নবজাতক শিশুর শীতকালীন রোগ, যত্ন ও মায়ের করণীয়
সম্মানিত পাঠক, আপনি কি নবজাতক শিশুর শীতকালীন যত্ন ও মায়ের করণীয়, নবজাতক শিশুর জন্মের পর করণীয় এগুলো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, গুগলে অনেক সার্চ করেও নবজাতক শিশুর কি ধরনের যত্ন, শীতকালীন যত্ন ও মায়ের করণীয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাচ্ছেন না? তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের এই প্রতিবেদনে নবজাতক শিশুর জন্মের পর কি ধরনের করণীয়, নবজাতক এর যত্ন ও পরিচর্যা, সদ্যজাত শিশুর ওজন, শিশুর অসুস্থতার লক্ষণ, নবজাতকের অসুস্থতার কারণ, নবজাতক শিশুর শীতকালীন যত্ন সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি, চলুন এগুলো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
ভূমিকা
একজন শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে একজন মায়ের ও জন্ম হয়ে থাকে। শিশু যেরকম পৃথিবীতে নতুন, ঠিক মা ও সেরকম নতুন, এজন্য একজন মাকে নবজাতক শিশুর জন্য শীতকালীন যত্ন ও মায়ের কি ধরনের করণীয় রয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করতে হবে। তবে কোন শিশু যদি মাতৃগর্ভে ৩৭ সপ্তাহ পর্যন্ত অর্থাৎ নয় মাস পূর্ণ হওয়ার পরে জন্মগ্রহণ করে,
সেই ক্ষেত্রে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি। জন্মের পর থেকে দুই মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের সাধারণত নবজাতক বলা হয়। কিন্তু চার বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিশেষ যত্ন রাখা প্রয়োজন, চলুন এবার আমরা জেনে নেই নবজাতক শিশু শীতকালীন যত্ন ও মায়ের করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
নবজাতক শিশুর জন্মের পর করণীয়
এইবার জেনে নিই, নবজাতক শিশুর জন্মের পর করণীয় গুলো। জন্মের পরপর প্রথম এক ঘণ্টা শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়, শিশুর জন্মের পরেই তার মায়ের শাল দুধ খাওয়াতে হবে, এটি টিকা হিসেবে কাজ করে, এটি বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,
শরীরের যথেষ্ট শক্তিযোগায়। শাল দুধ খাওয়ানো হলে জন্ডিসহ আর অন্যান্য রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। জন্মের পর পরে শিশুকে নরম ও পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার করে নিতে হবে। জন্মের পরপর তাকে গোসল না করনাই উত্তম, কমপক্ষে তিন দিন অপেক্ষা করা উচিত। শিশুর ওজন নিতে হবে।
নবজাতকের ওজন আড়াই কেজির উপরে হলে সাধারণত স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেওয়া যায়, এর কম ওজন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নবজাতককে জন্মের কিছুক্ষণ পর তার মুখের মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য অর্থাৎ মধু দেওয়া যেতে পারে। নবজাতক কে পরিচর্যা করার সময় হাত ভালোভাবে স্যানিটাইজ করা উচিত কারণ, এই সময় তার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা খুবই কম থাকে।
সদ্যজাত শিশুর ওজন
নবজাতক শিশুর জন্মের পর করণীয় এর ক্ষেত্রে প্রথমেই রয়েছে বাচ্চার ওজন গ্রহণ করা। নবজাতক সুস্থ আছে কিনা এই নিয়ে বাবা-মা, এবং পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন সবাই চিন্তিত থাকেন। আমরা প্রথমেই ধারণা করতে পারি
শিশুর ওজন যদি স্বাভাবিক হয় তাহলে বাচ্চাটি পরিপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবে একটি শিশুর ২.৬ থেকে ৩ কেজি ওজন হলে নবজাতিক কে সুস্থ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। ৫০ সেন্টিমিটার এর মত দৈর্ঘ্য হলে নবজাতককে আপাতত দৃষ্টিতে সুস্থ মনে হয়।
নবজাতকের অসুস্থতার লক্ষণ
নবজাতক শিশুর শীতকালীন যত্ন বিষয়টি জানার আগে আমাদের জেনে নেওয়া ভালো যে, নবজাতকের অসুস্থতার লক্ষণ গুলো কি কি। কোন নবজাতকের অসুস্থতা কেউই কখনোই চায় না। কি কি লক্ষণ দেখলে আমরা সাধারণত বুঝতে পারি একটি নবজাতক শিশু অসুস্থ। চলুন এগুলো দেখে নিই।
- নবজাতক শিশু নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করবে না।
- স্বাভাবিকের মতো হাত পা নড়াচাড়া করবে না।
- শিশুর রং চোখ থেকে পা পর্যন্ত হলুদ হয়ে যাওয়া।
- নাভিতে পুঁজ হওয়া বা নাভি পেকে যাওয়া।
- শিশুর জ্বর আসা বা শরীর গরম হয়ে যাওয়া।
- অতিরিক্ত মাথা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
- নবজাতকের খিচুনি হওয়ার ফলে শিশু নিস্তেজ হয়ে যাওয়া।
- নবজাতকের শ্বাসকষ্ট হলে।জন্মের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পেশাব অথবা পায়খানা না করলে।
নবজাতক শিশুর শীতকালীন যত্ন ও মায়ের করণীয়
প্রতিটি মা ই চাই তার সন্তান সুস্থ থাকুক, কিন্তু এর জন্য যত্ন বা পরিচর্যা করার প্রয়োজন। শীতকালীন সময়ে নবজাতকের তুলনামূলক বেশি অসুখ-বিসুখ হয়ে থাকে। এর সময় প্রায় বাচ্চাদের ঠান্ডা লেগে জ্বর শ্বাসকষ্ট নিমোনিয়া ইত্যাদি জটিল ও কঠিন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চলুন আমরা এবার নবজাতক শিশুর শীতকালীন যত্ন ও মায়ের করণীয় সম্পর্কে তথ্য গুলো জেনে নিই।
পরিষ্কার পরিছন্নতাঃ
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। নবজাতকের ক্ষেত্রে তার মাকে পরিছন্নতার ক্ষেত্রে অধিক সচেতন হতে হবে, এবং শিশুকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পরিছন্নতা রাখলে রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শীতকালের তুলনামূলক বেশি অসুস্থতা লক্ষ্য করা যায়। শিশুর ব্যবহার করা কাপড় গুলোতে ডেটল বা স্যাভলন ব্যবহার করা উচিত।
তাপমাত্রাঃ
নবজাতক শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে মায়ের গর্ভের তাপমাত্রা এবং বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে উষ্ণ থাকে, এই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য শিশুর রুমে তাপ বৃদ্ধি করতে হবে।
নবজাতকের পোশাকঃ
শিশুকে শীতের প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য হাত মোজা পা মোজা ব্যবহার করতে হবে, তার পোশাক সবসময় নরম ও সুতি কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
নবজাতক কে মায়ের কাছে রাখতে হবেঃ
নবজাতক শিশুকে মায়ের কাছে রাখতে হবে, মায়ের শরীরের উষ্ণতা শিশুর জন্য খুবই সহায়ক। এছাড়া মায়ের কাছাকাছি রাখলে শিশু ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সুযোগ পাবে, মায়ের বুকের দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
নবজাতক শিশুর সাদা আবরণঃ
শিশুর জন্মের পরেই তার শরীরে এক ধরনের সাদা আবরণ দেখা যায়, অনেকেই এটা পরিষ্কার করে দেন কিন্তু এই আবরণ শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে, যার জন্য এটা জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলা উচিত নয়। এছাড়াও নবজাতককে তিন দিনের আগে গোসল করানো উচিত নয়।
মাথার চুল কামানোঃ
অনেকেই জন্মের পর পরে মাথার চুল কামিয়ে ফেলেন, নবজাতকের ক্ষেত্রে এটি না করাই উচিত কারণ মাথার চুল তাপমাত্রা ধরে রাখতে সহায়তা করে, মাথায় চুল তুলনামূলক বেশি মনে হলে কেচি দিয়ে ছেঁটে দিতে হবে।
ডায়াপার পরানোঃ
অনেকেই শীতের দিনে বা রাতে নবজাতককে ডায়াপার পরিয়ে রাখেন, এটা মোটেই উচিত নয়, ইমারজেন্সি সময়ে ডায়াপার পড়ানো প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ ৬ ঘন্টা রাখা যেতে পারে, তাছাড়া নবজাতককে ভালো ব্যান্ডের ড্রাইভার পড়ানো উচিত।
ত্বকের যত্নঃ
শীতকালে নবজাতকের যত্নের প্রতি তার মাকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ শীতকালের শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, শীতকালে শিশুর ত্বক উষ্ণ করার জন্য বেবি অয়েল দিয়ে ভালো করে আলতো ভাবে মেসেজ করে দিতে হবে। গোসলের আগে শিশুকে রোদে
রাখলে সেখান থেকে ভিটামিন ডি সংগ্রহ করতে পারবে। মনে রাখতে হবে নবজাতকের গোসলের পানি হালকা গরম হাওয়া ভালো। গোসলের পর বেবি অয়েল বা ভেসলিন ব্যবহার করা উচিত। এ বিষয়গুলো নবজাতকের মাকে ভালোভাবে খেয়াল রাখা উচিত।
ভারী কম্বল ব্যবহারঃ
নবজাতক শিশুর শীতকালীন যত্ন ও মায়ের করণীয় এর ক্ষেত্রে শীত নিবারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।.নবজাতক কে শীতের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ভারী কম্বল কোনোমতেই ব্যবহার করা যাবে না। শিশু যেন কম্বলের ভিতরে নড়াচাড়া করতে পারে, হালকা এবং আরামদায়ক হয় সেদিকে তার মাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
আরো অনেক কিছু জানতে হলে ওয়েবসাইট ভিজিট করেঃ হাসি অনলাইন আইটি
ভ্যাকসিনঃ
সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটি শিশুকে ভ্যাকসিন দিতে হবে একজন সচেতন বাবা-মা হতে গেলে অবশ্যই তার সন্তানকে সময়মতো বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে
সতর্কতা
নবজাতক শিশুর জন্মের পর করণীয় এর ক্ষেত্রে সতর্কতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ প্রতিটি বাবা-মাই চাই তার শিশু সন্তান সুস্থ থাকুক।
- শীতকালে শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত কাপড় এবং ভারী কম্বল যেন ব্যবহার করা না হয়ে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- নবজাতককে মুখে স্পর্শ ছাড়াই আদর করতে হবে,
- বাইরে থেকে এসে নবজাতকে স্পর্শ করতে হলে অবশ্যই ভালো হবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
- নবজাতকের পোশাক এবং কাপড়-চোপড় শুষ্ক স্থানে অথবা রোদে শুকাতে দিতে হবে।
- অসুস্থ হলে দেরি না করে শিশু বিশেষজ্ঞ কে দ্রুত দেখাতে হবে।
মন্তব্য
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, নবজাতক শিশুর শীতকালীন যত্ন ও মায়ের করণীয় এক্ষেত্রে মাকে পরিপূর্ণ ধারণা রাখতে হবে। শীতকালে শিশুদের অসুখ তুলনামূলক একটু বেশি হয়ে থাকে, এই সময় নবজাতকের মায়ের ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ, শিশুর রোগ বালা বেশি মনে হলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব শিশু বিশেষজ্ঞ কে দেখানো উচিত।
এই প্রতিবেদনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে একটি শেয়ার করে দিবেন, তাহলে অন্যরা যাওয়ার সুযোগ পাবে, এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url