মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে ওঠার কারণ বা নিয়ামক সমূহ
প্রিয় পাঠক, আপনি 'মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে ওঠার কারণ বা নিয়ামক সমূহ ' বিষয়ক শিরোনামে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন লেখকের বই পুস্তক কিংবা ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করছেন, এই বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য পাচ্ছেন না? তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজন।
আজকের এই প্রতিবেদনে মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে ওঠার কারণ বা নিয়ামক সমূহ, যেমন প্রাকৃতিক কারণ, অর্থনৈতিক কারণ, সাংস্কৃতিক কারণ সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। চলুন বিস্তারিত এগুলো দেখে নিই-
ভূমিকা
সমগ্র পৃথিবীর প্রায় ৭১% বারিমণ্ডলের অন্তর্গত। এই বিশাল পানি রাশির প্রায় ৯১% বিভিন্ন মহাসাগর, ৮% বিভিন্ন সাগর এবং অবশিষ্ট মাত্র ১% বিভিন্ন নদনদী, খাল, বিল, হ্রদ, হাওর প্রভৃতির অন্তর্গত। বিভিন্ন মহাদেশের চারিদিকে বিস্তৃত প্রায় ২৬০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার স্থানব্যাপী ৬০০ ফুট গভীর জলরাশি দ্বারা আবৃত। মহাসাগর গুলোর অগভীর অংশই পৃথিবীর প্রধান মৎস্য অঞ্চল হিসাবে পরিচিত।
ভূপৃষ্ঠের স্থলভাগে অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী আছে যাদের সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট ধারণা পেয়ে থাকি, কিন্তু পানিরাশির মধ্যে যত প্রকার উদ্ভিদ ও জীবজন্তু আছে তাদের খুব সামান্য অংশই দেখতে পাই। অথচ পানিরাশির অন্তর্গত এসব উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংখ্যা প্রায় অসীম। এছাড়া ভূপৃষ্ঠের স্থলভাগে যেমন পরিবেশের পার্থক্য অনুসারে উদ্ভিদ ও প্রাণীর তারতম্য হয়, জলভাগেও তেমন পরিবেশের পার্থক্য অনুসারে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে তারতম্য হয়।
মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে ওঠার কারণ / নিয়ামক
মাছ ধরা মানুষের অন্যতম আদি উপজীবিকা। এই পৃথিবীর বিশাল জলরাশি প্রায় সর্বত্রই মাছের অবাধ বিচরণ থাকলেও বাণিজ্যিক মৎস্যক্ষেত্র সমূহ উত্তর গোলার্ধে বিশেষ করে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অর্থাৎ উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত। মৎস্যক্ষেত্র গড়ে ওঠার কিছু ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণ বিদ্যমান রয়েছে। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো-
(ক) মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে ওঠার প্রাকৃতিক কারণ
মানুষ,পশুপাখি ও অন্যান্য প্রাণীর জন্ম, বৃদ্ধি ও বিচরণের ক্ষেত্রে যেসব প্রাকৃতিক বিষয়ের সুবিধা অধিক, সেসব স্থানে তারা অধিক সংখ্যায় বসবাস করার চেষ্টা করে। মাছের ক্ষেত্রেও এই স্বাভাবিক নিয়ম প্রযোজ্য। এ নিয়ম অনুসারে এ বিশাল পানিরাশির অনেক অঞ্চলে মৎস্যক্ষেত্র গড়ে উঠেছে। এই প্রকৃতি প্রদত্ত কারণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১। ভূপ্রকৃতি ঃ
ভূ প্রকৃতি প্রতিকূলতার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে উঠতে দেখা যায়। কারণ ভূমি উর্বর ও সমতল হলে সেখানে কৃষি ও শিল্পের অধিক সুযোগ থাকে। জমি কম উর্বর হলে সেখানে পশুপালনের সুযোগ পাওয়া যায়। আর এর চেয়ে অনুর্বার ও বন্ধুর হলে সেখানে কৃষি, শিল্প প্রভৃতি উপায়ে জীবন ধারণের সুযোগ কম থাকে। ফলে এসব জায়গার অধিবাসীরা জীবিকা নির্ভর তাগিদে মৎস্য শিকার ও মৎস্য ব্যবসায়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়। যেমন-জাপান ও স্কটলান্ডে মাত্র ১৫% জমিতে, কানাডায় ১২% জমিতে এবং নিউফাউন্ডল্যান্ডের মাত্র ১% এর কম জমিতে কৃষি ও পশু পালন হয়। এজন্য জাপান, নরওয়ে, স্কটল্যান্ড, নিউফাউন্ডল্যান্ড প্রভৃতি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে।
২। ভগ্ন তটরেখা ঃ
মৎস্যক্ষেত্র গড়ে ওঠার পেছনে ভগ্ন তটরেখার গুরুত্ব রয়েছে। যেসব স্থানে তটরেখা বা সৈকতরেখা ভগ্ন সেখানে উপসাগর, খাড়ি ও বাঁক সৃষ্টি হয়। এসব স্থানে মৎসের খাদ্য সংগ্রহ, প্রজনন ও বৃদ্ধির সহায়ক। আবার এরূপ স্থানে স্থায়ী ও সাময়িক বন্দর ও পোতাশ্রয় নির্মাণের সুযোগ বেশি থাকে। ফলে এখানে মাছ ধরা, মৎস্য শিল্প, মাছ প্যাকেট করা ও সেখান হতে মাছ অন্যত্র রপ্তানি করা প্রভৃতি বিষয়ে সুবিধা পাওয়া যায়। এসব কারণে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের নরওয়ে এবং উত্তর আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অংশের ল্যাব্রাডর ও নিউফাউন্ডল্যান্ডের ৭৫% থেকে ৯০% লোকসমদ্র তীরে বাস করে।
৩। অগভীর সমুদ্র ও মগ্নচড়া ঃ
সমুদ্রের অগভীর অংশে মাছের খাদ্য জলকিট ও ছোট জলজ উদ্ভিদ জন্মে। স্থলভাগের অনেক জীবজন্তু ও মৃতদেহ ও অন্যান্য জিনিস পানির স্রোতের সাথে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয় এবং এর অধিকাংশই অগভীর সমুদ্রে জমা হয়। এগুলো মাছের উৎকৃষ্ট খাদ্য। এছাড়া সমুদ্রের অগভীর অংশে সূর্যকিরণ সমুদ্রের তলদেশে পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে মাছের বসবাস ও চলাফেরার পক্ষে সুবিধা হয়। যেমন-ইউরোপের উত্তর-পশ্চিম দিকে ডগার্স ব্যাঙ্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বদিকে জর্জেস ব্যাংকের পানিরাশির গভীরতা মাত্র ১৫ থেকে ৩০ মিটার। আর গ্র্যান্ড ব্যাংকের গভীরতা ৯০ মিটারের কম। উপরন্ত এসব স্থানে পানি রাশির তরঙ্গের আঘাতে কর্দমাক্ত ও ঘোলাপানির সৃষ্টি হয় যা মৎসের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির সহায়ক। এসব কারণে এখানে বিস্তৃত মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে ওঠে।
৪। প্ল্যাঙ্কটন (Plankton) ঃ
গ্রিক শব্দ প্ল্যাঙ্কটন এর অর্থ ঘুরে বেড়ান। সমুদ্রের পানিতে একপ্রকার ভাসমান অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী জন্মে এবং সমুদ্র স্রোতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভেসে বেড়ায়। এদের একত্রে প্ল্যাঙ্কটন বলে। ভাসমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ কোণাগুলোকে উদ্ভিদ প্ল্যাঙ্কটন এবং ভাসমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী কোণাগুলোকে প্রাণী প্ল্যাঙ্কটন বলে। উদ্ভিদ প্ল্যাঙ্কটন গুলো প্রাণী প্ল্যাঙ্কটন গুলোর প্রধান খাদ্য। আবার প্রাণী প্ল্যাঙ্কটন গুলো সামুদ্রিক মৎসের প্রধান খাদ্য। এসব প্ল্যাঙ্কটন স্থল বিধৌত আবর্জনায় যেসব খনিজ লবণ থাকে তা দ্বারা পুষ্ট হয়। তাছাড়া সমুদ্রের শীতল স্রোতে ও প্ল্যাঙ্কটন পুষ্ট হয়।
এর ফলে শীতল স্রোতে, বিশেষ করে উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন স্থানে মৎসের সমাবেশ ঘটে। পৃথিবীর বৃহত্তম জীব তিমির ও প্রধান খাদ্য একপ্রকার প্ল্যাঙ্কটন। এর নাম ক্রিল। তাছাড়া অন্যান্য বড় বড় মাছের প্রধান খাদ্য ক্ষুদ্রতম মাছ। আর ক্ষুদ্রতম মাছের প্রধান খাদ্য প্ল্যাঙ্কটন। কাজেই যেখানে অধিক প্ল্যাঙ্কটন পাওয়া যায় সেখানেই ক্ষুদ্রতম মাছ বেশি পাওয়া যায়। এসব ক্ষুদ্র মাছগুলোকে খাওয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে বড় বড় মাছ অধিক থাকে এবং বেশি পরিমাণে সেখানে ধরা পড়ে। মাছ অগভীর সমুদ্রের যেখানে অধিক পরিমাণ প্ল্যাঙ্কটন জন্মে সেখানে মৎস্যচরণ ক্ষেত্র গড়ে উঠে।
৫। অনুকূল জলবায়ু ঃ
নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু মৎস্যচরণের বিশেষ সহায়ক। কারণ এ জলবায়ুতে শ্যাওলা ও জলকিট বৃদ্ধির সহায়ক এবং এখানে ধৃত মৎস্য সহজে পচেনা। তাছাড়া শীতল অঞ্চল হতে অনেক হিমশৈল সমুদ্র পানিতে ভাসতে ভাসতে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে পৌঁছালে, সেখানে অপেক্ষাকৃত অধিক উষ্ণতায় গলে যায়। হিমশৈলের সাথে প্রবাহিত বালু,কাকর,পাথর প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে অগভীর অংশে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়। এসব স্থান মাছের বিচরণ ও ডিম ছাড়ার পক্ষে সুবিধা জনক।
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে শীতকালের জলবায়ু আশেপাশের স্থল ভাগে চাষাবাদের জন্য সুবিধাজনক। তাই এরূপ জলবায়ুর উপকূল অঞ্চলের অনেক মানুষ তখন মাছ ধরা ও মাছ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত থাকে। এসব অঞ্চলের অধিবাসীগণ সাহসী কষ্ট সহ্য করতে পারে এবং পরিশ্রমী। আশেপাশের পর্ণমোচী ও সরলবর্গীয় বনের কাঠ হতে নৌকা তৈরি করতে পারে। এসব অঞ্চলের লোক বসতি ঘন এবং অধিক খাদ্য গ্রহণের পক্ষে সহায়ক। এর ফলে পৃথিবীর প্রধান প্রধান মৎস্যক্ষেত্র গুলো এ অঞ্চলেই গড়ে উঠেছে।
৬। পানির প্রবাহ ঃ
সমুদ্রের উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলের পানিতে নাইট্রোজেন ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকায় মৎসের প্রিয় খাদ্য প্ল্যাঙ্কটন ও প্রচুর পরিমাণে জন্মে। ফলে এরূপ স্থানে মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ করে। পানি প্রবাহের সাথে মাছ শিকারের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, মাছ সাধারণত বিপরীত দিকে চলে এবং অধিক শীতল বা অধিক উষ্ণ অঞ্চল পছন্দ করে না। বরং উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে প্রচুর আনাগোনা বেশি হয় এবং সেখানেই সর্বাধিক মাছ ধরা পড়ে। এ কারণেই উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল লাব্রাডর স্রোতের এবং উষ্ণ ও কুরোশিও স্রোত ও শীতল কামচাটকা স্রোতের মিলনস্থলে প্রসিদ্ধ মৎস্যচরণ ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে।
(খ) মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে ওঠার অর্থনৈতিক কারণ
মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে উঠতে শুধু প্রাকৃতিক সুযোগ-সুবিধাই যথেষ্ট নয়, বরং অর্থনৈতিক কারণ গুলোও যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিম্নে মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে ওঠার পেছনে অর্থনৈতিক কারণগুলো উল্লেখ করা হলো-
১। মাছের চাহিদা ঃ
দেহের গঠন ও পুষ্টি সরবরাহে আমিষ জাতীয় খাদ্য একান্ত প্রয়োজন। মাছের মধ্যে এ জাতীয় উপাদান অধিক এবং মাংসের তুলনায় দামের সস্তা। ফলে বিশ্বে মাছের চাহিদা খুব বেশি। বিশেষ করে, মৌসুমী ও উত্তর-পশ্চিম ইউরোপীয় অঞ্চলে লোক বসতি অধিক বলে মাছের চাহিদা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় একটু বেশি। অবশ্য মৌসুমী অঞ্চলের কিছু মানুষ নিরামিষভোজী আছে, যারা মাছ খায় না। এই অঞ্চলের অনেকেই মাংস খায় না কিন্তু মাছ খায়। ফলে যেসব অঞ্চলে মাছের চাহিদা অধিক সেসব অঞ্চলে মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে ওঠা সম্ভাবনা ততো বেশি।
২। মূলধন ঃ
মৎস্যক্ষেত্র গড়ে তুলতে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন। কারণ মৎস্য শিকারের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সাজসরঞ্জাম, ট্রলার, বিদ্যুৎ চালিত জাল, বরফ কল, হিমাগার, জলাধার প্রভৃতির জন্য মূলধনের প্রয়োজন। মূলধনের সহজপ্রাপ্যতার দরুন জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রভৃতির দেশ মৎস্য শিল্প প্রসার লাভ করেছে।
৩। বাণিজ্য কেন্দ্র ঃ
মৎস্য পচনশীল বলে মৎস্যক্ষেত্রের নিকটবর্তীতে বাজার থাকা উচিত। সেখানে যত শীঘ্র সম্ভব বিক্রয়ের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। সেজন্য মাছ ধরার অঞ্চলের নিকটবর্তী স্থানে মাছের বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের মেঘনা নদীর নিকট চাঁদপুর ও ভৈরব এবং পদ্মা নদীর তীরে গোয়ালন্দে বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। তবে সামুদ্রিক মাছ বিভিন্ন স্টিমার, জাহাজ প্রভৃতির সাহায্যে বহন করে বড় বড় বাণিজ্য কেন্দ্রে বিক্রয় করা হয়। যেমন-ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের হাল, লন্ডন, ইয়ারমথ প্রভৃতি, কানাডার সেন্টলরেন্স, হলিফক্স প্রভৃতি, জাপানের ইয়াকোমাহা প্রভৃতি বিশ্বের অন্যতম মৎস্য ব্যবসায়ী কেন্দ্র।
৪। যোগাযোগ ও পরিবহন ঃ
মাছের সহজ বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে বিশ্বের চাহিদা পূর্ণ অঞ্চলে সড়ক, রেল ও নৌপথের সুব্যবস্থা থাকা উচিত। কোথাও স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় খুব বেশি মাছ ধরা পড়লে সাময়িক বন্দর ব্যবস্থা করা দরকার। এরপরে সকল বন্দর হতে ধৃত মাছগুলো বড় বড় বাণিজ্য কেন্দ্রে পাঠানো প্রয়োজন। এজন্য স্থলপথ, রেলপথ তৈরি ও মেরামত এবং যাতায়াতের জন্য উপযুক্ত যানবাহন ব্যবস্থা রাখা অবশ্যক।
৫। ধীবর ও শ্রমিক ঃ
কৃষি শিল্প প্রভৃতির মত মৎস্যক্ষেত্রে ও দক্ষ সাহসী ও পরিশ্রমী ধীবর এবং দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন। কেননা সমুদ্রের মাছ ধরা একটি দুঃসাহসিক কাজ। অনেক সময় ধীবর ও শ্রমিকদের ঝড়, তুষারপাত, প্রবল স্রোত, জোয়ারের বান প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং তিমি, অক্টোপাস, বিষাক্তসাপ প্রভৃতি ভয়ংকর জীবজন্তুর কবলে পড়তে হয়। তাছাড়া মাছ কাটা, পরিষ্কার করা, লবণ দেওয়া, শুকানো, প্যাকেটজাত করা প্রভৃতির জন্য দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
(গ) মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে ওঠার সাংস্কৃতিক কারণ
মৎস্যক্ষেত্র গড়ে ওঠার পেছনে সাংস্কৃতিক কারণগুলো ও যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিম্নে এ কারণগুলো উল্লেখ করা হলো-
১। বন্দর ও পোতাশ্রয় নির্মাণ ঃ
মৎস্যক্ষেত্র গড়ে ওঠার পেছনে এর নিকটবর্তীতে বন্দর ও পোতাশ্রয় নির্মাণ অপরিহার্য। কেননা বন্দরের মাধ্যমে ধৃত মৎস্য অতি সহজে বাজারজাত করা সম্ভব। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নৌকা বা ট্রলার দ্রুত পোতাশ্রয়ে আশ্রয় নিতে পারে।
২। সরকারি উদ্যোগ ঃ
মৎস্যক্ষেত্রের উন্নতির জন্য সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থায় ধীবরের চিকিৎসা সেবা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আর্থিক ঋণের ব্যবস্থা, উৎসাহ, উদ্দীপনা দিয়ে সহযোগিতা করলে এর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ আরো সহজ হয়।
৩। উন্নত প্রযুক্তি ঃ
উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার উপর ও মৎস্যক্ষেত্র গড়ে ওঠা নির্ভর করে। হেলিকপ্টার ও রাডার যন্ত্র দ্বারা মাছের ঝাঁক বের করা অতি সহজ। মাছ ধরার আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে বেশ সুবিধা হয়। ফলে যেসব দেশ প্রযুক্তির দিক থেকে যত উন্নত, তারা মৎস্য শিল্পে তত সমৃদ্ধ। উন্নত প্রযুক্তির কারণে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে প্রভৃতি দেশে মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে।
উপসংহার
আমি এতক্ষণ ধরে মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে ওঠার বিভিন্ন নিয়ামক বা কারণগুলো বিস্তারিত উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি, আশা করছি সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পেয়েছেন। এই বিষয়ে যদি কোন সংযোজন বা বিযোজন করার জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্য থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখবেন। এই প্রতিবেদনটি মনোযোগের সহিত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url