টনসিল ব্যথার কারণ এবং টনসিল চিকিৎসার ঘরোয়া পদ্ধতি

 সম্মানিত পাঠক, আপনি কি টনসিল ব্যথার কারণ এবং টনসিল চিকিৎসার ঘরোয়া পদ্ধতি,টনসিলের বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানার জন্য খুব আগ্রহী,গুগলে অনেক সার্চ করেও এ বিষয়ে সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না, তাহলে আপনার জন্য এই প্রতিবেদনটি, কারণ এখানে আপনার প্রশ্নের উত্তর  সমূহ আলোচনা করা হয়েছে।

টনসিল ব্যথার কারণ এবং টনসিল চিকিৎসার ঘরোয়া পদ্ধতি

আজকের এই প্রতিবেদনে টনসিল কি, টনসিল ব্যথার জন্য কি কি করতে হবে, টনসিলের বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি টনসিল ব্যথার কারণ এবং টনসিল চিকিৎসার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করা হয়েছে, চলুন আমরা এগুলো দেখে নিই-

ভূমিকা

তীব্র গরম এবং তীব্র শীতে ঠান্ডা লাগাটা অতি স্বাভাবিক ব্যাপার, অনেকের শীতে আবার অনেকেরই গরমে টনসিলের ব্যথা করে, টনসিলে ব্যথা করলে অনেক সময় ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, সাধারণত মুখের ভিতর জীবাণু প্রবেশের ক্ষেত্রে টনসিল বাধা প্রদান করে। তাই টনসিলে ব্যাথা হলে অন্যান্য রোগ ও বৃদ্ধি পায় এবং বড় ধরনের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

টনসিল প্রতিরোধের জন্য আমরা বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে থাকি, ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে থাকি, কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে বসে ব্যথা কমানোর জন্য কিছু চিকিৎসা করা যায়। আমরা এই পর্বে জানার চেষ্টা করব।

টনসিল কি

আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অঙ্গ হলো টনসিল। আমাদের মুখের ভেতরে প্যালাটাইন, টিউবাল, অ্যাডেনয়েড, এবং লিঙ্গুয়াল এই চারটি গ্রুপ রয়েছে। 


এর মধ্যে যেকোনো একটি জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হলে বা প্রদাহ সৃষ্টি হলে তাকে টনসিলাইটিস বলা হয় যাকে আমরা টনসিল নামে বুঝে থাকি। 

টনসিল ব্যথার কারণ

টনসিলের ব্যথার বিভিন্ন কারণের মধ্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগন কয়েকটি কারণে কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন. এগুলো হলো-

টনসিলের ব্যথার কারণ ভাইরাস সংক্রমণঃ 

ভাইরাস সংক্রমণের ফলে টনসিল ফোলা বা টনসিলের ব্যথা হতে পারে। এডিনো ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হারপিস সিমপ্লেক্স, অ্যাপ স্টেইন ভাইরাস ইত্যাদি ভাইরাস উল্লেখযোগ্য কারণ। এই ভাইরাস আক্রমণের ফলে উল্লেখযোগ্য লক্ষণ গুলো হল, গলা ব্যথা, সর্দি, মাথাব্যথা, জ্বর ইত্যাদি।

টনসিলের ব্যথার কারণ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণঃ 

ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমিত হলে টনসিলের ব্যথা হতে পারে এবং গলা ফুলে যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের লক্ষণ গুলো হল, হা করতে অসুবিধা, খাবার গিলতে অসুবিধা, মুখে দুর্গন্ধ ইত্যাদি। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ জটিল হলে টনসিলে পুজ জমে যেতে পারে।

টনসিলের ব্যথার কারণ টনসিলে পাথরঃ 

গলার অভ্যন্তরে খাদ্য কণা জমে টনসিলে পাথর তৈরি হতে পারে, ফলে টনসিল ফুলে যায় এবং ব্যথার সৃষ্টি হয়।

টনসিলের ব্যথার কারণ পাকস্থালির এসিডঃ 

অনিয়মিত খাবারের ফলে পাকস্থলীতে এসিড সৃষ্টি হয়, এছাড়া নিম্নমানের খাবার, চর্বি জাতীয় খাবার, বিভিন্ন খাবারে পাকস্থলীতে এসিড সৃষ্টি হলে, ভেতর থেকে টক ঢেকুর উঠে ও গলা জ্বালাপোড়া করে, এভাবে নিয়মিত পাকস্থলীর এসিড উঠে আসলে, টনসিল ফুলে যায় এবং ব্যাথা সৃষ্টি হতে পারে।

টনসিলের ব্যথার কারণ সিফিলিশ ও গনোরিয়া জাতীয় যৌনবাহিত রোগঃ 

গনোরিয়া ও সিফিলিশ রোগ থাকলে টনসিল আক্রান্ত হতে পারে। গনোরিয়া রোগের প্রধান উপসর্গ হলো মুখের ক্ষত, টনসিল ফোলা ও জ্বালাপোড়া করা।

টনসিলের ব্যথার কারণ ক্যান্সারঃ 

বিভিন্ন কারণে টনসিলের ক্যান্সার আক্রান্ত হতে পারে। টনসিলের ক্যান্সার হলে তেমন উল্লেখযোগ্য উপসর্গ না থাকলেও দেখা যায়, টনসিল ফুলে যায়, ব্যথা করে, গলা ব্যাথা করে, কান ব্যাথা করে, রক্তক্ষরণ হয়, গলায় পিন্ড হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, টনসিলের ক্যান্সার হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো ধূমপান ও মদ পান।

টনসিল চিকিৎসার ঘরোয়া পদ্ধতি

টনসিল ব্যথার কারণ এবং টনসিল চিকিৎসার ঘরোয়া পদ্ধতি আলোচনা করার জন্য আমরা প্রথমেই টনসিলের জন্য ব্যথার কারণ সমূহ গুলো আলোচনা করেছি, এবার দেখে নিব টনসিল চিকিৎসার জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো-

টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা তরল জাতীয় খাবারঃ 

টনসিলের সংক্রামণের ফলে গলা শুকিয়ে যায় এবং ব্যথা আরো অসহনীয় হয়ে পড়ে, এই ক্ষেত্রে তরল জাতীয় খাবার যেমন সুপ, ভাতের মার, তরল গরম পানীয় ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা লবণ পানি গড়গড়াঃ  

এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে পরিমাণমতো লবণ মিশিয়ে গড়গড়া কুলি করলে তাৎক্ষণিক টনসিলের ব্যথা কম লক্ষ্য করা যায় এবং গলার শিরশিরানি অনুভূতি কমে যাবে।

টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা লজেন্সঃ 

গলার ব্যথা কমানোর জন্য এবং অসারতা ঠিক রাখার জন্য লজেন্স খাওয়া খুবই উপকারী। লজেন্স ব্যথা কমানোর জন্য তাৎক্ষণিক ভালো কাজ করে।

টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা মধুঃ 

মধু একটি এন্টি ব্যাকটেরিয়াল খাদ্য উপাদান, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী, এই মধু দিয়ে গলার টনসিলের ব্যথা কমানো যায়। মধুর সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খেলে এর উপকারিতা তাৎক্ষণিক লক্ষ্য করা যায়।

টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা দুধ ও হলুদঃ 

হলুদে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে, যা জীবাণুর সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। এবং দুধ একটি আদর্শ খাবার, এতে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে, হালকা দুধের সঙ্গে পরিমাণ মতো হলুদ মিশে পান করলে টনসিলের ব্যথা কমে যাবে।

টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা পুদিনাঃ 

তে পুদিনা তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর বৈশিষ্ট্য রয়েছে, ফলে দ্রুত টনসিলের ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন দিনে দুই অথবা তিনবার পুদিনা মিশ্রিত চা পান করলে টনসিলের ব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক আরাম পাওয়া যায়।

টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা গাজরঃ 

গাজর একটি এন্টিট্রক্সিন গুণ বিশিষ্ট খাবার, যা টনসিলের ব্যথা কমাতে খুবই কার্যকর। গাজরের জুস বানিয়ে পান করা যেতে পারে।

টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা গ্রিন টি ও মধুঃ 

গ্রিন টি এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, এবং জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে পারে। আর মধুতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা প্রদাহ কমাতে পারে। অতএব গ্রিন টি টনসিলের ব্যথা কমাতে সহায়ক।

টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা লেবু এবং আদা চাঃ 

শীতের কারণে বা অন্য কোন কারণে যদি ঠান্ডা লেগে যায় তাহলে লেবু দিয়ে আদা চা খেলে উপকার পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে টনসিলের ব্যথা দূর করতে সহায়ক।

টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা মেথিঃ 

এক লিটার পানিতে তিন চা চামচ মেথি দিয়ে গরম করে হালকা কুসুম থাকা অবস্থায়, কুলকুচি করলে টনসিলের ব্যথা কমে যাবে, কারণ মেথি টনসিলের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে থাকে।

টনসেলে ব্যথা হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত তবে সব সময় চিকিৎসককে সুবিধামত পাওয়া যায় না যার জন্য আমাদের কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা প্রয়োজন হয় এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে চিন্তা করে, টনসিল ব্যথার  চিকিৎসার ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো উপস্থাপন করেছি।

টনসিলের বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি

টনসিল চিকিৎসার ঘরোয়া পদ্ধতি আলোচনার ফলে আলাদা আলাদা ভাবে টনসিলের ও তার কারণ এবং ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে। এবার আমরা টনসিলের বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি গুলো জানব-

টনসিলের বিকল্প চিকিৎসা অ্যান্টিবায়োটিকঃ 

টনসিলের ব্যথার কারণে ডাক্তারেরা সাধারণত এন্টিবায়োটিক কোর্স কমপ্লিট করে থাকেন এন্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে টনসিলে সংক্রমনের তীব্রতা কমাতে সহায়তা করে এবং দেহের অন্যান্য অংশে তা বিস্তার লাভ করতে পারে না।

টনসিলের বিকল্প চিকিৎসা সার্জারিঃ 

এন্টিবায়োটিক কোর্স কমপ্লিট করার পরে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগঞ্জ যদি মনে করেন, টনসিল পুনরাবৃত্তির মূলক সংক্রমণ হতে পারে, সেই ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল উপায়ে অপারেশন করে থাকেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, টনসিল চিকিৎসার পদ্ধতি আলোচনা করতে গিয়ে দেখেছি টনসিলের বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি গুলোর চেয়ে ঘরোয়া পদ্ধতি উত্তম।

মন্তব্য

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, টনসিল সাধারণত বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই এবং শীতের প্রকোপের ফলে সৃষ্টি হতে পারে। টনসিলের ব্যথা তীব্রতা বেশি হলে তা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আমরা এতক্ষণ ধরে, টনসিল ব্যথার কারণ এবং টনসিল চিকিৎসার ঘরোয়া পদ্ধতি এবং টনসিলের বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিসময়ের বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

বিষয়টি আপনার ভালো লাগলে শেয়ার করবেন, এতক্ষণ এই প্রতিবেদনের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Hasi Online IT নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url