শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম একটি দিন
প্রিয় পাঠক, শুক্রবার কেন সপ্তাহের মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠতম দিন,এবং এর ফজিলত সম্পর্কে কি বিস্তারিত জানতে চান ? গুগলে অনেক সার্চ করেও এর সম্পর্কে সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। তাহলে আপনার জন্য আমার এই প্রতিবেদনটি। চলুন দেখে নিন, কেন শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম একটি দিন।
শুক্রবার মুসলিম উম্মার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমার এই প্রতিবেদনে জুমার নামাজ সম্পর্কে, শুক্রবারের আমল সম্পর্কে, কেন সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম একটি দিন হল, এর ফজিলত, এ দিনে কি হবে, এ দিনকে কে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিলেন, এই সমস্ত তথ্য সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
ভূমিকা
মুসলিম উম্মার জন্য শুক্রবার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনকে গরিবের জন্য হজের দিন বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে সমস্ত ব্যক্তি আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সৌদি আরবে গিয়ে হজ পালন করতে পারেন না,তারা যদি শুক্রবারের আমল গুলো যথাযথভাবে পালন করেন, তাহলে একটি পূর্ণ হজের সওয়াব পেয়ে যাবেন। এই দিনটি সপ্তাহের মধ্যে সওয়াবের দিক থেকে শ্রেষ্ঠতম একটি দিন। এই দিনটি যথাযথ মর্যাদার শহীদ পালন করার জন্য প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নর এবং নারীর জন্য বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জোহরের চার রাকাত ফরজ সালাত এর স্থলে, শুক্রবারের দিন দুই রাকাত ফরজ সালাত জামাতের সহিত আদায় করতে হয়। এবং সালাতের পূর্বে ইমাম কর্তৃক প্রদানকৃত খুতবা মনোযোগের সহিত শ্রবণ করতে হয়। এই দিনটি বাংলাদেশ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। শুক্রবারকে জুম্মার দিন বলা হয়। জুমআ এর অর্থ একত্রিত হওয়া সম্মিলিত হওয়া বা কাতারবদ্ধ হওয়া ইত্যাদি।
শুক্রবার জুম্মার সালাত
আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা থেকে মদিনায় যে দিন হিজরত করেন, সেই দিনটি ছিল শুক্রবার । আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করার দিনে যখন বনির সালেম গোত্রের উপত্যকার নিকট পৌঁছে ছিলেন তখন জোহরের সালাতের সময় হয়েছিল। তখন সেখানে তিনি জহুরের সালাতের স্থানে জুমার সালাত আদায় করেছিলেন। এটাই ছিল প্রথম জুমার সালাতের সূত্রপাত।
জুম্মার সালাতের গুরুত্ব অনেক। এ সম্পর্কে একটি হাদিস রয়েছে তা হল- আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানি করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানি করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানি করল।
আরো পড়ুনঃ স্বপ্ন দেখার কারণ কি স্বপ্ন দেখলে কি হয়
অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগি কুরবানি করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানি করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।’ (বুখারি: ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)।
অপর এক হাদিসে পাওয়া যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন জুমার দিন কোনো ব্যক্তি গোসল করে এবং সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তেল মাখে বা ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে বের হয়, আর দুজনের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি না করে, এরপর সে তার জন্য ধার্যকৃত সালাত আদায় করে এবং ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তার এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত (সগিরা গোনাহ) মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি : ৮৮৩) ।
শুক্রবার জুম্মার সালাত সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনে্র মাধ্যমে জানিয়েছেন , 'হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন সালাতের আযান দেয়া হয়, তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত চলো এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর সালাত শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ খোঁজ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। ' (সুরা জুমআ : আয়াত ৯-১০)।
শুক্রবারের আমল
শুক্রবার সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হওয়ার পিছনে অনেকগুলি কারণ রয়েছে এবং এই দিনের অনেক ফজিলত রয়েছে শুধু তাই নয় মুসলমানদের জন্য এই দিনে আমল করলে বিশেষ ফায়দা অর্জন করা সম্ভব চলুন আমরা দেখে নিই কি কি বিশেষ আমল করার জন্য ইসলামের নির্দেশ রয়েছে।
১। জুমার দিন ফজরের সালাত জামাতের সহিত আদায় করা।
২। জুমার দিন উত্তোম রুপে গোসল করা।
৩। নিজের সব চেয়ে ভালো ও ইসলামী পোশাক পরা।
৪। সুগন্ধি ব্যবহার করা, যদি থাকে।
৫। শুক্রবার দিন সুরা কাহাপ তেলাওয়াত করা। আবু দারদা (রা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন," যে ব্যাক্তি সুরায়ে কাহাপের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফেতনা হতে রক্ষা পাবে।" সহিহ মুসলিম ১৩৪২। আবু দাউদ ৩৭৬৫।
৬। জুমার সালাতের জন্য আজানের / খুৎবার আগে মসজিদে যাওয়া।
৭। আযানের আগে মসজিদে গিয়ে চার রাকাত সুন্নত সালাত পড়ে বসা।
৮। মসজিদে গিয়ে ইমামের কাছে গিয়ে বসা।
৯। মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনা, খুৎবা চলাকালে কোন কথা না বলা।
১০। সাধ্যমত দান সাদকা করা, বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। ইত্যাদি
শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম একটি দিন
শুক্রবারকে জুমআর দিন বলা হয়, যার অর্থ হল সমাবেশ। শুক্রবার হল সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম , মর্যদা ও ফজিলত পুর্ন একটি দিন। এ দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন এবং গরিব মুসলমানদের জন্য হজ্জের দিন বলা হয়ে থাকে। ইসলামি ইতিহাসে দেখা যায় , এ দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ন ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম দিন হওয়ার পিছনে অনেক ঘটনা রয়েছে, এর মধ্যে বিশেষ বিশেষ কিছু ঘটনা উল্লেখ করা হলো-
১। শুক্রবারের দিনে মহান আল্লাহ তাআলা প্রথম মানব হজরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে সৃষ্টি করেছেন।
২। এ দিনে মহান আল্লাহ তাআলা প্রথম মানব হজরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জান্নাত
থেকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।
৩। এ দিনে মহান আল্লাহ তাআলা তাকে মৃত্যু দান করেছেন।
৪। জুমার দিনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় আছে যে সময়টিতে আল্লাহর কাছে বান্দা যা চাইবে আল্লাহ তার চাওয়া পূরণ করবেন। কিন্তু হারাম কোন কিছু চাইলে তা কখনোই পূরণ করবেন না।
৫। হাদিস থেকে জানা যায় শুক্রবারের দিনেই কিয়ামত সংগঠিত হবে।
শুক্রবারের ফজিলত
শুক্রবার একটি বিশেষ দিন হাওয়ায় এই দিনের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা। শুক্রবারের ফজিলতের সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোন দোয়া করলে মহান আল্লাহ্ তাঁর দোয়া কবুল করেন।আবু হুরায়রা ( রাঃ) থেকে একটি হাদিস বর্নিতহয়েছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ ( সাঃ) বলেছেন,
" জুমার দিনে এমন একটা সময় আছে, যে সময়ে কোন মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোন কিছু প্রার্থনা করলে, আবশ্যই আল্লাহ তাকে তা দান করেন।" সহিহ মুসলিম ৮৫২।
শুক্রবারে কি হবে
মুসলিম উম্মার জন্য শুক্রবার একটি গুরুত্ব পূর্ন দিন। শুক্রবারে কিয়ামত হবে সহিহ হাদিস ও কোরআনের মাধ্যমে তা জানা যায়। কোন এক শুক্রবারে সকালে হয়ত এভাবেই আল্লার আজাব গ্রাস করবে কিন্তুু আমরা তওবা করার সুযোগটাও পাব না।মহান আল্লাহ্ আমাদের ভূমিকম্প সহ সকল ধরনের কৃত্তিম ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে হেফাযত করুন, আমিন।
শুক্রবার ছুটির দিন কে ঘোষনা করেছিল
হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে ১৯৮৮ ইং সালে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছিলেন। শুধু তাই নয় এই প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সকল মসজিদের বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করেছিলেন, সাথে সাথে শুক্রবার দিনটি কে সরকারি সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণা করেছিলেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ এর ঘোষণাকৃত শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন এখনো বলবৎ রয়েছে। বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়াই অদুর ভবিষ্যতে ও এই দিন সরকারি ছুটি থাকবে বলে ধারনা করা হয়।
মন্তব্য
পরিশেষে, শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম একটি দিন,আল্লাহ্ তা আলা মুসলিম উম্মাকে জুমার দিনের করনিয় গুলো যথাযথ ভাবে আদায় করার মাধ্যেমে সৃস্টি কর্তার পরিপূর্ন ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url