জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার বা এর উপাদান এবং কম্পিউটারের উপাদান
প্রিয় পাঠক, জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার বা এর উপাদান এবং কম্পিউটারের উপাদান সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাচ্ছেন, এই বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের বই পুস্তক ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘাটাঘাঁটি করছেন? তাহলে আপনার জন্য প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজন।
আজকের এই প্রতিবেদনে জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার বা এর উপাদান সমূহ, কম্পিউটারের উপাদান বা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো জানতে মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
ভূমিকা
তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জিআইএস একটি যুগান্তকারী প্রক্রিয়া। কোন অবকাঠামো নির্মাণ এবং পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক তথ্যসমূহের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের মাধ্যমে জিআইএস সফটওয়্যার সর্বোত্তম কাজের নিশ্চয়তা প্রদান করে। উন্নত বিশ্বে বর্তমানে এই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্ব উন্নয়নশীল দেশে জিআইএস প্রযুক্তি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
জিআইএস এর উপাদান (Component of GIS)
জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য যেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে জিআইএস এর উপাদান বলে। জিআইএস এর উপাদান পাঁচটি। যথা-
১। কম্পিউটার হার্ডওয়ার (Computer Hardware) ।
২। কম্পিউটার সফটওয়্যার (Computer Software) ।
৩। স্থানিক ও অবস্থানিক উপাত্ত (Spatial data & Non Spatial data) ।
৪। উপাত্ত ভিত্তি (Database) এবং
৫। মানুষ (Man) ।
১। কম্পিউটার হার্ডওয়ার (Computer Hardware) ঃ
কম্পিউটার অনেকগুলো বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ নিয়ে তৈরি হয়। এই যন্ত্রাংশের কোন একটা অচল হলে সম্পূর্ণ সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়। কম্পিউটারের মাদারবোর্ড, প্রসেসর, র্যাম, হার্ডডিস্ক, মনিটর, কিবোর্ড, মাউস, ক্যাসিং, প্রিন্টার প্রভৃতি সমন্বয় কে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার বলে। আর এসব যন্ত্রাংশ মিলেই তৈরি হয় একটি পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার।
২। কম্পিউটার সফটওয়্যার (Computer Software) ঃ
কম্পিউটারকে সচল রাখার জন্য সফটওয়্যার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। এছাড়া জিআইএস প্রযুক্তির জন্য কম্পিউটারের নির্দিষ্ট কিছু জিআইএস সফটওয়্যার ইন্সটল করতে হয়। Arc/Info, Idrisi, ERDAS Imagine, Arc View, Arc GIS প্রভৃতি জিআইএস প্রযুক্তির সফটওয়্যার। জিআইএস সফটওয়্যার ছাড়া জিআইএস প্রযুক্তির কাজ করা সম্ভব নয়।
৩। স্থানিক ও অবস্থানিক উপাত্ত (Spatial data & Non Spatial data) ঃ
স্থানিক ও অবস্থানিক উপাত্ত হল জিআইএস এর মেরুদন্ড। স্থানিক ও অবস্থানিক উপাত্ত ছাড়া জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে কোন কাজ করা সম্ভব নয়। কম্পিউটারের স্থানিক উপাত্ত হলো নদ-নদী, খাল-বিল, পাহাড়-পর্বত, ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, কোন প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠে যা কিছু দেখতে পায় তার সবই স্থানিক উপাত্ত। সুতরাং এসব উপাত্ত দিয়ে জি আই এস প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয় ফিচার ম্যাপ। এছাড়া অবস্থানিক উপাত্ত হলো অদৃশ্য গুণবাচক উপাত্ত অর্থাৎ কোন এলাকার শিক্ষার হার, জনসংখ্যার ঘনত্ব, ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা, মৃত্যুহার, জন্মহার প্রভৃতি অবস্থানিক,উপাত্ত।
৪। উপাত্ত ভিত্তি (Database) ঃ
উপাত্ত ভিত্তি বা ডাটাবেজ জিআইএস প্রযুক্তির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উপাত্ত ভিত্তির ওপর নির্ভর করেই জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে অতি গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য মানচিত্রে বা কোন ফিসারে উপস্থাপন করা হয়। কম্পিউটারের একসিস, এক্সেল, ফক্স-প্রো, প্রভৃতি ডেটাবেজ সফটওয়ারের মাধ্যমে তৈরি করা হয় ডেটাবেজ ফাইল, এটি সহজেই জিআইএস সফটওয়্যার এর অন্তর্ভুক্ত করে,সংযোজন, বিয়োজন বা সংশোধনের মাধ্যমে এন্ট্রিবিউট টেবিলে যুক্ত করা যায়।
৫। মানুষ (Man) ঃ
কম্পিউটার যতই উন্নত মানের হোক মানুষ ছাড়া এটি মূল্যহীন। উপাত্ত সংগ্রহ থেকে শুরু করে কম্পিউটারের উপাত্ত সংযোজন এবং তা সংশোধনের মাধ্যমে ফিচার মানচিত্র তৈরি ও তাতে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন সহ জিআইএস প্রযুক্তির যাবতীয় কাজ মানুষ ছাড়া সম্ভব হয় না। সুতরাং মানুষ জিআইএস প্রযুক্তির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যক উপাদান।
কম্পিউটারের উপাদান (Component of Computer)
জিআইএস প্রযুক্তির প্রাণ হলো কম্পিউটার। যে সব বৈদ্যুতিক উপকরণের সমন্বয়ে কম্পিউটার সচল থাকে সেসব উপকরণকে কম্পিউটারের উপাদান বলে। কম্পিউটারের এই উপাদান গুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১। হার্ডওয়ার (Hardwawe) ও ২। সফটওয়্যার (Softwaer) । হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যার কে একত্রে কম্পিউটারের উপাদান গুলোর সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-
১। মাদারবোর্ড (Mother Board) ঃ
সমস্ত ডিভাইসের মিলনস্থল হল মাদারবোর্ড। অর্থাৎ কম্পিউটারের ডিভাইস গুলো যে সার্কিট বোর্ডে সেট করা হয় তাকে মাদারবোর্ড বলে। মাদারবোর্ড দ্বারা কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
২। প্রসেসর (Processor) ঃ
প্রসেসরকে কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বলা হয়। প্রসেসর কম্পিউটার ব্যবহারকারীর নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে তা উপস্থাপনের জন্য আউটপুট ডিভাইসে পাঠিয়ে দেয়। প্রসেসরের ক্ষমতা যত বেশি হবে তত দ্রুত কম্পিউটারের কাজ সম্পাদন করা যাবে।
৩। র্যাম (RAM or Random Access Memory) ঃ
র্যাম কম্পিউটারের অন্যতম স্মৃতি ভান্ডার। কম্পিউটার ব্যবহারকারীর প্রদত্ত নির্দেশ বা তথ্য প্রথমে র্যামএ জমা হয়।র্যামএ ইচ্ছামত তথ্য লেখা, পড়া, মুছা অথবা প্রয়োজনের সংশোধন করা যায়। কম্পিউটারের যতক্ষণ বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে ততক্ষণ র্যামএ তথ্যগুলো সংরক্ষিত থাকে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে সাথে সাথে র্যাম তার তথ্য হারিয়ে ফেলে। বর্তমানে তিন ধরনের র্যাম ব্যবহার করা হয়। এগুলো হলো- ১। SD-RAM, ২। RD-RAM এবং ৩। DDR-RAM.
৪। হার্ডডিক্স (HDD or Hard Disk Drive) ঃ
হার্ডডিক্স হলো কম্পিউটারের একটি স্থায়ী ও প্রধান সংরক্ষক ডিভাইস। হার্ডডিক্স এর ভিতর তথ্য সংরক্ষণের জন্য অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি শক্ত গোলাকার চাকতি থাকে। হার্ডডিস্ক অনেক
৫। মনিটর (Monitor) ঃ
মনিটর কম্পিউটারের একটি অন্যতম আউটপুট ডিভাইস। এটি CPU থেকে সরাসরি কমান্ড গ্রহণ করে না। ডিসপ্লে কার্ড এর মাধ্যমে মনিটর তার কার্যসম্পাদন করার পর CPU থেকে প্রাপ্ত তথ্য আমরা দেখতে পাই। বাজারে ১৪, ১৫, ১৭, ২১ ইঞ্চি মাপের বিভিন্ন মনিটর পাওয়া যায়।
৬। এজিপি / ভিজিএ কার্ড (AGP/VGA Card) ঃ
এটি কম্পিউটারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ডিভাইস। মনিটরের কোনো ছবি বা ভিডিও বা কোন তথ্য স্বচ্ছ বা পরিষ্কার দেখার জন্য এ জি পি কার্ড প্রয়োজন হয়। এটিকে গ্রাফিক্স কার্ড ও বলে। বেশি কর্মক্ষমতার এজিপি কার্ড কম্পিউটারে না থাকলে বড় ধরনের কোন গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করা যায় না।
৭। মডেম (Modem) ঃ
কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের জন্য যে ডিভাইস ব্যবহৃত হয় তাকে মডেম কার্ড বলে। মডেম দুই ধরনের যথা ১। ইন্টারনাল মডেম (Internal Modem) এবং ২। এক্সটারনাল মডেম (External Modem)।
৮। ল্যান কার্ড (LAN Card or Local Area Network Card ) ঃ
একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য যে ডিভাইস ব্যবহৃত হয় তাকে ল্যান কার্ড বলে। আবার Network Interface Card ও বলা হয়। পাশাপাশি ল্যান কার্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব দরকারী ডিভাইস।
৯। টিভি কার্ড (TV Card) ঃ
যে ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটারের টেলিভিশনের সংযোগ দেওয়া হয় তাকে টিভি কার্ড বলে। টিভি কার্ড দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
(I) Internal TV Card : এই কার্ডে কম্পিউটারের ISA অথবা PCI স্লটে ছেট করে ইন্সটল করতে হয় এটি সফটওয়্যার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
(II) External TV Card : মনিটরের সাথে External TV Card সংযোগ দিলে টিভি দেখা যায়।
১০। PC NETWORK :
PC নেটওয়ার্ক একটি মডিউলের সাথে কম্পিউটারের সংযোগ দিলে তথ্য আদান প্রদান করা যায় এবং নতুন তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
১১। PC Data Conversion :
এটি তারা মডেলের মাধ্যমে বিভিন্ন ভৌগোলিক তথ্য সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আদান প্রদান করা যায়।
১২। PC OVERLAY :
এটি কম্পিউটারের একটি বিশ্লেষণমূলক মডিউল। একটির উপর অন্য একটি মানচিত্রের স্তর স্থাপন করে Overlay এর মাধ্যমে মানচিত্রের পূর্ণতা আনা হয়। এছাড়া মানচিত্রের বিভিন্ন দিক এই মডিউলের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়।
১৩। PC AR Cedit :
এই মডেলটি দ্বারা কম্পিউটারে ডিজিটাইজ করে মানচিত্রের বা Arc view Are Gis এর মাধ্যমে অংকন ভেক্টর মানচিত্রের বহুভুজ, রেখা ও বিন্দুর ভুলটি সংশোধন করা হয়।
১৪। PC Arc PLOT :
এই মডিউল দ্বারা ARC/INFO STARTER KIT ও PC ARCEDIT মডিউলকে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, যা দ্বারা নির্ভুল মানচিত্রের পূর্ণতা দেওয়া হয়।
১৫। PCARC/INFO STARTER KIT :
এই মডেলটি জিআইএস প্রযুক্তির সফটওয়্যার এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই মডিউলটির প্রধান কাজ মানচিত্রকে কভারেজ দিয়ে ডিজিটাল করে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা।
মন্তব্য,
এই প্রতিবেদনে জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার বা এর উপাদান সম্পর্কিত বিষয় এবং কম্পিউটারের হার্ডওয়ার সফটওয়্যার এর উপাদান বিভিন্ন উপাদান সমূহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি এর সম্পর্কিত বিষয়ে পুরোপুরি ধারণা পেয়েছেন। এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনটি মনোযোগের সহিত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url