ডগার্স ব্যাঙ্ক, গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক ও জাপানের মৎস্য সম্পদ সম্পর্কে বিস্তারিত
প্রিয় পাঠক, আপনি কি ডগার্স ব্যাঙ্ক, গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক ও জাপানের মৎস্য সম্পদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাচ্ছেন, এ বিষয়ে অনেক চেষ্টা করেও সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না, এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অথবা বই পুস্তক ঘাটাঘাঁটি করছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের এই প্রতিবেদনে ডগার্স ব্যাঙ্ক, গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক ও জাপানের মৎস্য সম্পদ সম্পর্কে এবং এদের অবস্থান, গড়ে ওঠার কারণ বাণিজ্যিক গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত দেখতে থাকুন।
ভূমিকা
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মৎস্যচারন ক্ষেত্র থাকলেও তা থেকে সমানভাবে মৎস্য আহরিত হয় না। এর মধ্যে কিছু স্থান রয়েছে যেখানে পর্যাপ্ত মাছ ধরা হয়। যেমন-পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত ডগার্স ব্যাঙ্ক ও গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক। এ অঞ্চলের নিকটবর্তী দেশগুলোর অধিবাসীরা মৎস্য আহরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে এবং রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। কাজে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ডগার্স ব্যাঙ্ক ও গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক এর গুরুত্ব অপরিসীম। নিচে পর্যায়ক্রমে ডগার্স ব্যাঙ্ক ও গ্র্যান্ড ব্যাংকের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
ডগার্স ব্যাঙ্ক (Dodgers Banks)
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ও প্রসিদ্ধ মৎস্য চারণক্ষেত্র ডগার্স ব্যাঙ্ক। এটি উত্তর-পূর্ব আটলান্টিক মহাসাগরীয় মৎস্য চারনক্ষেত্রের অন্তর্গত। ডগার্স ব্যাঙ্ক ইউরোপের পশ্চিম উপকূল অর্থাৎ বৃটেনের পূর্বে, ডেনমার্কের পশ্চিমে, নেদারল্যান্ডের উত্তরে এবং নরওয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে উত্তর সাগরে অবস্থিত। ডগার্স ব্যাঙ্কের গভীরতা প্রায় ২২ থেকে ২৭ মিটার এবং দৈর্ঘ্যের দিক থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটারের অধিক বিস্তৃত।
ডগার্স ব্যাঙ্কে মৎস্যচরণ ক্ষেত্র গড়ে ওঠার কারণঃ
বিভিন্ন কারণে উত্তর সাগরে অবস্থিত ডগার্স ব্যাঙ্ক পৃথিবীর বিখ্যাত মৎস্য চারণক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। নিম্নে এগুলো তুলে ধরা হলো-
- এ মগ্নচড়া ভূমিতে মাছের প্রিয় খাদ্য শ্যাওলা ও জলকিট প্রচুর পরিমাণে জন্মে। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে নদীর মাধ্যমে মৎসের উপযোগী প্রচুর খাদ্য আবর্জনা রূপে এ সাগরে এসে পতিত হয়।
- ডগার্স ব্যাঙ্কের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের উপকূল ভাগ অগভীর ও মগ্ন হওয়ায় প্রচুর মাছের সমাবেশ ঘটে। এর ফলে এখানে মৎসের বন্দর ও পোতাশ্রয় নির্মাণ বেশ সহায়ক।
- উত্তর পূর্ব-দিকে প্রবাহিত উষ্ণমহাসাগরীয় স্রোত এবং উত্তর দিক থেকে আগত শীতল স্রোতের মিলন স্থানে প্রচুর মৎসের সমাবেশ ঘটে।
- ডগার্স ব্যাঙ্ক অঞ্চলের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ বলে তা মৎস্যচরণের জন্য যথেষ্ট সহায়ক।
- মৎস্য ধরার জন্য নৌকা, ট্রলার নির্মাণের উপযোগী কাঠ এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের সু বন্দোবস্ত থাকায় এখানে অতি সহজে মৎস্য ধরা যায়।
- কৃষিযোগ্য ভূমির অপ্রাচুর্য হেতু এ অঞ্চলের মানুষের মৎস্য শিকার ও মৎস্য ব্যবসায় জীবিকা নির্বাহের একটি প্রধান অবলম্বন। এর ফলে এখানে দক্ষ ধীবরগণ মাছ আহরণে নিয়োজিত থাকে।
ডগার্স ব্যাঙ্কের মৎস্য আহরণকারী দেশসমূহ
ডগার্স ব্যাঙ্ক থেকে যুক্তরাজ্য সবচেয়ে বেশি মাছ আহরণ করে থাকে। এছাড়া উপকূলবর্তী দেশ বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে প্রচুর মাছ আহরণ করে থাকে।
ডগার্স ব্যাঙ্কের ধৃত মৎস্যসমূহ
ডগার্স ব্যাঙ্ক থেকে হেরিং,কড, হ্যাডাক, মাকারেল, স্যামন প্রভৃতি মাছ ধরা হয়।
ডগার্স ব্যাঙ্কের বাণিজ্যিক গুরুত্ব
পৃথিবীর অন্যতম মৎস্য ক্ষেত্র ডগার্স ব্যাঙ্কের নিকটবর্তী যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, ডেনমার্ক, জার্মানি প্রভৃতি দেশ সমূহের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম। ধৃত মৎস্যের উপর নির্ভর করে এসব দেশের নিজেদের চাহিদা মিটানোর পর প্রচুর মৎস্যজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করে।
গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক (Grand Banks)
গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক উত্তর-পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরের মৎস্যচরণ ক্ষেত্রটির অন্তর্গত। পৃথিবীর অন্যতম এই মৎস্যচরণ ক্ষেত্রটি উত্তর আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলে অর্থাৎ নিউফাউন্ডল্যান্ডের দক্ষিণ- পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৭০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে এর বিস্তার প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার। এর বেশিরভাগ স্থানে গভীরতা ৯০ মিটারের কম। তবে কোন কোন স্থানে পানির গভীরতা প্রায় ৪ মিটার।
গ্র্যান্ড ব্যাঙ্কের মৎস্য চারণ ক্ষেত্র গড়ে ওঠার কারণ
আটলান্টিকের উত্তর-পশ্চিমে নিউফাউন্ডল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বে গ্র্যান্ড ব্যাঙ্কের মৎস্য চারণক্ষেত্র হিসেবে গড়ে ওঠার কারণ সমূহ নিম্নরূপ-
- মাছের খাবার হিসাবে প্রচুর পরিমাণে প্লাঙ্কটোনের উপস্থিতি।
- উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনের ফলে এই স্থানে মৎসের বিচরণের জন্য বিশেষ উপযোগী।
- স্থানটি ভগ্ন ও অগভীর হাওয়ায় মৎস্যচরণের জন্য বিশেষ উপযোগী।
- এ অঞ্চলের জলবায়ু অনেকটা নাতিশীতোষ্ণ বলে তা মৎস্য চরণের জন্য যথেষ্ট সহায়ক।
- মৎস্য ধরার জন্য নৌকা, ট্রলার নির্মাণের উপযোগী কাঠের সরবরাহ।
- মৎস্য শিকারের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও কলাকৌশল।
গ্র্যান্ড ব্যাঙ্কের মৎস্য আহরণকারীর দেশ সমূহ
গ্র্যান্ড ব্যাঙ্কের থেকে বিভিন্ন প্রকারের মাছ যেমন- কড, হেক, হেডক, হেরিং, মেকারেল, টুনা, রোজফিস প্রভৃতি মাছ ধরা হয়।
আরো পড়ুন ঃ মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে ওঠার কারণ বা নিয়ামক সমূহ
গ্র্যান্ড ব্যাঙ্কের বাণিজ্যিক গুরুত্ব
যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর মৎস্য শিকার করলেও দেশটির স্থানীয় চাহিদা বেশি বলে তেমন কোন মাছ রপ্তানি করতে পারেনা। তবে কানাডা পর্যন্ত মাছ রপ্তানি করতে পারে। দেশটি প্রচুর কড মাছ এবং এ থেকে আহরিত তেল রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। কাজে এ মৎস্য ক্ষেত্রটির যথেষ্ট অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে।
জাপানের মৎস্য সম্পদ
রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশের তুলনায় জাপান আয়তনে বেশ ছোট। কিন্তু উপকূলের দিক থেকে জাপান পৃথিবীর এসব দেশের উপকূলের দৈর্ঘ্যের চেয়ে অনেক বেশি। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলের দৈর্ঘ্য যেখানে ১১ হাজার কিলোমিটার সেখানে জাপানের উপকূলের দৈর্ঘ্য ২৭০০০ কিলোমিটারের অধিক। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় আড়াইগুন বড়। জাপানের এ বিস্তীর্ণ উপকূলের আশেপাশে অগভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উপযোগী এলাকার আয়তন সাড়ে ২৩ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।
অর্থাৎ সমগ্র জাপানের ৬ গুণ। এদেশে মাছধরা ও মাছ ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত মোট বন্দরের সংখ্যা প্রায় ২৭৫০। এর মধ্যে ইয়কমাহা দ্বীপে সর্বাধিক বিস্তৃত। এ মৎস্যক্ষেত্রে উত্তর দিক থেকে আগত শীতল বেরিং স্রোত এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আগত উষ্ণ কুরোশিও স্রোত মিলিত হয়েছে। জাপানের পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত উষ্ণ টুসিমা স্রোতের প্রভাব ও উল্লেখযোগ্য। এখানকার লোকেরা সাহসী, কষ্টসহিষ্ণু ও পরিশ্রমী। তাছাড়া পশুপালন কৃষিকাজ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় এখানে মৎস্য আহরণ বিশেষ উপযোগী।
জাপানে মৎস্য সম্পদ গড়ে ওঠার কারণ
নিম্নলিখিত কারণে জাপানের মৎস্যক্ষেত্রে গড়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে-
- এদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ যা মৎস্যক্ষেত্রে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে,
- সুবিস্তৃত মহীসোপান ও ভগ্ন উপকূল রেখা,
- অগভীর সমুদ্র,
- বন্দর ও পোতাশ্রয় এর সুবিধা,
- উষ্ণ এবং কুরোসিও এবং শীতল বেরিং স্রোতের মিলনস্থল,
- এদেশে তৃণভূমির অভাবে পশু পালনের সুযোগ কম,
- অধিবাসীরা কঠোর পরিশ্রমী, সাহসী ও কষ্টসহিসু,সহজ ও সুলভ পরিবহন ব্যবস্থা,
- মৎস্য আহরণের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সাজ-সরঞ্জামের সুব্যবস্থা,
- মৎসের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক চাহিদা,
- মূলধনের সুবিধা এবং
- সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
জাপানের ধৃত মৎস্য
এদেশের উত্তর অংশে শীতল বেরিং স্রোত এবং দক্ষিণ অংশে উষ্ণ কুরোসিও স্রোতের প্রাধান্য সুস্পষ্ট। ফলে ধৃত মাছের মধ্যে প্রচুর পার্থক্য দেখা যায়। এখানকার উত্তর অংশে হেরিং, স্যামন,কোড, সামুদ্রিক ট্রাউট প্রভৃতি মাছ এবং দক্ষিণ অংশের সার্ডিন, পিলচার্ড,মেকারেল,ক্যাটল,হেরিং, টুনা প্রভৃতি মাছ বেশি ধরা পড়ে। জাপানে প্রচুর কাঁকড়া, চিংড়ি, ঝিনক, প্রভৃতি পাওয়া যায়। এদেশের মানুষ ঝিনুক চাষ করে তার সাহায্যে প্রচুর কৃত্রিম মুক্তা উৎপন্ন করে। এছাড়া দূর সমুদ্র হতে তিনি শিকার করা হয়।
জাপানের মৎস্য উৎপাদন
২০১৪ সালে জাপানের সমুদ্র থেকে ৩৬ লক্ষ৩০ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপন্ন করে যা সমগ্র বিশ্বের ৪.৪৫ ভাগ। ২০১৩ সালে উৎপাদন ছিল ৩৬ লক্ষ ২১ হাজার মেট্রিক টন। দেশটি মৎস্য উৎপাদনে বার্ষিক বৃদ্ধির হার ০.২%। উল্লেখ্য জাপানের মোট ধৃত মাছের মধ্যে ৭৫% ধরা পড়ে পূর্ব দিকের সমুদ্রে।
জাপানের মৎস্য বাণিজ্য
জাপান সামুদ্রিক মাছ উৎপাদনে পৃথিবীতে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। তবে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ পৃথিবীতে দ্বিতীয়। তাই সামুদ্রিক মাছ ধরার পরও দেশটিতে প্রচুর পরিমাণে মাছ আমদানি করতে হয়। ২০১৪ সালে জাপান ১১৮৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মাছ আমদানি করে। ২০০০ সালে ১৪৫৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মাছ আমদানি করে। আমদানির বার্ষিক বৃদ্ধির হার ০.২%।
উপসংহার
আমি আজকের এই প্রতিবেদনে ডগার্স ব্যাঙ্ক, গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক ও জাপানের মৎস্য সম্পদ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেছি। আশা করছি এই বিষয়ে পরিপূর্ণ এবং সঠিক তথ্য পেয়েছেন। এ বিষয়ে যদি কোন পরামর্শ থেকে থাকে তাহলে কমান্ড বক্সে জানিয়ে রাখবেন। আমার এ প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url