কোন ভিটামিনের অভাবে কি রোগ হয় ভিটামিনের উৎস কাজ এবং গ্রহণের মাত্রা
সম্মানিত পাঠক, কোন ভিটামিনের অভাবে কি রোগ হয় ভিটামিনের উৎস কাজ এবং গ্রহণের মাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আগ্রহে নিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন, তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এই প্রতিবেদনের মধ্যে ভিটামিন কি, ভিটামিনের শ্রেণীবিভাগ, এছাড়া ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি১, ভিটামিন-বি২, ভিটামিন-বি৩, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন সম্পর্কিত বিষয় আলোচনা করা হয়েছে, চলুন বিস্তারিত দেখে নিই-
ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ
শরীরের জন্য খাদ্যের আমিষ, শর্করা, খনিজ লবণ, স্নেহ জাতীয় পদার্থসমূহ ছাড়াও আরো কিছু সূক্ষ্ম উপাদানের প্রয়োজন যাদের অভাবে সহজেই বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। এগুলোকে বলে খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন। ভিটামিন সমূহ সরাসরি দেহ গঠনের অংশগ্রহণ না করলেও এদের অভাবে দেহের ক্ষয় পূরণ,
বৃদ্ধি সাধন বা দেহের তাপ শক্তি উৎপাদন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়গুলো সুসম্পন্ন হতে পারে না। জীবদেহে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ এদের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত হয় বলে ভিটামিন সম্মুখে জৈবিক প্রভাবক বলে।
ভিটামিন এর শ্রেণীবিভাগ
দ্রবণীয়তার গুণ অনুসারে ভিটামিন কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
১। চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনঃ
- ভিটামিন এ বা রেটিনল।
- ভিটামিন ডি বা ক্যালসিফেরল।
- ভিটামিন ই বা টকোফেরোল।
- ভিটামিন কে।
২। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনঃ
- থায়ামিন বা ভিটামিন বি১।
- রিবোফ্রাবিন বা ভিটামিন বি২।
- নিয়াসিন বা নিয়াসিনামাইড।
- পিরিডক্সিন বা ভিটামিন বি৬।
- প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড।
- ফলিক অ্যাসিড।
- সায়ানোকোবালামিন বা ভিটামিন বি১২।
- ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিড, ইত্যাদি।
ভিটামিন 'এ' বা রেটিনল
ভিটামিন-এ এর উৎস, কাজ, অভাবজনিত রোগ এবং যে হারে খাবারে গ্রহণ করতে হবে (১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য) এ সকল বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো, চলুন এগুলো বিস্তারিত দেখে নিই;
ভিটামিন 'এ' এর উৎসঃ
ভিটামিন-এ যে খাবারের মধ্যে রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দুধ, মাখন, পনির,ডিমের কুসুম, কলিজা, মাছের যকৃতের তেল ইত্যাদি।
ভিটামিন 'এ' এর কাজঃ
ত্বকের গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণ, স্লেশমা, ঝিল্লি, হাড়,দাঁত, দৃষ্টি এবং প্রজনন ক্ষমতার অপর এই ভিটামিনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে।
ভিটামিন 'এ' এর অভাবজনিত রোগঃ
ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে। এছাড়া এই ভিটামিনের অভাবে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় সেগুলো হল ত্বকের অত্যাধিক শুষ্কতা, স্লেশমা ঝিল্লির নিঃসরণ কমে যাওয়া, জীবাণুর অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া, অশ্রুগ্রন্থির অকার্যকারিতা এবং তার ফলে চোখের শুষ্কতা।
প্রয়োগ মাত্রাঃ
ভিটামিন-এ দৈনিক ৯০০ মিলিগ্রাম একজন ১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য প্রযোজ্য।
ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন
ভিটামিন-বি১ এর উৎস, কাজ, অভাবজনিত রোগ এবং যে হারে খাবারে গ্রহণ করতে হবে (১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য) এ সকল বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো, চলুন এগুলো বিস্তারিত দেখে নিই;
ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন এর উৎসঃ
ভিটামিন বি১ যে খাবারের মধ্যে রয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চালের কুড়া,মাংস, যকৃত, হৃৎপিণ্ড এবং বৃক্ষের মাংস, ইস্ট, চর্বিহীন মাংস,ডিম, পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি, শস্যদানা, গমের বীজ, বাদাম, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন এর কাজঃ
ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন এর উল্লেখযোগ্য কাজ হল,স্নায়ু উদ্দীপক পদার্থ সংশ্লেষণে এর ভূমিকা রয়েছে।
ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন এর অভাবজনিত রোগঃ
থায়ামিনের অভাবে বেরিবেরি রোগ হয় যা পেশী দুর্বল করে দেয়। এছাড়াও হৃদপিন্ডের আকার বেড়ে যাওয়া, পায়ে খিল ধরা এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কারণ হিসেবে এই ভিটামিনের অভাব কাজ করে।
প্রয়োগ মাত্রাঃ
ভিটামিন-বি১ বা থায়ামিন দৈনিক ১.২ মিলিগ্রাম একজন ১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য।
ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্রাবিন
ভিটামিন-বি২ বা রিবোফ্লাভিন এর উৎস, কাজ, অভাবজনিত রোগ এবং যে হারে খাবারে গ্রহণ করতে হবে (১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য) এ সকল বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো, চলুন এগুলো বিস্তারিত দেখে নিই;
ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্রাবিন এর উৎসঃ
ভিটামিন বি২ যে খাবারের মধ্যে পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কলিজা, দুধ,মাংস,গাড় সবুজ রঙের শাকসবজি, শস্যদানা, পেস্তা, পাউরুটি, মাশরুম ইত্যাদি।
ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্রাবিন এর কাজঃ
রিবোফ্লাবিন থেকে ফ্লেভিন অ্যাডনিন ডাইনিউক্লিওটাইড নামে দুইটি সহ-উৎসেচক তৈরি হয়। এ সহ-উৎসেচক কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং আমিষ বিপাকে সাহায্য করে থাকে। প্লেশমা ঝিল্লির রক্ষণাবেক্ষণ ও এর ভূমিকা রয়েছে।
ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্রাবিন এর অভাবজনিত রোগঃ
এই ভিটামিনের অভাবে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় সেগুলো অতটা ইস্পষ্ট নয়। কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে ত্বকের বিকৃতি ও ঘা (বিশেষত নাক ও ঠোঁটের কোনায় ও চারপাশে),জিহ্ববায় ঘা এবং আলোক-সংবেদনশীলতা।
প্রয়োগ মাত্রাঃ
ভিটামিন-বি২ বা রিবোফ্লোবিন দৈনিক ১.৩ মিলিগ্রাম একজন ১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য।
ভিটামিন বি৩ বা নিয়াসিন
ভিটামিন-বি৩ এর উৎস, কাজ, অভাবজনিত রোগ এবং যে হারে খাবারে গ্রহণ করতে হবে (১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য) এ সকল বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো, চলুন এগুলো বিস্তারিত দেখে নিই;
ভিটামিন বি৩ বা নিয়াসিন এর উৎসঃ
ভিটামিন বি৩ যে খাবারের মধ্যে পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মাংস, কলিজা,গম, ডাল, বাদাম ইত্যাদি।
ভিটামিন বি৩ বা নিয়াসিন এর কাজঃ
দেহে কার্বোহাইড্রেট বিপাকে ও আমিষ থেকে চর্বি উৎপাদনের সাহায্য করে পেলেগ্রা নামক রোগ প্রতিরোধ করে।
ভিটামিন বি৩ বা নিয়াসিন এর অভাবজনিত রোগঃ
এই ভিটামিনের অভাবে পেলেগ্রা শারীরিক দুর্বলতা ওজন হ্রাস উদাময় উদ্যোগ ও উত্তেজনা দেখা দেয়।
প্রয়োগ মাত্রাঃ
ভিটামিন-বি৩ বা নিয়াসিন দৈনিক ১৬ মিলিগ্রাম একজন ১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য।
ভিটামিন-ই বা টকোফেরোল
ভিটামিন-ই বা টকোফেরোল এর উৎস, কাজ, অভাবজনিত রোগ এবং যে হারে খাবারে গ্রহণ করতে হবে (১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য) এ সকল বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো, চলুন এগুলো বিস্তারিত দেখে নিই
ভিটামিন-ই বা টকোফেরোল এর উৎসঃ
যে সমস্ত খাবারের মধ্যে ভিটামিন ই পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডিমের কুসুম, মটরশুঁটি, গম, যব, সূর্যমুখী তেল ইত্যাদি।
ভিটামিন-ই বা টকোফেরোল এর কাজঃ
ভিটামিন ই এর কাজ হল প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
ভিটামিন-ই বা টকোফেরোল এর অভাবজনিত রোগঃ
ভিটামিন ই এর অভাবে সাময়িকভাবে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।
প্রয়োগ মাত্রাঃ
ভিটামিন-ই বা টকোফেরোল দৈনিক ১৫ মিলিগ্রাম একজন ১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য।
ভিটামিন-ডি ক্যালসিফেরল
ভিটামিন-ডি বা ক্যালসি ফেরোল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো-
ভিটামিন-ডি ক্যালসিফেরল এর উৎসঃ
যে সমস্ত খাবারের মধ্যে ভিটামিন ডি উল্লেখযোগ্য ভাবে পাওয়া যায় সেগুলো হল মাছের তেল, ডিমের কুসুম, মাখন, ঘি, ইলিশ মাছ ইত্যাদি।
ভিটামিন-ডি ক্যালসিফেরল এর কাজঃ
ভিটামিন ডি অন্ত্রে খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের শোষণ বাড়ায়, অস্থি ও দাঁতের কাঠামো গঠনে সাহায্য করে।
ভিটামিন-ডি ক্যালসিফেরল এর অভাবজনিত রোগঃ
ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের রিকেটস ও দাঁতের গঠন ব্যাহত হয়, বয়স্কদের অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ হয়।
প্রয়োগ মাত্রাঃ
ভিটামিন-ডি বা ক্যালসিফেরল দৈনিক ৫-১০ মাইক্রগ্রাম একজন ১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য।
ভিটামিন-সি বা এসকরবিক এসিড
ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিডের উৎস, কাজ, ও ভিটামিন সি এর অভাবজনিত রোগ এবং এর প্রয়োগ মাত্রা নিম্নের সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হলো-
ভিটামিন সি এর উৎসঃ
যে সকল খাদ্যের মধ্যে ভিটামিন সি উল্লেখযোগ্য ভাবে পাওয়া যায় তা হল, শাকসবজি, টক ফল, বিশেষ করে আমলকি, লেবু, কমলা ইত্যাদি।
ভিটামিন সি এর কাজঃ
ভিটামিন সি এর উল্লেখযোগ্য কাজ হল, দাঁত ও মাটির সুস্থ রাখে, ক্ষতস্থান শুকাতে সাহায্য করে, ত্বক উজ্জ্বল করে।
ভিটামিন সি এর অভাবজনিত রোগঃ
ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়।
প্রয়োগ মাত্রাঃ
ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিড দৈনিক ৯০ মিলিগ্রাম একজন ১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য।
ভিটামিন-কে
ভিটামিন-কে এর উৎস, কাজ, অভাবজনিত রোগ এবং যে হারে খাবারে গ্রহণ করতে হবে (১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য) এ সকল বিষয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো, চলুন এগুলো বিস্তারিত দেখে নিই;
ভিটামিন কে এর উৎসঃ
যে সমস্ত খাবারের মধ্যে ভিটামিন কে পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সবুজ শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস পাতা, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
ভিটামিন কে এর কাজঃ
ভিটামিন কে এর উল্লেখযোগ্য কাজ হল, রক্তপাত নিবারণে ও দেহের শক্তি উৎপাদনের সহায়তা করা।
ভিটামিন কে এর অভাবজনিত রোগঃ
গর্ভবতী মহিলাদের রক্তপাত হতে পারে, পিত্তের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হওয়ার প্রবণতা থাকে।
প্রয়োগ মাত্রাঃ
ভিটামিন-কে দৈনিক ৪০ মিলিগ্রাম একজন ১৯ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের জন্য প্রযোজ্য।
মন্তব্য,
কোন ভিটামিনের অভাবে কি রোগ হয় ভিটামিনের উৎস কাজ এবং গ্রহণের মাত্রা সম্পর্কিত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, আশা করি এ থেকে আপনি উপকৃত হতে পারবেন। এখানে উল্লেখ্য যে ভিটামিন এর অভাবে শরীরে অস্বাভাবিকতা তুলনামূলক বেশি দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।।
Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url