আঞ্চলিক পৃথকীকরণ কি আঞ্চলিক পৃথকীকরণে রিচার্ড হার্টশোর্নের ধারণা
প্রিয় পাঠক, আঞ্চলিক পৃথকীকরণ কি আঞ্চলিক পৃথকীকরণে রিচার্ড হার্টশোর্নের ধারণা সম্পর্কে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য জানার জন্য বিভিন্ন বই পুস্তক বা ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন? তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজন। মনোযোগের সহিত দেখতে থাকুন।
আজকের এই প্রতিবেদনে আঞ্চলিক পৃথকীকরণ কি আঞ্চলিক পৃথকীকরণে রিচার্ড হার্টশোর্নের মতবাদ সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। মনোযোগের সহিত পড়তে থাকুন।
ভূমিকা
সমসাময়িক ভূগোলের গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ক্ষেত্র বহুত্বের বা করলজির ধারণা থেকে ভূগোলে আঞ্চলিক পার্থক্যকরণের ধারণা গড়ে উঠেছে। এজন্য অঞ্চলের ভিত্তিতে পৃথিবীর সমীক্ষার ধারণাটি বেশ প্রাচীন। উনবিংশ শতাব্দীতে আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ট, কার্ল পিটার, ফ্রেডারি র্যাটজেল, আলফ্রেড হেটনার; বিংশ শতাব্দীতে পল ভিডাল দ্য লা ব্লাস, কার্ল ও শাওয়ার, রিচার্ড হার্টশোর্নে, এডওয়ার্ড উলম্যান প্রমুখ ভূগোলবিদ এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।
আঞ্চলিক পৃথকীকরণের সংজ্ঞা
আঞ্চলিক পৃথকীকরণ বা এলাকাগত তারতম্য করন বলতে একটি এলাকা বা অঞ্চল থেকে অন্য একটি এলাকা অঞ্চলকে বিভিন্ন গুণগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বলে বোঝাবার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি অঞ্চলের বিভিন্নতা ব্যাখ্যার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন এলাকার ভৌগোলিক সমীক্ষা করায় ছিল এ ধারণার উদ্দেশ্য।
জার্মানির ভূগোলবিদ আলফ্রেন্ড হেটনার ১৯৭২ সালে আঞ্চলিক পৃথকীকরণের কথা বলেন। ব্রিটেনের হারবাটসন ১৯৩৫ সালে পৃথিবীকে কয়েকটি স্বাভাবিক অঞ্চলে ভাগ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের রিচার্ড হার্টশোর্নে ১৯৪০ সালে, একই দেশের অধ্যাপক হুইটলসি ১৯৫৪ সালে এবং ভূগোলবিদ গিলবার্ট ১৯৬০ সালে আঞ্চলিক পৃথকীকরণের কথা বলেন।
আঞ্চলিক পৃথকীকরণের রিচার্ড হার্টশোর্নের ধারণা
১৯৪০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভৌগোলিক চিন্তাধারার পুরো ভাগে ছিল আঞ্চলিক ধারণা। ও দেশের ভৌগোলিক সংঘের তদানীন্তক সভাপতি রিচার্ড হার্টশোর্ন আঞ্চলিক ধারণার গোড়া সমর্থক ছিলেন। তার মতে, "ভূগোল হল পৃথিবীকে বোঝার জন্য ভূপৃষ্ঠের নানান বিষয়ের পারস্পরিক সম্বন্ধের সমীক্ষা এবং তাদের স্থানিক পার্থক্যীকরণ।"
স্থানিক পৃথীকীকরণের পদ্ধতিতে অঞ্চল ভেদে তারতম্যগুলোর কথা খেয়াল রাখতেই হয়, কিন্তু সর্বদাই মনে রাখা দরকার যে, ভূগোলের মূল উদ্দেশ্য পৃথিবীকে বোঝা, অঞ্চল চিহ্নিত করা নয়। রিচার্ড হার্টশোর্নের মতে," স্থানিক পার্থক্যীকরণ ভূ-পৃষ্ঠের বহু বিচিত্র চরিত্রের সঠিক সুবিন্যস্ত ও যুক্তিপূর্ণ বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেওয়া।" গ্রিক পন্ডিতেরা ঠিক এই ধরনের সমীক্ষাকেই করলজি (Chorology) বা ক্ষেত্রবহুত্ব বিজ্ঞান নাম দিয়েছিলেন।
আঞ্চলিক পৃথকীকরণে রিচার্ড হার্টশোর্নের ধারণা বর্ণনা করা হলো-
১। স্থানিক পৃথকীকরণ ঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫) শুরু হওয়ার আগে রিচার্ড হার্টশোর্নে ভূগোলের রূপরেখা প্রদানের সময় 'স্থানিক পৃথকীকরণ' এর কথা বলেন। তার মতে, ভূগোল হল পৃথিবীকে বোঝার জন্য ভূ-পৃষ্ঠের নানান বিষয়ের পারস্পরিক সম্বন্ধেড় সমীক্ষা এবং তাদের স্থানিক পার্থক্যকরণ। তিনি বলেন, খন্ড খন্ড অঞ্চলে বিভক্ত পৃথিবীর চিত্র যেন কয়েক টুকরো জোড়া দিয়ে গড়ে তোলা একটি মোজাইক চিত্র।
অঞ্চল হলো পৃথিবীতে বোঝার জন্য ভূগোলবিদদের একটি হাতিয়ার। তার মতে, স্থানিক পার্থক্যকরণই ভূগোল সমীক্ষার এবং পৃথিবীকে জানার একমাত্র কাজ। তিনিই প্রথম আঞ্চলিক ভূগোল পাঠের জ্ঞানদানের স্বপক্ষে দার্শনিক যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি জোরালো যুক্তি অবতারণা করে বলেন যে, আঞ্চলিক বিভিন্নতা পৃথকীকরণই হচ্ছে ভূগোলের কেন্দ্রবিন্দু যা অদৃশ্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
২। ভূগোল একটি বিজ্ঞান ঃ
রিচার্ড হার্টশোর্নের মতে, ভূগোল এমন একটি বিজ্ঞান যা পৃথিবীর আঞ্চলিক বা স্থানিক পৃথকীকরণের বাস্তবতার ব্যাখ্যা দান করে। এ ব্যাখ্যা কেবলমাত্র একটি স্থান থেকে অন্য একটি স্থানে কয়েকটি অবয়ব এবং বস্তুর বিভিন্নতা হিসেবে নয় বরং প্রত্যেক এলাকা একটি সামগ্রিক সমন্বিত বিষয়ের রূপ হিসাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
প্রতিটি এলাকায় এই সমন্বিত রূপ স্বতন্ত্র আনে। রিচার্ড হার্টশোর্ন বলেন যে, ভূগোলবিদগণ কোন দেশের অংশবিশেষ সম্বন্ধে বর্ণনা দিতে গিয়ে অগণিত ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের সম্মুখীন হন এবং এই বৈশিষ্ট্যের মধ্যে থেকে অল্প কয়েকটি বাছাইকৃত বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করেন। যে বৈশিষ্ট্য গুলো কোন এলাকাকে অন্য এলাকা থেকে স্বতন্ত্র করার জন্য সবচেয়ে উপযোগী ভূগোলবিদগণ নিয়মক হিসাবে কেবলমাত্র সেই সব বৈশিষ্ট্য বেছে নেন।
৩। প্রাকৃতিক উপাদানের বৈশিষ্ট্যঃ
ভূগোলবিদ রিচার্ড হার্টশোর্ন যুক্তি দেখিয়েছেন ভূ-প্রকৃতি জলবায়ু মাটি অথবা উদ্ভিদ প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে মানবীয় কর্মকান্ডের প্রকৃতি, সামাজিক রীতি-নীতি ও ধর্মীয় জীবনব্যবস্থা, স্থাপত্য প্রভৃতি মানবিক উপাদানের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশে প্রয়োজন রয়েছে। যেসব উপাদান কোন এলাকার বৈশিষ্ট্য দান করে এবং এর বর্ণনা যোগায় কেবলমাত্র সেই গুলোই বাছাই করতে হবে। রিচার্ড হার্টশোর্ন বলেন, কোন এলাকার বর্তমান বৈশিষ্ট্য এমন কেন তা জানার জন্য সময় বিশেষে সেগুলো কিভাবে বর্ণিত হয়েছে তা বিবেচনা করতে হবে।
স্থানিক পৃথীকীকরণের পদ্ধতিতে অঞ্চলের তারতম্যগুলোর কথা ভূগোলে গুরুত্ব পায়। ভূগোলের মূল উদ্দেশ্য পৃথিবীকে বোঝা, অঞ্চল চিহ্নিত করার সাথে অঞ্চলের সমীক্ষা করা। রিচার্ড হার্টশোর্নের মতে, স্থানিক পৃথকীকরণ ভূ-ভূপৃষ্ঠের বহু বিচিত্র চরিত্রের সঠিক সুবিন্যস্ত ও যুক্তিপূর্ণ বর্ণনা ও ব্যাখ্যা দেয়। া গ্রিক পন্ডিতেরা প্রাচীন যুগে ঠিক এ ধরনের সমীক্ষাকে করলজি (Chorology) বা ক্ষেত্রবহুত্ব বিজ্ঞান নাম দিয়েছিলেন।
৪। আঞ্চলিক পদ্ধতি ব্যবহার ঃ
ভৌগোলিক গবেষণার উদ্দেশ্য অনুযায়ী আঞ্চলিক পদ্ধতির ব্যবহারে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল চিহ্নিত করা সম্ভব। যেমন, প্রাকৃতিক অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল, রাজনৈতিক অঞ্চল, সাংস্কৃতিক অঞ্চল, কৃষি অঞ্চল প্রভৃতি। রিচার্ড হার্টশোর্নের মতে, বিশেষ উদ্দেশ্য অনুসারে বিশেষ মাপকাঠি ব্যবহার করে এমনভাবে বিভিন্ন অঞ্চল পাওয়া যাবে। যেমন, কৃষিকাজ সম্বন্ধে জানতে গেলে ভূমির উৎপাদনশীলতা, শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা, কৃষি পদ্ধতি প্রভৃতি নানান চালকের মধ্যে থেকে যেকোনো একটি বা একাধিক চালক বেছে নিয়ে ভূপৃষ্ঠকে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা যাবে।
মন্তব্য,
পরিশেষে বলা যায় যে, এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনে আঞ্চলিক পৃথিবী করন এবং রিচার্ড হার্টশোর্নের আঞ্চলিক পৃথকীকরণের ধারণা সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করি পুরোপুরি বুঝতে পেরেছেন। এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url