পান পাতার ঔষধি গুনাগুন এবং খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ
প্রিয় পাঠক, পান পাতার ঔষধি গুনাগুন এবং খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি বিস্তারিত তথ্য জানতে চান,এর সম্পর্কে গুগলে অনেক সার্চ করেও সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না, তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি, কারণ এখানে পান পাতার উপকারিতা এবং পান খাওয়ার অপকারিতা, পান পাতা ও মধুর কার্যকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়াও এই পোস্টে পান পাতার পুষ্টিগুণ ,পান পাতা ও মধুর কার্যকারিতা, কালোজিরা, মধু ও পান পাতার উপকারিতা সমূহ, পান তুলনামূলক দেশী খেলে কি ধরনের প্রভাব পড়ে এগুলো সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, চলুন এগুলো জেনে নিই।
ভূমিকা
পান এক প্রকার গুল্মজাতীয় গাছের পাতা। পূর্বে আরবগন পানকে তাম্বুল নামে অভিহিত করত। নিঃশ্বাসে ফ্রেশ ও সুগন্ধি আনয়ন করতে, জিহ্বা ও ঠোঁট লাল করার জন্য মানুষ পান খেত। বাংলাদেশের ঐতিয্যগত ভাবে সামাজিক রীতি,ভদ্রতা এবং আচার আচারনের অংশ হিসাবে পানের ব্যবহার চলে আসছে।
অনুষ্ঠানাদিতে পান পরিবেশন দ্বারা প্রস্থানের ইংগিত বোঝায়। প্রাচিন অভিজাত জনগোষ্ঠির মাঝে পান তৌরি এবং তা সুন্দর ভাবে পান দানিতে সাজানো লোকজ শিল্প হিসাবে স্বীকৃতি পেত।
পান পাতার পুষ্টিগুণ
পান পাতা অথবা পান পাতার রসে বিভিন্ন রকমের পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনএ, রিবোফ্লাভিন ও ক্যালসিয়ামের মত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের সমাহার এই পান পাতাতে। যেহেতু পান একটি সুগন্ধযুক্ত লতা, তাই আপনি সহজেই এটিকে আপনার বাড়িতে একটি শোভাময় উদ্ভিদ হিসাবে জন্মাতে পারেন এবং সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য অর্জন করতে পারেন।
পানের রস কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল এবং ভিএলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিতে সক্ষম পান পাতার রস। পানের রসের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক বিভিন্ন রকমের উপাদান।
পান পাতা ও মধুর কার্যকারিতা
আমরা এবার পান পাতা ও মধুর কার্যকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই। পান এবং মধু একত্রে প্রতিদিন নিয়ম করে খেলে সহবাসের অক্ষমতা বা দুর্বলতা থাকলে তা দূর করতে সক্ষম। মধু দিয়ে পান খেলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি হয় এবং সহবাস করার ক্ষেত্রে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এই ক্ষেত্রে প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে আপনাকে পানের সাথে মধু দিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে। মনে রাখতে হবে পানের রস কোনোভাবেই ফেলে দেওয়া যাবে না।
কিভাবে পানের সাথে মধু খাওয়া যায় বা মধু দিয়ে পান হওয়া যায় তা আমরা অনেকেই জানি না। কিভাবে মধু দিয়ে পান খেতে হয় এই বিষয়গুলো আমরা এখন জানবো। বিভিন্ন উপায়ে পান পাতা থেকে রস তৈরি করতে হবে। এক টেবিল চামচ পান পাতা রসের সাথে 10 থেকে 12 ফোঁটা মধু দিয়ে মিশিয়ে মিক্সচার করে তা পান করবেন।
রাতে খাবারের পর এই পানের রস এবং মধু একত্রে মিশিয়ে ঘুমানোর আগে খেয়ে নিতে হবে, প্রতিদিন নিয়মিত এইভাবে খেলে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে পরিপূর্ণ সফলতা পাওয়া যায়।
কালোজিরা, মধু ও পানের উপকারিতা
পান পাতার উপকার আলোচনা করতে গেলেই কালোজিরা, মধু ও পানের উপকারিতা সমূহ চলে আসে।পান হজম বৃদ্ধি সহায়তা করে ৷ গলার সমস্যায় পান খুব উপকারী ৷ আওয়াজ পরিস্কার করতে পান সাহায্য করে৷রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রন করতে পান সাহায্য করে ৷
পান খেলে মুখে রুচি ফিরে আসে। হার্টবিট নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত পান খেলে পেট ক্লিয়ার থাকে। মধু দিয়ে পান খেলে সর্দি-কাশি উপশম হয়। সর্দি-কাশি নিয়ন্ত্রণের জন্য পানের সঙ্গে গোলমরিচ ও লবঙ্গ পিষে মিশিয়ে দিলে সবচাইতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়াও মুখের ঘা এর ক্ষেত্রে কর্পূর দিয়ে পান খেলে উল্লেখযোগ্য ফলাফল দ্রুত লক্ষ্য করা যায়।
পান খাওয়ার ফলে মুখে যে লালার সৃষ্টি হয় তা পাচন শক্তি বৃদ্ধি করে ৷ দাঁতের গোড়ায় পুচ জমা হলে সেখানে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে এক গ্লাস পানির মধ্যে দুই থেকে তিন চামচ পানির রস মিশিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমা হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া অনেকের কানে পুঁজ জমে ও কান পেকে যায় এক্ষেত্রে পানের রস গরম করে পরিমাণ মতো বা দুই এক ফোঁটা প্রয়োগ করলে তা উপশম হয়।
মাথায় খুশকি হলে পানের পাতা বেটে মাথায় মাখলে এবং কিছুক্ষণ পরে ধুয়ে ফেলে দিলে মাথার খুকশি কমে যাবে। নিয়মিত এবং পরিমান মত পান খেলে মুখে দুর্গন্ধ দূর হয়। তীব্র মাথা ব্যাথা হলে পানের রস দুই থেকে তিন ফোটা নাকে দিলে মাথা ব্যথা কমে যাবে।
পান পাতার উপকারিতা
পান পাতার উপকারিতা গুলো জেনে নিই-
১।পান হজমে সাহায্য করাঃ
পান খেলে লালাগ্রন্থি নিঃসরন বেড়ে যায়। লালার মধ্যে থাকা বিভিন্ন এনজাইম খাদ্যকে কণায় ভাংতে সাহায্য করে, যার ফলে হজম ভালো হয়।
২।পান পাতা মুখের দুর্গন্ধ দুর করাঃ
খাবার গ্রহনের ফলে খাদ্য কনা মুখের ভিতরে থেকে যায়,ফলে সেখানে ব্যকটেরিয়ার উপস্থিতিতে দুর্গন্ধের সৃস্টি হয়। পানের রস এন্টিসেটটিক হিসেবে কাজ করে এবং নিয়মিত পান খেলে মুখে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর হাত থেকে রক্ষা করে।
৩। পান পাতা যৌন শক্তি বৃদ্ধি করাঃ
এটি একটি পুরানো ধারনা,তবে কার্যকর। নিয়মিত পান খেলে যৌনশক্তি উন্নত করে। প্রাচীনকাল থেকেই নতুন বিবাহিত দম্পতিরা ঘন ঘন পান খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতেন।
৪। পান পাতা জন্ম রোধ করেঃ
পান গাছের শিকড়ের রস প্রতিদিন বাসি পেটে খেলে মহিলাদের গর্ভধারণ রোধ করে। অনেক দেশের গবেষক এটা প্রমাণ পেয়েছেন।
৫। পান পাতা উকুন মারেঃ
অভাবনীয় হলেও সত্য যে পানের পাতার রস মাথার উকুন তার সহ্য করতে পারে না। যাদের মাথায় উকুন রয়েছে পান পাতা পিষে রস বানিয়ে মাথায় ব্যবহার করলে মাথা থেকে জাদুর মত পালিয়ে যাবে।
৬। পান পাতা ফোঁড়া ফাটায়ঃ
পান পাতা ভালো এন্টিসেপটিভ হিসেবে কাজ করে। কারো শরীরে ফোঁড়া জাতীয় রোগ হলে তা পান পাতার তেল তেলে অংশটি ফোঁড়ার উপরে লাগিয়ে দিলে ফোড়া দ্রুত পেকে ফেটে যায়। এক্ষেত্রে পানের সাথে গরম ঘি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৭। পান পাতা কান পাকা সারায়ঃ
পান পাতার রস কান পাকা সারাতে সহায়তা করে থাকে। এই ক্ষেত্রে পান পাতা পিষে রস বানিয়ে কানের ভিতরে পরিমাণ মত বা দুই এক ফোঁটা ব্যবহার করলে উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায়।
৮। পান পাতা চর্মরোগ সারায়ঃ
দেহের কোথাও চুলকানি, পঁচড়া, দাউদ হলে, সেখানে পান পাতার রস কয়েকদিন লাগিয়ে দিলে তা দ্রুত সেরে যায়।
৯। পান পাতা আঁচিল দুর করেঃ
শরীরের কোথাও আচিল হলে, তার ওপর পান পাতা রস বানিয়ে কয়েক দিন লাগালে আচিল ধিরে ধিরে খসে পড়বে। সেখানে আর আচিল হবে না।
১০। পান পাতা ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করেঃ
এক গবেষনায় দেখা গেছে, পানের রস রক্তে চিনির পরিমান নিয়ন্ত্রন করতে পারে। ফলে ডায়াবেটিকস প্রতিরোধে সহায়ক।
১১। পান পাতা সর্দি বের করেঃ
বুকের ভিতর কফ,সর্দি শ্লেষ্মা হলে পান পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে তা কার্যকারী ফলাফল পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে বুকের জমাকৃত কফ বেরিয়ে যায়।
১২। পান পাতা মাথা ব্যাথা দুর করেঃ
মাথাব্যথা রোধ করার জন্য পান পাতা এবং এর রস বেশ ভালো কাজ করে থাকে। মাথাব্যথার ক্ষেত্রে পান পাতা বেটে তা কপালে লাগিয়ে দিলে দ্রুত উপশম হওয়া সম্ভব।
১৩। পান পাতা ক্ষত ও ব্যাথা সারায়ঃ
পানের রস বেদনা নাশক ও ক্ষত সারানোর জন্য ঔসুধ হিসাবে কাজ করে। কোথাও ব্যাথা হলে পান বেটে মলমের মত সেখানে লাগালে দ্রুত ব্যাথা কমে যায়। আর শরীরের ভিতরে ব্যাথা হলে পানের রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
১৪। পান পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করেঃ
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রানের ভূমিকা অপরিসীম। নিয়মিত পান খেলে হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়। এক্ষেত্রে প্রতিদিন দুইটি করে পান খাওয়া উচিত।
১৫। পান পাতা ঠান্ডা লাগা দুর করেঃ
শরীরের ঠান্ডা লাগা দূর করতে পান পাতা চমৎকার কাজ করে। এ ক্ষেত্রে পানের সাথে কিছু গোল মরিচের গুঁড়া ও ছোট কয়েক পিস আদা একসঙ্গে চিবিয়ে খেলে দ্রুত ঠান্ডা লাগা থেকে উপশম হওয়া সম্ভব।
১৬। পান পাতা ক্ষুধা বৃদ্ধি করেঃ
পানের রস হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সম্ভব যার জন্য দ্রুত হজম হয় এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। তাই নিয়মিত প্রতিদিন পান খেলে ক্ষুধা মন্দা দূর করে খোদা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
১৭। পান পাতা ক্যান্সারের ঝুকি কমায়ঃ
পান পাতায় আছে চমৎকার এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের ঝুকি কমায় ও ক্যান্সারের রোগের জীবানু সৃস্টি প্রতিরোধ করে।
১৮। পান পাতা এন্টিসেপটিকের কাজ করেঃ
পান পাতায় পলিফেনল বিশেষত চাভিকল নামক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা জীবানুর বিরুদ্ধে চ কাজ করে,এ ছাড়া ও পান পাতার রস ফোলা বন্দ করে ব্যাথা ও উপসম হয়।
এতক্ষণ ধরে আমরা পান পাতার উপকারিতা সমূহ আলোচনা করেছি এইবার দেখে নিব অতিরিক্ত পান খেলে কি হয়।
অতিরিক্ত পান খেলে কি হয়
অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়, অতিরিক্ত পান খেলে পানের সাথে যে মসলাগুলো রয়েছে সেগুলো আমাদের প্রচুর ক্ষতি করে থাকে, যেমন দাঁতে কালো দাগ রাখতে পারে,
পানের কোনাগুলো দাঁতের ফাঁকে লেগে থেকে জীবাণু সৃষ্টি হতে পারে, অতিরিক্ত পান খেলে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন রকমের সমস্যা হতে পারে যেমন নিউরোলজিক, কার্ডিওলজিক, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টনাল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। পানে অতিরিক্ত ক্যাফিন থাকায় রক্তচাপ বাড়তে পারে, অতিরিক্ত পান খেলে পচনের সমস্যা হতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
অতিরিক্ত পান খেলে সমাজে দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত এবং পরিমাণ মতো পান খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।পান পাতার উপকারিতা এবং পান খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানতে গিয়ে আমরা জেনে নিয়েছি অতিরিক্ত পান খেলে কি হয়।
পান পাতার অপকারিতা
পান খাওয়ার যেমন উপকারিতা আছে, সেই রকম কিছু অপকারিতা ও রয়েছে, তবে পানের চেয়ে তার মসলাতে ক্ষতি সাধন হয় তুলনামূলক বেশি। যেমন-
১। আতিরিক্ত চুন দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি করে।
২। পানের সাথে জর্দা মারাত্মক ক্ষতি কর।
৩। খয়ের ফুসফুসে ক্যানসার সৃষ্টিতে সহয়তা করে।
৪। অতিরিক্ত সুপারি যৌন শক্তি কমিয়ে দেয়।
৫। অতিরিক্ত পান খেলে মুখের এবং চোখের রোগ হতে পারে।
৬। সাধারনত শিশু ও গর্ভবতি মহিলাদের পান খাওয়া ক্ষতি কর।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, আমরা এতক্ষণ ধরে যা আলোচনা হয়েছে তা থেকে পান পাতার উপকারিতা এবং পান খাওয়ার অপকারিতা,এবং পান পাতা ও মধুর কার্যকারিতা সমূহ সম্পর্কে, আশা করি নির্ভরযোগ্য তথ্য পেয়েছেন। পানের বহু গুনাগুন থাকলেও অতিরিক্ত বা মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। এ বিষয়ে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকা উচিত।
আমার এই পোস্টে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে ,তাহলে শেয়ার করুন আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিত মহল এই বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। এই পোস্টটি এতক্ষণ ধরে ধৈর্য সহিত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url