নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা

সম্মানিত পাঠক, আপনি কি নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাচ্ছেন, এ বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাচ্ছেন না, তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, এই প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা

আজকের এ প্রতিবেদনে নিম পাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার বিভিন্ন উপায় চর্ম রোগের নিম পাতার ব্যবহার কাঁচা হলুদের বিভিন্ন উপকারিতা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে চলুন এগুলো দেখে নিই দেখা যাওয়া হয়নি

ভূমিকা

নিমপাতার বিভিন্ন ঔষুধি গুন রয়েছে। শরীরের যত্ন ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রেই নয় এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুণাগুণ। অন্যদিকে কাঁচা হলুদ ও রূপচর্চার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে শুধু তাই নয় কাঁচা হলুদেরও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুনাগুন। চলুন আমরা দেখে নেই নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা এবং ঔষধি গুণাবলী।

নিমপাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

নিম পাতার পেস্ট বানিয়ে ত্বকে ব্যবহার করে ত্বক ফর্সা করা যায়। আদিকাল থেকেই ত্বক ফর্সা করার কাজে এবং মসৃণ করার কাজে নিমপাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। এখন বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহারের জন্য নিম পাতার ব্যবহার কমে গেছে। এর পরেও বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী তে যেমন ফেসওয়াশ, ক্রিম, সাবান ইত্যাদিতে নিমপাতা ব্যবহার হয়ে থাকে।

নিম পাতার পেস্ট বানানোর ক্ষেত্রে যে সমস্ত উপকরণ লাগবে তা হল তিন চামচ নিমপাতা বাটা, এক চামচ দুধ, এক চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, এবং এক চামচ মধু একত্রে পেস্ট বানিয়ে ত্বকের উপরে ভালো ভাবে মালিশ করতে হবে। এইভাবে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।


এইভাবে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল এবং ফর্সা হয়ে যাবে। নিমপাতা একটি ভালো ময়েশ্চারাইজ। ত্বক মসৃণ করতে এবং মুখের ব্রণের দাগ মিশানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

চর্মরোগে নিমপাতার উপকারিতা

নিম পাতা , নিম গাছের ছাল, নিম গাছের ফুল এবং নিমের ফল বিভিন্ন ধরনের ওষুধি গুনাগুন রয়েছে। চর্ম রোগের ক্ষেত্রে যে সমস্ত রোগ খুব দ্রুত সারিয়ে তোলে সেগুলো হল-

মুখের ব্রণ ভালো করতেঃ

নিমপাতা পিষে পেস্ট বানিয়ে ব্রণের উপরে মাখিয়ে দিয়ে এক ঘন্টা অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে, এইভাবে নিয়মিত নিম পাতার পেস্ট ব্যবহার করলে এক সপ্তার মধ্যে প্রাণ ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

চিকেন পক্সঃ

চিকেন পক্স হলে শরীর প্রচন্ড ব্যথা ও চুলকানি শুরু হয়। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। এই ক্ষেত্রে নিমপাতা পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করে পানি ঠান্ডা হলে সেই পানিতে গোসল করলে। পক্স বের হওয়ার মাত্রা কমে যাবে এবং দ্রুত উপশম হবে।

একজিমা চিকিৎসায়ঃ

একজিমা চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিমের বাকল পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেটা পিষে পেস্ট বানিয়ে একজিমার ক্ষতস্থানে ব্যবহার করলে দ্রুত এর কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যাবে।

খোস পসড়া সারাতেঃ

একমুঠো নিমপাতার ফুল পাঠায় পিষে পেস্ট বানিয়ে কয়েক দিন খোস পসড়া ও চুলকানির জায়গায় নিয়মিত ব্যবহার করলে এলার্জি জাতীয় সকল সমস্যা দ্রুত ভালো হয়ে যাবে। এছাড়াও নিমপাতা শুকনো করে তারপরে গুনাহ করে সরিষার তেলের সাথে মিশিয়ে চুলকানির ক্ষতস্থানে ব্যবহার করলে ওষুধের মত কাজ করবে।

ত্বকের কালো দাগ দূর করতেঃ

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার ক্ষেত্রে, নিমপাতা পিষে তার রস বানিয়ে তুলাতে করে ভিজিয়ে কালো স্থানে ব্যবহার করলে দ্রুত কালো দাগ মিশে যাবে। এছাড়াও মুখে অথবা শরীরের অন্যান্য জায়গায় কালো দাগ দূর করার ক্ষেত্রে নিম পাতার রস নিয়মিত ব্যবহার করলে দ্রুত ফলাফল লক্ষ্য করা যাবে।

কাঁচা হলুদের উপকারিতা

হলুদ শুধুমাত্র রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করে না এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঔষধি গুনাগুন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে কাঁচা হলুদ শরীরের জন্য বিভিন্ন রকমের উপকারিতা বয়ে আনতে পারে, এইজন্য রান্না ছাড়াও কাঁচা হলুদ খাওয়া এবং ব্যবহার করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়ে থাকে। কাঁচা হলুদের কতিপয় বিশেষ উপকারিতা উল্লেখ করা হল।

ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদঃ

ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদের ব্যবহার বহুকাল আগে থেকেই হয়ে আসছে। এন্টিঅক্সিডেন্ট নামক উপাদান রয়েছে কাঁচা হলুদে যার ফলে, মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং চেহারায় বয়সের ছাপ রোধ করে।

ওজন কমাতে কাঁচা হলুদঃ

যাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে, তাদের জন্য কাঁচা হলুদ বেশ উপকার বয়ে আনে। কাঁচা হলুদের রয়েছে অ্যান্টি ওবেসিটি যা শরীরের অবাঞ্ছিত মেদ জমতে বাধা দেয় এবং মেটাবলীজিমের মাত্রা বাড়ায়। তাই বলা যায় কাঁচা হলুদ অতিরিক্ত ওজন কমাতে এবং শরীরের মেদ কমাতে সহায়তা করে।

খাদ্য সংক্রামণঃ

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এন্টি ইনফ্লামেটরি জাতীয় উপাদান রয়েছে কাঁচা হলুদের। এগুলো বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ থেকে আমাদের খাদ্যনালীকে রক্ষা করে। আমরা প্রতিনিয়ত যে খাদ্য গ্রহণ করি তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, কাঁচা হলুদ এই ব্যক্তিরিয়াকে ধ্বংস করে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ;

কাঁচা হলুদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধকারী উপাদান রয়েছে, যা রক্তের শর্করা মাত্রা কমাতে এবং ইনসুলিন হরমোনের ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যাদের শরীরে ডায়াবেটিসের অত্যাধিক রয়েছে তারা নিয়মিত কাঁচা হলুদ পরিমান মত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগাতে কাঁচা হলুদঃ

কাঁচা হলুদ হাড়ের টিস্যুকে রক্ষা করে এবং ভাঙ্গা হাত জোড়া লাগাতে বিশেষভাবে সহযোগিতা করে। কাঁচা হলুদের সাথে দুধ মিশিয়ে একত্রে খেলে ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা

প্রাচীনকাল থেকে শরীরের যত্নে কাঁচা হলুদ ও নিমপাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। আমরা কাঁচা হলুদ আর নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানি। মানুষের শরীরের চুল, ত্বক ও শরীর সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


নিম পাতা এবং কাঁচা হলুদ এর বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা ঔষধি গুন থাকলেও তেতো স্বাদ এবং উটকো গন্ধের জন্য অনেকেই সহ্য করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে এই দুটি উপাদান দিয়ে খুব সহজেই বড়ি বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন এবং সংরক্ষণ করতে পারেন দীর্ঘদিন।

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের বড়ি বানাতে হলে প্রয়োজন হবে তিন থেকে ৪০০ গ্রামের মত নিমপাতা বাটা, কাঁচা হলুদ বাটা 250 থেকে 300 এবং প্রয়োজনমতো পানি। এগুলো দিয়ে বড়ি বানিয়ে রৌদ্রে ভালোভাবে শুকিয়ে বায়ুশূন্য বোতলে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। এই বড়ি নিয়মিত খেলে বিশেষ যে উপকার পাওয়া যায় সেগুলো হলো-
  • শরীরের বা মুখে ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর করনের ক্ষেত্রে এই নিম পাতার বড়ি বিশেষ কার্যকরী একটি উপাদান।
  • নিমপাতা এবং কাঁচা হলুদের বড়ি শরীরের ওজন কমাতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে এবং ফর্সা করতে এবং বার্ধক্যের অবস্থা দূরীকরণের ক্ষেত্রে নিমপাতা এবং কাঁচা হলুদের বড়ি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
  • এই বড়ি শরীরের পরিপাক যন্ত্রকে সফল রাখে এবং হজমে সহায়তা করে।
  • নিম পাতার এই বড়ি শরীরের এলার্জি জনিত সমস্যা যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি, পসড়া ইত্যাদি রোগ দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
  • কাঁচা হলুদ এবং নিম পাতার বড়ি নিয়মিত খেলে ত্বকের তেলতেলে বা তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যাবে।
মন্তব্য,
পরিশেষে বলতে পারি যে, নিমপাতা এবং কাঁচা হলুদের বহু ওষুধী গুণাগুণ রয়েছে। নিমপাতা একটি ভালো অ্যান্টিসেপটিক ও বটে। যেকোনো ধরনের অসুস্থর ক্ষেত্রে আমাদের প্রাথমিক চিকিৎসা করাই শ্রেয়। সেই ক্ষেত্রে নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের ভূমিকা অপরিসীম। আমার এই প্রতিবেদন সম্পর্কে আপনার যদি মূল্যবান কোন পরামর্শ থাকে তবে, নিচে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url