করে বেড়াতো। যদিও আজ তারা প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে, তবুও কিছু কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে তাদের অস্তিত্ব বিদ্যমান। সাধারণভাবে গত ১০ বছরে এবং বিশেষভাবে গত পঞ্চাশ বছরে এদের সংখ্যা অত্যাধিক হ্রাস পেয়েছে। এদের শেষ অস্তিত্বটুকু টিকে থাকার পিছনে সম্ভাব্য দুটি কারণ রয়েছে। যথা-
(ক) এদের কর্মকাণ্ড সাধারণত নির্ধারিত এলাকা সমূহে সীমাবদ্ধ।
(খ) নিজের অস্তিত্ব ও সাংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করার ইচ্ছা।
পৃথিবীতে কয়েকটি অঞ্চলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড অর্থাৎ পশু শিকার দেখতে পাওয়া যায়, এগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো-
তুন্দ্রা অঞ্চলের পশু (Tundra)
তুন্দ্রা একটি রাশিয়ান শব্দ। এ শব্দের অর্থ হল জলাভূমি সাদৃশ্য তৃণভূমি। সাধারণত মেরু অঞ্চলেই এর বিস্তৃতি। সুমেরু বৃত্তের উর্ধাংশে বিশেষিত, গ্রিনল্যান্ড, সাইবেরিয়া, আলাস্কা, কানাডার স্থলভুমি নিয়ে তুন্দ্রা অঞ্চল গঠিত। এখানে প্রায় সারা বছরই বরফ জমে থাকে। অত্যাধিক শীত ও ঠান্ডা আবহাওয়াই এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। বাৎসরিক অধঃক্ষেপণের হার অনেক কম।
যদিও তা তুষারপাত আকারে হয়ে থাকে। এ পরিমাণ বছরে ৪০০ মিলিমিটার এর কম। গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব খুবই কম। এই অল্প সময়ে বিশাল বরফ স্তূপ গলে নদীতে পানির প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। তুন্দ্রা অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে খরগোশ, খেকশিয়াল, ভাল্লুক, নেকড়ে, কাঠবিড়ালি, কুকুর প্রভৃতি। এস্কিমরা এসব প্রাণীদের নিয়মিত শিকারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।
তৈগা অঞ্চলের পশু (Taiga)
তুন্দ্রা অঞ্চলের দক্ষিনে তৈগা অঞ্চল অবস্থিত। এ অঞ্চল সরলবর্গীয় বৃক্ষের অরণ্য নামে পরিচিত। সরলবর্গীয় তৈগা অঞ্চলে ও প্রায় সারা বছর বরফ জমে থাকে। এখানে গ্রীষ্মকালেই শুধু পানি দেখা যায়। প্রাণীদের মধ্যে আরমাইন, কারিবু, নেকড়ে, খেকশিয়াল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসব অঞ্চলের চাকতি, ইয়াকুত, তুনগুস প্রভৃতি অধিবাসীরা কুকুর টানার গাড়ি, রাইফেল ও বিশেষ ধরনের অস্ত্রের দ্বারা পশু শিকার করে থাকে।
সাভানা অঞ্চলের পশু (Savanna)
সাভানা একটি স্প্যানিশ শব্দ। যার অর্থ হল বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। ক্রান্তীয় অঞ্চলে গুল্ম ও ছোট ছোট উদ্ভিদ দ্বারা শোভিত তৃণভূমিকে সাভানা বলে। সাধারণত তৃণগুলো লম্বা পাতলা সরু ও হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। এগুলোর উচ্চতা ৮ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত। গ্রীষ্মের সামান্য বৃষ্টিপাতে তৃণগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পায় কিন্তু পরবর্তীতে বৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে শুকিয়ে মারা যায়।
উভয় গোলার্ধে ১০° থেকে ২০° অক্ষাংশের দেশ দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, মধ্য ও দক্ষিণ ব্রাজিল, গিনি, প্যারাগুয়ে, মধ্যম আমেরিকার পার্বত্য অঞ্চল, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, সুদানের বেশিরভাগ জায়গা, উত্তর অস্ট্রেলিয়া ও সামান্য কিছু ভারতীয় অংশ নিয়ে সাভানা পরিলক্ষিত হয়। এখানকার অধিবাসীরা তীর, ধনুক ও স্থানীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পশু শিকার করে থাকে। তারা শুধু পশু শিকার নিয়ে ব্যস্ত থাকে না বরং কৃষি ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকে। এই অঞ্চলের প্রাণীদের মধ্যে বন্য শুকর, বানর, হরিণ, চিতা, হাতি,সাপ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ক্রান্তীয় বনভূমি অঞ্চলের পশু (Tropical Forest Area)
নিরক্ষীয় বনভূমির জীব জন্তুর সংখ্যা এবং বৈচিত্রতার দিক থেকে তুলনাহীন। মাটি স্যাতসাঁতে এবং বৃক্ষগুলো বেশ নিবিড় থাকার কারণে এখানে সরীসৃপের ভালো আবাসস্থল করে উঠেছে। বানর, হরিণ, হাতি, বাঘ,শিয়াল, কাঠবিড়ালি, বিভিন্ন ছোট পাখি ও উভচর প্রাণী দেখা যায়। এই অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে আফ্রিকার কঙ্গো অববাহিকায় পিগমি, মালয়ের সাকাই ও বর্ণীয় দীপের পুনান উপজাতির প্রধান পেশাই হল পশু শিকার।
উপসংহার
আজকের এই প্রতিবেদনে পশু শিকার এবং পৃথিবীর প্রধান প্রধান পশু শিকার অঞ্চল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরেছি। আশা করছি এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। এ বিষয়ে যদি কোন পরামর্শ থাকে তাহলে কমান্ড বক্সে জানিয়ে রাখবেন। এই প্রতিবেদনটি মনোযোগের সহিত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url