শীতকালের খেজুরের রস এবং খেজুর রসের মজাদার খাবার ও পিঠাপুলি
সম্মানিত পাঠক, আপনি কি, শীতকালের খেজুরের রস এবং খেজুর রসের মজাদার খাবার ও পিঠাপুলি সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন? তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজন।
আজকের এই প্রতিবেদনে খেজুরের রস সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও রস দ্বারা তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার ও পিঠাপুলি কিভাবে বানানো যায়, কোন গুলো বেশি আকর্ষণীয় বা মজাদার সে সমস্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। চলুন এগুলো জেনে নিই-
ভূমিকা
বাঙালির শীতের সকালে গ্রাম্য ঐতিহ্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে রয়েছে খেজুরের রস। শীত মৌসুমে গ্রাম বাংলায় খেজুরের রস থেকে বিভিন্ন রকমের খির ও পিঠা তৈরি করে নবান্নের উৎসব করা প্রাচীন ঐতিহ্যের একটি বড় অংশ। গ্রামীন এলাকায় শীতের সকালে
খেজুরের রস আর মুড়ি একটা বেশ জনপ্রিয় খাদ্য। শীত মৌসুম জুড়েই খেজুর গাছ থেকে সংগ্রহকৃত সুমিষ্ট রস জাল দিয়ে তৈরি হয় ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাঠালি। খেজুর গাছে সুমিষ্ট রসের মিষ্টি ঘ্রান যেন মুগ্ধ করে সবাইকে। পুরো শীত মৌসুম জুড়েই চলে এই খেজুরের
রসের তৈরিবিভিন্ন ধরনের পিঠা খাওয়ার আয়োজন। এই সময় বাড়িতে জামাই, মেয়ে, নাতি নাতনি এবং আত্মীয়-স্বজন নিয়ে চলের শীত উৎসব এবং বিভিন্ন ধরনের শীতের পিঠা খাওয়ার ধুম।
খেজুর গাছ রাস্তার ধারে, জমির আইলে, রেললাইনের ধারে, পুকুর পাড়ে, বাড়ির আনাচে-কানাচে এবং পরিত্যক্ত স্থানে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠে। এরপরও খেজুর গাছ বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে একটি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, কারণ
প্রতিবছর খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে একশ্রেণীর মানুষ গুড় তৈরি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে থাকেন। খেজুর গাছ অবহেলায় অযত্নে বেড়ে উঠলেও বাংলাদেশের নাটোর এবং যশোর জেলায় এই গাছের চাষ হয়ে থাকে। এছাড়াও বৃহত্তর রাজশাহী, ফরিদপুর এবং দক্ষিণাঞ্চলের জেলা সমূহ প্রচুর পরিমাণে খেজুরের গাছের চাষ করা হয় এবং সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে গুড় উৎপাদন করা হয়।
শীতকালের খেজুরের রস
গ্রাম বাংলার শীতের সকালের জনপ্রিয় এবং মুখরোচক খাবার হলো খেজুরের রস ও মুড়ি। আবহমান কাল থেকেই এই প্রচলন হয়ে আসছে। যারা খেজুরের রস সংগ্রহ কাজে নিয়োজিত তাদেরকে গাছারি বলা হয়। গাছারি সন্ধ্যায় রস সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহণ করে আর সকালে তারা সংগ্রহ করে। তারা এই রস বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে প্রতি কেজি রস ২০ টাকা দামে বিক্রি হয়ে থাকে। এই খেজুরের রস দিয়ে সুস্বাদু গুড় তৈরি করা হয়। ১ কেজি গুড়ের জন্য ৮ লিটার রসের প্রয়োজন হয়।
খেজুরের রস এবং গুড় দিয়ে বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু ক্ষীর ও পিঠা পায়েস তৈরি করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে খেজুরের কাচা রস না খাওয়াই উত্তম। খেজুরের রস বিভিন্ন ধরনের পাখির সংস্পর্শে আসলে নিপা ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে।
খেজুর রসের মজাদার খাবার ও পিঠাপুলি
শীতকালে খেজুরের রস দিয়ে যে সমস্ত খাবার বানানো হয়ে থাকে সেগুলো আসলে খুব মজাদার এবং সুস্বাদু। আর এগুলো শহর অঞ্চলের চেয়ে গ্রাম অঞ্চলে অরিজিনাল এবং খাঁটি পাওয়া যায়। খেজুরের গুড় দিয়ে যে সমস্ত পিঠাপুলি, পায়েস, ক্ষীর বানানো হয় সেগুলো প্রকৃতপক্ষে বেশ মজাদার। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন মজাদার খাবার ও পিঠাপুলির কিছু বর্ণনা উল্লেখ করা হলো-
খেজুরের গুড়ঃ
খেজুরের গুড় একটি গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী, মুখরোচক,পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাদ্য। প্রতিদিন শীতের সকালে গাছারি খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় বানানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। খেজুরের রসের মিষ্টি অনুসারে গুড়ের পরিমাণ কম বেশি হয়ে থাকে। মোটামুটি ৮ কেজি খেজুরের রস থেকে এক কেজি গুড় তৈরি হয়। সংগ্রহকৃত খেজুরের রস জাল দিয়ে কমিয়ে গুড় তৈরি করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকারের গুড় বানানো হয় যেমন- লালিগুড়, ঝোলা গুড়, পাটালি গুড় ইত্যাদি। এই গুড় যেমন সরাসরি খেতে,সুস্বাদু তেমনি বিভিন্ন রকমের খাদ্যের মধ্যে দিয়ে খেতেও মজাদার।
পায়েসঃ
আতপ চাল, নারিকেল, দুধ, এবং অন্যান্য মসলা সহ খেজুরের গুড় অথবা খেজুরের রস দিয়ে তৈরি পায়েস বেশ মজাদার একটি খাবার। খেজুরের গুড় দিয়ে বানানো হলে এর গন্ধ এবং স্বাদ দুটোই মুগ্ধকর। প্রতিটি মানুষেরই এই খাদ্য বেশ জনপ্রিয়।
রস পিঠাঃ
শীতকালে রস পিঠা একটি অতি জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু খাবার। চিতাই পিঠা ও খেজুরের রস দিয়ে এই রস পিঠা বানানো হয়ে থাকে।
ভাপা পিঠাঃ
খেজুরের গুড় দিয়ে ভাপা পিঠা খেতে খুব মজাদার। তাই ভাপা পিঠাকে ঐতিহ্যবাহী পিঠা বলা হয়ে থাকে। ভাপা পিঠা সকালের নাস্তা হিসেবে অনেকেই খেয়ে থাকেন। গ্রামের নাস্তা হল বিংশ শতকের শেষভাগে প্রধান শহরে আসা গ্রামীণ মানুষের খাদ্য হিসেবে এটি শহরের প্রচলিত হয়, যা প্রধানত শীত মৌসুমে খাওয়া হয়। ভাপা পিঠার স্বাদ বৃদ্ধির জন্য নারকেলের শ্বাস দেওয়া হয়। মিষ্টি করার জন্য দেওয়া হয় গুড়। এই পিঠা অনেক অঞ্চলেই ধুপি পিঠা নামে পরিচিত। ভাপা পিঠা রাস্তাঘাটে এবং দোকানেও পাওয়া যায়। এই পিঠ খেজুরের গুড় ছাড়াও খেজুরের রসের লালি দিয়ে খুব ভালো লাগে।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url