পৃথিবীর আকার কেমন, পৃথিবীর আকার গোলাকার এর প্রমান

প্রিয় পাঠক, আপনি কি পৃথিবীর আকার কেমন পৃথিবীর আকার গোলাকার এর প্রমান সহ বিস্তারিত তথ্য জানতে চাচ্ছেন, এই বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের বই অনুসন্ধান করছেন, এ বিষয়ে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না? তাহলে আপনার জন্য আমার এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজন। 

পৃথিবীর আকার কেমন পৃথিবীর আকার প্রমানসহ বিস্তারিত

এই প্রতিবেদনে পৃথিবীর আকার কেমন? পৃথিবী যে গোলাকার তার প্রমাণ সহ আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত তথ্য গুলি।

ভূমিকা

পৃথিবীর সৌরজগতের একটি গ্রহ। আকারের দিক থেকে সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের তুলনায় পঞ্চম এবং সূর্য থেকে দূরত্বের দিক থেকে এর অবস্থান তৃতীয়। এর আকার অভিগত গোলাকার তবে পুরোপুরি গোলাকার নয়। উত্তর-দক্ষিণে সামান্য চাপা। সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার।

নিরক্ষীয় অঞ্চলে ব্যাস ৭৯২৬ মাইল কিন্তু মেরুদেশীয় ব্যাস ৭৯০০ মাইল অর্থাৎ উত্তর-দক্ষিণে ২৬ মাইল চ্যাপ্টা। পৃথিবীতে প্রাণীর জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও অন্যান্য উপাদান সঠিকভাবে বর্তমান আছে বলে এটি প্রাণের ধারক ও বাহক এবং সৌরজগতের একটি আদর্শ গ্রহ।

পৃথিবীর আকার (The shape of the Earth) 

সৃষ্টির সময় পৃথিবীর চেহারা বা আকৃতি ছিল গোলাকার। গ্রীক সভ্যতার মনীষী পিথাগোরাস ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব অব্দে পৃথিবী যে গোলাকার এই ধারণা অবতরণ করেন সৃষ্টির আদিতে পৃথিবী নিজ মেরুদন্ডের উপর অর্থাৎ নিজ কক্ষপথে ক্রমাগত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে।

আর এ আবর্তনের ফলে পৃথিবীর মধ্যাংশ যে কেন্দ্রবিন্দু সৃষ্টি হয় তার ফলে পৃথিবীর মধ্যাংশ অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চল একটু ফুলে ওঠে স্ফিত হয় এবং অভিগত গোলকের আকৃতি প্রাপ্ত হয়। গ্রীক পন্ডিত পিথাগোরাস এর শিষ্য ফেলোলস ও ওই ধারণা উপর ভিত্তি করে মত প্রকাশ করেন যে, পৃথিবী ঘুরছে।

ভূগোলবিদগণ বলেন পৃথিবীর আকার কমলালেবুর মত গোল। উত্তরের ও দক্ষিণে কিছুটা চাপা। কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতির যুগে এসে মহাকাশে ১৯৫৭ সালে স্পুটনিক এবং কৃত্রিম উপগ্রহের প্রেরণের পর উহার দ্বারা পৃথিবীর ছবি তোলা হয়।

তখন পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে ধারণা আসে পৃথিবীর দুই মেরু সামান্য মাত্রায় চাপা নয়। উত্তর মেরুর দিকে কিছুটা কম চাপা, দক্ষিণ মেরুতে বেশি চাপা। তখন বিজ্ঞানীগণ পৃথিবীকে নাশপাতি ফলের সাথে তুলনা করেছেন।

পৃথিবীর আকার প্রমান সহ বিস্তারিতঃ

মানুষের মহাশূন্যের বিজয় অভিযানের এই যুগে প্রমাণের অভাব নেই। ১৯৬৯ সালে ২০ শে জুলাই নীল  আমস্ট্রং ও এডউইন এলড্রীন প্রথম চাঁদে অবতরণ করেন। এর আগেও বিভিন্ন মহাশূন্য যান থেকে পৃথিবীর প্রকৃত আকৃতি মানুষ স্বচক্ষে দেখতে পায়, ছবি তুলে আনে। পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের মত পৃথিবীও গোলাকার। কিন্তু মহাশূন্য থেকে স্বচক্ষে দেখার সুযোগ সকলের হয় না। তাই যুক্তি-গ্রাহ্য আরো সহজ কিছু প্রমাণ প্রয়োজন। এরূপ কয়েকটি প্রমাণ উল্লেখ করা হলো।

১। মহাকর্ষ মতবাদঃ

বিজ্ঞানী নিউটনের মতে, মহাকর্ষ মতবাদ পৃথিবীর আবর্তনের ফলে পৃথিবীর মধ্যভাগ কিছুটা স্ফিত এবং মেরু অঞ্চলে কিছুটা চাপা। তিনি আরো যুক্তি দেখান কোন নমনীয় বস্তু তার নিজ অক্ষের চারিদিকে ঘুরতে থাকলে এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়।


২। সামুদ্রিক জাহাজের সাহায্যেঃ

কোন সমুদ্র বা বড় হ্রদের তীরে দাঁড়িয়ে জাহাজের বন্দর তাকে দৃশ্য দেখলে পৃথিবীর বক্রতার প্রমাণ পাওয়া যায়। দিগন্তে পৌঁছাবার পর প্রথমে জাহাজের নিচের অংশ অদৃশ্য হয় এবং পরে ক্রমে ক্রমে উহার মধ্যাংশ ও মাস্তুল অদৃশ্য হয়ে যায়-যেন জাহাজ সমুদ্রের পানিতে ডুবে গেল। দিগন্তের ওপাশ থেকে জাহাজ যখন তীরের উদ্দেশ্যে আসে, তখন প্রথমে মাস্তুল, পরে মধ্যভাগ ও সবশেষে নিম্নাংশ দৃষ্টিগোচর হয়। গোলাকার পৃথিবী-পৃষ্ঠের বক্রতার জন্য এরূপ ঘটে।

৩। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দ্বারাঃ

পৃথিবীর পূর্ব দিকে অবস্থিত দেশগুলো তাদের পশ্চিমে অবস্থিত দেশগুলোর আগে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখে। পৃথিবীর সমতল হলে এ ধরনের সম্ভব হতো না, একই সময়ে পৃথিবীর সমগ্র দেশগুলোতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হত। কিন্তু পৃথিবী গোলাকার বলে একই সময় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয় না।

৪। চন্দ্র গ্রহণের সাহায্যেঃ

চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে এবং পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে অবিরত প্রদক্ষিণ করছে। এভাবে প্রদক্ষিণ করতে করতে কখনো কখনো পৃথিবীর সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে গিয়ে হাজির হয়। তখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে, যাকে আমরা চন্দ্রগ্রহণ বলে থাকি। ফলে চন্দ্র গ্রহণের সময় পৃথিবীর ছায়াটি গোলাকার দেখায়। ফলে এতে প্রমাণিত হয় পৃথিবী গোলাকার।

৫। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেঃ

দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ার পর দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পৃথিবীপৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে সৌরজগতের গ্রহ, নক্ষত্র, চাঁদ, উপগ্রহ প্রভৃতি দেখা গিয়েছে গোলাকার। পৃথিবী ও সৌরজগতের একটি গ্রহ। অতএব পৃথিবীর কোন সন্দেহ নেই।

৬। প্রত্যক্ষ প্রমাণঃ

পৃথিবীর কয়েকটি দেশের মহাকাশচারীর চাঁদে অবতরণ করেছে এবং সেখান থেকে পৃথিবীর যে ছবি গ্রহণ করেছে, সেই ছবিতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ পেয়েছেন যে, পৃথিবীর গোলাকার আকৃতি দেখা যাচ্ছে। এতে নিখুঁত ও নির্ভুলভাবে প্রমাণিত হয় যে পৃথিবী গোলাকার।


৭। একই দিকে যাত্রা করেঃ

১৫১৯ থেকে ১৫২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফার্ডিন্যান্ড ম্যাগিলন সমদ্রপথ আবিষ্কারের নেশায় স্পেন থেকে ভিক্টোরিয়া নামে জাহাজ চালিয়ে সমুদ্রপথে পশ্চিম দিকে যাত্রা করেন। তিন বছর পর তিনি সমুদ্র পথ ঘুরে ঘুরে পুনরায় স্পেনে ফিরে আসেন। পৃথিবীর সমতল হলে তার জাহাজটি পৃথিবীর শেষ প্রান্তে উপস্থিত হয়ে যেত কিন্তু সেটা না হয়ে তিনি পূর্বের স্থানে ফিরে এসেছেন। ফলে এর থেকে প্রমাণ হয় প্রমাণ হয় যে পৃথিবী গোলাকার।

৮। কাঠের খুঁটির সাহায্যেঃ

১৮৭০ সালে ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড খালে ইংল্যান্ডের বিশিষ্ট ভূগোলবিদ দ এ আর ওয়ালেস পৃথিবী গোলাকৃতি পরীক্ষা করার জন্য একটি পর্যবেক্ষণ চালান। তিনি ওই খালে এক কিলোমিটার অন্তর তিনটি সমান দৈর্ঘ্যের খুঁটি একই সরলরেখায় খালের স্থির জলে ভেলার সাহায্য ভাসিয়ে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের দেখলেন মাঝের খুটির মাথা প্রথম ও তৃতীয় খুঁটি অপেক্ষা সামান্য উঁচু রয়েছে। পৃথিবী গোলাকার বলেই মাছের খুঁটির মাথা এই ধরনের উঁচু হয়।

৯। মহাকাশ অভিযানের দ্বারাঃ

বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এসে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া মহাকাশ অভিযানে মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর সম্পূর্ন ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। রাশিয়ার মহাকাশচারী উত্রি গ্যাগরিন চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণকারী নীল আর্মস্ট্রং অ্যাডউইন অলড্রিন এবং প্রথম মহিলা মহাকাশচারিনী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা ভারতের মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা পৃথিবীর যে ছবি তোলেন তা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার।

১০। দিগন্তের সাহায্যেঃ

কোন বিশাল আর বিশাল প্রান্তরে বা সমুদ্রবক্ষ থেকে চতুর্দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে মনে হবে যে আকাশ ধীরে ধীরে নিচু হয়ে চক্রাকারে পৃথিবীর সাথে মিলিত হয়েছে। পৃথিবী ও দিগন্তই ভূপৃষ্ঠে আমাদের দৃষ্টির সীমারেখা।

মন্তব্য

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, পৃথিবী গোলাকার, তবে পুরোপুরি গোলাকার নয় একটি অভিগত গোলক। পৃথিবীতে গোলাকার এর স্বপক্ষে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিকদের যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে এ থেকে আমরা স্পষ্টই বুঝতে পারি। পৃথিবীর আকার কেমন এবং পৃথিবীর আকার প্রমাণসহ ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন লেখকের বই বিশ্লেষণ পূর্ব এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।এ বিষয়ে কোন পরামর্শ থাকলে কমান্ডবক্সে জানিয়ে রাখবেন। এতক্ষণ ধরে প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url