নিম পাতার ভেজষ গুণবলি এবং নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

সম্মানিত পাঠক, আপনি কি নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতা সমূহ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে চাচ্ছেন, এই বিষয়ে গুগলে সার্চ করেও আপনার মনের মত ও সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না, তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এ সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তারিত তথ্য জানতে হলে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন এবং নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমার এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন এবং নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করেছি, চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক-

ভূমিকা

নিম গাছ আমাদের অতি পরিচিত বহু ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ বহুবর্ষজীবী একটি বৃক্ষ। এই নিম গাছের পাতা বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুনে ভরপুর হওয়ার জন্য আদিকাল থেকেই এর বেশ কদর রয়েছে। শুধু পাতায় নয় এর ফলের বিচিতে ও ঔষুধি গুন রয়েছে। নিম গাছের কাঠ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচার তৈরি হয়, এবং এই ফার্নিচারে কোন ধরনের পোকা লাগেনা এবং ফার্নিচার গুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়।

নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন 

সুস্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। শরীর সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে নিমপাতার ভূমিকা বা গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক এর হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিম পাতার যে সমস্ত উল্লেখযোগ্য গুনাগুন রয়েছে সেগুলো হল-

  • নিম এর বিচি থেকে তেল তৈরি হয়। এই তেলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ই ও ফ্যাটি এসিড থাকে। আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য এই তেল বেশ উপকারী।
নিমের ফল এবং বিচি
  • ত্বক সুরক্ষিত রাখার জন্য নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন, এতে মুখের ব্রণ ও ভালো হয়ে যায়। ত্বকে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে নিম পাতা বাটা বেশ কার্যকরী।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে এবং ধরে রাখতে নিমপাতার সাথে সামান্য পরিমাণে কাঁচা হলুদ বেটে ত্বকে লাগালে ওষুধের মতো এর কার্যকারিতা পাওয়া যায়।
  • নিমপাতার ডাল দাঁতন হিসাবে ব্যবহার করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁতের ফাঁকে জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোদ থাকলে তার দ্রুত দূর হয়ে যেতে পারে।
    নিম ডলার দাতন

  • হঠাৎ কোথাও কেটে গেলে, ছিড়ে গেলে অথবা পুড়ে গেলে, ক্ষতস্থানে নিম পাতার রস লাগিয়ে দিলে ভেজস ওষুধের মতো খুব দ্রুত কাজ করে,
  • মাথার চুলকানি এবং চুলের গোড়া শক্ত করার জন্য, মাথায় নতুন চুল গজানোর জন্য, নিম পাতার রস মাথায় লাগালে অভাবনীয় উপকার লক্ষ্য করতে পারবেন।
  • শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে নিম পাতা বেটে শরীরে লাগালে খুব দ্রুত এর কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায়।
  • নিয়মিত নিম পাতার রস অথবা নিম পাতার বিচি খেতে পারলে কোষ্ঠকাঠিন্যসহ লিভারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসে, রক্ত পরিশুদ্ধ হয়, শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের টক্সিন বের করে শরীরকে রোগ মুক্ত এবং সুস্থ রাখতে নিম পাতা রস খুবই কার্যকারী।

নিম পাতার উপকারিতা সমূহ

নিমপাতার বহু উপকারী দিক রয়েছে, এর উপকারিতা দিক বিশ্লেষণ করেই নিম গাছকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 21 শতকের বৃক্ষ বলে ঘোষণা দিয়েছে। নিম পাতার বহু উপকারিতা দিকগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা উল্লেখ করা হলো-

খোস পসড়া চুলকানিঃ 

খোস পসড়া চুলকানি দূর করতে হলে নিমপাতার ফুল এর পেস্ট বেশ ভালো কাজ করে। তাছাড়া নিমপাতা পেস্ট বানিয়ে বা শুকনা গুড়া করে সরিষার তেলের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে শরীরে ব্যবহার করলে চুলকানি এবং এ জাতীয় চর্মরোগ সারাতে কার্যকরী।


নিমপাতা ও কিছু কাঁচা হল একসাথে পেস্ট বানিয়ে আক্রান্ত স্থলে ব্যবহার করলে পুরাতন ক্ষত সারাতে খুব বেশি সময় প্রয়োজন হয় না, এক সপ্তাহের মধ্যে আরোগ্য লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।

রূপচর্চায় নিমপাতাঃ

রূপচর্চার ক্ষেত্রে বহুদিন আগে থেকেই নিমপাতা ব্যবহার হয়ে আসছে কারণ এটি একটি ভালো ময়েশ্চারাইজ হিসেবে কাজ করে, ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে, মাথার খুশকি দূর করতে সাহায্য করে, চুলের গোড়া শক্ত করতে ও মসৃণ করতে সাহায্য করে, নিম পাতা দিয়ে পানি গরম করে গোসল করলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।

উকুন বিনাশে নিমপাতাঃ

মাথার উকুন দূর করতে নিম পাতার ব্যবহার খুবই আরামদায়ক এবং জনপ্রিয়। নিম পাতার পেস্ট বানিয়ে সমস্ত মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে দিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, এইভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার করলে মাথার উকুন চিরতরে দূর হয়ে যাবে।

দন্ত রোগ সারাতে নিম পাতাঃ

নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করলে দাঁতের গোড়ার জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়, ফলে দাঁত সুস্থ ও সবল এবং মজবুত থাকে। নিমের পাতা অথবা নিমের ছাল গুড়া করে পাউডার তৈরি করে সে পাউডার দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত রোগ মুক্ত থাকে। এছাড়াও নিম পাতার নির্যাস পানিতে মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে গড়গড়া কুলি করলে দাঁতের পচন রক্ত পড়া ও মারি ব্যথা কমে যেতে সাহায্য করে।

রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে নিম পাতাঃ

 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। নিম পাতার রস রক্তনালীকে প্রসারিত এবং রক্ত সংবহনতন্ত্রকে উন্নত করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কয়েকটি নিমপাতা বেটে তিন থেকে চারটি গোলমরিচ পিষে পেস্ট বানিয়ে বা শরবত বানিয়ে নিয়মিত খেলে রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রনে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

ওজন কমানোর ক্ষেত্রেঃ

নীমের ফুল বেটে পেস্ট করে মধু ও লেবুর রস দিয়ে মিকচার করে প্রতিদিন খেতে পারলে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে অবাঞ্ছিত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এইভাবে তিন থেকে চার মাসে নিয়মিত ব্যবহার করলে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

জন্ডিস আরোগ্যে নিমপাতাঃ

জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিমপাতা ব্যবহার করা হয়। ক্ষেত্রে এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ নিমপাতার রস ও মধু মিশিয়ে প্রতিদিন বাসি পেটে পান করলে দুই এক সপ্তাহের মধ্যে সুফল পাওয়া যাবে ইনশাল্লাহ।

ভাইরাস জাতীয় রোগ আরোগ্যঃ

নিমপাতা একটি ভালো অ্যান্টি সেফটিক হিসেবে কাজ করে বিশেষ করে ভাইরাস জাতীয় রোগ চিকেন পক্স, হাম ও অন্যান্য চর্ম রোগের ক্ষেত্রে মহাঔষধ হিসেবে কাজ করে। নিমপাতা দিয়ে পানি গরম করে পরবর্তীতে ঠান্ডা করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলেও কিছুটা রোগ মুক্ত হওয়া সম্ভব।

নিম পাতার অপকারিতা সমূহ

প্রতিটা জিনিসেরই একটি ভালো দিক এবং একটি মন্দ দিক রয়েছে। আমরা ভালো দিকগুলি দেখে নিয়েছি, এখন কিছু ক্ষতিকর বা অপকারিতা সমূহ সম্পর্কে জেনে নিব।

এলার্জি রোগের ক্ষেত্রেঃ

এলার্জির ক্ষেত্রে মহা ঔষধ নিম পাতা হলেও কিছু কিছু ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তার ক্ষতির কারণ হয়ে যায়, যেমন কিছু কিছু লোকের ক্ষেত্রে নিম পাতা খেলে এলার্জি জাতীয় যেমন চুলকানি, ফলাভাব, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া এবং শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্যঃ

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিম পাতা খাওয়া মোটেই উচিত নয়, নিম পাতায় কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো গর্ভপাত ঘটানোর জন্য দায়ী, তবে ত্বকের উপরে ব্যবহার করা যাবে।

দানকারী মহিলাদের জন্যঃ

স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য নিম পাতা খাওয়া মোটেও উচিত নয়। এর ফলে নিম পাতার কিছু নির্যাস মায়ের বুকের দুধে প্রবেশ করে এবং তা শিশুর দেহে প্রবেশ করে ক্ষতির কারণ হতে পারে।

নিম্ন রক্তচাপঃ

নিম পাতার রস খেলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, তাই লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের নিম পাতা খাওয়া মোটেও উচিত নয়।

কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রেঃ

কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে নিমের পাতা বা নিমের ছাল এগুলো খাওয়া মোটেই উচিত নয়। কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে মিমের পাতা এড়িয়ে চলাই উচিত। তবে বাহ্যিক ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে।

পুরুষদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বঃ

পুরুষদের ক্ষেত্রে নিমপাতা খাওয়ার বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা অবশ্যই উচিত। কারণ মাত্রা অতিরিক্ত নিম পাতার রস খেয়ে ফেললে পুরুষদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

মন্তব্য,

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, নিমের পাতা বিভিন্ন রোগের একটি মহাঔষধ হিসেবে বহুকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। আমার এই প্রতিবেদনের মধ্যে নিমের পাতার বিভিন্ন ঔষুধি গুনাগুন এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরেছি, আশা করি এর থেকে আপনি উপকৃত হবেন। আমার এক প্রতিবেদনে কোন সংযোজন বিয়োজন আপনি প্রয়োজন বোধ করলে নিচে কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে জানাবেন। এ প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, সুস্থ থাকুন।।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url