মানব দেহের বিভিন্ন তন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা এবং সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
সম্মানিত পাঠক,মানব দেহের বিভিন্ন তন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা এবং সংক্ষিপ্ত বর্ণনা সম্পর্কে জানার জন্য খুব আগ্রহী, বিভিন্ন জায়গায় বা গুগলে এ সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণের জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন, তাহলে আপনার জন্য এই পোস্টটি অতি প্রয়োজনীয়।
আজকের এই প্রতিবেদনে, মানব দেহের যে নয়টি তন্ত্র আছে এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হবে, আশা করছি প্রতিবেদনের শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সহিত পড়তে থাকবেন। চলুন এইবার দেখে নিই মানবদেহের তন্ত্র সম্পর্কিত তথ্যগুলো-
ভূমিকা
চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে অংশ মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করে তাকে শরীরবিদ্যা বলে। মানব দেহ বিভিন্ন ধরনের কতগুলো কোষ নিয়ে গঠিত। কোষ হল দেহ গঠন ও কার্যক্রমের একক। একই রকমের গঠন ও কাজ সম্পন্ন কতগুলো কোষ মিলে কলা তৈরি হয়
এবং অনেকগুলো কলা মিলে আমাদের দেহের অঙ্গ তৈরি হয়। কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগী কলা মিলে তন্ত্র তৈরি হয়। এ ধরনের মোট নয়টি তন্ত্র মিলে মানব দেহে গঠিত।
মানবদেহে বিভিন্ন তন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা এবং সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ
মানব দেহে মোট ৯ টি তন্ত্র মিলে গঠিত। এই তন্ত্র গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং এর প্রয়োজনীয়তা গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
১। রক্ত ও রক্ত সংবহনতন্ত্র (Blood And Blood CirculatorySystem)
২। স্নায়ুতন্ত্র (Nervous System)
৩। পরিপাকতন্ত্র (Digestive System)
৪। শ্বাসতন্ত্র (Respiratory System)
৫। রেচন তন্ত্র (Excretory System)
৬। প্রজননতন্ত্র (Reproductive System)
৭। অন্তক্ষরা গ্রন্থি তন্ত্র (Endocrine System)
৮। পেশী তন্ত্র (Muscular System)
৯। কঙ্কালতন্ত্র (Skeletal System)
১। রক্ত ও রক্তসংবহন তন্ত্র (Blood And Blood CirculatorySystem)
রক্ত হচ্ছে এক ধরনের তরল যোজক কলা। যে তন্ত্র রক্তের মাধ্যমে দেহের সর্বত্র খাদ্যসার, অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বিপাকীয় পদার্থ ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ স্থানান্তর করে তাকে রক্ত সংবহনতন্ত্র বলে। রক্তে থাকে রক্তরস এবং বিভিন্ন রক্তকণিকা যেমন লোহিত কণিকা, শেতকণিকা এবং অনুচক্রিকা।
তন্ত্রটি হৃৎপিণ্ড রক্ত এবং বিভিন্ন ধরনের রক্তনালী যেমন ধমনী, শিরা, কৌশিকনালি ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। রক্ত সঞ্চালন ভারসাম্য রক্ষা ও যোগাযোগ এদের প্রধান কাজ।
মানবদেহে রক্ত ও রক্ত সংবহনতন্ত্র এর প্রয়োজনীয়তাঃ
রক্ত ও রক্ত সংবহনতন্ত্র মানবদেহে যে সমস্ত কাজগুলো করে থাকে এবং এর প্রয়োজনীয়তা গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- বিভিন্ন কোষের অক্সিজেন সরবরাহ করা এবং শরীর থেকে ফুসফুসের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দেওয়া।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।
- শরীরের ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধতে না দেওয়া এবং কোথাও কেটে গেলে রক্ত জমাট বাধতে সহায়তা করা।
- শোষিত খাদ্যদ্রব্য ভিটামিন পানি ও অন্যান্য উপাদান কোষ বা কলাতে সরবরাহ করা।
- শরীরে পানি তাপমাত্রা ও এসিডের ভারসাম্য রক্ষা করা।
- যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করা।
২। স্নায়ুতন্ত্র (Nervous System)
যে তন্ত্রের সাহায্যে দেহ উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে এবং দেহের বিভিন্ন অঙ্গের পারস্পরিক সংযোগ সাধন করে শরীরের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে তাকে স্নায়ুতন্ত্র বলে। মস্তিষ্ক (Brain), মেরুরুজ্জু (Spiral cord), স্নায়ু (Nerve) নিয়ে এটি গঠিত। যোগাযোগ, সমন্বয় সাধন, ব্যবহার, বুদ্ধি,স্মৃতিশক্তি সংরক্ষণ ইত্যাদি এই তন্ত্রের প্রধান কাজ।
মানবদেহে স্নায়ুতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তাঃ
মানবদেহে স্নায়ুতন্ত্র যে সমস্ত কাজগুলো করে থাকে এবং এর প্রয়োজনীয়তা দিকগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- মানুষের বুদ্ধিমত্তা বিবেচনা পরিকল্পনা বা ব্যবহার কার্যক্রম পরিচালনা করে।
- স্মৃতির সংরক্ষণ করে।
- যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করে।
- অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
- ভারসাম্য রক্ষা করে।
৩। পরিপাকতন্ত্র (Digestive System):
যে তন্ত্রের মাধ্যমে জটিল খাদ্যদ্রব্য ভেঙ্গে দেহের গ্রহণ উপযোগী হয়ে শোষিত হয় তাকে পরিপাকতন্ত্র বলে। মুখ, জিহবা, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদান্ত, মলাশাই বা কোলন, যকৃত, অগ্নাশয়, পিত্তথলি ও অন্যান্য গ্রন্থী সমূহ নিয়ে পরিপাকতন্ত্র গঠিত। খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করা, হজম করা ও শোষণ করা এই তন্ত্রের প্রধান কাজ।
মানবদেহে পরিপাকতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তাঃ
মানব দেহে পরিপাকতন্ত্র যে সমস্ত কাজ করে থাকে সেগুলো নিম্ন উল্লেখ করা হলো-
- খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ ও হজম করা
- বিভিন্ন ধরনের পরিপাক রস মিশ্রণ করা
- হজমকৃত খাদ্য শোষণ করা
- পানি ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শোষণ করা
- শরীরের পানি এবং এসিড এর ভারসাম্য রক্ষা করা
- রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা, ইত্যাদি।
৪। শ্বাসতন্ত্র (Respiratory System) :
যে তন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাহায্যে শরীর বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুতে নিঃসৃত করে তাকে শ্বাসতন্ত্র বলে। নাক, শ্বাসনালী, ট্রাকিয়া, ফুসফুস, ব্রংকাই ও এল ভি, ওলাই এদের সমন্বয়ের শ্বাসতন্ত্র গঠিত। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করা এর কাজ।
মানবদেহে শ্বাসতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তাঃ
মানব দেহের জন্য শ্বাসতন্ত্র যে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে সেগুলো হল-
- শ্বাস প্রশ্বাসের সহায়তা করা
- শ্বসনের ফলে দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করা এবং কার্বন ডাই অক্সাইড শরীর থেকে বের করে দেওয়া
- শরীরের পানি তাপমাত্রা ও এসিড এর ভারসাম্য রক্ষা করা
- শরীরের রক্ত সঞ্চালনের সাহায্য করা, ইত্যাদি।.
৫। রেচনতন্ত্র (Excretory System)
যে প্রক্রিয়ায় বিপাকের ফলে তৈরি ক্ষতিকর বজ্র পদার্থ দেহ থেকে বের হয়ে যায় তাকে রোচন বলা হয় এবং শরীরের যে সকল অঙ্গ এই রেচন প্রক্রিয়ায় কাজ করে তাদেরকে একত্রে রেচনতন্ত্র বলা হয়। কিডনি, মূত্রথলি ও মূত্রনালী এগুলো নিয়ে রেচনতন্ত্র গঠিত। মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থের সময় বের করে দেওয়াই এই তন্ত্রের কাজ।
মানবদেহে রেচনতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তাঃ
মানবদেহের রেচনতন্ত্রের যে প্রয়োজনীয় লক্ষ্য করা যায় বা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে সেগুলো হলো-
- বজ্র পদার্থ নিঃসরণ করা
- ভারসাম্য রক্ষা করা
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা
- কোষের কার্যক্রমের জন্য সঠিক পরিবেশ রক্ষা করা
- রক্তের কোষ তৈরিতে সহায়তা করা, ইত্যাদি।
৬। প্রজননতন্ত্র (Reproductive System)
যে সকল অঙ্গ মানবদেহের প্রজননের সহায়তা করে তাদেরকে একত্রে প্রজননতন্ত্র বলা হয়। প্রজনন ক্ষমতার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বংশধর সৃষ্টি করা এই তন্ত্রের প্রধান কাজ। এই প্রজননতন্ত্র দুই প্রকার যথাপুরুষ প্রজননতন্ত্র এবং মহিলা প্রজননতন্ত্র
পুরুষ প্রজননতন্ত্রঃ টেস্টিস বা শুক্রাশয়, সেমিনাল ভেসিকল, ক্ষেপন নালী, ভাস ডিফারেন্স, প্রোস্টেট/ জনন গ্রন্থি, যৌনাঙ্গ ইত্যাদি।
মহিলা প্রজনন তন্ত্রঃ ডিম্বাশয়, ফেলো পিয়ান টিউব, সারভিক্স, অ্যান্ডোমেট্রিয়াম, জরায়ু, যৌনাঙ্গ ইত্যাদি।
মানবদেহে প্রজননতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তাঃ
মানব দেহের জন্য প্রজননতন্ত্রের যে সমস্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
- প্রজনন কার্যক্রম ও প্রজনন ক্ষমতা পরিচালনা করা
- বংশগতি রক্ষা করা
- প্রজনন কোষ তৈরি করা
- পুরুষ ও মহিলাদের সেক্স হরমোন তৈরি করা
- পুরুষ ও মহিলাদের যৌন বৈশিষ্ট্য সমূহের উন্নয়ন, ইত্যাদি।
৭। অন্তক্ষরা গ্রন্থি তন্ত্র (Endocrine System)
যে সকল গ্রন্থি হতে হরমোন নিঃসৃত হয় তাদেরকে অন্তক্ষরা গ্রন্থি বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের অন্তক্ষরা গ্রন্থি মিলে অন্তক্ষরা গ্রন্থি তন্ত্র গঠিত। হরমোন হলো মানব দেহের বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা অন্তক্ষরা গ্রন্থি কোষ হতে নিঃসৃত হয়ে রক্তে প্রবেশ করে এবং জৈবিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
মানব দেহের অন্তক্ষরা গ্রন্থিগুলো হল-পিটুইটারি গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি, প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি, এন্ড্রিনাল গ্রন্থি, অগ্নাশয় গ্রন্থি, ডিম্বাশয় গ্রন্থি, শুক্রাশয় গ্রন্থি ইত্যাদি।
মানব দেহে অন্তক্ষরা গ্রন্থি তন্ত্রের প্রয়োজনীয়তাঃ
মানবদেহে যে সমস্ত অন্তক্ষরা গ্রন্থি সমূহ প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
- দেহের বৃদ্ধি ও গঠনে সহায়তা করে
- যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করে
- রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে
- কোষের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে
- ভারসাম্য রক্ষা করে
- বিপাকক্রিয়া পরিচালনা করে ইত্যাদি।
৮। পেশী তন্ত্র (Muscular System)
বিভিন্ন ধরনের পেশী কলার সমন্বয়ে যে তন্ত্র গঠিত হয় তাকে পেশী তন্ত্র বলে। হাত ও পায়ের পেশী, অন্যান্য অঙ্গের পেশী, দেহকাণ্ডের পেশী, এবং হৃদপেশী নিয়ে পেশী তন্ত্র গঠিত। এদের প্রধান কাজ হল নড়াচড়া ও চলনে সহায়তা করা। পেশীতন্ত্র নিম্নলিখিত পেশী কলার সমন্বয়ে গঠিত;
- ঐচ্ছিক পেশী
- অনৈচ্ছিক পেশী, এবং
- হৃদপেশী
মানব দেহে পেশি তন্ত্রের প্রয়োজনীয়তাঃ
মানবদেহে পেশি তন্ত্রের যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং যে সমস্ত কাজগুলো করে থাকে সেগুলো হলো-
- দেহের কাঠামো ধরে রাখে বা ঠিক রাখে,
- চলাচলের সহায়তা করে
- অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়াচড়া ও সঞ্চালনে সহায়তা করে
- দেহের অবকাঠামো ও গঠন বৃদ্ধি করে
- শরীরের ভার বহন ও সংরক্ষণ করে, ইত্যাদি।
৯। কঙ্কালতন্ত্র (Skeletal System)
যে তন্ত্র দেহের কাঠামো গঠন আকৃতি প্রদান বিভিন্ন অঙ্গকে বাহ্যিক আঘাত থেকে রক্ষা এবং দেহের চলাচলে সহায়তা করে তাকে কঙ্কালতন্ত্র বলে। মানবদেহের কঙ্কালতন্ত্র বিভিন্ন অস্থি ও তরুণাস্থি নিয়ে গঠিত।
শরীরের হাড় সমূহ নিয়েই কঙ্কালতন্ত্র গঠিত আমাদের দেহের অবকাঠামো ভার বহন ও সংরক্ষণ করা এই তন্ত্রের কাজ। কঙ্কালতন্ত্রের মানব দেহের প্রয়োজনীয়তা পেশী তন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার অনুরূপ।
উপসংহার
এতক্ষণ ধরে আমরা মানবদেহের ৯ টি তন্ত্র সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। আশা করছি এ তথ্যগুলো থেকে আপনি উপকৃত হতে পারবেন। এবং মানবদেহের কোন তন্ত্র বা অঙ্গ কি কাজ করে থাকে এর সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। এতক্ষণ ধরে এই প্রতিবেদনটি মনোযোগের সহিত পড়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর হয়েছে, আশা করছি এ ধরনের আরো পোস্ট লিখবেন, আমরা অনেক উপকৃত হব এ ধরনের পোস্ট পেলে। হাসি অনলাইন আই টি কে অনেক ধন্যবাদ।
আপনার মন্তব্য পেশ করার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।