বাংলাদেশের পর্যটন এলাকা এবং কক্সবাজারের সৌন্দর্য এবং সমুদ্র সৈকত
সম্মানিত পাঠক, বাংলাদেশের পর্যটন এলাকা এবং কক্সবাজারের সৌন্দর্য এবং সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে সঠিক এবং পুরোপুরি ধারণা পেতে চান, এ সম্পর্কে বিভিন্ন ভাবে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য চেষ্টা করছেন, সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না, তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ, মনোযোগের সহিত এই প্রতিবেদনটি পড়তে থাকুন।
আমার এ প্রতিবেদনের মধ্যে বাংলাদেশের পর্যটন এলাকা গুলোর বিভিন্ন স্থান এবং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এর সুন্দরতম স্থানগুলো সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। চলুন এবার প্রতিবেদনটি দেখে নিই-
ভূমিকা
পর্যটন এলাকার মধ্যে সমুদ্র সৈকত একটি অন্যতম। পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশেই রয়েছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত কক্সবাজার জেলায় রয়েছে বিশ্বের অন্যতম ও দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই সমুদ্র সৈকত টি অবিচ্ছিন্ন বালুময় সমুদ্র সৈকত এবং নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর।
কক্সেসবাজার শহর থেকে বদরমোকাম পর্যন্ত দীর্ঘ বিস্তৃত ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত অঞ্চল জুড়ে রয়েছে, এছাড়াও এখানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন রয়েছে। আমরা এবার জেনে নিব বাংলাদেশের পর্যটন এলাকা এবংকক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এর সৌন্দর্য সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।
বাংলাদেশের পর্যটন এলাকা সমূহ
বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের এই দেশ। সবুজ শ্যামলের, নদ নদী, খাল বিল, বন জঙ্গল, সমুদ্র সৈকত সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে বাংলাদেশে। দেশের পর্যটন এলাকা এবংকক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এর সৌন্দর্য বিশ্লেষণ করতে গেলেও আরো অনেক পর্যটন কেন্দ্রের কথা মনে পড়ে। পৃথিবীর মধ্যে বিখ্যাত এবং বাংলাদেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যটন এলাকাগুলো হল-
পর্যটন এলাকা বান্দরবানঃ
বাংলাদেশের পর্যটন এলাকার মধ্যে বান্দরবান একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র ।বান্দরবানের মধ্যে দর্শনীয় স্থান রয়েছে পাহাড়,নদী, ঝরনা, এবং সবুজের সমারহ।
পর্যটন এলাকা কক্সবাজারঃ
কক্সবাজারের মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত। এই সমুদ্র সৈকত কে ঘিরে বিভিন্ন বিদেশি এবং দেশি পর্যটকদের সমাগম হয় এখানে। উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় এবং পর্যটন এলাকার মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর ১২০ কিলোমিটার বেপি সর্ববৃহৎ কাদা মুক্ত এবং বালুময় সমুদ্র সৈকত।
পর্যটন এলাকা সিলেটঃ
সিলেটে কয়েকটি পর্যটন এলাকা স্থান রয়েছে এর মধ্যে জাফলং, রাতারগুল, বিছানাকান্দি, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রয়েছে চা বাগান এছাড়াও রয়েছে অনেক ছোট বড় বিল ও হাওর।
পর্যটন এলাকা সেন্ট মার্টিনঃ
সেন্ট মার্টিন এ উল্লেখযোগ্য দর্শনের স্থানগুলো মধ্য রয়েছে প্রবাল দ্বীপ, অনেকে নারিকেল জিঞ্জিরা, দারুচিনি দ্বীপ নামেও অনেকেই চিনে থাকেন। সমুদ্রে নীল পানি এবং নিরিবিলি পরিবেশ রয়েছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে।
পর্যটন এলাকা খাগড়াছড়িঃ
খাগড়াছড়িতে পর্যটন এলাকার মধ্যে রয়েছে রাবার বাগান, পাহাড়, নদী, আলুটিলা সুরঙ্গ, রিসাং ঝর্ণা ইত্যাদি।
পর্যটন এলাকা লালবাগ কেল্লাঃ
সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্ধে মুঘল আমলে লালবাগ কেল্লা স্থপিত। এখানে রয়েছে পরী বিবির মাজার, হাম্মাম খানা, দুর্গ, মসজিদ, দরবার গৃহ ইত্যাদি।
পর্যটন এলাকাচলনবিলঃ
বাংলাদেশের নাটোর পাবনা এবং সিরাজগঞ্জ এর মধ্যে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় বিল রয়েছে যা চরম বিন নামে পরিচিত। এই বিলটি পর্যটকদের কাছে বেশ সৌন্দর্যতম এবং আকর্ষণীয় হওয়ায় তা খুব জনপ্রিয়।
পর্যটন এলাকা মহাস্থানগড়ঃ
বগুড়ায় মহাস্থানগড়ে প্রাচীন পুরাকীর্তিটি অবস্থিত। মস্তান করে ১৫বর্ধনের রাজধানী ছিল। এটি করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তরাঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন এলাকা।
পর্যটন এলাকা ষাট গম্বুজ মসজিদঃ
সুলতানি আমলে খানজাহান আলী ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদে সাতটি গম্বুজ রয়েছে এবং নামাজের জন্য মসজিদটি ব্যবহার করা হয়।
পর্যটন এলাকা কুয়াকাটা সাগর কন্যাঃ
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত পটুয়াখালীতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত টি অবস্থিত যাকে কুয়াকাটা সাগরকন্যা বলে। এই কুয়াকাটা এমন একটা স্থান যেখানে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় খুব সুন্দর ভাবে উপভোগ করা যায়। এই অপরূপ দৃশ্যের জন্য সারাদেশ তথা সারা বিশ্বের কাছে একটি দৃষ্টিনন্দন স্পট ও বটে।
পর্যটন এলাকা সুন্দরবনঃ
সুন্দরবন সারা বিশ্বে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবনের জোয়ার ভাটা, বনাঞ্চল, পশু পাখি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার এগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
এ ছাড়াও দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে-নিঝুম দ্বীপ মনপুরা বিরিশিরি তাজহাট জমিদার বাড়ি সোনাদিয়া দ্বীপ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ছেঁড়া দ্বী প মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কান্তজির মন্দির স্বর্ণমন্দির চিম্বুক পাহাড় স্বল্প বিহার আহসান মঞ্জিল রামসাগর কুমিল্লার কোটবাড়ি বরিশালের লাল শাপলা বিল ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এর সৌন্দর্য
কক্সবাজার হল সারা পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যেখানে কোন কাদা নাই আছে শুধু বালুকাময় সৈকত। এর অপরূপ সৌন্দর্য এতই মনমুগ্ধকর যা সারা বিশ্বের মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। প্রায় সারা বছরই এর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা আসেন।
শীত, বর্ষা বসন্ত, গ্রীষ্ম প্রতিটা ঋতুতেই এর চেহারা বদলায়, সকালে একরকম, বিকালে অন্যরকম, দুপুরে আবার অন্যরকম, এখানে প্রতিদিন অসংখ্য দেশি এবং বিদেশী পর্যটক ভ্রমনে আসেন।এবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা করব। নিম্নে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন অংশগুলো আলোচনা করা হলোঃ
কক্সবাজারের সৌন্দর্য লাবনী পয়েন্টঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কথা উঠলেই লাবনী পয়েন্ট বা সি-বিচ সর্বপ্রথম মনের চোখে দৃষ্টিগোচর হয়। কক্সবাজারের কলাতলী সি বিচ রোডে নেমে খুব নিকটে রিক্সা অথবা পায়ে হেঁটে যাওয়া যাবে এই বিচে। কক্সবাজার শহরের নিকটেই অবস্থিত হওয়ার কারণে লাবনী সি বিচ কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
এখানে গড়ে উঠেছে ঝিনুকের বিশাল মার্কেট, এছাড়াও মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন প্রকৃতির দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে সৌন্দর্য প্রিয় মার্কেট, এখানকার ছোট বড় দোকান পর্যটকদের বেশআকর্ষণ করে থাকে।
কক্সবাজারের সৌন্দর্য কলাতলী পয়েন্টঃ
কক্সবাজারের আরেকটি আকর্ষণীয় কেন্দ্র হল কলাতলী বিচ। এটি কক্সবাজারের ভেতরে অবস্থিত, নানা বয়সের মানুষ ভ্রমণ করার জন্য এখানে আসেন, এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ, সমুদ্র গোসল করতে, বিচে হাটা হাটি করতে, সকল বয়সের মানুষকেই ভালো লাগে।
এখানে বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, নানা স্বাদের খাবার এখানে পাওয়া যায়। চট্টগ্রামগামী পরিবহন শহরের এই কলাতলী পয়েন্ট দিয়েই প্রবেশ করে থাকে।
কক্সবাজারের সৌন্দর্য সুগন্ধা পয়েন্টঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যের মধ্যে আরেকটি রয়েছে সুগন্ধা পয়েন্ট। কলাতলী পয়েন্ট থেকে উত্তর দিকে এটি অবস্থিত, এখানে রয়েছে আকর্ষণীয় একটি জনপ্রিয় বার্মিজ মার্কেট, এছাড়াও সুগন্ধা পয়েন্টে আছে ঝুলন্ত রেস্টুরেন্ট যা পর্যটকদের কে আকর্ষণ করে।
কক্সবাজারের সৌন্দর্য দরিয়ানগর সৈকতঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আরেকটি সৌন্দর্য প্রিয় স্থান হল দরিয়া নগর। হিমছড়ি জাতীয় পার্কের নিকটে অবস্থিত, এর ভিতর দিয়ে জলপথ প্রবাহিত হয়ে থাকে, প্যারাসেলিং এর জন্য এটি পর্যটকদের জন্য কাছে আকর্ষণীয়।
কক্সবাজারের সৌন্দর্য হিমছড়িঃ
হিমছড়ি পর্যটন কেন্দ্রটি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে কিছুদূর অর্থাৎ প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে। হিমছড়ি পর্যটন কেন্দ্রটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং নির্জন ও বটে। এখানে একটি আনন্দর বিষয় হলো এই পর্যটন কেন্দ্রটি যতটা না সুন্দর তার চাইতে বেশি সুন্দর সেখানে যাওয়ার রাস্তাটি অর্থাৎ কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত রাস্তা।
এই রাস্তা দুই পাশে অপরূপ দৃশ্য সম্ভবত দেশের আর কোথাও পাওয়া যাবে না। এটি পর্যটকদের বেশ আকর্ষণীয় করে তোলে, এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল ক্রিসমাস ট্রি, ইদানিং এখানে বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পট তৈরি হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে ওয়েবসাইট ভিজিট করুনঃ হাসি অনলাইন আইটি
কক্সবাজারের সৌন্দর্য ইনানী সৈকতঃ
ইনানী সৈকত কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দক্ষিণ অবস্থিত। এখানে রয়েছে সবুজ ও কালো রংয়ের প্রচুর পরিমাণে প্রবাল পাথর। ইনানী সৈকত কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার মধ্যে অবস্থিত।
কক্সবাজারের সৌন্দর্য টেকনাফ সৈকতঃ
টেকনাফ সৈকত কক্সবাজারের অন্য সৈকত থেকে একটু ভিন্নতর। এটি টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত। টেকনাফ সৈকতে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ দেখা যায়। এই সৈকতের মধ্যে শ্যামলাপুর সৈকত, শীলাখালি সৈকত, হাজাম পাড়া সৈকত উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও বাংলাদেশের পর্যটন এলাকা গুলোর মধ্যে দেখা যায়, সোনাদিয়া দ্বীপ, বৌদ্ধ মূর্তি রামু , মহেশখালী দ্বীপ, আদিনাথ মন্দির, ডোলা হাজারা, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইত্যাদি।
মন্তব্য
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, এতক্ষণ ধরে আমরা বাংলাদেশের পর্যটন এলাকা এবংকক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এর সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা করে জেনেছি যে,পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ ও অক্ষন্ডিত এবং বালুময় সমুদ্র সৈকত টি বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত। প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে দেশের সেরা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url