যক্ষা রোগের লক্ষণ এবং যক্ষা নিয়ন্ত্রণের স্বাস্থ্য কর্মীদের করনীয়
সম্মানিত পাঠক, যক্ষা রোগ কি, যক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায়,যক্ষা রোগের লক্ষণ এবং যক্ষা নিয়ন্ত্রণের স্বাস্থ্য কর্মীদের করনীয় এ সম্পর্কিত তথ্য জানার জন্য খুব আগ্রহী। গুগলে অনেক সার্চ করেও এ সম্পর্কিত সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না, তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অতি অতি প্রয়োজনীয়।
আজকের এই প্রতিবেদনে যক্ষা কি, যক্ষা রোগের লক্ষণ, যক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায়, কিভাবে ছড়ায় না, প্রাথমিক পর্যায়ে যক্ষা রোগ সনাক্তকরণের উপকারিতা, যক্ষা নিয়ন্ত্রণের স্বাস্থ্য কর্মীদের করনীয় সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে চলুন এগুলো দেখে নিই।
ভূমিকা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মতো দেশে প্রতিবছর ৩ লাখ ৬৪ হাজার লোক নতুনভাবে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ৫৯ হাজার লোক এই রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের যক্ষা একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। অনুমান করা হয়, আমাদের দেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায়
অর্ধেক লোক যক্ষা জীবাণুর দ্বারা সংক্রামিত। বিশ্বের যে ৩০ টি দেশের মধ্যে যক্ষা রোগের সংখ্যা সর্বাধিক, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এদেশে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষায় (এমডিআরটিবি) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আনুমানিক ৮৪০০ (তথ্যসূত্রঃ গ্লোবাল টিবি রিপোর্ট ২০১৮ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)।
যক্ষা রোগ কি
যক্ষা একটি জীবাণু ঘটিত সংক্রামক রোগ। টিউবারকুলোসিস নামক জীবাণু যক্ষা রোগের জন্য দায়ী। যক্ষা রোগ মানবদেহের যে কোন অঙ্গে আক্রান্ত করতে পারে তবে ফুসফুসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক। সমস্ত যক্ষা রোগের মধ্যে ৭০-৮০% ফুসফুসের যক্ষা আক্রান্ত হন।
বাংলাদেশে যক্ষা রোগের চিকিৎসা সাফল্যের হার বেশ সন্তোষজনক, তবে এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য রোগী শনাক্ত হচ্ছে না, সামাজিক সচেতনতা এবং যক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের অভাব যক্ষা রোগ নির্ণয়ের হার বৃদ্ধিতে বড় বাধা।
যে সমস্ত রোগী দীর্ঘমেয়াদি কাশিতে ভুগেন (দুই সপ্তাহের বেশি) তাদের বেশিরভাগই ডাক্তারি পরামর্শ ও কফ পরীক্ষার জন্য সময় মত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসেন না, ফলে তারা সনাক্তকরণের আওতার বাইরে থেকে যান এবং রোগ ছড়াতে থাকেন।
যক্ষা রোগের লক্ষণ
আমরা এবার দেখে নিব যক্ষা রোগের লক্ষণগুলো। দুই সপ্তাহের অধিক সময়ব্যাপী কাশি ফুসফুসের যক্ষা রোগের প্রধানতম কারণ। কাশির সাথে অন্যান্য যে লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হলোঃ
- বিকেলের দিকে অল্প অল্প জ্বর।
- রাতে শরীর ঘেমে যাওয়া।
- খাবারের অরুচি।
- শরীরের ওজন কমে যাওয়া ও দিন দিন দুর্বল হয়ে যাওয়া।
- সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকে জ্বর না সারা।
- গভীর হয়ে গেলে কাশির সাথে রক্ত যেতে পারে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ওপরে বর্ণিত লক্ষণ গুলোর মধ্যে শুধুমাত্র দুই সপ্তাহের বেশি কাশি থাকলেই কোন ব্যক্তিকে যক্ষা রোগে আক্রান্ত বলে অনুমান করতে হবে এবং কফ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও পরামর্শের জন্য নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল,
বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, নির্দিষ্ট এনজিও ক্লিনিক যেমন ব্র্যাক, ডমিন ফাউন্ডেশন, গণস্বাস্থ্য, সূর্যের হাসি ক্লিনিক, এবং সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে।
যক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায়
রোগীর কফ হাচি কাচির মাধ্যমে যক্ষা রোগের জীবাণু বের হয়ে বাতাসে মিশে ও প্রশ্বাসের মাধ্যমে তা সুস্থ ব্যক্তির ফুসফুসে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে। চিকিৎসা না নিলে একজন যক্ষা রোগী বছরে ১০ জন সুস্থ মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। এভাবে যক্ষা রোগ পরিবারের সদস্য ও আশেপাশের ব্যক্তিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।
যক্ষা রোগ কিভাবে ছাড়ায় না
যক্ষা রোগ ছোঁয়াচে রোগ হলেও যেভাবে এই রোগ এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিকে ছাড়ায় না, সে সমস্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো।
- কারো সাথে একসাথে বসে খাবার খেলে।
- একই পাত্রে পানি পান করলে।
- রোগীর সাথে হাত মিলালে কিংবা কোলাকুলি করলে।
- একই টয়লেট ব্যবহার করলে।
- একই কাপড় কিংবা বিছানা ব্যবহার করলে।
প্রাথমিক পর্যায়ে যক্ষা রোগ দ্রুত শনাক্তকরণের উপকারিতা
যক্ষা হলে রক্ষা নেই এই কথার ভিত্তি নেই। যক্ষা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায় তাহলে নিম্নলিখিত দুইভাবে উপকার পাওয়া যায়,যেমনঃ
রোগীর উপকারঃ
- চিকিৎসার ফলে ফুসফুস বা অন্য কোন অঙ্গের ক্ষতি ছাড়াই এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
- যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা না হয়, তাহলে ফুসফুস সহ অন্যান্য অঙ্গের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
- বিলম্বিত চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে যায়।
সামাজিক উপকারঃ
- রোগ ছড়ায় না বিধায় পরিবার ও সমাজের অন্যান্য সদস্যগণ নিরাপদ থাকেন।
- চিকিৎসা শুরু দুই সপ্তাহের মধ্যেই রোগী কাজে ফিরতে পারেন এবং অন্যান্য সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
- যক্ষা রোগ প্রতিরোধ চিকিৎসা দেহে রোগ সংক্রমণকে পরিপূর্ণ রোগ হওয়ার পথে বাঁধা তৈরি করে, ফলে এর ব্যবহারের রোগের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
যক্ষা নিয়ন্ত্রণের স্বাস্থ্য কর্মীদের করনীয়
যক্ষা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একজন স্বাস্থ্য ও কর্মীর যে সমস্ত দায়-দায়িত্ব এবং করণীয় রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- সন্দেহজনক যক্ষা রোগীকে যক্ষা রোগের লক্ষণ, কিভাবে ছড়ায় এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে তথ্য দিবেন।
- সন্দেহজনক রক্ষার রোগীকে নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, নির্দিষ্ট এনজিও ক্লিনিক, যেমন ব্র্যাক, ডোমিয়েন ফাউন্ডেশন, গণস্বাস্থ্য, সূর্যের হাসি ক্লিনিক এবং সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য প্রেরণ করবেন।
- সন্দেহজনক যক্ষা রোগীকে কোন প্রকার যক্ষার চিকিৎসার ঔষধ না দিয়ে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিংবা ডাক্তারের কাছে প্রেরণ করবেন এবং সনাক্তকিত যক্ষা রোগীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবেন।
- নিয়মিত সঠিক মাত্রায় পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ খাবেন।
- নিয়মিত ফলোআপ পরীক্ষা গুলো করাবেন।
- কফ, থুতু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পাত্রে ফেলবেন।
- পরিবারের অন্যান্য দের যক্ষা রোগের লক্ষণ থাকলে তাদের কপ পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেবেন।
- জন্মের পর শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়ার ব্যাপারে সকলকে উদ্বুদ্ধ করবেন।
- যক্ষা রোগের পরীক্ষা ও চিকিৎসা সম্পন্ন ফ্রি এ বিষয়টি সকলকে জানাবেন।
- একজন যক্ষা রোগী কোন প্রকার প্রতারণা ও হয়রানির শিকার যেন না হন সে বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।
লেখকের মন্তব্য,
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা যক্ষা রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছি বলে মনে হয়। যক্ষা রোগের লক্ষণ এবং যক্ষা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য কর্মীদের করণীয় সম্পর্কে বিষয়টি আলোচনা করে জেনেছি যে, যক্ষা হলে রক্ষা নেই এই কথার ভিত্তি নেই। রক্ষা নিয়ন্ত্রণে আমাদের প্রয়োজন সচেতনতা এবং সঠিক সময়ের চিকিৎসা। নিজের সচেতন থাকুন এবং অন্যকে সচেতন রাখায় সচেষ্ট থাকুন। ধন্যবাদ।।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url