অর্থনৈতিক ভূগোলের সাথে ভূগোলের অন্যান্য শাখার সম্পর্ক বর্ণনা
প্রিয় পাঠক, আপনি কি 'অর্থনৈতিক ভূগোলের সাথে ভূগোলের অন্যান্য শাখার সম্পর্ক বর্ণনা' শিরোনামে তথ্য জানার জন্য খুব আগ্রহী, এ বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের বই ঘাটাঘাটি এবং বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট ভিজিট করে সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না? তাহলে আপনার জন্য এই কনটেন্টটি অত্যন্ত প্রয়োজন। অর্থনৈতিক ভূগোলের সাথে ভূগোলের অন্যান্য শাখার সম্পর্ক বর্ণনা
আজকের এই প্রতিবেদনে ভূগোলের অন্যান্য শাখার সাথে অর্থনৈতিক ভূগোলের সম্পর্ক সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ধৈর্য এবং মনোযোগের সহিত পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে থাকুন, তাহলে এ সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য তথ্য জানতে পারবেন।
অর্থনৈতিক ভূগোলের সাথে ভূগোলের অন্যান্য শাখার সম্পর্ক বর্ণনা (Relation of Economic Geography with other Branches of Geography) ঃ
অর্থনৈতিক ভূগোল মূলত ভূগোলশাস্ত্রের একটি শাখা, তাই ভূগোলের অন্যান্য শাখার সাথে এর ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। ' অর্থনৈতিক ভূগোল হল ভূগোলের সেই শাখা যেটি পণ্যের উৎপাদন ও বিতরণ এর সাথে প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সম্পর্ক নিরূপণ করে।' এখানে দেখা যাচ্ছে, পণ্য উৎপাদন ও বিতরণে ভূগোলের বিভিন্ন শাখার সাথে অর্থনৈতিক ভূগোলের সম্পর্ক রয়েছে। পণ্য উৎপাদনের ভূমিরূপ, জলবায়ুর, কৃষি, পরিবহন সবই চলে আসে। অর্থনৈতিক ভূগোলের সাথে ভূগোলের বিভিন্ন শাখার সম্পর্ক নিম্নে আলোচনা করা হলো-
আরো পড়ুন ঃ মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক সমূহ বিস্তারিত আলোচনা
ভূমিরূপ বিদ্যা (Geomorphology) :
ভূমিরূপবিদ্যা ভূগোলের একটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এ শাখা পৃথিবীর অভ্যন্তরিন অবস্থা, পৃথিবীর উৎপত্তি, ভূতাত্বিক সময় মাপনী, ভূ-আলোড়ন, ভূ-আন্দোলন, বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করে। এ শাখা অধ্যয়নের পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অবস্থার বর্ণনা ও এ অবস্থার প্রেক্ষিতে ভূত্বকের পরিবর্তন, পৃথিবীর উৎপত্তি সংক্রান্ত নানা প্রকার মতবাদ ও এর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা, প্রাথমিকভাবে পৃথিবীর আকার ও আয়তন কেমন ছিল তার বর্ণনা, ভূমিকম্প ও আলোড়নের ফলে পৃথিবীতে যে নানা প্রকার ভূমিরূপের সৃষ্টি হয, সে সম্পর্কে নানারূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জ্ঞানলাভ করা যায়।
জলবায়ুবিদ্যা (Climatology) ঃ
ভূগোলের এ শাখায় বায়ু, বায়ুর বিভিন্ন স্তর, বায়ুর উপাদান সমূহ, বায়ুর ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়, বায়ুপ্রবাহ সংক্রান্ত বিষয়, বায়ুপুঞ্জ, বায়ু প্রাচীর তবে সংগঠিত হয় এর ফলাফল, ঘূর্ণিবাত, প্রতিপঘূর্ণিবাত, বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্পের প্রভাব, বিভিন্ন ধরনের বায়ুর চাপ, বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য,পৃথিবীর জলবায়ু অঞ্চল,বায়ুর তাপমাত্রা সমূহ, প্রভৃতি নিয়ে কাজ করে। এক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয় সমূহের বিশ্লেষণমূলক সমীক্ষা, পরিমাপ, তথ্য, তত্ত্ব ও পূর্বাভাস পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব।
মৃত্তিকা বিজ্ঞান (Soil Science) :
পৃথিবীর বহিঃআবরণ ভূত্বকের গঠন উপাদান মৃত্তিকা ভূগোলের এ শাখায় অন্তর্ভুক্ত। মৃত্তিকার উৎপত্তি, গঠন, বিন্যাস, অঞ্চল ও সময় ভেদে মৃত্তিকার বিস্তরণ, মৃত্তিকার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের বিন্যাস, মৃত্তিকার প্রকার, সর্বোপরি মৃত্তিকা ও পরিবেশের আন্তঃসম্পর্ক ও এর প্রভাব মৃত্তিকা বিজ্ঞান শাখায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়ে থাকে।
উদ্ভিদবিজ্ঞান (Biotic Science) :
পরিবেশগত ভূগোল (Environmental Geography) :
প্রাকৃতিক পরিবেশ কিরূপে বিভিন্ন জীবকে প্রভাবিত করেছে এবং কিভাবে পরিবেশ সুনিয়ন্ত্রণের দ্বারা পারিসিকভাবে পৃথিবীর জীবকূলকে উন্নত করা যায় তা ভূগোলের যে শাখায় আলোচনা করা হয়, তাকে পরিবেশগত ভূগোল বলা হয়।
ঐতিহাসিক ভূগোল (Historical Geography) :
বিভিন্ন মানব গোষ্ঠী ও তাদের ভৌগলিক পরিবেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক মানুষ্য সমাজ, তার ক্রিয়া কালাপ, চিন্তাধারা এবং মানসিক উৎকর্ষকে স্থান-কাল নির্বিশেষে কতখানি প্রভাবিত করেছে, তা অনুসন্ধান করাই ঐতিহাসিক ভূগোলের মূল লক্ষ্য। মানব সমাজের বর্তমান বৈচিত্র্যময়রূপ সঠিকভাবে উপলব্ধি করার উদ্দেশ্যে ভৌগোলিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মানব সমাজের ঐতিহাসিক বিবর্তন আলোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
রাজনৈতিক ভূগোল (Political Geography) :
সাংস্কৃতি উন্নয়নের পার্থক্যের ফলে ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, ধর্মীয় প্রভাব, সরকার, শাসন ব্যবস্থা, রাজনৈতিক আত্মকলহ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে রাজনৈতিক ভূগোল।
জনসংখ্যা ভূগোল (Population Geography) :
মানবীয় ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো 'জনসংখ্যা ভূগোল'। এ ভূগোলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যে মানুষ, সে মানুষের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে এই ভূগোল। কারণ, পৃথিবীর সবকিছু বিষয়বস্তুর মূলে রয়েছে মানুষ। মানুষ একমাত্র প্রকৃতির প্রার্থীর সম্পদ ভোগকারী নয়, সাংস্কৃতিক ভূ- দৃশ্যেরও স্রষ্টা।
কৃষি ভূগোল (Agricultural Geography) ঃ
বিংশ শতাব্দীর বিকশিত শাখা গুলোর মধ্যে অন্যতম শাখা হচ্ছে কৃষি ভূগোল। এতে কৃষিজ স্থান সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের ভূমি ব্যবস্থা, ভূমির শ্রেণীবিভাগ, পশুপালন, কৃষি ব্যবস্থা, কৃষি অঞ্চল, কৃষির নমুনা বিদ্যা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করে।
বসতি ভূগোল (Settlement Geography) ঃ
বসতি ভূগোলের বিষয়বস্তু মানবীয় ভূগোলের আওতা ভুক্ত হলেও বসতি ভূগোল একটি স্বতন্ত্র এবং পূর্ণাঙ্গ বিষয়। ব্যাপক অর্থে, বসতি ভূগোলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে এবং এই মতপার্থক্যের কারণে ভূগোলবিদরা এর সম্পর্কে কোন সর্বজনগ্রাহ্য ব্যাখ্যায় পৌঁছাতে পারেনি পারেননি। বসতি ভূগোল গ্রামীণ পৌর এই দুই ভাগে বিভাজিত।
সামাজিক ভূগোল (Social Geography) ঃ
নির্দিষ্ট দেশীয় অবস্থানে নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীর ধাচ ও প্রক্রিয়ার সমীক্ষাই সামাজিক ভূগোল। সামাজিক ভূগোলের প্রধান কাজ হল, সামাজিক গোষ্ঠীগুলোর অঞ্চল গুলোকে চিহ্নিত করা। সামাজিক ভূগোলের দায়িত্ব হল, কাঙ্ক্ষিত সম্পদ গুলোর অসম বন্টনের ফলে উদ্বুদ্ধ স্থানিক ও সামাজিক সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করা।
সাংস্কৃতিক ভূগোল (Cultural Geography) ঃ
সাংস্কৃতিকে সঠিক সংজ্ঞায়িত করা একটি কঠিন ব্যাপার। কারণ, এটি পরিচর্যা ও গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল একটি বিষয়। সাংস্কৃতিক ভূগোলে মানুষের জীবনযাত্রাকে ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা হয়। সাংস্কৃতিক ভূগোল মানুষের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিচ্ছ... প্রতিচ্ছবি। তাই এতে মূলত মানুষকে নিয়েই আলোচনা করা হয়। মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে যে যোগসূত্র সৃষ্টি হয়েছে, তা মূলত সাংস্কৃতির মাধ্যমেই হয়েছে।
চিকিৎসা ভূগোল (Medical Geography) ঃ
এটি ভূগোলের সর্বাধুনিক শাখা হিসেবে বিবেচিত। বস্তুতপক্ষে বিশেষ বিশেষ রোগ পৃথিবী পৃষ্ঠে বিশেষ অঞ্চলের সীমাবদ্ধ। যেমন-ক্রান্তীয় অঞ্চলে কলেরা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চর্মরোগ প্রভৃতি বহুলাংশে দেখা যায়। অর্থাৎ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর ভূগোলের যে শাখা প্রভাব বিস্তার করে আলোচিত হয় তাকে চিকিৎসা ভূগোল বলে।
জেন্ডার ভূগোল (Gender Geography) ঃ
আর্থসামাজিক কাজের কোন কোন ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে, শ্রম নিবিড় ও জ্ঞাননিবিড় কাজে নারী ও পুরুষের দক্ষতা কেমন ইত্যাদি আলোচনাও আধুনিক অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url