অর্থনৈতিক ভূগোলের সংজ্ঞা, পরিধি এবং বিষয়বস্তু সমূহ বিস্তারিত
প্রিয় পাঠক, আপনি কি অর্থনৈতিক ভূগোলের সংজ্ঞা,অর্থনৈতিক ভূগোলের পরিধি এবং বিষয়বস্তু সমূহ বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন, এই বিষয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও লেখকের বই ঘাটাঘাটি করছেন, সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না ? তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজন।
আজকের এই প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক ভূগোলের সংজ্ঞা, অর্থনৈতিক ভূগোল কাকে বলে, অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি এবং অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু সমূহ সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন এবার বিস্তারিত দেখে নিই।
ভূমিকা (Introduction)
ভূগোল একটি গতিশীল বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। অর্থনৈতিক ভূগোল, বৃহত্তম ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। মানুষ এবং পরিবেশের সম্পর্ক আলোচনায় অর্থনৈতিক ভূগোলের প্রসারতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রাকৃতি, আর্থ-সামাজিক, প্রযুক্তি বিদ্যা প্রভৃতি পরিবেশ দ্বারা মানুষ প্রভাবিত হয়ে যেসব কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে তা অর্থনৈতিক ভূগোলে আলোচনা করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক ভূগোল আলোচনায় দু'টি ধারা লক্ষ্য করা যায়। একটি ধারায় দেখা যায়, বিজ্ঞান হিসেবে ভূগোল যখন আত্মপ্রকাশ করে তখন ভূগোলের দু'টি প্রধান শাখা ছিল যার একটি শাখা প্রাকৃতিক ভূগোল, অপরটি মানবিক ভূগোল। পরবর্তীতে মানবিক ভূগোল থেকে অর্থনৈতিক ভূগোল উৎপত্তি লাভ করে। দ্বিতীয় ধারায় দেখা যায়, পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ষোড়'শ শতাব্দীতে পৃথিবীর অনেক দেশে উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। ১৮৮২ সালে বাণিজ্যিক ভূগোল থেকে অর্থনৈতিক ভূগোল উৎপত্তি লাভ করে। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দুই শতকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে দৃঢ়ভাবে আত্মপ্রকাশ করে।
অর্থনৈতিক ভূগোলের সংজ্ঞা (Definition of Economic Geography)
ভূগোলের যে শাখায় মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশাদভাবে আলোচনা করে বা বর্ণনা করে তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলে। মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং এর সাথে পরিবেশের কি সম্পর্ক তা আলোচনা করা অর্থনৈতিক ভূগোলের প্রধান আলোচ্য বিষয়। সুতরাং বলা যায়, ভূগোলের যে শাখা পাঠের মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও তার সাথে পৃথিবীর প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতি পরিবেশের সম্পর্ক এবং পৃথিবীর কোন অঞ্চলে কোন দ্রব্য অধিক উৎপন্ন হয় আবার কোন অঞ্চলে ওইসব দ্রব্য মোটেই উৎপন্ন হয় না এবং পৃথিবীর কোন অঞ্চল হতে কোন দ্রব্যদি আমদানি বা রপ্তানি করলে অধিক মুনাফা হয় তা বিশা্দ ভাবে জ্ঞান লাভ করা যায় তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল ( Economic Geography) বলে।
বিভিন্ন ভূগোলবিদ ও অর্থনীতিবিদ, অর্থনৈতিক ভূগোলের বিভিন্ন ভাবে সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো-
অধ্যাপক মিলার ( Prof. Miller ) এর মতে, "Economic geography is the study of man.s economic activities and their relation to physical environment." অর্থাৎ, মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকালাপ এবং এর সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশের সম্পর্ক আলোচনা করার নামই হলো অর্থনৈতিক ভূগোল।
জে. ম্যাকফারলেন (J. MacFarlane) এর মতে, "Economic geography is a study of influence exerted on the economic activities of man by his physical environment." অর্থাৎ প্রাকৃতিক পরিবেশ বিশেষত ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, অবস্থান ইত্যাদি মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে তার তথ্য বিচারকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলে।
আলফ্রেড মার্শাল ( Alfred Marshal ) এর মতে, "Economic geography is the action of mankind" অর্থাৎ, মানব সম্প্রদায়ের কর্মকাণ্ডই হচ্ছে অর্থনৈতিক ভূগোল।
লরেন্স (Lawrence) এর মতে, "Economic geography is a study of Economic system." অর্থাৎ অর্থনৈতিক ভূগোল হচ্ছে অর্থনৈতিক পদ্ধতির চর্চা।
প্রফেসর জিমারম্যান (Prof. Zimmermann) এর মতে, "Economic geography deals with the economic life of man with relation to his environment" অর্থাৎ, মানুষের অর্থনৈতিক জীবনের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক আলোচনা করাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলে।
আধুনিক ভূগোলবিদ যে. ডাব্লিউ আলেকজান্ডার ( J. W. Alexander ) এর মতে,"Economic geography is the study of areal variation on the earth's surface in man's activities related to producing, exchanging and consuming wealth." অর্থাৎ, অর্থনৈতিক ভূগোল হচ্ছে পৃথিবীপৃষ্ঠে সম্পদের উৎপাদন, বন্টন ও ভোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত মানুষের কর্মকাণ্ড সমূহের এলাকা গত বিভিন্নতার অনুশীলন।
স্যার ডাডলি স্টাম্প ( Sir Dedy Stamp 1966 ) এর মতে, অর্থনৈতিক ভূগোলের সংজ্ঞায় বলেছেন যে, ভূগোলের যে শাখাটি সম্পদের উৎপাদন, বন্টন, বিনিময় ও ভোগ সম্পর্কে আলোচনা করে, তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলে।
ভূগোলবিদ আর. এন. ব্রাউন ( R. N. Brown ) এর মতে, "অর্থনৈতিক ভূগোল হল এমন একটি বিষয় যা মানুষের কার্যাবলীর উপর জৈব ও অজৈব পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা কর।"
আর. ই. মারফি ( R. E. Murphy ) এর মতে,"পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত অধিবাসীদের জীবন যাপন প্রণালীর সামঞ্জস্য ও পার্থক্য নিয়ে যে শাস্ত্রে আলোচনা করা হয় তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলে।"
অধ্যাপক কেলবি ( Prof. Colby ) এর মতে," প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুসারে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অনুশীলনই হচ্ছে অর্থনৈতিক ভূগোল।"
বাংলাদেশের প্রখ্যাত ভূগোলবিদ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী বলেন, যে শাস্ত্র প্রাকৃতিক এবং অপ্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি বা অবনতির পারস্পরিক সম্পর্ক বুঝিয়ে দেয় তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলা হয়।
ডক্টর কাজী আব্দুর রউফ তার রচিত অর্থনৈতিক ভূগোল গ্রন্থে সংজ্ঞা প্রদান করেন-পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান, নিমিত্তবাদ,সম্ভাবনাবাদ, মানুষের উপর পরিবেশের প্রভাব, পরিবেশের উপর মানুষের প্রভাব, মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকালাপ, অঞ্চল ভেদে ক্রিয়া কালাপের তারতম্যের কারণ, জনসংখ্যার বিন্যাস, মানব বসতি বিন্যাস প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ভূগোলের যে শাখায় আলোচনা করা হয় তাকে অর্থনৈতিক ভূগোল বলে।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, মানুষের বস্তুগত, অবস্তগত চাহিদা পূরণার্থে পণ্য দ্রব্যের উৎপাদন, বন্টন, পরিবহন, বিনিময়, বাণিজ্য প্রভৃতি কার্যাবলীর ওপর পরিবেশের প্রভাব নিয়ে আলোচনাই অর্থনৈতিক ভূগোল।
অর্থনৈতিক ভূগোলের পরিধি ( Scope of Economic Geography )
অর্থনীতির শব্দের অর্থ এমন কিছু যা কোন না কোনভাবে ব্যবসায় সংক্রান্ত কার্যক্রম, চাকরি, টাকা প্রভৃতি শব্দের সাথে জড়িত। কাজে অর্থনৈতিক ভূগোল পৃথিবীর যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করে। এতে অর্থনৈতিক ভূগোলের পরিধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িত যেসব অর্থনৈতিক উপাদান ও কর্মকান্ড রয়েছে সেগুলোর বিস্তৃতি অত্যন্ত ব্যাপক।
অর্থনৈতিক ভূগোলের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষ ও তার পরিবেশ। অতএব অর্থনৈতিক ভূগোলের পরিধি হচ্ছে মানুষ ও তার পরিবেশ এবং মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলী। আবার ব্যাপক অর্থে অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি বলতে সাধারণত এর আলোচ্য বিষয় এবং অর্থনৈতিক ভূগোলের উপাদান গুলো কতটুকু বিস্তৃতি করেছে তাকে বোঝায়। মানুষ ও তার পরিবেশ এবং মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়া কালাপ-এই তিনটি নিয়েই অর্থনৈতিক ভূগোলের মূল ভিত্তি। আর এই তিনটি মূল ভিত্তিকেই অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি বলে অভিহিত করা হয়। নিম্নে অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতা বা পরিধির বিবরণ দেওয়া হল-
১। মানুষ (Man's) :
মানুষ এই হল অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কেননা কোন দ্রব্য যার অর্থনৈতিক মূল্য আছে তার উৎপাদক, বিনিময়কারী ও ভোক্তা হলো মানুষ। সুতরাং মানুষ ও তার ক্রিয়া কালাপের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে অর্থনৈতিক ভূগোল। মানব সমাজের জীবন, জীবিকা, সমাজব্যবস্থা প্রভৃতি সুদূর অতীতকাল হতে ক্রমপরিবর্তনের ফলে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগের সূচনা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান মানব গোষ্ঠীর চাপে একদিকে পৃথিবীর স্থান সংকুলানের জন্য নতুন উপনিবেশ স্থাপন, ঘরবাড়ির প্রসারতা হচ্ছে, অন্যদিকে খাদ্যদ্রব্য ও জীবিকা অর্জনের পদ্ধতিগত পরিবর্তন ঘটছে। কৃষিজ, বনজ, প্রাণিজ ও অন্যান্য সম্পদের সাহায্যে অসংখ্য জিনিস তৈরি হচ্ছে। যেমন-কৃষি সম্পদের উপর নির্ভর করে শিল্প উৎপাদন, যানবাহন ব্যবস্থা, ক্রয়-বিক্রয়। তাই মানুষের অতীত ও বর্তমান জীবন যাপন, আচার-ব্যবহার বাসস্থান, উপজীবিকা, সাংস্কৃতিক, ধর্ম, শিক্ষা, বর্ণ প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতাভুক্ত ও পরিধি।
২। পরিবেশ (Environment) :
যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে মানুষ বসবাস করে তাকেই আমরা পরিবেশ বলি। বিখ্যাত ভূগোলবিদ অধ্যাপক চেম্বারস পরিবেশের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, "কোন কিছুর উন্নতি বা সমৃদ্ধির ওপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানসমূহের সমষ্টির নামই পরিবেশ।" পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবেশ বিভিন্ন ধরনের। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবেশ বিভিন্নতার কারণে কোন অঞ্চলের মানুষ কর্মঠ পরিশ্রমী ও উন্নত আবার কোন অঞ্চলের মানুষ অলস প্রকৃতির ও অনুন্নত হয়। তাই পরিবেশ ও পরিবেশের সাথে মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়া কালাপের সম্পর্ক আলোচনা করাও অর্থনৈতিক ভূগোলের আওতাভুক্ত।
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে পরিবেশের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। পরিবেশ দুই প্রকার। যেমন (ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ ও (খ) অপ্রাকৃতিক বা সাংস্কৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রকৃতির দ্বারা সৃষ্ট তাই এটি মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলিতে প্রভাব বিস্তারের ধরন একরকম এবং অপ্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের সৃষ্টি তাই মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলিতে প্রভাব বিস্তারের ধরন অন্যরকম।
(ক) প্রাকৃতিক পরিবেশঃ কোন দেশের ভূপ্রকৃতি, অবস্থান, মৃত্তিকা, জলবায়ু, উদ্ভিজ্জ, খনিজ সম্পদ, উপকূলরেখা, প্রভৃতি উপাদানের ওপর নির্ভর করে প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে ওঠে।
(খ) অপ্রাকৃতিক বা সাংস্কৃতিক পরিবেশঃ অপ্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে আমরা বুঝি সাধারণত সাংস্কৃতি ও মানবিক বিষয়গুলো যেমন জাতি, ধর্ম, মানুষের আচার-আচরণ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থাকে। অপ্রাকৃতিক পরিবেশকে আবার সাংস্কৃতিক পরিবেশ ও বলা হয়।
৩। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড (Economic Activities) ঃ
পণ্যসামগ্রী ও সেবাকার্যের উৎপাদন, বিনিময় ও ব্যবহারের সাথে সম্পর্কযুক্ত যে কোন মানবীয় আচরণ প্রকাশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। পৃথিবীর আর্থিক সম্পদের বর্ণনা ও ব্যবহার অর্থনৈতিক ভূগোলের প্রধান আলোচ্য বিষয়। পৃথিবীতে মানুষ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত এবং তাদের কর্মক্ষেত্রের পরিধিও ব্যাপক। অর্থনৈতিক ভূগোল মানুষের এসব বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও এর সাথে তার জাগতিক পরিবেশের সম্পর্ক বিশদভাবে ব্যাখ্যা প্রদান করে। পৃথিবীর কোথায় কোনো সম্পদ পাওয়া যায়, কেন ও কি পরিমানে পাওয়া যায় এবং তাদের অর্থনৈতিক মূল্য বা ব্যবহার কিরূপ তা বিস্তারিত জানা যায়। অর্থনৈতিক ভূগোল পৃথিবীর সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে নিম্নত্ব ভাগে বিভক্ত করে। যথা-
(ক) প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড (Primary Economic Activities) : প্রথম পর্যায়ে রয়েছে পশু শিকার পশুপালন ধান গম পাট চা রাবার ইক্ষু প্রভৃতি চাষ এবং মৎস্য বনজ ও খনিজ সম্পদ।
(খ) দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড (Secondary Economic Activities) : দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা এবং বিশ্বব্যাপী শিল্পের প্রসার ও বন্টন। কোন শিল্প কোথায় গড়ে ওঠে, কোন পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে শিল্প জড়িত এবং এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার উপর কি ধরনের প্রভাব পড়ে, এসব বিষয়ে অর্থনৈতিক ভূগোল আলোচনা করে।
(গ) তৃতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড (Tertiary Economic Activities) : তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে পরিবহন এবং ব্যবসায় ও বাণিজ্য।
(ঘ) চতুর্থ পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড (Quarternary Economic Activities) : চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে সেবামূলক ও প্রশাসনিক কর্মকান্ড।
যেকোনো অর্থনৈতিক কার্যাবলীই অর্থনৈতিক ভূগোলের অন্তর্গত। মানুষের জীবনযাত্রার উপায় গুলো কিভাবে বিভিন্ন পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং মানুষের ওপর কিরূপ প্রভাব বিস্তার করে তা অর্থনৈতিক ভূগোল এর মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়।
অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু (Subjectmatter of Economic Geography)
মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের সাথে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সম্পর্ক কি তা নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করায় অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু। মানুষ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে তার চাহিদা পূরণ এবং কার্যক্ষেত্রে কোন অভাব পূরণের জন্য নানাবিধ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড করে থাকে। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতির ক্ষেত্রে তাকে পরিবেশের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। এসব চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন পরিবেশে মানুষ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত হতে হয়। অতএব মানুষের জীবন ধারণের উপায় গুলো পার্থিব পরিবেশ দ্বারা কিভাবে প্রভাবিত হয় এবং মানুষ এই পরিবেশে কে কতটুকু আয়ত্তে মানতে পারে তার আলোচনা করায় অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু। অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু গুলো নিম্নের উল্লেখ করা হলো।
১। পৃথিবী :
পৃথিবী মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীকুলের আবাসস্থল। পৃথিবীর উৎপত্তি স্থলভাগের ভূপ্রকৃতি, বায়ুমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল প্রভৃতির সাথে মানুষ ও প্রাণীকুলের মধ্যেকার অন্তর্নিহিত সম্পর্ক তুলে ধরা অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু।
২। পরিবেশ :
পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যেমন-ভূ প্রকৃতি, নদনদী, মৃত্তিকা, জলবায়ু, খনিজ উপকরণ, প্রাণিকুল, উদ্ভিজ্জ ইত্যাদির সাথে মানুষের সম্ভাবনাগুলো তা তুলে ধরা অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু।তাছাড়া উল্লেখিত পরিবেশের উপাদান গুলোর সাথে মানুষ কি ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে এবং তারপর কিভাবে মানুষ ওই প্রতিকূলতা অতিক্রম করে চলেছে তাও অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু।
৩। মানুষ ও তার উপজীবিকা :
প্রার্থিব জগতে একমাত্র মানুষের চিন্তা এবং সৃজনশীল ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। পরিবেশের পার্থক্যের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের উপজীবিকা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কিভাবে বিভিন্ন উপজীবিকার মাধ্যমে জীবনযাত্রা নির্বাহ করে এবং কোন পরিবেশে মানুষের উপজীবিকা কি হওয়া উচিত প্রভৃতি অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু।
৪। অঞ্চল :
অঞ্চল বা আঞ্চলিকতা প্রভৃতি নিয়ে অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অঞ্চল বিশেষে কৃষির পার্থক্য, কৃষি ফসল উৎপাদনের পার্থক্য এবং ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি বিষয়গুলো অতি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু হিসেবে গণ্য।
৫। আর্থিক সম্পদ :
অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠে পৃথিবীর কোথায় কোন সম্পদ উৎপন্ন হয় বা পাওয়া যায়, কেন উৎপন্ন হয়, কি পরিমান উৎপন্ন হয় এবং এদের অর্থনৈতিক ব্যবহারই বা কি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়।
৬। পণ্যদ্রব্যের উৎপাদন :
অর্থনৈতিক ভূগোল পাঠে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন প্রকার পণ্যদ্রব্যের উৎপাদনের কারণ, বন্টন, পরিমাণ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারা যায়।
৭। ব্যবসা-বাণিজ্য :
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে যে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে তার বিস্তারিত বিবরণ প্রদানই অর্থনৈতিক ভূগোলের অন্যতম বিষয়বস্তু।
৮। বিভিন্ন যুগে অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র :
বর্তমান যুগে মানুষ তার অর্থনৈতিক কর্মধারায় পরিবেশ দ্বারা যেভাবে প্রভাবিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হয়তো অন্যভাবে প্রভাবিত হবে। তাই মানুষ যোগ পরস্পরায় পরিবেশের দ্বারা কিভাবে প্রভাবিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে কিরূপ হতে পারে তার ধারাবাহিক চিত্র প্রদান করাও অর্থনৈতিক ভূগোলের অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
৯। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক অবস্থার তারতম্যের কারণ বিশ্লেষণ :
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এবং সে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার তারতম্যের কারণ বিশ্লেষণ ও অর্থনীতিক ভূগোলের অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
এছাড়াও শিল্পকেন্দ্র, বন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্র, শহর, পশ্চাদভূমি ইত্যাদিও অর্থনৈতিক ভূগোলের বিষয়বস্তু হিসেবে পরিগণিত।
পরিশেষে বলা যায়, মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়া-কলাপ এর সাথে প্রার্থী পরিবেশের এবং পার্থিব পরিবেশের সাথে মানুষের বিভিন্ন প্রকার সম্পর্কই অর্থনৈতিক ভূগোলের অন্যতম বিষয়বস্তু।
মন্তব্য
আমার আজকে এই আর্টিকেলে অর্থনৈতিক ভূগোল কি এর সংজ্ঞা পরিধি এবং বিষয়বস্তু সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন করেছি। আমি আশা করছি এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা পেতে সক্ষম হয়েছেন। বিভিন্ন লেখকের বই সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করার জন্য। এ বিষয়ে যদি আপনার কোন মন্তব্য থাকে অথবা ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ে আপনার যদি কোন আর্টিকেল এর প্রয়োজন হয় তাহলে এডমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url