সার্বজনীন পেনশন স্কিম কাদের জন্য এবং এর সুবিধা সমূহ

সার্বজনীন পেনশন স্কিম এবং এর সুবিধা সমূহ গুলো কি, এই স্কিম কাদের জন্য, কোন শ্রেণীর লোক এই স্কিমের আওতায় আসতে পারে,পেনশন স্কিম কোথায় করবেন,কতদিন ধরে চালাতে হয়, কতদিন ধরে সুবিধা পাওয়া যায়, এ সম্পর্কিত তথ্য গুগলে সার্চ করেও সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না? তাহলে আপনার জন্য আমার এই প্রতিবেদনটি অতি প্রয়োজন।

সার্বজনীন পেনশন স্কিম এবং এর সুবিধা সমূহ

আমার এই প্রতিবেদনে সার্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ পূর্বক,কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। চলুন আমরা পেনশন স্কিম কোথায় করবেন, সার্বজনীন পেনশন স্কিম গুলোর সুবিধা সমূহ সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জেনে নিই।

ভূমিকা

পেনশন হলো অবসরকালীন ভাতা। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু অনুযায়ী একজন ব্যক্তি ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকে। সরকারি চাকুরিজীবীদের ৬০ বছর বয়সে অবসরে পাঠানো হয়ে থাকে। সরকারি চাকরিজীবীরা চাকরি কালীন সময়ে তাদের বেতনের কিছু অংশ জমা করে রাখেন।

অবসরকালীন সময়ে উক্ত জমাকৃত টাকার বিনিময়ে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে থাকেন। এখানে উল্লেখ্য যে, একমাত্র সরকারি চাকুরিজীবীরাই এই ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকেন। বেসরকারি, আধা সরকারি, প্রাইভেট চাকুরিজী্বী, এবং সাধারণ জনগণ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া যেমন-বেসরকারি, আধা সরকারী, প্রাইভেট চাকরিজীবী, এবং সাধারণ জনগণ যারা পেনশন সুবিধা পান না, তাদেরকে পেনশন সুবিধায় আনার প্রক্রিয়ায় হল সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। ২০২৩ ইং সাল থেকে বাংলাদেশে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা বা স্কিম চালু হয়েছে। 

সার্বজনীন পেনশন স্কিম কাদের জন্য প্রযোজ্য

সরকারি চাকরিজীবী ব্যতীত সাধারণ জনগণ যাদের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এবং বেসরকারি,আধা সরকারি,স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান,প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা সার্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আসতে পারে। সার্বজনীন পেনশন স্কিম এবং এর সুবিধা গুলো আলোচনা করতে গিয়ে

 দেখা যায় যে,যে সমস্ত বাংলাদেশের নাগরিক পেনশন এর আওতার বাইরে রয়েছেন তাদেরকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করে এই পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যেমনঃ প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা, এবং সমতা। নিম্নে এগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

সার্বজনীন পেনশন স্কিম (প্রবাস) :

 সার্বজনীন পেনশন স্কিম এরমধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হলো প্রবাস স্কিম । যারা বাংলাদেশের নাগরিক কিন্তু বিদেশে অবস্থান করেন বা প্রবাসে রয়েছেন, এবং যাদের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে তারা এই স্কিমের আওতায় আসতে পারবে। 

এই স্কিম চালু করার জন্য প্রতিমাসে ৫০০০ টাকা,৭৫০০ টাকা এবং থেকে ১০ ০০০ টাকা যেকোনো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মাসিক চাঁদা প্রদান করতে হবে। মেয়াদ শেষে অর্থাৎ.৬০ বছর বয়স পূর্ণ হলে,বয়স এবং মেয়াদ এর ভিত্তিতে ৭৬৫১ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা পর্যন্ত কোন ব্যক্তি পেতে পারেন।

সার্বজনীন পেনশন স্কিম (প্রগতি ) ঃ

 সার্বজনীন পেনশন স্কিম এর মধ্যে আরেকটি হল প্রগতি স্কিম। যারা বেসরকারি চাকরি করেন সেই সকল কর্মচারীদের জন্য, এই প্রকার স্কিমের অন্তর্ভুক্ত। এই স্কিমের জন্য কোন ব্যক্তির বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং তিনটি অংশে নিতে পারবে।

যেমন ৫০০০ টাকা ৩০০০ টাকা এবং ২০০০ টাকা মাসিক চাঁদা দিতে পারবে। এই স্কিমের ক্ষেত্রে মোট চাঁদার অর্ধেক কর্মচারী নিজে এবং বাকি অর্ধেক তার প্রতিষ্ঠান বহন করবে। এই স্কিমের আওতায় কোন ব্যক্তি ৩০৬০ টাকা থেকে শুরু করে, সর্বোচ্চ এক লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা মাসিক টেনশন পেতে পারেন।

সার্বজনীন পেনশন স্কিম (সুরক্ষা) ঃ

 সার্বজনীন পেনশন স্কিম এরমধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ হলো সুরক্ষা স্কিম। যে সমস্ত নাগরিক কোন চাকরি করেন না,তারা এই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। যেমন কৃষি কাজ করেন,ব্যবসা-বাণিজ্য করেন,ছোট ছোট উদ্যোক্তা,ফ্রিল্যান্সার মোটকথা স্বনির্ভর ব্যাক্তিরাই এই স্কিমের আওতায় আসবেন,এবং বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।

এই ধরনের স্কিমে চাঁদার হার চার রকমের হয়ে থাকে। যেমন মাসিক চাঁদা ১০০০ টাকা ২০০০ টাকা ৩০০০ টাকা ও ৫০০০ টাকা। এই স্কিমের আওতায় কোন ব্যক্তি সর্বনিম্ন ১৫৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা পর্যন্ত মাসিক পেনশন পেতে পারেন।

সার্বজনীন পেনশন স্কিম (সমতা) ঃ

 সার্বজনীন পেনশন স্কিম  এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ স্কিম হল সমত  স্কিম। যে সমস্ত নাগরিক ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে বয়স রয়েছে, এবং যারা দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে, অর্থাৎ এখনো যাদের মাসিক আয় ৬০ হাজার টাকার মধ্যে,তারাই এই স্কিমের আওতাভুক্ত হবে। 

এই স্কিমের চাঁদার হার একটি ১০০০ টাকা। এই ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে দিতে হবে ৫০০ টাকা এবং সরকার দিবে ৫০০ টাকা। বয়স ভেদে কোন ব্যক্তি ১৫৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার ৪৯৫ টাকা মাসিক পেনশন পেতে পারেন।

সার্বজনীন পেনশন স্কিম কোথায় করবেন

এ সার্বজনীন পেনশন স্কিম এবং এর সুবিধা সমূহ এতক্ষণ ধরে আমরা এটি আলোচনা করেছি।এখন প্রশ্ন হল পেনশন স্কিম কোথায় করবেন? সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে হলে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। ইউপেনশন নামক একটি ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। কয়েকটি ধাপে এবং কয়েকটি


 ফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হবে। যেমন ব্যক্তিগত তথ্য, স্কিমের তথ্য এবং ব্যাংকের তথ্য।যথাযথভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে সাবমিট করতে হবে।প্রতি মাসে মাসিক কিস্তির টাকা নির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা করতে হবে। মনে রাখতে হবে,বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, ইন আইডি কার্ড অনুযায়ী বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।

কত টাকা জমা দিলে কত টাকা পেনশন পাওয়া যাবে

পেনশন হল কোন ব্যক্তির অবসরকালীন ভাতা। বাংলাদেশ সরকার,সরকারি চাকরিজীবী দের ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীর লোকের জন্য পেনশন স্কিম চালু করেছেন। সার্বজনীন পেনশন স্কিম এবং এর সুবিধা সমূহ এর মধ্যে দেখা যায়, বিভিন্ন স্কিমের সুযোগ-সুবিধা বিভিন্ন রকম এবং চাঁদার পরিমাণও বিভিন্ন রকম। মাসিক চাঁদা প্রদানের পরিমাণ এবং পেনশন প্রাপ্তির পরিমাণ ছক আকারে উল্লেখ করা হলো-

সার্বজনীন পেনশন প্রবাস স্কিমঃ

এই স্কিম বাংলাদেশী নাগরিক যারা প্রবাসে রয়েছেন তাদের জন্য।
    সার্বজনীন পেনশন স্কিম এর তালিকা

সার্বজনীন পেনশন প্রগতি স্কিমঃ 

বাংলাদেশের নাগরিক এবং বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এই স্কিম

 সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রগতির তালিকা

সার্বজনীন পেনশন সুরক্ষা স্কিমঃ 

বাংলাদেশের নাগরিক স্ব- উদ্যোক্তা এবং স্বনির্ভরশীল ব্যক্তিদের জন্য এই স্কিম। এই স্কিমের চাঁদার পরিমাণ ও পেনশনের পরিমাণ নিম্নরূপ
  সার্বজনীন পেনশন স্কিম সুরক্ষার তালিকা

সার্বজনীন পেনশন সমতা স্কিমঃ 

যে সমস্ত বাংলাদেশের নাগরিক দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে,তাদের জন্য এই স্কিমটি। এই স্কিমে চাদার পরিমাণ একটি তবে, বয়স ভেদে পেনশনের পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে।
  

 সার্বজনীন পেনশন স্কিম এবং এর সুবিধা সমূহ

পেনশন হলো বৃদ্ধ বয়সে একটি আস্থার ভিত্তি,ভবিষ্যৎনিধি,সহজ ভাষায় অবসরকালীন ভাতা। সার্বজনীন পেনশন স্কিমের বিভিন্ন সুবিধা গুলো নিম্নে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো-
  • পেনশন দাতাকে একটি ইউনিক নাম্বার দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে তার জমাকৃত টাকার তথ্য টাকার ব্যালেন্স এগুলো সে নিজেই চেক করতে পারবে।
  • সার্বজনীন পেনশন স্কিমের গ্রান্টেড সরকার নিজেই, যার জন্য এখানে ভয় বা সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
  • পেনশন দাতা ৬০ বছরের পরে আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত,যতদিন বেঁচে থাকবেন মাসিক পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
  • আল্লাহ না করুক পেনশন গ্রহীতা,যদি ৭৫ বছর বয়সের আগে মারা যায়, তাহলে তার নমিনি ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত মাসিক পেনশন ভোগ করতে পারবেন।
  • মাসিক চাঁদা প্রদানকারী ব্যক্তি যদি ১০ বছরের আগে মারা যায়, তাহলে তার জমাকৃত অর্থ মুনাফা সহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে ভিজিট করুনঃ  হাসি অনলাইন আইটি

  • পেনশন স্কিমের মাসিক চাঁদা প্রদানকারী ব্যক্তি মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে টাকার প্রয়োজন হলে, তার জমাকৃত টাকার ৫০% লোন হিসাবে গ্রহণ করতে পারবে।
  • পেনশন স্কিমে জমাকৃত অর্থ কর রিয়াদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং মাসিক পেনশন গ্রহণকারী অর্থ ও আয়কর মুক্ত থাকবে।
  • পেনশন স্কিম নিবন্ধন করার পরে মাসিক চাঁদার টাকা, মোবাইল ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ডের, এবং অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা করার সুযোগ রয়েছে।
  • অনলাইনে নির্দিষ্ট ঠিকানায় www. upension.gov.bd পেনশন স্কিন সম্পর্কিত তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে।
  • তহবিলে জমাকৃত অর্থ,জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ তাদের নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে।এবং রিটার্ন এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা করবে।
  • দরিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী নাগরিকদের ক্ষেত্রে, সরকার চাঁদা প্রধানকৃত টাকার অর্ধেক ব্যয় বহন করবে।

মন্তব্য

পরিশেষে আমরা বলতে পারি,  সার্বজনীন পেনশন স্কিম এবং এর সুবিধা সমূহ এবং পেনশন স্কিম কোথায় করবেন এ সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে জানা যায়, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি প্রকল্প। এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে, 

বৃদ্ধকালীন সময়ে অনেক ব্যক্তিদের কে বৃদ্ধাশ্রম থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ থাকবে।এটি বাংলাদেশ সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। প্রতিটি নাগরিকেরই এই পেনশন স্কিনের আওতায় আসা উচিত বলে আমার মনে হয়।

আমার এ প্রতিবেদনটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, এবং তথ্যবহুল মনে হয়,তাহলে একটা শেয়ার করবেন।এর ফলে অনেকেই এই তথ্যগুলো জানার সুযোগ পাবে। আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার এ প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url