স্কেল কি, মানচিত্রে স্কেল প্রকাশের পদ্ধতি সমূহ বিস্তারিত
প্রিয় পাঠক আপনি কি ভূগোল করতে গিয়ে স্কেল কি, মানচিত্রে স্কেল প্রকাশের পদ্ধতি সমূহ বিস্তারিত জানার জন্য বিভিন্ন লেখকের বই অনুসন্ধান করছেন, এই বিষয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা বা নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না? তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যান্ত জরুরী।
আজকের এই প্রতিবেদনে স্কেল বলতে কী বোঝায়, মানচিত্রে স্কেল প্রদর্শন পদ্ধতি গুলো কি এবং কোন স্কেল প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সুবিধা অসুবিধা হলো কি এগুলো সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই-
ভূমিকা
সাধারণভাবে স্কেল বলতে পরিমাপের যন্ত্রকে বোঝায়, যেমন রোলার, ফিতা, দাঁড়িপাল্লা, জরিপ কাজে ব্যবহৃত শিকল প্রকৃতি। বস্তুত স্কেল অনুপাতেরই উপস্থাপনা। কিন্তু ভূগোলে স্কেল বলতে একমাত্র মানচিত্র স্কেলকে বোঝায়। স্কেলের সাহায্যেই কোন চিত্রের মাছ সঠিকভাবে বজায় রাখা যায়।
স্কেলের সংজ্ঞা (Difinition of Scale)
মানচিত্রের উপর যে কোন দুইটি স্থানের দূরত্ব এবং ভূমিভাগের ওপর ওই দুটি স্থানের প্রকৃত দূরত্বের আনুপাতিক সম্পর্কই হলো মানচিত্র স্কেল। প্র সুতরাং মানচিত্রে দুটি স্থানের দূরত্ব এবং ভূপৃষ্ঠে অনুরূপ দুইটি সামনের প্রকৃত দূরত্বের অনুপাতকে মানচিত্র স্কেল বলে।
মানচিত্রে স্কেল প্রদর্শনের পদ্ধতি (Methods of Representation of Map Scales)
সমগ্র পৃথিবীর বা এর অংশবিশেষকে স্কেলের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের প্রকৃত দূরত্বের সাথে মানচিত্রের প্রকৃত দূরত্ব সম্পর্ক বজায় রেখে অঙ্কন করা হয়। মানচিত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং স্কেল ব্যতীত মানচিত্র অর্থহীন হওয়ায় বিভিন্ন মানচিত্রে তিনটি পদ্ধতিতে স্কেল প্রকাশ করা হয়। যথা-
১। বর্ণনামূলক স্কেল,
২। প্রতিভূ অনুপাত ও
৩। রৌখিক স্কেল।
১। বর্ণনামূলক স্কেল (Descriptive Scale)
মানচিত্রের স্কেল লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে প্রকাশ করলে তাকে বর্ণনামূলক স্কেল বলে। যেমন-এক ইঞ্চিতে এক মাইল বা ১ সেন্টিমিটারে পাঁচ কিলোমিটার প্রভৃতি। এভাবে লিখিত স্কেল থেকে মানচিত্রের এক ইঞ্চি দূরত্ব ভূমিতে এক মাইল অথবা মানচিত্রে এক সেন্টিমিটার ভূমিতে ৫ কিলোমিটার দূরত্ব
নির্দেশ করে। এ পদ্ধতি পৃথিবীর সব দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ রাশিয়ায় প্রচলিত দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক Verst এর সাহায্যে তৈরির বর্ণনামূলক স্কেল, বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নয়।
বর্ণনামূলক স্কেলের সুবিধাঃ
(ক) এই স্কেল কোথায় লেখা হয় বলে আকার জটিলতা এড়ানো যায়।
(খ) এটি সহজ ও সরল, তাই মানচিত্র পাঠে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের ও কোন অসুবিধা হয় না।
(গ) অংক করা বা হিসাব করার কোন ঝামেলা থাকে না।
বর্ণনামূলক স্কেলের অসুবিধাঃ
(ক) মানচিত্রে যে ভাষায় স্কেল লেখা থাকে সেই ভাষা ছাড়া অন্য ভাষাভাষী ব্যাক্তি স্কেল পাঠ ও পরিমাপ করতে পারে না।
(খ) এই স্কেলের একক পরিবর্তনের সময় হিসাব করার ঝামেলা ও জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়।
(গ) মূলমানচিত্র কে বড় বা ছোট করলে স্কেলের পরিবর্তন ঘটে। তখন ওই নতুন মানচিত্রের জন্য পুনরায় স্কেলের হিসাব করতে হয়।
২। প্রতিভু ভগ্নাংশ বা প্রতিভু অনুপাত (Representative Fraction R.F.)
মানচিত্রে দুইটি বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্ব ও ভূমিতে অবস্থিত অনুরূপ দুটি বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্বের অনুপাতকে ভগ্নাংশে বা ক্ষুদ্র এককে প্রকাশ করাকে প্রতিভূ ভগ্নাংশ বা প্রতিভূ অনুপাত বলে।
প্রতিভু অনুপাত নির্দিষ্ট কোন দেশের নির্দিষ্ট পরিমাপ পদ্ধতির অন্তর্গত নয়। এটি যে কোন দেশের যেকোন পরিমাপ পদ্ধতিতে প্রযোজ্য, এর জন্য কোন পরিবর্তন দরকার হয় না।
মানচিত্রের স্কেলকে ভগ্নাংশ বা অনুপাতে প্রকাশ করা হয়। এই পদ্ধতিতে ভগ্নাংশের প্রথম অংশ লব ও দ্বিতীয় অংশ হর নামে পরিচিত। যেমন- ১ ঃ ১০০০০ । বিশ্বের সব দেশে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। এই ভগ্নাংশ বা অনুপাত সাধারণভাবে ইঞ্চিতে প্রকাশ করা হয়।
প্রতিভু ভগ্নাংশ বা প্রতিভু অনুপাত সুবিধাঃ
(ক) R.F স্কেলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর সার্বজনীন ব্যবহার, কারণ এটি এককবিহীন স্কেল।
(খ) মানচিত্র গঠন গঠনের ক্ষেত্রে এই স্কেলের ব্যবহারের গুরুত্ব বেশি।
(গ) R.F স্কেলকে বিবৃতিমূলক ক অথবা রৈখিক স্কেলে রূপান্তর করা সবচেয়ে সহজ।
প্রতিভু ভগ্নাংশ বা প্রতিভু অনুপাত অসুবিধাঃ
(ক) মানচিত্রকে ছোট বা বড় করা হলে পুনরায় স্কেলের হিসাব করতে হয়, তখন জটিলতা দেখা যায়।
(খ) অনভিজ্ঞ মানচিত্র পাঠকদের ক্ষেত্রে এই স্কেলের মানচিত্র পাঠ ও পরিমান করা অসুবিধা জনক।
৩। রৌখিক স্কেল (Liner Scale)
মানচিত্রের স্কেল রেখাচিত্রের সাহায্যে প্রকাশ করলে তাকে রফিক স্কেল বলে। এই স্কেলে একটি সরলরেখাকে সুবিধামতো কতগুলো প্রাথমিক অংশে এবং সর্ব বামের অংশকে প্রাথমিক অংশের একটি ভাগের মানের সাপেক্ষে কতগুলো দ্বিতীয় পর্যায়ে অংশে বিভক্ত করতে হয়। এই পদ্ধতিতে মানচিত্রের দূরত্ব অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম ও সহজভাবে পরিমাপ করা যায়।
সুবিধাঃ
(ক) মানচিত্রকে ছোট বা বড় করা যায় আনুপাতিক হারে।
(খ) নতুন মানচিত্রের জন্য স্কেলের হিসাব করতে হয় না।
অসুবিধাঃ
(ক) কাগজের আকার অনুযায়ী স্কেলের দৈর্ঘ্য নিতে হয়।
(খ) মানচিত্রের দৈর্ঘ্য প্রস্থের সাথে স্কেলের দৈর্ঘ্য মানানসই রাখতে হবে।
মন্তব্য
পরিশেষে বলা যায় যে, আমরা এতক্ষণ ধরে মানচিত্র কাকে বলে মানচিত্র প্রকাশের বা প্রদর্শনের বিভিন্ন পদ্ধতি সমূহ বিস্তারিত আলোচনা করেছি এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো উল্লেখ করেছি। আশা করছি এই সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url