শীতকালীন রোগ এবং শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

সম্মানিত পাঠক, আপনি কি শীতকালীন রোগ এবং শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাচ্ছেন, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য তথ্য পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত সার্চ করছেন? তাহলে আপনার জন্য এর প্রতিবেদনটি অত্যন্ত জরুরী।

শীতকালীন রোগ এবং শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

আজকের এই প্রতিবেদনে বছরের কোন সময় শীতকাল এবং এই শীতকালে কি কি ধরনের রোগ হতে পারে, কি কি ধরনের বিশেষ খাবার পাওয়া যায় এবং শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত এ সম্পর্কিত তথ্য সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। চলুন এবার বিস্তারিত জেনে নিন।

ভূমিকা

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ গ্রীষ্মকাল, আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল, ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল, কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল, পৌষ-মাঘ শীতকাল, ফাল্গুন-চৈত্র বসন্তকাল। এই শীতকাল নতুন নতুন বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি পাওয়া যায়, শীতকালে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পায়েস খাওয়ার মজাই আলাদা। শীতকালে গরমের তীব্র যন্ত্রণা এবং মশার ভ্যান ভ্যানানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শীতকালীন বিভিন্ন সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু অসুবিধা রয়েছে চলুন আমরা সেগুলো জেনে নিই।

শীতকালে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি

শীতকালে নতুন নতুন বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সমৃদ্ধ শাক-সবজি পাওয়া যায়। সবজিগুলোর মধ্যে টমেটো, সিম,বেগুন, আলু, গাজর,পাতাকপি, ফুলকপি, মুলা,লাউ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

শীতকালীন শাকসবজি

 আর শাকের মধ্যে রয়েছে লাল শাক, পালং শাক, মুলা শাক, ধনেপাতা, কালাইয়ের শাক, লাউ শাক, বথিয়ার শাক, ইত্যাদি। এ সমস্ত শাক এবং সবজি আমাদের শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ও পুষ্টি যোগায়, যার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

শীতকালে বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুরি 

শীতের আরেকটি মজাদার বিষয় হলো খেজুরের রস এবং বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুরি । বিশেষ করে গ্রামে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পুলি আয়োজন করা হয়। শীতের সময় শীতকালীন ছুটিতে মেয়ে জামাইকে বাড়িতে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার মজাই আলাদা। 

শীতের পিঠা

শীতকালীন পিঠাপুরির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ভাপা পিঠা. চিতাই পিঠা. কুষলি পিঠা, রস পিঠা, পায়েস এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পিঠার মজাই আলাদা। কেবলমাত্র শীতকালীন এই পিঠা বেশি মজাদার হয়।

শীতের তীব্রতায় জনজীবন

শীতের সময় বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ফলমূল ও পিঠা পায়েস ভালো লাগলো শীতের তীব্রতায় জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়ে। তাপমাত্রা যখন ১০ ডিগ্রি নিচে থাকে তখন স্বাভাবিক মানুষও অস্বস্তি বোধ করে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। দরিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী লোকজন শীতের তীব্রতায় তুলনামূলক বেশি কষ্ট পেয়ে থাকে।

শীতকালীন রোগ 


গরম কালের তুলনায় শীতকাল তুলনামূলক বেশি আরামদায়ক হলেও শীতকালে কিছু রোগ বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুরা শীতকালে বেশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে, শীতকালে যে সমস্ত রোগ বেশি হয়ে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু রোগ নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিসঃ

শীতের আগমনের সময় বিশেষ করে যে রোগটা বেশি দেখা যায় তা হল নিউমোনিয়া,বয়স্ক এবং বাচ্চাদের বেশি হয়ে থাকে। নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো হল- জ্বর, কাশি এবংশ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। ব্রংকাইটিস শ্বাসতন্ত্রের একটি রোগ, সাধারণত শিশুদের অর্থাৎ দুই বছর কম বয়সী বাচ্চাদের তুলনামূলক বেশি হয়ে

থাকে, এই রোগের ফলে শিশুর নাক দিয়ে পানি পড়ে, কাশি হয় এবং শ্বাসকষ্ট হয়। এই রোগ সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন অথবা সাত থেকে দশ দিন পর্যন্ত দেখা যায়, তবে তুলনামূলক বেশি হলে বা অত্যাধিক শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

নিউমোনিয়া যেকোনো বয়সের ব্যক্তিদের হতে পারে। কাশির সাথে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে, রোগীকে এক্সরে করলে ফুসফুসে সাদা দাগ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তার রক্ত পরীক্ষা করা হয় তবে শ্বেতরক্ত কণিকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার দেখা যাবে।

হাঁপানিঃ

হাঁপানি সাধারণত শিশুদের অর্থাৎ এক থেকে দেড় বছর বয়সী বাচ্চাদের তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। এটি একটি অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসনালী সংকীর্ণতার সৃষ্টি করে। হাঁপানি রোগের প্রধান লক্ষণ গুলো হল-শ্বাস গ্রহণ করতে ও শ্বাস ছাড়তে কষ্ট হয়, দমবন্ধ ভাব হয়, বুকের ভিতর শব্দ করে, বাচ্চা ঘুমাতে কষ্ট হয় ইত্যাদি।

ডায়রিয়াঃ

শীতের শুরুতে ডায়রিয়াজনিত সমস্যা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। এই রোগে শিশুরাই বেশি ভোগে থাকে, তবে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকলে বয়স্করাও এই রোগে আক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে কোন ব্যক্তি দৈনিক তিনবার বা তার বেশি পাতলা পায়খানা করলে তাকে ডায়রিয়া বলা হয়। ডায়রিয়া প্রকোপ বেশি হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

চামড়া শুষ্ক হয়ে ওঠাঃ

শীতের সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায়, আবহাওয়া শুষ্ক থাকে ফলে শরীর থেকে পানি চুষে নেয় ফলে ত্বক ও শুষ্ক হয়ে ওঠে। ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠার ফলে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দুই পা, ঠোঁট এবং মুখোমন্ডল।

এগুলো প্রয়োজন মত যত্ন না নিলে বা পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত না খেলে ঠোঁট এবং পা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষের শরীরে চামড়ার নিচে সিবেসিয়াম নামক অণুবীক্ষণিক গ্রন্থি থাকে যার কাজ হল তেলের মত রস ক্ষরিত করা।

শীতকালে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকায় এদের সিয়াম গ্রন্থি থেকে বের হয়ে আসা পদার্থগুলো শরীরের চামড়ার ঠিকমতো ছড়িয়ে পড়তে পারে না ফলে ত্বক শুকিয়ে যায় এবং টানটান ভাব দেখা দেয়। ঠোঁটের চামড়া পাতলা হওয়ায় শুষ্ক বাতাসে তা সহজেই ফেটে যায়।

ম্যালেরিয়া ফাইলেরিয়া ও ডেঙ্গুঃ

শীতকালে তুলনামূলকভাবে মশা কম থাকায় কম সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কম সতর্কতা অবলম্বনের ফলে মশা আক্রমণের সুযোগ পায়, এর ফলে মশা বাহিত রোগ ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু সহ নানা ধরনের ভাইরাস জনিত জ্বরের প্রকোপ দেখা যায়। ডেঙ্গু বর্ষাকালীন রোগ হলেও শীতকালেও বিস্তার লাভ করে।

জয়েন্টে ব্যথাঃ

শীতকালে বাত এবং জয়েন্টে ব্যথা গুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। সাধারণত ৫০ বছর বয়সের বেশি ব্যক্তিরাই শরীরের নানা বিষ বেদনায় ভুগে থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে ৫০ বছর এর উর্ধ্বে জনসংখ্যার শতকরা সাত ভাগেই ব্যথাজনিত সমস্যায় ভুগে থাকে।


বিশেষ করে শরীরের জয়েন্টে ব্যথা বেদনা বেশি হয় যেমন-ঘাড়, কোমর, সোল্ডার জয়েন্ট, হাঁটুর ব্যথা, পায়ের ব্যথা ও মেরুদন্ডের ব্যথা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

শীতকালে যখন ঠান্ডা বাতাস হইতে শুরু করে, বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায় বা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে তখন গাছের পাতা ঝরে পড়া শুরু হয়, তখন দিন ছোট থাকে এবং শীতে জনজীবন সহ পশু পাখিরাও কষ্ট ভোগ করতে থাকে। শীতকালে অনেকেই শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য গরম কাপড়

পরিধান করে কেউ কেউ রুম হিটার ব্যবহার করে, দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ শীত কমানোর জন্য আগুন পোহায়। গ্রামের কিছু মানুষ হাড়িতে জ্বলন্ত আগুন ও কয়লা নিয়ে রুমে রেখে রুমে তাপমাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করে। পশুপাখিরাও শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে।

যেমন-কিছু প্রাণী হাইবারনেশ বার শীত নিদ্রায় চলে যায়, কিছু প্রাণী মাইগ্রেশন করে বা গরম অঞ্চলে গমন করে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য। কিভাবে শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সেগুলো নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১। একাধিক কাপড় পরিধান করলে শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া খুবই সহজ, একটি মোটা কাপড়ের চেয়ে তিনটি পাতলা কাপড় শীত নিবারনের জন্য উত্তম। এর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ হলো, একটি মোটা কাপড়ের চেয়ে তিনটি পাতলা কাপড় শরীরের "থার্মিক বেলান্স" রক্ষায় ভালো কাজ করে। এক্ষেত্রে সুতির কাপড় ব্যবহার করলে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়, এছাড়াও পুল-ওভার বা জ্যাকেট ব্যবহার করলে বাইরের বাতাস শরীরের লাগতে দেয় না বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

২। ঘর উষ্ণ করার জন্য ঘরে কাঠের চুলা বা গ্যাসের চুলা, রুম হিটার ব্যবহার করে ঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে ঠান্ডা প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ।

৩। একটি ধর্ম রয়েছে, সেটি হলো গরম বাতাস উপরে উঠে এবং ঠান্ডা বাতাস নিচের দিকে নামে। তাই শীতের দিনে ফ্লোরে না শুয়ে একটু উঁচু বা খাটে শুয়ে থাকলে তুলনামূলক কম ঠান্ডা লাগবে।

৪। সুপ জাতীয় খাদ্য,ডাল, সবজি এগুলো গরম জাতীয় খাবার। সুপ জাতীয় খাদ্য শরীরে অনেকক্ষণ গরম ধরে রাখতে পারে। গরুর মাংস ছোট ছোট করে কেটে ডাল অথবা সবজি দিয়ে সুপ বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

৫। শক্ত রাবারের ব্যাগে গরম পানি ভর্তি করে, কম্বল বা লেপের মধ্যে তা রেখে দিলে, শরীর দ্রুত গরম হয়ে যাবে এবং শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

৬। আলো ও তাপের প্রধান উৎস হলো সূর্য। শীতকালে সূর্যের প্রখরতা তুলনামূলক কম থাকে। তারপরেও যতটুকু সূর্যের তাপ পাওয়া যায় তা সময়মতো গ্রহণ করে শীতের তীব্রতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

৭। শীতের তীব্রতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেক প্রাণী-ই হাইবারনেশন বা শীত নিদ্রায় চলে যায়। এর মধ্যে রয়েছে কচ্ছপ, ব্যাঙ, সাপ, বাদুড়, কালো ভাল্লুক ইত্যাদি। কিছু অ্যাডাল্ট প্রজাপতিও শীত নিদ্রায় যায়।

৮। শীত থেকে বাঁচার জন্য কিছু প্রাণী শীত প্রধান অঞ্চল থেকে গরমের দিকে গমন করে। কিছু পাখি রয়েছে যারা দল বেধে মাইগ্রেশন করে থাকে, যেমন শীতলতম এলাকা থেকে গরম এলাকায় চলে যায়। বাদুড়, হরিণ, তিমি মাছ ইত্যাদি ঠান্ডা পানি থেকে গরম পানির দিকে চলে যায়।

মন্তব্য,
পরিশেষে বলা যায় যে, শীতকালে একদিকে যেমন পিঠাপুরি ও মুখরোচক ও নতুন নতুন শাকসবজি খাদ্য হিসাবে পাওয়া যায় অপরদিকে তীব্র শীতের কারণে অনেকেই কাতর হয়, এবং বিভিন্ন ধরনের অসুস্থ হয়। শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করতে হয় তা না হলে বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শীতকালীন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই প্রতিবেদনে আপনার যদি কোন গঠনমূলক পরামর্শ থাকে তবে কমান্ড বক্সে জানিয়ে রাখবেন। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url