ব্যাকটেরিয়া কি, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত রোগের নাম সমূহ
প্রিয় পাঠক,ব্যাকটেরিয়া কি, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত রোগের নাম সমূহ জানার জন্য খুব আগ্রহী, এ বিষয়ে গুগলে অনেক সার্চ করেও যথাযথ বা মনের মত সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না, তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি অতি প্রয়োজনীয়।
আজকের এই প্রতিবেদনে ব্যাকটেরিয়া কি, ব্যাকটেরিয়ার গঠন, ব্যাকটেরিয়া কিভাবে রোগ ছড়ায়, কি কি রোগ ছড়ায় এগুলো ছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। চলুন এগুলো বিস্তারিত দেখে নিই।
ভূমিকা
অনুজীব হচ্ছে এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র জীব যা খালি চোখে দেখা যায় না, শুধুমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়। অনুজীবের আরেক নাম জীবাণু হলেও সাধারণভাবে ব্যাকটেরিয়া নামে এক ধরনের অনুজীবের বাংলা নাম হিসাবেই জীবাণু কথাটি বেশি ব্যবহৃত হয়।
ব্যাকটেরিয়া
ব্যাকটেরিয়া হলো এককোষী প্রাণকেন্দ্রিক জীব। ব্যাকটেরিয়া মাটিতে, পানিতে, বাতাসে, জীবদেহের ভিতরে ও বাইরে অর্থাৎ প্রায় সর্বত্র বিরাজমান। পৃথিবীতে যাবতীয় জৈব ও অজৈব পদার্থের পচন ও রূপান্তরের বেশিরভাগ কারণ জীবাণু ঘটিত। আমাদের দেহের ভিতর ও বাইরে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন
ব্যাকটেরিয়া দল বেঁধে বাস করে এবং তাদের সম্মিলিত কার্যাবলী আমাদের জীবনযাত্রাকে অনেকটা সহজসাধ্য করে। এমন কি আমাদের অন্ত্রে বসবাসকারী এসকেরিসিয়া কোলাই (Escherichia Coli) আমাদেরকে জৈব সংশ্লেষিত ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সরবরাহ করে থাকে। পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রায় সর্বত্রই
ব্যাকটেরিয়া থাকলেও বায়ু স্তরের অনেক উঁচুতে অথবা জীবদেহের দেহকলা (Tissue) বা রক্তরসে ব্যাকটেরিয়া উপস্থিতি আশা করা যায় না।
ব্যাকটেরিয়ার গঠন
ব্যাকটেরিয়ার গঠন বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। এখানে একটি ব্যাকটেরিয়া গঠন প্রকৃতি আলোচনা করা হলো-
১। ফ্লাজেলা (Falgella) ঃ
ফ্লাজেলা প্রোটোপ্লাজম দ্বারা গঠিত একপ্রকার চুলের ন্যায় উপাঙ্গ। এটি সাইটোপ্লাজম হতে উৎপন্ন হয়ে কোষ প্রাচীর বিদীর্ণ করে বাইরে প্রসারিত হয়। ফ্লাজেলা ব্যাকটেরিয়ার চলাফলের সাহায্য করে।
২। ক্যাপসুল (Capsule) ঃ
কোষ প্রাচীরের বাইরে পুরো ও পিচ্ছিল পদার্থের যে আবরণী থাকে তাকে ক্যাপসুল বলে। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিকূল অবস্থা হতে রক্ষা করে।
৩। কোষ প্রাচীর (Cell Wall) ঃ
সাইটোপ্লাজম কে আবদ্ধ করে যে জড় প্রাচীর থাকে তাকে কোষ প্রাচীর বলে। এর গায়ে অসংখ্য অণুবীক্ষণিক ছিদ্র আছে। এটি কোষকে আকৃতি দেয় এবং রাসায়নিক দ্রব্যটির চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
৪। কোষ ঝিল্লি বা প্লাজমাঝিল্লি (Plasma Membrane) ঃ
কোষ প্রাচীরের অভ্যন্তরে যে স্থিতিস্থাপক ঝিল্লি থাকে তাকে প্লাজমা ঝিল্লি বলে। এর গায়ে অনেক উৎসেচক থাকে। এটিও রাসায়নিক দ্রব্যদির চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
৫। সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm) ঃ
এটি সাধারণত বর্ণহীন অর্ধ-তরল থলথলে বস্তু। এতে রাইবোজোম ভলিউটিন দানা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গহবর কোলন ও ক্রোমাটোফোরা থাকে। তবে এখন পর্যন্ত মাইট্রোকেনড্রিয়া দেখা যায়নি।
৬। কেন্দ্রিকা (Nucleus) ঃ
এতে কোন কেন্দ্রিকা ঝিল্লি নেই। ক্রোমোটিন অসংগঠিতভাবে সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে। এই প্রোমোটিন দ্রব্য বা কেন্দ্রিকা মাত্র একটি ক্রোমোজোম নিয়ে গঠিত।
ব্যাকটেরিয়া চলাচলের পদ্ধতি
উৎস বা সূত্র হতে ব্যাকটেরিয়া চলাচল বা স্থানান্তরের কতিপয় মাধ্যম রয়েছে। চলুন আমরা এবার ব্যাকটেরিয়া চলাচলের পদ্ধতি বা মাধ্যম গুলো সম্পর্কে জেনে নিই-
১। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেঃ
বহু ব্যাকটেরিয়া বিশেষ করে যারা ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে তারা বিশ্বাসের বায়ুর সাথে শরীরে প্রবেশ করে। রোগীরা যখন কাশে, হাসি দেয় অথবা জোরে কথা বলে তখন লক্ষ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া পারিপার্শ্বে আবহাওয়া মন্ডলীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং অপর ব্যক্তির শরীরে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে প্রবেশ করে।
- কিছু ব্যাকটেরিয়া সরাসরি অপর ব্যক্তির নাসিকার মাধ্যমে প্রবেশ করে।
- কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া বিন্দু কণার মত বাতাসে ভাসতে থাকে এবং পরে শ্বাসের সাথে অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে।
- কোন কোন ব্যাকটেরিয়া মাটিতে তলানি হিসেবে পড়ে এবং সেখানে তারা ধূলিকণার মধ্যে মিশে থাকে। আবার কখনো ধুলি আলোড়িত হয় তখন বায়ুমন্ডলে ভেসে ওঠে ও শ্বাস গ্রহণের সময় অন্য মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। উদাহরণ-টিউবারকুলাসিস বা যক্ষ্মার ব্যাকটেরিয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যক্ষা রোগের বিস্তার ঘটায়।
২। খাদ্য গ্রহণের সাথেঃ
পরিপাকতন্ত্রের অধিকাংশ প্রদাহের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত পানি ও খাদ্যের সাথে মুখগহ্বর ও খাদ্যনালীর মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। সংক্রামিত হাত ও নাকের মাধ্যমেও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটাতে পারে। উদাহরণ- সালমোনেলা টাইফি পানি দ্বারা বাহিত হয়ে টাইফয়েড রোগের বিস্তার ঘটায়।
৩। সংস্পর্শের মাধ্যমেঃ
বহু ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া সংস্পর্শে মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। চর্ম অথবা ঝিল্লির ফাটলের মধ্যে দিয়ে ব্যাকটেরিয়া সাধারণত প্রবেশ করে। সংস্পর্শ দুই প্রকারের হতে পারে।
প্রত্যক্ষঃ রোগীর শরীরের সাথে অন্য ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শ ঘটার ফলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়। উদাহরণ জলাতঙ্ক।
পরোক্ষঃ তোয়ালে, বিছানা পত্র, খাওয়ার পাত্র ইত্যাদির মাধ্যমে সংস্পর্শে ঘটে থাকে। উদাহরণ সারকোপটিস স্কাবিই সংস্পর্শের মাধ্যমে চুলকানি রোগের বিস্তার ঘটায়।
৪। যৌন সঙ্গমের মাধ্যমেঃ
কোন কোন ক্ষেত্রে যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া অন্যের শরীরে প্রবেশ করে এবং সংক্রমিত হয়। উদাহরণ-সঙ্গমের মাধ্যমে গনোরিয়া, সিফিলিস রোগ সংক্রামিত হয়।
৫। কীট পতঙ্গের দংশনের মাধ্যমেঃ
কোন কোন কীটপতঙ্গ রোগীকে দংশনের সময় রক্তের সাথে কিছু ব্যাকটেরিয়া গ্রহণ করে এবং পরে অন্য কাউকে দংশনের সময় তার শরীরে উক্ত ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত হয়। উদাহরণ-চিকনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু মশার দংশনের সংক্রমিত হয়।
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত রোগের নাম সমূহ
ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা মানব শরীরের কি কি ধরনের রোগ ছড়াতে পারে, কোন ব্যাকটেরিয়া কি ধরনের রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী এগুলো একটি ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো। চলুন দেখে নিই-
goog