অর্থনৈতিক ভূগোলের গুরুত্ব, অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ভূগোলের মধ্যে সম্পর্ক এবং পার্থক্য

প্রিয় পাঠক, আপনি কি অর্থনৈতিক ভূগোলের গুরুত্ব, অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ভূগোলের মধ্যে সম্পর্ক এবং পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য খুব আগ্রহী, সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং লেখকের বই পুস্তকের অনুসন্ধান করছেন? তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজন।

অর্থনৈতিক ভূগোলের গুরুত্ব, অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ভূগোলের মধ্যে সম্পর্ক এবং পার্থক্য

আজকের এই প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের গুরুত্ব, অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ভূগোলের মধ্যে সম্পর্ক এবং অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ভূগোলের মধ্যে পার্থক্য সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। চলুন এগুলো বিস্তারিত জেনে নিই।

ভূমিকা 

ভূগোল গ্রন্থ প্রধান দুইটি ভাগে বিভক্ত, প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানবিক ভূগোল। অর্থনৈতিক ভূগোল, মানব ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। বিজ্ঞানের জয়যাত্রাকে অবলম্বন করে অর্থনৈতিক ভূগোল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। এজন্য অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশের মানুষ ও তার পরিবেশ, প্রাকৃতিক পরিবেশ, সম্পদ এবং মানব কর্মকান্ড সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে পারছে।

অর্থনৈতিক ভূগোলের গুরুত্ব (Importance of Economic Geography) 

অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে অর্থনৈতিক ভূগোলের বাস্তব তথ্য সংবলিত জ্ঞান ছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মোটেই সম্ভব নয়। কারণ, মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপায় গুলোর সাথে অর্থনৈতিক ভূগোলের সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান। ফলে সব শ্রেণীর লোকেরাই এটা পাঠ করে জ্ঞান অর্জন করা উচিত। অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের গুরুত্বের বিভিন্ন দিক নিচে আলোচিত হলো-

১। পরিবেশের প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ ঃ

পরিবেশের সাথে মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি ও অবনতির সম্পর্ক বিদ্যমান। তাই পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মানুষের একান্ত কর্তব্য। কারণ, পরিবেশ মানুষের পেশা তথা জীবনপ্রণালীর উপর কিরূপে প্রভাব বিস্তার করে তা অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠেই সঠিকভাবে জানা যায়।

২। অঞ্চলভেদে পণ্য উৎপাদনের বিভিন্নতা ঃ

দেশের অঞ্চলভেদে পণ্য উৎপাদনের বিভিন্নতার কারণ ও অর্থনৈতিক ভূগোলের গুরুত্ব আলোচনা করে। দেশভেদে পরিবেশের মধ্যে পার্থক্য থাকায় পণ্যদ্রব্য উৎপাদনের মধ্যেও পার্থক্য হয়ে থাকে। তাই পৃথিবীর সর্বত্র পণ্য উৎপাদনের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় এবং এ বিষয়ে অর্থনৈতিক ভূগোলের গুরুত্ব দিয়ে জ্ঞান দান করে।

৩। সম্পদ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করে ঃ

অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ অর্থাৎ বনজ, মৎস্য, খনিজ প্রভৃতির অবস্থান, উৎপাদন, ব্যবহার ইত্যাদির পর্যালোচনা ও অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতাভুক্ত।

৪। শিল্প-কারখানার তথ্য প্রদান ঃ

পৃথিবীর সর্বত্র শিল্প-কারখানা সমান ভাবে গড়ে ওঠেনি। অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠে অঞ্চল ভেদে শিল্পের উন্নতি ও অনুন্নতির সম্পর্কে জানা যায়। শিল্প সহায়ক জনশক্তি, বিদ্যুৎ শক্তি, অনুকূল জলবায়ু এবং প্রয়োজনীয় বাজার ও পরিবহন ব্যবস্থার বাস্তব ধারণা অর্থনৈতিক ভূগোল হতে পাওয়া যায়।

৫। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ঃ

পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার জ্ঞান ছাড়া এবং এর উন্নতি ছাড়া কোন দেশই কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদিতে উন্নতি লাভ করতে পারে না। অর্থনৈতিক ভূগোলের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং এদের প্রয়োজনীয় ও গুরুত্ব সম্পর্কে সুন্দরভাবে জ্ঞান দান করে।

৬। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ ঃ

আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা ও অর্থনৈতিক ভূগোলের অন্যতম কারণ। এ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করলে জানা যায়, কোন অঞ্চলে কোন দ্রব্য সামগ্রীর ঘাটতি রয়েছে, কোন অঞ্চলে উদ্বৃত্ত পণ্য উৎপন্ন হয় এবং কোথায় কোন পণ্যের চাহিদাপূর্ণ বাজার রয়েছে। এতে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।

৭। সাংস্কৃতিক জ্ঞানের আদান-প্রদান ঃ

অর্থনৈতিক ভূগোল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক জ্ঞান সম্পর্কে বর্ণনা প্রদান করে। ফলে একটি দেশের সাংস্কৃতিক জ্ঞান অন্য দেশের সাথে আদান প্রদান হয়ে থাকে। সেজন্য অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠে বিভিন্ন দেশের ভাবধারা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।

৮। বন্দর, শহর, নগর ও বাণিজ্যকেন্দ্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ ঃ

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর, নগর ও বাণিজ্যকেন্দ্রগুলো শহর সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে হলে এটা পাঠ করা প্রয়োজন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শহর, নগর ও বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণ ও এদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠে জানা যায়।

৯। উন্নয়ন পরিকল্পনায় সহায়তা ঃ

দেশের বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবমুখী করতে হলে অর্থনৈতিক ভূগোলের জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। এটি পাঠে পরিকল্পনাকারীরা প্রয়োজনীয় সম্পদাদি যোগান ও সংশ্লিষ্ট প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জনশক্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

১০। সরকারের হাতকে শক্তিশালী করা ঃ

সরকার ও সরকারি কর্মচারীদের অর্থনৈতিক ভূগোল বিষয় পাঠ করা অবশ্যক। কারণ, দেশের কোথাও কোন ফসল উৎপন্ন করা হয় বা কোন শিল্প সংস্থাপন করা লাভজনক ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় তা জানা দরকার। এছাড়া, দেশের কোথাও বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করা প্রয়োজন তা অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠেই জানা যায়। কোন দেশে কোন দ্রব্য রপ্তানি বাণিজ্য করলে অধিক লাভ হয় এবং কোন দেশ হতে কোন দ্রব্য আমদানি করলে কম খরচ পড়ে এ বিষয়ে অর্থনৈতিক ভূগোল শাস্ত্র হতে জানা যায়। অর্থনৈতিক ভূগোল সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে কোন সরকারি দেশের উন্নতি করতে সমর্থ হয় না।


উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।ফলে একটি দেশের জাতি বা সমাজের সব স্তরের মানুষেরই অর্থনৈতিক ভূগোল সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করা একান্ত আবশ্যক।

অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ভূগোলের মধ্যে সম্পর্ক (Relation Between Economics and Economic Geography) 

অর্থনীতি বা Economic শব্দটি গ্রিক শব্দ Oikonomia থেকে এসেছে। এর শাব্দিক অর্থ গার্হস্থ্য পরিচালনা। অপরদিকে ভূগোল বা Geography শব্দটিও দুটি গ্রিক শব্দ Geo (পৃথিবী) এবং Graphos (বর্ণনা) থেকে এসেছে। এর অর্থ পৃথিবীর বর্ণনা। সুতরাং শব্দগত দিক থেকে অর্থনীতি ও ভূগোলের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও ব্যবহারিক দিক থেকে বিষয় দুটির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যেমন ভূগোল একটি গতিশীল বিজ্ঞান যা মানুষ, পৃথিবী ও পরিবেশের বর্ণনা প্রদান করে এবং এদের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ পূর্বক একের উপর অন্যের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।

পক্ষান্তরে, অর্থনীতি মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করে। আসলে কোন অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সে স্থানের জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা, নদ-নদী প্রভৃতি ভৌগোলিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। আবার ভৌগোলিক অবস্থা ও পরিবেশ সম্বন্ধে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকলে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করা ও সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলী ভৌগোলিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল।

জ্ঞান ভান্ডারের বিভিন্ন শাখা গুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ভূগোল ও অর্থনীতি সম্পূর্ণ দুইটি স্বতন্ত্র ও আলাদা শাস্ত্র। পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে বিচার করলে দেখা যায়, উভয়ের মধ্যে যেমন একটি অন্তঃমিল রয়েছে তেমনি পার্থক্য ও রয়েছে। তবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এ দুটি বিষয়ের মধ্যে যেসব সম্পর্ক বিদ্যমান সেগুলোর নিচে আলোচনা করা হলো-

জোন্স ও ডার্কেনওয়াল্ড ( Jones Darkenwald ) এর মতে, "ভূমির উৎপাদনমূলক কার্যকলাপ এবং কোন কোন বিশেষ অঞ্চলের ভূমি সমূহে উৎপাদনের যে তীব্রতা পরিলক্ষিত হয় তার পর্যালোচনা করা এবং উৎপাদিত বিভিন্ন দ্রব্যের রপ্তানি, ব্যবহার ও অন্য অঞ্চলে এর প্রভাব ইত্যাদি পর্যালোচনায় হচ্ছে অর্থনৈতিক ভূগোল।" এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক অবস্থা, মানুষ ও তার জীবন জীবিকা, সম্পদ, দ্রব্যের উৎপাদন, বন্টন, বাজারব্যবস্থা সহ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার তারতম্যের কারণ বিশ্লেষণ করে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কোথায় কি ধরনের সম্পদ পাওয়া যায় এবং তার পরিমাণ, বন্টন প্রভৃতির সাথে মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীকে সমীক্ষা করে।

অপরদিকে, এডাম স্মিথ (Adam Smith ) এর মতে, "অর্থনীতি হল এমন একটি বিজ্ঞান যা মানবজাতির জাতীয় সম্পদের প্রকৃতি ও কারণ অনুসন্ধান করে।" এটি দ্রব্যের উৎপাদন, বন্টন, চাহিদা, যোগান, ভোগ, আয়,ব্যয়, শ্রমিক, মজুরি প্রভৃতির নিয়মকানুন ও তথ্য প্রদান করে। এদিক থেকে বিষয় দুটির মধ্যে যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ভৌগোলিক শ্রমবিভাগ অর্থনৈতিক ভূগোল ও অর্থনীতি উভয়েরই আলোচ্য বিষয়। তবে অর্থনৈতিক ভূগোল পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি, জনবসতি, জনগণের জীবন জীবিকা, বিভিন্ন উৎপাদিত দ্রব্য ও এর পার্থক্যের কারণ ইত্যাদি বিবরণ প্রদান করে। পাশাপাশি উদ্বৃত্ত ও ঘাটতি অঞ্চলের মধ্যে বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের আদান প্রদানের ব্যবস্থাও পরিমাণ উল্লেখ করে। অপরদিকে, অর্থনীতি পণ্যদ্রব্যের ব্যবহার অর্থাৎ পণ্যটি কোথা থেকে কিভাবে আসে, কিভাবে কোথায় যায় ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়াবলিসহ পণ্য দ্রব্যটির সর্বাধিক ব্যবহার ও সুবিধা লাভের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করে। কাজেই ভূগোল ও অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক।

অর্থনৈতিক ভূগোলে মানুষ ও তার উপার্জন, আয়-ব্যয় ইত্যাদি কিভাবে পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তা বর্ণনা করে থাকে। অপরদিকে, অর্থনীতি মানুষের আয়ের উৎস, আয় ব্যয় ও সম্পদের ব্যবহার ও প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। কাজেই এ ক্ষেত্রেও বেশ সম্পর্ক বিদ্যমান।

অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু প্রধানত তিনটি। যেমন-মানুষ, পরিবেশ এবং মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। অপরদিকে অর্থনীতির বিষয়বস্তু হচ্ছে চারটি। যেমন-মানুষ, মানুষের কার্যাবলী, সম্পদ ও মানুষের কল্যাণ সাধন। সুতরাং বিষয়বস্তু দিক থেকেও বিষয় দুটির মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে।

বিভিন্ন স্থানে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন শিল্প গড়ে ওঠার কারণ সমূহ উভয় শাস্ত্ররই অন্যতম আলোচ্য বিষয়। শিল্প গড়ে ওঠার জন্য প্রধান প্রধান নিয়ামক সমূহ, বিশেষ করে প্রাকৃতিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নিয়মক এবং উৎপাদিত দ্রব্যের বাজার, পরিমাণ, বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের পথসমূহ অর্থনৈতিক ভূগোলে আলোচনা করা হয়ে থাকে। অপরদিকে, অর্থনীতি শিল্প গড়ে ওঠার কারণ সমূহ এবং উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা,যোগান, বন্টন প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে।

ভূগোল ও অর্থনীতি উভয়ের আলোচনায় ব্যবহারিক দিক বেশ প্রাধান্য পায়। কেননা ভূগোল কোন স্থান জরিপ কার্য পরিচালনায় এবং অর্থনীতিতে কোন পণ্য সামগ্রিক বাজারের উপর জরিপ কার্য পরিচালনা করে।


পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, যদিও অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ভূগোল একই শাস্ত্র নয় তবে উভয় বিষয়ের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। উভয়ের বিষয়বস্তু ও মূল উপাদান মানুষ ও মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, অর্থনৈতিক ভূগোল ও অর্থনীতির দুটি ভিন্ন শাস্ত্র হলেও এরা একে অপরের পরিপূরক।

অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ভূগোলের মধ্যে পার্থক্য ( Defference between Economics and Economic Geography ) 

পৃথিবীপৃষ্ঠে উৎপাদন বিনিময় ও ব্যবহারের সাথে সম্পর্কযুক্ত মানুষের এলাকা গত বিভিন্নতার অনুশীলনই হচ্ছে অর্থনৈতিক ভূগোল। অপরদিকে, সীমিত সম্পদ দ্বারা অভাব পূরণের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে যে বিষয় জ্ঞান দান করে তাকে অর্থনীতি বলে। ফলে এ দুটি বিষয়ের মধ্যে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কিছু পার্থক্য থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অর্থনৈতিক ভূগোলের সাথে অর্থনীতির যেসব পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো ঃ

অর্থনীতি

  অর্থনৈতিক ভূগোল

অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় সমূহ মূলত অর্থ, অর্থ মূল্য, ব্যাংকিং, কর, চাহিদা, শ্রম ইত্যাদি।

অর্থনৈতিক ভূগোল মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়া- কলাপ প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহের উৎপাদন, বন্টন, স্থানান্তরিতকরণ ইত্যাদি বিষয় পর্যালোচনা করে।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে অর্থ নীতির সূচনা হয়।

উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে অর্থনৈতিক ভূগোলের সূচনা হয়।

এর আওতা ও ক্ষেত্র অত্যন্ত ব্যাপক।

এর আওতা ও ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম।

পক্ষান্তরে,অর্থনীতির আলোচনায় চারটি পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে।যথা- অবরোহ পদ্ধতি, আরোহ পদ্ধতি,গাণিতিক পদ্ধতি এবং স্থিতিশীল ও গতিশীল পদ্ধতি।

অর্থনৈতিক ভূগোল বস্তুগত পদ্ধতি, কার্য পদ্ধতি, নীতি পদ্ধতি এবং আঞ্চলিক পদ্ধতি অনুসরণ করে।

মানুষের ব্যবহারিক ও বাস্তব জীবন নিয়ে অর্থনীতি আলোচনা করে।

প্রাকৃতিক পরিবেশ কিভাবে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর প্রভাব বিস্তার করে তা ভূগোলের মাধ্যমে আলোচনা করা হয়।

অর্থনীতি মানুষের উপার্জন ব্যবস্থা, আয় ও ব্যয় এবং মানুষের সমাজের ব্যবহার ও প্রয়োজনের কথা উল্লেখপূর্বক সঠিক পথ নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

অর্থনৈতিক ভূগোল ওইসব পরিবেশের কথা পর্যালোচনা করে যেগুলো মানুষের উপার্জন, আয়, ব্যয় ইত্যাদিকে প্রভাবান্বিত করে থাকে।

পণ্যসামগ্রীর সর্বাধিক ব্যবহার ও সুবিধা লাভের উপায় সমূহ সম্পর্কে  অর্থনীতিশাস্ত্রে আলোচিত হয়।

বিভিন্ন ধরনের পণ্যের উৎপাদন, বিনিময়, বন্টন, ভোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার সম্পর্কে অর্থনৈতিক ভূগোলে আলোচিত হয়।



সভ্যতার পরিবর্তন ও অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের চিন্তা চেতনার পরিবর্তন হওয়াটাও স্বাভাবিক। উভয় আলোচনাতেই মানুষ ও পরিবেশে এ দুটি বিষয় স্থান পায়। অর্থনৈতিক ভূগোল ও অর্থনীতি যথাক্রমে বাস্তবভিত্তিক ও অনুমানভিত্তিক বিষয় হিসেবে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এদের মধ্যে সম্পর্ক খুবই পরিপূরক।

মন্তব্য,
আজকের এই প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক ভূগোলের গুরুত্ব অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ভূগোলের মধ্যে সম্পর্ক এবং অর্থনীতি ও অর্থনৈতিক ভূগোলের মধ্যে পার্থক্যসমূহ সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তারিত তথ্য বোঝানোর চেষ্টা করেছি, আশা করছি এ বিষয়ে পুরোপুরিভাবে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url